রূপান্তরকামিতা সোজা জিনিস না। ব্রুস জেনার এক ধাক্কায় ক্যাটলিন হলেন, আর ভোল বদলাল পাবলিকের। অ্যাদ্দিন ‘মেরুদণ্ডহীন’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে যারা রেটে নপুংসক, ক্লীব আর হিজড়া বলে গেছে, ছেলেদের মেয়েলিপনার আদিখ্যেতা দেখলে ‘লেডিস’ আর ‘অ্যাই গরু যাঃ’ বলে পোঁটা গেলে দিয়েছে, মিডিয়ার ধাক্কায় এখন সবাই রূপান্তরিত। বাংলাদেশের ব্লগারদের যাবতীয় খুনিরা পগার পার, কেবল ওয়াশিকুর বাবু-র এক জন খুনি ধরা পড়েছে জনৈক ‘হিজড়া’র হাতে, শুনে চোখ গোল-গোল করে ‘দেকেচো মানুষ এখন হিজড়ারও অধম’ বলে এই সে-দিনও জনতা বিস্ময়াভিভূত হয়েছে। ছেলেদের ছেলে হতে হবে, মেয়েদের মেয়ে, এর চৌখুপ্পির বাইরে গেলেই তুমুল খিল্লি উড়েছে, ক্যারিকেচারের নামে স্বয়ং ঋতুপর্ণ ঘোষেরও হাতে হ্যারিকেন ধরানো হয়েছে টিভি চ্যানেলে, কিন্তু সে-সব কচলে আর লাভ নেই। আপাতত সব্বাই এলজিবিটি-প্রেমী। এক ছবির ধাক্কায় ইতিহাস কুপোকাত, সম আর রূপান্তরপ্রেম সাড়ে তিন দিনেই জিন-এ ঢুকে মিউটেশন হয়ে গেছে। এখন চার দিকে রূপান্তরের রূপকথা, পলিটিকাল কারেক্টনেসের তেপান্তর। এখন ক্লাস থ্রি-র ছানাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে গ্রিসে যেমন আদি থার্ড জেন্ডার ছিলেন আলেকজেন্ডার, তেমনই পুরাকাল থেকেই আমাদেরও তিনটে লিঙ্গ— পুং, স্ত্রী আর কলিঙ্গ। এর ঠেলাতেই চণ্ডাশোক ধর্মাশোক হয়েছিলেন, এখনও স্তম্ভ হয়ে সেই লিঙ্গচেতনা নোটে-নোটে হাতে-হাতে ঘোরে। ক্লাস সিক্সের ছোকরাও জানে, স্বয়ং কবিগুরু এই নিয়ে কঠিন এক কবিতা লিখে গেছেন, ‘ফান গে তরী বেয়ে যে আসে পারে, দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে’। এখানে ও-পার থেকে এ-পারে আসার অর্থ যে রূপান্তরকামিতা, সেটা অবশ্য পণ্ডিতরা ছাড়া কেউ জানে না। তবে গে ব্যাপারটা ইজি, দুধের শিশুরাও জানে গে কাপল’এর রূপকথা— লালকমলের আ-গে নীলকমল জা-গে। ইংলিশ মিডিয়াম জানে লেসবিয়ান পেলেই আহ্লাদে জাপটে দমবন্ধ করে দিতে হয়, আদি লেসবিয়ান সাফো-র নামানুসারে যাকে সাফোকেশন বলে। আপামর বিজ্ঞজন জানে আমাদের বিপ্লব শুরু গে-ভরা দিয়ে, ট্র্যাজেডির শেষ রাইখস্ট্যা-গে। ভোকাবুলারি জানে আপনি আগ-গে। এ ভোকাবুলারি টিকবে ক’দিন, সেটা অবশ্য কেউ জানে না। আপাতত দোস্তির রয়্যালস্ট্যা-গে, আঁতলামির লিটল ম্যা-গে, হালফ্যাশনের হ্যাশট্যা-গে, সর্বত্র সমকাম। কিন্তু সাড়ে চার দিন পরেই ফ্যাশন শেষে আবার রূপান্তর হবে। তখন পাড়ায় সমকামী জুটি এলে আবার আঙুল দেখিয়ে ‘দেখ দেখ হোমো এসেছে’ বলা হবে, যেন চিড়িয়াখানার জীব। লেসবিয়ান মেয়েটি আত্মহত্যা করলে ‘অন্তত ফ্যামিলির মুখটা তো বাঁচিয়েছে’ বলে বাড়ির লোক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কিন্তু সে-সব পরের কথা, এখনও বং-গে মাথার উপর চন্দ্রসূর্য, জাতীয় পতাকায় জ্বলজ্বল করছে গে-রুয়া। চার দিন পরে যা হবার হবে, আপাতত ক্যাটলিন, হুজুগে স্লাইট রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো তুমি যাবার আ-গে। রূপান্তর তো সোজা জিনিস না।
bsaikat@gmail.com