পূর্বানুবৃত্তি: বড়বাবু, মি. হালদার, গৌরবাবু প্রমুখের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে চিড়িয়াখানার জন্য আরও কী-কী ভেবে রেখেছে অনিকেত। কথায়-কথায় অনিকেত তাঁদের
বলে, পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেই একাধিক বার
প্রাণ সংশয় হতে বসেছিল তার। অতীতে লালমোহনবাবু, কর্মকর্তা ধীরেন ধরের সঙ্গে আপস করতে বললেও রাজি হয়নি অনিকেত। সরাসরি ধীরেনবাবুর মুখোমুখি হয়েছিল সে। প্রস্তাব দিয়েছিল যৌথ ভাবে কাজ করার...
বেশ খানিক ক্ষণ চুপচাপ। যেন পরিস্থিতিটা হজম করতে ডাকসাইটে ধীরেনবাবুর সময় লাগছে। আসলে উনি কথার প্যাঁচে পড়ে গিয়েছেন। নিজে অভিযোগ করেছেন অথচ ক্ষমতাশালী জনপ্রতিনিধি হয়েও যদি সাহায্য না করেন উচ্ছেদ-অভিযানে, তা হলে খুবই খারাপ দেখাবে। অনেক ভাবনাচিন্তা করে উনি বললেন, ‘‘ঠিক্যেই আছে, কাল দুপ্পর একটার সময়, মানে খাওয়া-দাওয়া সেইরে রওনা দেওয়া যাব্যেক, কয়েকখান তো ঘর বান্যাইছে ফরেস্টের গাছপালা কেট্যে, মনে হয় ঘণ্টাতিনেকের মধ্যে কাজ সেইরে সন্ধ্যার আগে উখান থেকে বেরিয়ে আসা যাব্যেক।’’
স্যরের গলা পাওয়া গেল, ‘‘অনেক-অনেক ধন্যবাদ আপনার সহযোগিতার জন্য, তবে বলে রাখি, আপনি না যাওয়া পর্যন্ত অভিযান শুরু হবে না। আজ আসি তা হলে!’’
কর্মকর্তাকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে উনি রেঞ্জ অফিসে ফিরে বললেন, ‘‘গোপালবাবু, জায়গাটা কোথায় সেটা আমাদের একটু বুঝিয়ে দিন তো ম্যাপ থেকে, আমি বৃন্দাবনকে নিয়ে এক বার রেকি করে আসি আজই। যাতে কাল অ্যাকশনের আগে আমাদের প্ল্যান ছকতে সুবিধে হয়। এখনই যদি বেরিয়ে যাই তা হলে দু’ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসতে পারব। আপনারা তত ক্ষণ আপনাদের অ্যাকাউন্টের কাজ সারুন, আমি ফিরে এসে কালকের প্ল্যান ফাইনাল করব।’’
বেন্দা ছাড়া আর কেউ জানে না কর্মকর্তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে। তাই একটু ইতস্তত করে লালমোহনবাবু বলেই ফেললেন, ‘‘আর একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে দেখলে ভাল হত না, স্যর?’’
বোসস্যর উত্তর দিলেন, ‘‘নাহ্, আর সময় নিলে বরং আমার সময় বেশি খারাপ হবে। মনে হচ্ছে, ধীরেনবাবুর উইক পয়েন্ট আমি ধরতে পেরেছি। তাই শুভস্য শীঘ্রম। পরে বুঝতে পারবেন কেন তাড়াহুড়ো করছি।’’
বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরতে-বেরতে ওদের কানে আসে, গোপালবাবু বলছে, ‘‘আপনি রুকেন না মোহনবাবু উঁয়াদের, যার যম্যের দুয়ারে যাবার ইচ্ছে হইঁচে, সে যাগ ক্যানে! উয়ারা য্যাখন কাঁড়-সড়কি-ফারসা লিয়ে ঘিরব্যেক, ত্যাখন হামার কথাটো মিঠ্যা লাইগব্যাক সায়েবের। নিজের চক্ষে তো এমসিসি-র ভৈতিক করাটো উনি দ্যাখেন নাই, তাই কত্ত ধানে কত্ত চাল, সিটা পেরতক্ষ যাওয়াটাই ভাল্য হব্যেক।’’
আর কোনও কথা শুনতে পাওয়া যায় না। স্যর ওকে বলেন, ‘‘গোপালবাবুর ‘ভৈতিক’ কথাটা বোধ হচ্ছে ভয় থেকে উৎপন্ন হয়েছে, ভূত থেকে নয়, কী বলো বৃন্দাবন?’’
বৃন্দাবন আর কী বলবে এই উটকো ঝামেলায় পড়ে? এক বার ভাবল যে বলেই ফেলে, ওই বিশেষ জায়গায় কী ঘটেছিল আজ থেকে সাত-আট বছর আগে। তার পর চিন্তা করল জায়গাটা দেখে ফেরার পথে ঘটনাটা স্যরকে জানাবে সাবধান করে দেওয়ার জন্য। এই লোকটার না হয় প্রাণের মায়া নেই, তা বলে অন্যদের প্রাণের দামও দেবে না না কি? ও যা আন্দাজ করছে, তা সত্যি হলে আজই শেষ বারের মতো ওখানে যাওয়া যাবে, কালকে যাওয়ার প্রশই উঠবে না। বাজার পার হয়ে মসৃণ পিচের রাস্তায় বেন্দা ফুল স্পিডে বাইকটা চালিয়ে দেয়। কারণ বিহার বর্ডারের দিকে শেষ তিন-সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা বলে কিছু নেই। আলগা নুড়িপাথরের উপর দিয়ে বাইক ঠেলে নিয়ে যেতে হবে, তাও আবার গোটাচারেক ঝোরা পড়বে। যথেষ্ট দুর্গম রাস্তা এবং পুরনো একটা আতঙ্কের স্মৃতি তাড়া করে বলে, ঢ্যাঙাডুংরির থেকে সজ্ঞানে একটা দূরত্ব ও বজায় রেখে এসেছে গত কয়েক বছর।
এক ঘণ্টার মতো লাগল প্রথম ঝোরাটার কাছে পৌঁছতে, এর পর একটা-একটা করে ঝোরা পার হতে আধ ঘণ্টা সময় গেল। টিলাটার তলা থেকে একটা-দুটো করে কুঁড়েঘর শুরু হয়েছে। হতশ্রী দশা তাদের। স্যর তো বলেই ফেললেন, ‘‘বাবাঃ! এগুলো তো সুকুমার রায়ের বুড়ির বাড়িকেও হার মানায়, মনে হচ্ছে একটু ঠেলা দিলেই সব ভেঙেচুরে পড়ে যাবে। এত দুর্দশার মধ্যেও মানুষ বাস করে? তবে এই এলাকাটা মনে হচ্ছে খাসজমি হবে, বনভূমি নয়। ভাগ্যি ভাল যে, এই সব বাড়ি ভাঙার মতো পাপকাজ করতে হবে না আমাদের, কী বলো?’’
বেন্দা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে চার পাশ, আর ওর চোখের সামনে ভাসছে একটা পাথুরে চাট্টানের উপর পড়ে থাকা খাকি ইউনিফর্ম পরা হাত-পা ছড়ানো একটা কবন্ধ লাশ। রক্তের গড়িয়ে যাওয়া ধারা শুকিয়ে গিয়েছে, চারিদিকে মাছি ভনভন করছে। কাটা মুন্ডুটা গড়িয়ে চলে গিয়েছে কয়েক ফুট দূরে। ওর দূরসম্পর্কের কাকা শ্রাবণ কুম্ভকার আতঙ্ক মেশানো দৃষ্টিতে যেন ওরই দিকে চেয়ে আছে। পুলিশের দঙ্গলের মাঝখানে থেকেও ওর শরীর এলিয়ে আসছে ভয়ে। হাতে হাতকড়া লাগানো, কোমরে মোটা দড়ি পরানো তালঢ্যাঙা লোকটা টকটকে লাল চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে। যেন ছাড়া পেলে বেন্দারও মুন্ডুটা ধড় থেকে আলাদা করে দেবে। বেন্দা সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে আছে লম্বা লোকটার দিকে, খুনিটার কপালের মাঝ বরাবর প্রমাণ-সাইজ়ের ভুরকুন্ডো ফলের মতো একটা আব।
মন এ দিকে চিন্তা করে যাচ্ছিল ঝড়ের বেগে, ও দিকে বেন্দার বাইক ক্রমশ চড়াই পাকদণ্ডী বেয়ে উঠে যাচ্ছিল ডুংরির উপর দিকে। সর্পিল পথ আর তার দু’দিকে ছড়ানো-ছিটানো বাড়িঘরের অপভ্রংশগুলোকে ছাড়িয়ে এক সময় ওরা পৌঁছল ডুংরির মাথার প্রায় সমতল অংশে। মাঠের মতো জায়গাটার মাঝামাঝি একটা ঝাঁকড়া মহুল গাছ, সেটার নীচে বেন্দা গাড়ি দাঁড় করায়। চার পাশে ওরা তাকিয়ে দেখে। বুঝতে পারে এখানে কিছু দিন আগেও ভাল একটা প্ল্যান্টেশন ছিল। মাটির কয়েক ইঞ্চি উপরে কাটা গাছের গুঁড়ির অবশেষগুলো তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সেই গাছগুলোরই কাঁচা লগ দিয়ে এলোমেলো ভাবে দশ-বারোটা সদ্য-তৈরি কুঁড়েঘর, কয়েকটার মাথায় তালপাতা দিয়ে ছাদ করা হয়েছে আর বাকিগুলোর উপরে হালকা করে খড় দিয়ে ছাওয়া। সবগুলোতেই এলোমেলো ভাবে কাদা-মাটি লেপা। স্যর আপনমনে ঘাড় নাড়তে নাড়তে বিড়বিড় করে, ‘‘কাজটা মোটেও ভাল হয়নি। গ্রামে ঢোকার মুখে এদের দারিদ্র দেখে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু তা বলে এই ভাবে কচিকাঁচা গাছগুলো কেটে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা মানা সম্ভব নয়। চল বৃন্দাবন, ফিরে গিয়ে কালকের প্ল্যান ফাইনাল করি।’’
ওরা যখন একই রাস্তা ধরে নীচে ফিরছে, তখন এক জন-দু’জন করে বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা রাস্তার দু’পাশে জড়ো হতে লাগল। একটা মোড়ে এসে স্যর বাইক দাঁড় করিয়ে কয়েকজনকে ডেকে বললেন, ‘‘নীচে এত জায়গা থাকতে তোমরা উপরে গিয়ে ছোট-ছোট গাছগুলো নষ্ট করে ঘর বানাতে গেলে কেন? কাজটা খুবই বেআইনি। এ ভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে জমি জবরদখল করতে পারো না তোমরা। কাল সকাল হওয়ার আগেই তোমরা ওই ঘরগুলো ভেঙে কাঠগুলো এক জায়গায় জড়ো করে রাখবে, যাতে আমরা ওগুলো সিজ় করে নিয়ে যেতে পারি। চেষ্টা করব সামনের সিজ়নে আবার এখানে গাছ লাগাতে, এ বার কিন্তু তোমরাই গাছগুলোকে ভালবেসে বাঁচাবে, ঠিক আছে?’’ হতদরিদ্র, জরাজীর্ণ মানুষগুলো কেবল ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে, কারও কাছ থেকেই কোনও জবাব আসে না।
ঝোরাগুলো আর খারাপ রাস্তাটা পার হয়ে পিচরাস্তায় উঠে বেন্দা বোসস্যরকে সাত বছর আগের ঘটনাটা বর্ণনা করে। ওর পাড়াতুতো কাকা শ্রাবণ ছিল ফরেস্ট গার্ড। ওর ডিউটি পড়ত এ দিকটাতেই। তখন ওই প্ল্যান্টেশন সবে তৈরি হয়েছে, প্রধানত সেটা পাহারা দেওয়াই ছিল ওর কাজ। পুরো ঘটনাটা বেন্দা সঠিক ভাবে বলতে পারবে না যে, ভিতরে কোনও নারীঘটিত ব্যাপার ছিল কি না। যদিও খুনের আসামি সেটাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখানোয় আদালতে বেশ কিছুটা সুবিধে পায়। কর্তব্যরত এক সরকারি কর্মচারীকে খুন করেও মাত্র সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় আদায় করে। বেন্দাকে লাশ সনাক্ত করার জন্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়, ও ক্যাজ়ুয়াল কর্মী হিসেবে পাশের প্ল্যান্টেশন পাহারা দিচ্ছিল। ওর বয়েস চবিবশ-পঁচিশ তখন। কাকার গলাকাটা লাশ আর চোখ-খোলা কাটামুন্ডু ওকে মাসখানেক ঘুমের মধ্যেও তাড়া করে বেড়াত। বর্ণনার শেষে বেন্দা অনুনয়ের সুরে বলে, ‘‘হামার কথাটো মানেন আজ্ঞা, ইয়াদের ঘর ভাঙার জইন্যে কাল কুনো প্ল্যান নাই করেন, ত ভাল্য হয় স্যর! ই জাগাটো এমসিসি-দের পুরানো ঘাঁটি বট্যে, খুনেটাও ঐ দলেরই পাণ্ডা ছিল্য, হয়তো লোকটা অ্যাত্তদিনে জেল থেক্যে খালাস পাঁইছ্যে আর ইখান্যেই কুথাও ঘাঁটি বানাইছ্যে।’’
স্যর ওর কথাগুলো চুপচাপ শুনলেন, তবে গুরুত্ব যে দেননি সেটা বোঝা গেল অফিসে ফিরে সব বিটবাবুদের নিয়ে মিটিং করার সময়। সেই আলোচনার সময় লোকাল গ্রুপ-ডি কর্মচারীদেরও ডেকে নেওয়া হয়েছিল। স্যর প্রথমেই বললেন, ‘‘আমি জানি, কাল যে অপারেশনটা করতে যাচ্ছি সেটাকে বাকি সবাই হঠকারিতা বলবেন, কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই। যদি এটা না করি, ধীরেনবাবু আর তাঁর দল তা হলে পেয়ে বসবে। আমি চলে যাব, কিন্তু সেই চাপ আপনাদের উপরে থেকেই যাবে। আবার ও দিকে গ্রামের লোকদের গাছ কেটে ফরেস্টের জমি জবরদখল করতে তাতাচ্ছে কিছু বাইরের লোক। হয়তো তারা এমসিসি-র সদস্য। গ্রামের লোকজনের চেহারা দেখে আমি বুঝেছি, নিজে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা করার দুঃসাহস এদের নেই। তবে এক বার ঘুরে এসে ছেড়ে দিলে এই আইনবিরোধী এবং সরকারবিরোধী প্রবণতাটা ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়াবে, তখন বর্ডার-ঘেঁষা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় আর ফরেস্টের কোনও জমি থাকবে না। সব বেদখল হয়ে যাবে। তাই আশা করব, কালকের জবরদখল উচ্ছেদ-অভিযানে আপনারা সশরীরে সামিল হবেন। এ বার আমরা স্ট্র্যাটেজি ঠিক করব কালকের জন্য।’’
কথাগুলো শোনার পর কারও পক্ষেই আর বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব নয়, তাই সবাই চুপ করে ওঁর পরের দিনের পরিকল্পনা শোনে। দু’-এক জন বিটবাবু এক-আধটা প্রশ্ন করে, কিছু পরামর্শও দেয়। তবে বেন্দা বুঝতে পারে, মন থেকে কেউই কাজটা পছন্দ করছে না। এর পর দুপুরের খাওয়ার জন্য আলোচনায় ছেদ পড়তে স্যর যখন উঠে গেলেন, তখন বিটবাবুরা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, যাওয়া তো আটকানো যাচ্ছে না, তবে ওখানে ‘যে যার বাঁ দিক বুঝে নাও’ নীতি নিয়ে চলতে হবে। যিনি এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সব দায়িত্বও শেষমেশ তাঁরই থাকবে। নিজের ভাল তিনি নিজে বুঝে নেবেন, বাকিরাও নিজের-নিজেরটা বুঝে নেবে। মোদ্দা কথা, বিপদ ঘনীভূত বুঝলে যে যার সুবিধে মতো টেনে দৌড় দেবে। কথাগুলো বেন্দাও শুনল, কিন্তু স্যরকে জানাবে না বলে ঠিক করল। প্রথমত, জানাজানি হলে ও আরও একঘরে হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, ও আগেই সাবধান করেছে, কিন্তু উনি সেটায় গুরুত্ব দেননি। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে, উনি যদি না বোঝেন তার দায়িত্ব কী বেন্দার?
সেই রাতটা বেন্দার কাছে এক দুঃস্বপ্নের রাত। বলতে গেলে ভয়ঙ্কর সব হাড় হিম-করা স্বপ্ন দেখতে-দেখতেই সকাল হয়ে গেল। সব স্বপ্নই ঘুরেফিরে এক। একটা তালঢ্যাঙা লোক রক্তমাখা ফারসা হাতে নিয়ে ওকে তাড়া করে আসছে। তার চোখদু’টো টকটকে লাল আর কপালে একটা বড়সড় আব, পাকা ভুরকুন্ডো ফলের সাইজ়ের। পালাতে-পালাতে যখনই ওর দম ফুরিয়ে যাচ্ছে, ধরা পড়ে-পড়ে অবস্থা, ঠিক তখনই প্রতি বার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে! ভোর চারটে থেকে ও উঠে বিছানায় বসেই রইল, পাছে ঘুমোলে লোকটা তাল বুঝে এক কোপে ওর গলাটা উড়িয়ে দেয়!
আটটা বিট আর হেডকোয়ার্টার মিলিয়ে মোট বিরানববই জন স্টাফ, তার মধ্যে থেকে পঁচিশ জনকে বেছে নেওয়া হল। এরা নেশাভাঙ কম করে আর প্রয়োজন পড়লে দৌড়তে পারে। বেলা সাড়ে-বারোটার মধ্যে সবাই খেয়েদেয়ে রেডি। কেবল ধীরেনবাবুর আসার অপেক্ষা। দেরি দেখে স্যর দু’বার বেন্দাকে ব্লকে পাঠিয়েছেন, ও ঘুরে এসেছে একই উত্তর নিয়ে, উনি অফিসে আসেননি। প্রায় দেড়টার সময় ধীরেনবাবুর লজ্ঝড়ে মোপেডটার আওয়াজ পাওয়া গেল। সবাই টানটান হয়ে দাঁড়াল।
ও হরি! মোপেড নিয়ে যে ঢুকল, তাকে ধীরেন ধরের উল্টো সংস্করণ বলা যায়। ধীরেনবাবুর চেহারা রোগা, লম্বা, কুচকুচে কালো, বৃষকাষ্ঠ-সুলভ শরীরের গড়ন। আর এখন যে এল, সে একটা ফুটবল-বিশেষ। বেঁটে, জালার মতো পেট। তবে গায়ের রংটায় ধীরেনবাবুর সঙ্গে খুব মিল! লোকটা মোপেড থেকে নেমেই ডান হাতটা মুঠো করে কপাল আর বুকের মাঝামাঝি এনে একটা হাফ-স্যালুটের মতো কী যেন ভঙ্গি করে পকেট থেকে একটা চিঠি বার করে স্যরকে দিল। স্যর হাঁ করে সেই অপরূপ মূর্তির দিকে তাকিয়ে ছিলেন।