ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৪

অচেনা স্রোত

ঈপ্সিতা হঠাৎ করে দু’জন বান্ধবীকে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে প্রিয়তোষকে চমকে দেয়। তার ইচ্ছে, আজ পার্টি হবে, রাস্তার মোড়ে একটা রেস্তরাঁ আছে, সেখানে।

Advertisement

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৭
Share:

পূর্বানুবৃত্তি: প্রিয়তোষ ফোনে কস্তুরীর সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। কথা হয় রেডিয়ো নিয়ে, সময় কাটানো নিয়ে, কস্তুরীর লেখা ছোটগল্প নিয়ে। প্রিয়তোষের অনুরোধে কস্তুরী ফোনে পুরো গল্পটা পড়ে শোনায় প্রিয়তোষকে। ঈপ্সিতা হঠাৎ করে দু’জন বান্ধবীকে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে প্রিয়তোষকে চমকে দেয়। তার ইচ্ছে, আজ পার্টি হবে, রাস্তার মোড়ে একটা রেস্তরাঁ আছে, সেখানে। সৌমিত্র দত্তের বাড়িতে রবিবারের তাসের আড্ডা বসে।

Advertisement

বাঁ হাতে তাসগুলো ধরে ডান হাতে একটা রেশমি কাবাব তুলে মুখে পুরে নীহার সরখেল বললেন, ‘‘কাবাবগুলো কোথা থেকে আনলেন?’’

‘‘এই তো, মোড়ে যে রেস্টুরেন্টটা আছে। খুব ধরেছিল এক দিন। কাল বললাম, দাও যত রকমের আছে। তাও গলৌটি দিতে পারল না। কেমন?’’

Advertisement

‘‘খারাপ নয়। তবে কী জানেন, যে রেস্তঁরা চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, মোগলাই সবই রাঁধে সে রেস্তরাঁ জাতের রেস্তরাঁই নয়। কী বলো সোমনাথ?’’

সোমনাথ দাঁতের পাটি খেলিয়ে বললেন, ‘‘যা বলেছেন। খানদানি বিরিয়ানিওয়ালাদের কোনও দিন চাইনিজ রাঁধতে দেখেছেন? বাই দ্য ওয়ে, খাওয়াদাওয়ার কথা বলতে মনে পড়ে গেল। আজ তীর্থময় গাঙ্গুলির বাড়িতেও জব্বর কিছু একটা হচ্ছে। কেটারার ডেকেছে মনে হল।’’

অতনু পাল বললেন, ‘‘পরের রবিবার কিন্তু আমার বাড়িতে। গিন্নি বলছে, কী ব্যাপার, তুমি সবার বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসছ, আমাদের বাড়িতে কাউকে ডাকছ না কেন? আর মাথা খারাপ করে দিচ্ছে মশাই, লেডিজ ক্লাব কবে হবে সেই নিয়ে।’’

নীহার বললেন, ‘‘তুমি কিন্তু কাজের কাজ কিছু করছ না সোমনাথ। ওই এক বার প্রিয়তোষ চাটুজ্যেকে নিয়ে এলে, ব্যস। প্রত্যেক রবিবার মিটিং করছি করছি বলে কিচ্ছু করছ না। তীর্থময় গাঙ্গুলির বাড়ির চার দিকে ঘুরঘুর করে শুধু গন্ধই শুঁকছ।’’

‘‘জলটা আর একটু মাপছি দাদা। আর আপনার ভায়রাকে তো শান্টিং করে আমাদের দিকে নিয়ে চলেই এসেছি।’’

‘‘কিসের জল মাপা আর কিসের শান্টিং? তুমি তো বলেছিলে গত রবিবার আমাদের বাড়িতে ভায়রা আসবেই। এল কই?’’

‘‘আসবে দাদা, আসবে। সেটিং করতে একটু সময় লাগছে। আপনার আধি-ঘরওয়ালিকে তো জানেন।’’

সৌমিত্র হাতের তাসগুলো টেবিলের ওপর মেলে বললেন, ‘‘আপনার সেটিং তো সব উলটো। বিকাশ বাগচীকে অত কষ্টে চেয়ারম্যান হতে রাজি করালাম। তার মেয়েটাকে তো আপনি প্রিয়তোষ চাটুজ্যেকে দিয়ে কেস খাইয়ে দিলেন।’’

তাস বাঁটতে বাঁটতে অতনু পাল জানতে চাইলেন, ‘‘প্রেমটা কি চলছে এখনও?’’

‘‘চলছে মানে? একেবারে খুল্লমখুল্লা। এই তো আসার সময় দেখে এলাম, মেয়েটা গিটার নিয়ে এ-টাওয়ারের দিকে যাচ্ছে।’’

সৌমিত্র হেসে বললেন, ‘‘তবে নীহারদা, প্রিয়তোষ চাটুজ্যে কিন্তু এক্সেলেন্ট সিলেকশন।’’

‘‘আরে ওরা যদি সমঝোতায় না আসে, তা হলে ইলেকশনে যেতে হবে। ইলেকশনে গেলে লোককে বোঝাতে হবে তো, আমাদের প্যানেলে আপনাদের প্রবলেম দেখার জন্য এমন লোকেরা আছে যারা চব্বিশ ঘণ্টাই খাটার জন্য অ্যাভেলেবল। ফোন করলেই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন। তীর্থময় গাঙ্গুলিকে বা ওর চেলাদের পাবেন?’’

হিমাংশু বললেন, ‘‘এত দিনে বুঝলাম, কেন আপনি আমাকে বি-টাওয়ারের রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে বলেছেন। বেগার খাটতে।’’

‘‘ছাই বুঝেছ। সোমনাথকে জিজ্ঞেস করো। কথায় কথায় বলে পলিটিক্স-করা লোক। ইন্ডিয়ান পলিটিক্সের আসল ব্যাপারটাই খেয়াল করছ না।’’

‘‘কী?’’

‘‘যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে লড়বে, জেতার পর সেটা পালন করা মহাপাপ। আরে প্রিয়তোষ চাটুজ্যেও তো ভোটের পর আমেরিকায় ফুড়ুৎ
হয়ে যাবে।’’

বেলটা বেজে উঠল। দরজার সবচেয়ে কাছে বসে ছিলেন হিমাংশু। তিনিই উঠে গিয়ে দরজা খুললেন। টিটান। মুখটা কী রকম শুকনো। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কী হয়েছে টিটান?’’

‘‘কিছু না।’’ টিটান ঘরের ভিতরে যাওয়ার দিকে পা বাড়াল।

‘‘কোথায় গিয়েছিলি?’’ সৌমিত্র গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

‘‘জিমে।’’ টিটান আরও গম্ভীর গলায় উত্তর দিয়ে ঘরের ভিতরে চলে গেল।

‘‘জিম তো আজ বন্ধ থাকার কথা। ওরা কি রবিবার জিম খোলার ডিসিশন নিয়েছে? দাদা, এই বয়সের বাচ্চাগুলোর জন্যও কিছু একটা করার দরকার।’’ সোমনাথ বলতে থাকলেন, ‘‘ছেলেটাকে দেখে খুব কষ্ট হয়। একা একা এই টাওয়ারে ওই টাওয়ারে ঘুরে বেড়ায়। যাওয়ার মধ্যে তো ওই জিম আর সুইমিং পুল।’’

‘‘আচ্ছা, একটা লাইব্রেরি আর স্নুকার বোর্ড করার কথা ছিল না ওদের?’’ সৌমিত্র জানতে চাইলেন।

নীহার হাত নাড়িয়ে বললেন, ‘‘কিস্যু করেনি। আর ওদের আশায় বসে থাকলে হবে না। আমাদের নতুন কিছু করতেই হবে।’’

‘‘কী করবেন?’’ অতনু জিজ্ঞেস করলেন।

সোমনাথ গলা ঝেড়ে বললেন, ‘‘স্নুকার বোর্ড বলতে মনে পড়ল, ভাবছি একটা ক্যারম কম্পিটিশন করলে কেমন হয়? বড়রা-ছোটরা একসঙ্গেই নাহয় খেলবে। এই সব খেলাধুলোয় কিন্তু নেটওয়ার্কিংটা তরতর করে বাড়ে।’’

হিমাংশু ফুট কাটলেন, ‘‘কোথায় স্নুকার বোর্ড আর কোথায় ক্যারম বোর্ড। আপনার প্রতিভার কোনও তুলনা নেই মশাই। মাঠে খেলাধুলো করেছেন কখনও?’’

‘‘মাঠে এক বার ক্রিকেট ব্যাটটা নিয়ে এসো না! এখনও এক-একটা বল বাপি বাড়ি যা বলে চার-ছয় হাঁকাব।’’ উত্তেজিত হয়ে বললেন সোমনাথ।

টং করে একটা জোর আওয়াজ হল। সোমনাথ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন ‘‘স্যরি, স্যরি। হাতটা স্লিপ করে বোতলে লেগে গেল।’’

সোফার এক পাশে রাখা বিয়ারের বোতলটা উলটে গিয়েছে। বিয়ার গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। নীহার তির্যক মন্তব্য করলেন, ‘‘ইম্পোর্টেড বোতলটা তুমি উলটে দিলে ভায়া?’’

‘‘আরে নেভার মাইন্ড। এখুনি ক্লিন আপ করিয়ে দিচ্ছি।’’ সৌমিত্র হাঁক দিলেন, ‘‘শকুন্তলা!’’

শকুন্তলা থমথমে মুখে এসে দাঁড়ালেন। ওলটানো বিয়ারের বোতলটা দেখলেন। তার পর সবার দিকে এক বার তাকিয়ে সৌমিত্রকে বললেন, ‘‘আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি বেরোচ্ছি।’’

সৌমিত্রর ভুরু কুঁচকে গেল, ‘‘কোথায় যাচ্ছ?’’

‘‘বাবার কাছে।’’

সোমনাথ বিশ্বাস বলে উঠলেন, ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি এগোন বউদি। আমি দেখছি।’’

এ রকম স্পর্ধা শকুন্তলা বহুদিন দেখায়নি। সবার সামনে যেন সপাটে একটা বিরাশি সিক্কার চড় মারল। সৌমিত্র একেবারে গুম হয়ে গেলেন। আড়চোখে নীহার সরখেলের দিকে তাকালেন। লোকটা হাতের তাসের দিকে একমনে চেয়ে আছে। ঠোঁটের কোনায় ফুটে রয়েছে এক চিলতে হাসি।

সশব্দে সদর দরজাটা বন্ধ করে শকুন্তলা বেরিয়ে গেলেন। সৌমিত্র গম্ভীর গলায় ডাকলেন, ‘‘টিটান!’’

সোমনাথ বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘আবার ওকে কেন?’’ সৌমিত্র চোয়াল শক্ত করে হাত তুলে সোমনাথকে থামতে বললেন। টিটান ঘরের মধ্যে থেকে সবই শুনছিল। বুঝতে পারল, বাবা কী জন্য ডাকছে। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সৌমিত্র চোখের ইশারায় বিয়ার-ছড়ানো মেঝেটা দেখালেন। টিটান চুপ করে রান্নাঘর থেকে মপার নিয়ে এসে মেঝে পরিষ্কার করে বাথরুমে ঢুকল। ঠোঁট দু’টো কাঁপল একটু। আবার কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে পকেট থেকে ফোন বার করে টুইটিকে কল করল।

অনেকগুলো রিং হয়ে যাওয়ার পর টুইটি ফোন ধরে চাপা গলায় বলল, ‘‘তোকে বললাম না, আজ এত বার ফোন করিস না। বাড়ি-ভর্তি লোক।’’

টিটান অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিল। টুইটির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আর ধরে রাখতে পারল না, ‘‘টুইটি, তুই প্লিজ এক বার আয়।’’

টুইটি টিটানের গলা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘‘কী হয়েছে তোর?’’

‘‘আমার ভাল লাগছে না টুইটি। কিচ্ছু ভাল লাগছে না।’’

‘‘একটু বোঝার চেষ্টা কর সোনা। আজ কিছুতেই পারব না। না হলে তুই এ ভাবে বলছিস, আমি যেতাম না?’’

টিটান অবুঝ গলায় বলল, ‘‘আমি কিচ্ছু জানি না টুইটি। তোকে না দেখলে আমি মরেই যাব।’’

খুব চাপা গলায় টুইটি বলল, ‘‘তুই আমাকে এত ভালবাসিস? তুই এত পাগল ছেলে?’’

‘‘হ্যাঁ, আমি পাগল... পাগল... পাগল...’’ টিটান আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল।

১৫

ঋদ্ধিমা ফিক করে হেসে ফেলল, ‘‘উফ! কাকিমা আমাদের একসঙ্গে একটু ঘুরতে পাঠাল, আমরা যাতে একটু নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। আর তুমি আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কী দেখাচ্ছ? ওই দেখো জিম, এই দেখো সুইমিং পুল। যেন আজ সকালে আমি হাওড়ায় নেমেছি। জীবনে জিম, সুইমিং পুল দেখিনি। আর তোমাকে কী মনে হচ্ছে জানো? এই প্রপার্টিটার সেলসম্যান। আমাকে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চাও।’’

ঋদ্ধিমার কথায় অভিমন্যু একটু থতমত খেয়ে বলল, ‘‘না, মানে...’’

‘‘মামা’জ বয়। মা বলে দিয়েছে বুঝি আমাকে সুইমিং পুল, জিম— এ সব দেখাতে? কী ওবিডিয়েন্ট তুমি! যাই বলো, তোমাকে কিন্তু একেবারে ক্যান্ডি-ক্যান্ডি গুডি-গুডি লাগছে। আচ্ছা, তুমি এ রকম ধুতি-পাঞ্জাবি পরেছ কেন? ক্যারি করতে পারছ না। লটপট করছ।’’

অভিমন্যু চুপ করে থাকল। এটা তো বাবার সামান্য ইচ্ছে। বাবা-মায়ের মনের অনেক বড় ইচ্ছেকে সারা জীবন ক্যারি করতে হবে ওকে। নিচু গলায় বলল, ‘‘তা হলে বাড়িতে ফিরে যাব?’’

ঋদ্ধিমা চোখমুখ পাকিয়ে বলল, ‘‘ইস, কী যা-তা লেভেলের আনরোম্যান্টিক তুমি। তোমরা কাকা-মামা পিসি-মাসি এত লোককে আজকে ডেকেছ যে তোমাদের বাড়িতে তো নিশ্বাস ফেলার জায়গাটুকুও পাচ্ছি না!’’

অভিমন্যু চিন্তিত গলায় বলল, ‘‘তা হলে?’’

ঋদ্ধিমা একটু ভেবে বলল, ‘‘আসার সময় দেখলাম, সামনের রাস্তার মোড়ের মাথায় একটা রেস্তরাঁ আছে। চলো না ওখানে।’’

‘‘তা হলে গাড়ির চাবিটা নিয়ে আসি?’’

‘‘এখান থেকে তো একটুখানি। চলো হেঁটে যাই। নাকি আমার সঙ্গে হাঁটতে ইচ্ছে করছে না? সত্যি ভীষণ আনরোম্যান্টিক তুমি। নাহ্‌! আমার স্বপ্নগুলো একদমই মিলছে না।’’

‘‘কী মিলছে না?’’

‘‘চলো হাঁটতে হাঁটতে বলি। ধুতি পরে হাঁটতে পারবে তো?’’

‘‘অসুবিধা নেই। চলো।’’

ঋদ্ধিমা আর অভিমন্যু হাঁটতে আরম্ভ করল। হাউসিং-এর গেটটা পেরিয়ে রাস্তায় নেমে এল। চওড়া ফুটপাত, সার দিয়ে লাগানো গাছ। অভিমন্যু ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, ঋদ্ধিমার সঙ্গে কী কথা বলবে। বলতে তো ইচ্ছে করছে একটাই কথা। নয়নিকার কথা। কাউকে বলতে পারেনি। আংটিটা তো এখনও ঋদ্ধিমার আঙুলে পরানো হয়নি। এখনও সময় আছে। একমাত্র ঋদ্ধিমাকে যদি বলতে পারে, আমার মন জুড়ে অন্য এক জন আছে। স্যরি। তোমাকে এটা না বললে তোমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। বিয়ে এক দিন রেস্তরাঁয় যাওয়ার মতো সাধারণ ঘটনা নয় ঋদ্ধিমা, সারা জীবন দু’টো মনের সম্পর্কের কথা... অথচ যথারীতি মুখে একটাও কথা ফুটল না। এত সুন্দর করে গুছিয়ে ভাবতে পারছে, কিন্তু বলতে পারছে না। সেই অদৃশ্য থাবাটা মুখ চেপে ধরে আছে।

‘‘তুমি যে ভাবে চুপ করে আছ, তাতে মনে হবে আমাকে তোমার একটুও পছন্দ নয়। ইয়োর পেরেন্টস আর ফোর্সিং ইউ টু ম্যারি মি। কিন্তু আমি জানি তা নয়। কোনও ছেলে যদি বলে আমার সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতে খারাপ লাগছে, তা হলে বুঝব হি ইজ লাইং। আমার কত অ্যাডমায়ারার জানো?’’

অভিমন্যু মুখে অল্প হাসি ফোটানোর চেষ্টা করল, ‘‘তাই?’’

‘‘এই বার মনে হচ্ছে তুমি লাইনে আসছ। জাস্ট ওয়েট করছি কত ক্ষণে তুমি ওই টিপিকাল ইন্ডিয়ান ছেলেদের মতো প্রশ্নটা করবে?’’

‘‘কোন প্রশ্ন?’’

ঋদ্ধিমা গলাটা পালটে বলতে থাকল, ‘‘ঋদ্ধিমা, তোমার কি কোনও স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে? বলতে পারো আমাকে। আমি ভীষণ ব্রড-মাইন্ডেড। হিমালয়ের মতো মহান। তোমার মা-বাবাকে গিয়ে বলব, ইয়ে বরবাদি কি শাদি মুঝে মঞ্জুর নহীঁ হ্যায়। গলতি সে মিসটেক হো গয়া।’’ হাত নেড়ে নাটকীয় ভাবে বলে খিলখিল হেসে উঠল ঋদ্ধিমা।

অভিমন্যু শান্ত গলায় বলল, ‘‘সেটা জেনে নেওয়া কি খারাপ? অনেকেই বাড়ি আর পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়েতে রাজি হয়।’’

‘‘টিপিকাল মেল শভিনিস্ট তুমি। ছেলেরা ঘুরে ঘুরে রসগোল্লা খেয়ে মেয়ে পছন্দ করবে আর মেয়েরা বাড়ির চাপে পড়ে বিয়ে করবে, সেই জমানা আর নেই, বুঝেছ? দিস ইজ ২০১৭। বাবা-মা পছন্দ করে একটা ছেলেকে একটা মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিল, ও সব লাস্ট সেঞ্চুরিতে হত। অ্যাই, তোমাকে না আমার ভীষণ ক্যান্ডি-বয় বলতে ইচ্ছে করছে। কী চাবি-চাবি, উলিবাবা-উলিবাবা গাল তোমার। তোমার ছবি যখন আমার বন্ধুদের দেখাব না, হেসেই খুন হবে। বলবে, ঋদ্ধিমা, এই তোর রাফ অ্যান্ড টাফ?’’

অভিমন্যু লজ্জা পেল। ঋদ্ধিমা আরও জোরে হেসে উঠল, ‘‘তুমি তো ব্লাশ করে গেলে! তাও তো জিজ্ঞেস করিনি, আর ইউ ভার্জিন? নাহ্‌, আমার স্বপ্নগুলো সত্যিই একদমই মিলছে না।’’

অভিমন্যু একটা শূন্যদৃষ্টিতে দূরে তাকিয়ে বলল, ‘‘কী রকম স্বপ্ন ছিল তোমার?’’

‘‘ওই যে বললাম, আমার লাইফ পার্টনার ভীষণ রাফ অ্যান্ড টাফ হবে। কিন্তু ভীষণ রোম্যান্টিকও হবে। এই যেমন ধরো, আমরা দু’জন পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ ঝমঝম বৃষ্টি এল। ও আমাকে ছেড়ে সামনের দিকে দৌড়ে এগিয়ে গেল। কী বুঝলে?’’

‘‘বুঝতে পারলাম না। রোম্যান্টিক, পাশাপাশি হাঁটছ, বৃষ্টি এল আর ও তোমাকে ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল?’’

‘‘পালিয়ে গেল কি এক বারও আমি বলেছি? দৌড়ে এগিয়ে গেল। তার পর হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, স্টপ... স্টপ... দাঁড়াও। আমি দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি আর ও পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করল।’’

(ক্রমশ)

ছবি: পিয়ালী বালা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement