ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস: পর্ব ২১

স্বাধীনতা তুমি...

কথাবার্তা চালাতে চালাতে, রঘুনন্দনলাল কেদিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতাকে মনে মনে তারিফ না করে পারেনি রত্না। এদের কাছে খবর কী দ্রুত গতিতে চলে আসে! দুবাইয়ের তল্লাশি কোনও ভাবে পার করেই মোবাইলে একটা টেক্সট পায় রত্না।

Advertisement

সঞ্জয় দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

কথাবার্তা চালাতে চালাতে, রঘুনন্দনলাল কেদিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতাকে মনে মনে তারিফ না করে পারেনি রত্না। এদের কাছে খবর কী দ্রুত গতিতে চলে আসে! দুবাইয়ের তল্লাশি কোনও ভাবে পার করেই মোবাইলে একটা টেক্সট পায় রত্না। এই মোবাইলটা বিদেশি। কোথাও গেলে তাকে দেওয়া হয়, কলকাতায় ফিরে গিয়ে এক দিনের মধ্যে রঘুনন্দনলালজির অফিসে ফেরত দিতে হয়। টেক্সট বলছে, সে ভিয়েনায় নেমে প্রথম সুযোগেই যেন সব মাল একটা সুটকেসে জড়ো করে। রঘুনন্দনলাল কেদিয়ার নামের তিনটি অক্ষর ছিল টেক্সটের শেষে। আর-এল-কে। অর্থাৎ এটা জরুরি বার্তা। পড়ে অবিলম্বে মুছে ফেলতে হবে। আর অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

Advertisement

ভিয়েনাতে নেমে তাই দেরি করেনি রত্না। প্রথম যে লেডিস টয়লেটটা সামনে পেয়েছে, তাতে ঢুকে সুটকেস খুলে নির্দেশমত সমস্ত মাল একত্র করেছিল সে। সেই সুটকেসটাই সে তুলে দেয় ইয়র্গের হাতে। লিফটেই হাতবদল হয়ে যায় সুটকেস। তাই তাদের কাছে কিছুই খুঁজে পায়নি ভিয়েনা পুলিশ।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে একটাও কথা বলেনি ইয়র্গ। রত্নাও বলেনি। দুজনেই ক্লান্ত। যে হোটেলের ঠিকানা পুলিশকে দিয়েছে ইয়র্গ, সে হোটেলে যে তারা যাবে না, এটা জানতই রত্না। তা বলে বিলাসবহুল একটা সাততারা হোটেলের জন্য প্রস্তুত ছিল না সে! তার মানে আজ যে মাদকের বোঝা সে বয়ে এনেছে, তার দর বা পরিমাণ সাধারণ ভাবে সে যা চালাচালি করে তার চেয়ে অনেক বেশি!

Advertisement

তার মনোরম, সুসজ্জিত ঘরটি বারো তলার উপর। বিরাট বড় ঘর। সংলগ্ন স্নানাগারটি ঘরের মতোই বড়, এবং একই রকম বিলাসবহুল।

বুকিং করাই ছিল। রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে তাকে ঘরে পৌঁছে দিতে লিফটে উঠল ইয়র্গ। এটাও ব্যতিক্রম। যার হাতে মাল তুলে দেওয়া হয়, তার রিসেপশন থেকেই বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু আজ সবই দেখা যাচ্ছে অন্য রকম। কথা বাড়াল না রত্না।

হোটেলের উর্দি পরা একটি বছর আঠারোর বেল বয় তাদের ঘর দেখিয়ে দিল। টেনে আনল সুটকেস। ছেলেটি বিদায় নেওয়া মাত্রই নরম সোফায় হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ল ইয়র্গের দীর্ঘ দেহ। দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলেছে সে।

‘ওহ, আজ একেবারে কানের পাশ দিয়ে গেছে! ইট ওয়াজ ক্লোজ, মাচ টু ক্লোজ ফর কমফর্ট।’ ইয়র্গের স্বগতোক্তিটা প্রায় আর্তনাদের মতো শোনাল।

রত্নারও খুব দুশ্চিন্তা গেছে, অবসন্ন লাগছে তার। সেও ধপ করে বসে পড়েছে সোফার অন্য প্রান্তে। তার দিকে তাকাল ইয়র্গ। হঠাৎ বলে উঠল, ‘আমি কী স্বার্থপর, দেখো! শুধু নিজের কথাই ভাবছি। তোমাকে তো বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে!’

সোফার পাশেই ছোট্ট টেবিলের উপর রাখা টেলিফোনটার বোতাম টিপল সে। জার্মান ভাষায় দ্রুত কিছু একটা বলল। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘরে ওয়েটারের আবির্ভাব। হাতের ট্রে-তে ধূমায়িত কফির পট, সুদৃশ্য কাপ-ডিশ। সঙ্গে দু’তিন রকমের কেক, ফরাসি রুটি।

কফিটা খুব দরকার ছিল রত্নার। চুমুক দিয়েই তার মনে হল, ভিয়েনার কফি খুব সুন্দর, কথায় কথায় এক বার বলেছিলেন রঘুনন্দনলালজি। সত্যিই দারুণ। কফি খেতে খেতে ইয়র্গ তাকে বলল, তার মোবাইলে যে কোনও মুহূর্তে খবর আসবে, রত্নার আনা সুটকেসটি এয়ারপোর্ট থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়েছে কি না। খবর চলে এলেই তার কাজ শেষ। সে বিদায় নেবে। আর যদি খবর খারাপ হয়, কোনও ভাবে পুলিশের হাতে আটক হয়ে থাকে মাদক-ভর্তি সুটকেস, তা হলে রত্নাকে এখুনি এই হোটেল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আছে তার উপর। তারা প্রথমে যাবে সল্‌সবার্গ। সেখান থেকে ব্যাভেরিয়ার সীমান্ত পার হয়ে জার্মানি ঢুকে পড়বে। তার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।

আবার অত দূর সফর করতে হবে? ভেবেই ক্লান্তিতে ঢলে পড়ল রত্না। আর ইয়র্গের মোবাইলেও টেক্সটা ঢুকল ঠিক তখনই। এক ঝলক ফোনটার দিকে দেখল ইয়র্গ। তার সারা মুখে তখন দেবদুর্লভ হাসি।

‘উই আর থ্রু, উই আর থ্রু, মাল পৌঁছে গেছে জায়গা মতো!’ এক পাক নেচে নিল ছেলেটা।

ইয়র্গের অনাবিল উচ্ছ্বাস দেখে হেসে ফেলেছে রত্নাও। হাসিটাতেই ছেলেটা প্রশ্রয় পেল কি না কে জানে! হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রত্নাকে। এত ক্ষণ সমস্ত উৎকণ্ঠার মধ্যেও শিহরনের একটা চোরাস্রোতের সঙ্গে লড়াই করছিল রত্না। একটা ভাল লাগার শিহরন। ছেলেটা কি বুঝতে পারল সেটা কোনও ভাবে? রত্নাদের তো ও ভাবে কাউকে ভাল লাগতে নেই!

তীব্র আশ্লেষে ভেষে যাচ্ছে রত্না। চুরমার হয়ে যাচ্ছে তার প্রতিরোধ। চুম্বনে কী ভীষণ উত্তাপ! ইয়র্গ চুমু খাচ্ছে তাকে। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে তার ঠোট, গাল, মুখ। নীচে নামছে ইয়র্গের ঠোঁট। বুকের নরম উপত্যকায়, নাভিমূলের উষ্ণতায়।

খিদিরপুরের গলিতে নার্সিংহোমের সেই ডাক্তারটির কথা মনে পড়ছে রত্নার। শরীরের যেমন লিঙ্গ আছে, নারী-পুরুষের ভেদ আছে, মনেরও নাকি তেমন লিঙ্গ হয়! নারী মন আর পুরুষ মন! প্রবীণ ডাক্তার সে দিন অনেক ক্ষণ ধরে বুঝিয়েছিলেন তাকে।

‘তোমার নারী মন, তোমার দেহে নারীত্ব আর পুরুষত্বের যুগল উপস্থিতি। সমাজের আরোপিত পুরুষত্বে তুমি আটকা পড়েছ। তোমার দেহে সমস্ত নারী অঙ্গ পূর্ণরূপে উপস্থিত। এই পুরুষাঙ্গটি আসলে উদ্বৃত্ত মাংসপিণ্ড মাত্র। এটা আমরা কেটে বাদ দিয়ে দেব। কিন্তু তুমি পূর্ণাঙ্গ নারী হয়ে উঠবে কি না, সেটা নির্ভর করবে তোমার উপর। তোমার মনের উপর।’

দামি কফির গন্ধে আমোদিত ঘর। জানলার বাইরে ঝলমলে কার্পেটের মতো ছড়িয়ে আছে ভিয়েনা শহর।

আরও নীচে নামছে ইয়র্গ। তার দৃঢ় হাতের আলিঙ্গন। নরম ঠোঁটের কামুক স্পর্শ। স্নায়ুতে যেন আগুন ধরে গেছে রত্নার। রক্তে বেজে উঠেছে দামামা। তবে কী এত দিনে, বিদেশ বিভুঁইয়ের অনাবিষ্কৃত রাত্রে সে পূর্ণাঙ্গ নারী হয়ে উঠল?

তারা তো কাউকে ভালবাসতে পারে না। তাদের ভালবাসতে নেই তো!

আগ্নেয়গিরির উদ্‌গিরণের মুখে থিরিথিরি কেঁপে উঠল রত্না।

১০

ভালবাসার আলো-অন্ধকার

রত্না এখন কোথায়? পৃথিবীর কোন প্রান্তে? কী করছে সেখানে?

কথাটা ঘুরেফিরেই আজ মনে হচ্ছে পল্টনের। রত্না এখানে থাকলে ভাল হত। সেজেগুজে থাকলে ওকে বাইরে থেকে সুন্দরী মহিলা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। আর সুন্দর মুখশ্রীর জয়জয়কার সর্বত্র। রত্না সঙ্গে থাকলে পুলিশের এই ওসি ভদ্রলোক অনেক ভাল ব্যবহার করতেন, এ বিষয়ে সে নিশ্চিত। আর আজ এখানে ফিরে আসা তো রত্নার জন্যই। অবশ্য তার নিজেরও যে তাগিদ নেই, তাও বলা যাবে না!

তার এই ছত্রিশ বছরের জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে এই রত্না। আর বুলাকিদা।

শিয়ালদা স্টেশনের জগৎটা ছাড়া আর কোনও জগৎ ছিল না পল্টনের। বীরু, হন্টা, নুলো, কালুদা, ফটিকদা, ফটিকদার বউ জয়া— এরাই তার পরিবার। তার আগের কোনও স্মৃতি নেই পল্টনের, মা-বাবার কোনও ঝাপসা ছবিও নেই তার মনে। শিয়ালদা স্টেশনে কী ভাবে সে এসে পড়েছিল, সে বিষয়ে কোনও ধারণা নেই তার।

অন্ধকারের কোনও অতন্দ্র প্রহরে অতীতের কথা ভাবলেই দু’চোখের পাতায় এসে দাঁড়ায় যে ছবিটা, সেটা নিজেরই বয়সি একটা বারো-তেরো বছরের ছেলের রিনরিনে গলা, ভয়-পাওয়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে, হাত দুটো অসহায় ভঙ্গিতে বুকের কাছে জড়ো করা, ‘একটু খেতে দেবে? দু’দিন কিছু খাইনি যে!’

শিয়ালদার ওই অঞ্চলে খাবার জোগাড় করাটা অবশ্য কোনও সমস্যা নয়, বিশেষত রাত ন’টার পর। আশেপাশে অনেক ছোটখাটো হোটেল, মেসবাড়ি, মিষ্টির দোকান। অনেকেই দু’তিন দিন রেখে দেওয়া খাবার রাতে ফেলে দেয়।

কিন্তু ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা হয়েছিল পল্টনের! একদৌড়ে চলে গিয়েছিল পাশের গলিতে, একটা দোকানে। পকেটে সে দিন সামান্যই পয়সা ছিল। একটু আগেই ফটিকদার হাতে তুলে দিয়ে এসেছে সে দিনের সবটুকু আয়। ‘কাল সকালে আসিস, হপ্তা পাবি,’ বলে ভাগিয়ে দিয়েছে ফটিকদা। তাও সে দিন সে তার সামান্য আয়ের কিছুটা দিয়ে লুচি, আলুর তরকারি কিনে নিয়ে এসেছিল নান্টুদার দোকান থেকে।

কেমন মায়া পড়ে গিয়েছিল ছেলেটার উপর! শালা যে তিন দিনের মাথাতেই কেটে পড়বে, ভাবেনি পল্টন। খুব অবাক হয়েছিল সে! আরও অবাক হয়েছিল, বছর তিনেক পরে সালওয়ার-কামিজ পরা একটা উঠতি বয়সের মেয়ে এক বুড়োকে সঙ্গে নিয়ে তার ডেরায় হানা
দিয়েছিল যখন।

তখন সে ফটিকদার দলের পুরনো সদস্য। শিয়ালদা থেকে এ দিকে মানিকতলা, ও দিকে পার্কসার্কাস, বেগবাগান ছাড়িয়ে একেবারে ধর্মতলা পর্যন্ত তার গতিবিধি। অফিস-টাইমের বাস, মিনিবাস বা মেট্রো, তার কাজ হল অসতর্ক নিত্যযাত্রীর পকেট কাটা। কখনও একা, কখনও বা তিন-চার জনের একটা দলের নেতৃত্বে। সে অবশ্য একা কাজ করতেই পছন্দ করত। একে তো এক দল ছেলেছোকরা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ। তার ওপর আবার দিনের শেষে সকলের উপার্জন একত্র করে সমান ভাগাভাগির নিয়ম। ফটিকদার দলের কড়া নিয়ম। রোজগার একেবারে সমান ভাগ করতে হবে। সবাই আলাদা ভাবে পুরো টাকাটা তুলে দেবে ফটিকদার হাতে, তার পর যার যা প্রাপ্য, সেই অনুযায়ী ফটিকদা তাকে
‘হপ্তা’ দেবে।

তাকে অবশ্য অন্যদের চেয়ে অনেকটাই বেশি দিত ফটিকদা। তাও এই সমান ভাগাভাগির ব্যাপারটা ভাল লাগত না পল্টনের। পকেটমারির কাজে তখন এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছে ফটিক, যে সে অনায়াসে ফটিকদার দল ছেড়ে নিজে স্বাধীন ভাবে উপার্জন করতে পারে। কিন্তু দল ছাড়লে তাকে শিয়ালদাও ছাড়তে হবে। আলাদা হয়ে গেলে তাকে নিজের এলাকায় কিছুতেই থাকতে দেবে না ফটিকদা, এটা পল্টন জানে।

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কলকাতা শহরের এই এলাকাটাকেই সে জানে। এই এলাকার অলিগলি, রাস্তার মোড়, দোকানের খাঁজেই তার বড় হয়ে ওঠা। এখানেই তার বন্ধুবান্ধব। এ সব ছেড়ে কোথায় যাবে সে? এক বার ছেড়ে চলে গেলে হয়তো এই এলাকায় আর ঢুকতেই পারবে না!

এ সব নিয়েই একটা দোটানার মধ্যে ছিল পল্টন। আর এর মধ্যেই হঠাৎ এক দিন সেই মেয়েটির আবির্ভাব!

সেই সপ্তদশী মেয়েটাই যে বছর তিনেক আগেকার ওই বালক, প্রথমে বিশ্বাসই করেনি পল্টন। সঙ্গের বুড়োটা আবার দেহাতি। পাত্তাই দিত না পল্টন, যদি না মেয়েটা হাত বাড়িয়ে তার দিকে বাহারি চিরুনিটা এগিয়ে দিত!

সাদা রঙের খাপের এক পাশে চাপ দিলে বেরিয়ে আসে কালো রঙের চিরুনিটা। খাপ বা চিরুনি, কোনওটাই সস্তা প্লাস্টিকের নয়, কোনও একটা ভারী, মসৃণ পাথরের মতো জিনিস দিয়ে তৈরি। বুলাকিদা পরে দেখে বলেছিল, খাপটা নাকি হাতির দাঁতের। খাপের দু’প্রান্তে রুপোর কাজ করা। চিরুনিটাও কোনও পাথর জাতীয় কিছুর তৈরি। দাঁতগুলো খুব সরু করে কাটা। ধবধবে সাদা খাপ, চকচক করছে কালো চিরুনি। জিনিসটার একটা আলাদা জেল্লা আছে।

ধর্মতলার মিনিবাসে এক জনকে প্যান্টের হিপ-পকেট থেকে বার করে চুল আঁচড়াতে দেখেছিল। বছর ত্রিশের এক যুবক। তার পকেট কেটে মানিব্যাগের সঙ্গে চিরুনিটাও বার করে নেওয়া কোনও ব্যাপার ছিল না। জিনিসটা প্রাণে ধরে ফটিকদার হাতে তুলে দিতে ইচ্ছে করেনি। তাই ফটিকদার ডেরায় যাবার আগেই রতনের হাতে তুলে দেয় চিরুনিটা। তার পরের দিন থেকেই রতনকে আর দেখতে পায়নি সে!

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement