Kolkata International Book Fair 2025

কলকাতার কুম্ভমেলায়

সম্বৎসর যতই মাটি মেলা, শাড়ির মেলা, খাদ্যমেলা হোক না কেন, বইমেলাই এই শহরের এক এবং একমাত্র কুম্ভমেলা। প্রয়াগসঙ্গমে যেমন নৌকো, এখানে তেমন ‘বইমেলা’-সাঁটা বাস। স্নানের আলাদা আলাদা ঘাট, মেলার তেমনই নানা নম্বরের গেট। শনি-রবিবারের ভিড়াক্রান্ত সন্ধেই যেন শাহি স্নানের লগ্ন। এ বারে একই সময়ে পাশাপাশি চলবে জ্ঞান ও পুণ্যার্জনের দুই মহোৎসব।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪২
Share:

দর্শনার্থী: (বাঁ দিকে) কুম্ভমেলায় স্নানের অপেক্ষায় ঘাটে পুণ্যার্থীরা। কলকাতা বইমেলায় পাঠকের স্রোত (ডান দিকে)।

ফুটপাত ধরে চলেছে বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, খড়্গপুর, মেচেদা, নৈহাটি, কল্যাণী, করুণাময়ী। বিচিত্র তার রূপ। কেউ জিন্‌স আর রঙিন টপ, ঘাড়ে দোলানো বেণি। পুরুষরা হেঁটে চলেছে ত্রস্তপদে, কেউ পাজামা-পাঞ্জাবি, কেউ বা জিন্‌স। কারও কাঁধে ঝোলা, কারও বা কানে ফোন, হাতে কাগজ-কাটা স্টল নম্বরের মানচিত্র। রাস্তা দিয়ে বাসগুলি ‘বইমেলা, বইমেলা’ হাঁকতে হাঁকতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ফুটপাতের ধারে দড়ি ধরে পুলিশ, কখনও কখনও তারা বাসের গতি রোধ করে দড়ি খুলে দিচ্ছে, লোকজন পিলপিল করে রাস্তা পেরোতে চোঁ-চাঁ দৌড় দিচ্ছে। অনেক বাসের গায়ে ‘বইমেলা’ সাঁটা বোর্ড। মহাকুম্ভের সময় প্রয়াগসঙ্গমে নৌকোর সংখ্যা বাড়ে, কলকাতায় ‘বইমেলা’ সাঁটা বাস। সম্বৎসর যতই মাটি মেলা, শাড়ির মেলা, খাদ্যমেলা হোক, বইমেলাই এই শহরের এক এবং একমাত্র কুম্ভমেলা। লোকবিশ্বাস— ওখানে পুণ্য অর্জিত হয়, এখানে জ্ঞান।

Advertisement

মিল ঘাটে ঘাটে। কুম্ভনগরী প্রয়াগরাজের আসল কথা, গঙ্গার দিকে দারাগঞ্জ না যমুনার দিকে আরাইল কোথায় উঠেছেন, কোথাকার তাঁবু কোথায় রেখেছে সেটি মাথায় ছকে নেওয়া। বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই উজিয়ে সঙ্গমঘাটে স্নান করতে যান, তাঁদের ধারণা সেখানে বেশি পুণ্য। কিন্তু প্রয়াগরাজে রসুলাবাদ ঘাট, শঙ্কর ঘাট, দ্রৌপদী ঘাট, শিবকোটি ঘাট ইত্যাদি হরেক ঘাট। বারাণসীর মতো দশাশ্বমেধ, গোঘাট, রাম ঘাটও আছে। প্রায় একশো ঘাট। তবে সবই জলের ধারে কাঁচা ঘাট, বারাণসীর মতো বাঁধানো নয়। কলকাতার মহাকুম্ভে ঘাট বেয়ে নয়, গেট দিয়ে খুঁজে নিতে হবে দিকচিহ্ন। কোথায় আপনার আকাঙ্ক্ষিত স্টল? দুই না পাঁচ নম্বর গেটের কাছে?

তাঁবুকাহিনিই বা বাকি থাকে কেন? কুম্ভের প্রয়াগরাজকে বিদেশিরা এক কথায় বলেন, ‘টেন্ট সিটি’ বা তাঁবুনগরী। হরিদ্বার, নাসিক বা উজ্জয়িনীর মেলায় একটা শহরের সাপোর্ট পাওয়া যায়। অথচ প্রয়াগরাজ স্টেশন বা শহর থেকে প্রায় সাড়ে নয় কিমি দূরে গঙ্গা-যমুনা সঙ্গমের পাশে সারা বছরই নিশ্ছিদ্র, জনহীন বালিয়াড়ি। বইমেলাও তাই। অন্য সময় সল্ট লেক করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডের পাশের যে মাঠ বালকের ক্রীড়াভূমি, যুবক-যুবতীদের প্রেমভূমি, এখন দশ দিন সে পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশকদের ছোট-বড় অজস্র তাঁবুতে ভর্তি, মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে তার নামই হয়ে গিয়েছে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

Advertisement

গদ্যশিল্পী: সমরেশ বসু, নবনীতা দেবসেন এবং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এঁদের কলমেও প্রাণ পেয়েছে কুম্ভমেলার কথা।

সেই অনাদি সত্যযুগের কথা মনে পড়ে। ময়দান, পার্ক সার্কাস থেকে মিলনমেলা, কত জায়গায় যে কত বইমেলা-স্মৃতি! প্রতিটি জায়গাতেই কাঠের পাটাতন, ধুলোভরা মাঠে বৃষ্টি পড়লেই সাফাইকর্মীরা প্রবল ভাবে জল ছেটাতেন। পরের দিন, আমাদের মতো মেলা-রিপোর্টারেরা অনেকেই কপিতে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করতাম, ‘ধুলোরে মারিয়া করিয়া দিল কাদা।’ কুম্ভেও তা-ই। নদীর উপর নতুন সব বেইলি ব্রিজ, বালিয়াড়িতে সার সার কাঠের পাটাতন। এখানে নদী নেই, সেতু নেই, কিন্তু পাটাতন-সর্বস্বতা আছে।

কুম্ভ কি শুধু স্নানের জন্য? আগামী বুধবার, ২৯ জানুয়ারি প্রয়াগকুম্ভে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাহি স্নানের লগ্ন… মৌনী অমাবস্যা। এ দিন আমাদের মহালয়ার মতো, গঙ্গাস্নানের পর পিতৃপুরুষ ও নারায়ণের উদ্দেশে তর্পণ করে মৌনব্রত পালন করতে হয়, কুম্ভের অন্যতম পবিত্র স্নানলগ্ন। সকালের স্নানলগ্নের পর কেউ ডাকছেন অমুক আখড়ায় ভোজনসেবার জন্য, কেউ বা হাতে গুঁজে দিচ্ছেন সন্ধ্যায় গীতাপাঠের আসরের প্যামফ্লেট। সাধু-মহাত্মাদের প্রবাদ-প্রবচন, সরকারি সাফল্য, সব মিলিয়ে কত যে স্টল! বইমেলাও তা-ই। এ বার মৌনী অমাবস্যার গায়ে গায়ে ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধন। তবে সে দিন মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মোহন্তরাই থাকবেন, আপনার-আমার মতো আমজনতা পরের দিন। শুধু বই নয়, টিভির সঞ্চালনা, কুইজ় প্রতিযোগিতা, পোর্ট্রেট আঁকা সাধনার সব ধারাই সেই মহাকুম্ভে লীন। প্রবচনের কথাসরিৎসাগর শোনার জন্য যে বিশেষ আখড়া, তার নাম ‘মমার্ত’। গিল্ডের ইউবিআই অডিটোরিয়াম ও হরেক প্রকাশকের সাধনভূমে আরও হরেক কথকতা। কেউ মাইকে ডাকবে, কেউ বা হাতে প্রকাশিত বইয়ের তালিকা গুঁজে দেবে। খাবারের বেলায় ওখানে নিরামিষ, এখানে বেনফিশ, এই যা তফাত!

কলকাতার কুম্ভে অবশ্য পাঁজিপুঁথি মিলিয়ে স্নানলগ্ন থাকে না। শনি, রবি ও যে কোনও ছুটির বিকেলে সেখানে ভিড়াক্রান্ত শাহি স্নান। কুম্ভের শাহি স্নানে বলদে টানা রথ, হাতি, উট, ঘোড়ায় চেপে গায়ে ছাই মেখে নাগা সাধুরা আসেন। বড় বড় সাধু বা মণ্ডলেশ্বর, মহামণ্ডলেশ্বরদের দেখলেই জনতা প্রণাম করতে ছুটে যায়। কলকাতার কুম্ভে সেলিব্রিটি লেখকরাই মহামণ্ডলেশ্বর। সমরেশ বসু থেকে সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ মজুমদার সকলের দিকেই অটোগ্রাফের খাতা তাক করে ছুটে যেত লোকজন। এখন পুজোর উপচার বদলেছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, “আরে না না, অটোগ্রাফ কেউ নেয় না। এখন সবাই সেলফি তুলতে চায়।” সাহিত্যজগতের বড় সাধু হওয়া কম কথা? ফেসবুক থেকে খবরের কাগজ সর্বত্র মুখ ঢেকে যাবে বিজ্ঞাপনে, অমুক দিন অমুক লেখক স্টলে উপস্থিত থাকবেন, তাঁর স্বাক্ষরিত বই পাওয়া যাবে!

কুম্ভে বড় সাধু ছাড়া ছোট সাধুরাও তাঁবু পাতেন, ভাব জমিয়ে হাত পাতলে গঞ্জিকা প্রসাদ পাওয়া যায়। কলকাতার কুম্ভে তেজিয়ান সাধুদেরও নিজস্ব আখড়া থাকে, তার নাম ‘লিটল ম্যাগাজ়িন প্যাভিলিয়ন।’ লিটল ম্যাগের কারা টেবিল পেয়েছে, কারা পায়নি তা নিয়ে একদা গিল্ডকর্তাদের সঙ্গে প্রচুর তর্কবিতর্ক হত। সদ্যপ্রয়াত কমল চক্রবর্তীর ‘কৌরব’-এর মতো অনেক পত্রিকা আগে টেবিলে বসত, পরে তারা স্টলের অধিকারী হয়। এখন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, নবারুণ ভট্টাচার্য, সুবিমল মিশ্র বা উদয়ন ঘোষের মতো সেই সব তেজস্বী ব্রহ্মর্ষিরা বিদায় নিয়েছেন। চার দিকে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হোমাগ্নিতে বিলকুল শান্তায়ন ঘটে গিয়েছে।

পুঁথিপত্র ও সন্ন্যাস

বইমেলার সঙ্গে কুম্ভের এই অর্বাচীন তুলনায় অনেকেই রুষ্ট হতে পারেন। কিন্তু আজও সন্ন্যাসের বিধিনিয়ম যাঁকে ছাড়া পূর্ণ হয় না, সেই বৈদান্তিক শঙ্করাচার্যের কাহিনিতেও তো লুকিয়ে আছে ‘জাবাল শ্রুতি’ নামের এক গৌণ উপনিষদ।

কেরলের কালাডি গ্রামে এখনও আছে বালক শঙ্করকে কুমিরে ধরার মূর্তি। বালক শঙ্করকে তাঁর বিধবা মা সন্ন্যাসগ্রহণের অনুমতি দিচ্ছিলেন না। সেই সময় বালক এক দিন নদীতে স্নান করতে যায়, কুমিরে ধরে। বালক চেঁচিয়ে বলে, ‘মা, আমাকে সন্ন্যাসের অনুমতি দাও। নইলে কুমির ছাড়বে না।’ মা অনুমতি দেন, শঙ্কর গৃহত্যাগী হয়ে সন্ন্যাস নেন।

অলৌকিকত্বে মাখা, চমৎকার কাহিনি। কিন্তু আসল ঘটনা অন্য। তখনও জনতার ধারণা, গার্হস্থশেষে বানপ্রস্থ ও তার পর সন্ন্যাস। ফলে বালক শঙ্করকে আগে বিয়ে-থা করে গৃহী হতে হবে, তার পর তো বার্ধক্যে সন্ন্যাস। শঙ্কর ‘জাবাল শ্রুতি’ নামে এক গৌণ উপনিষদের উদাহরণ দেন। সেই জাবাল শ্রুতি পরিষ্কার জানায়, ‘যদহরেব বিরজেৎ তদহরেব প্রব্রজেৎ।’ মানে, মনে বৈরাগ্য এলেই সন্ন্যাস নাও। আসল কথা হল, এটা প্রধান টেক্সট, ওটা অপ্রধান, এটা মুখ্য, ওটা গৌণ…পঠনরাজ্যে এ রকম কোনও ভাগাভাগি নেই। মুখ্য-গৌণ নির্বিচারে যথাসাধ্য সবই পড়তে হবে, ভূতপ্রেত, তন্ত্র, গোয়েন্দা, ক্লাসিকের ভিড় থেকে পছন্দসই বইটি কিনে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। বইমেলার ভিড়েও কি নেই এই অন্তরবার্তা?

কলকাতার কুম্ভসাহিত্য

কুম্ভমেলা নিয়ে বাঙালির সাহিত্য-সিনেমায় অজস্র ধরনের উপস্থাপনা, ভাবলে অবাক লাগে ভারতের অন্যান্য ভাষায় এ হেন কুম্ভযোগ প্রায় অনুপস্থিত।

কালকূটের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে সেটি থেকে ‘অমৃতকুম্ভ কি খোঁজ’ নামে হিন্দিতে সিনেমা করতে যান বিমল রায়। ‘দেবদাস’, ‘মধুমতী’ বা ‘দো বিঘা জ়মিন’-এর নিউ থিয়েটার্স-খ্যাত বিখ্যাত প্রযোজক ও পরিচালক। সেই সিনেমার তাগিদে বেশ কিছু ক্যামেরা-ফুটেজ তুলেছিলেন তিনি। কিন্ত ছবি তৈরির আগেই ১৯৬৬ সালে তাঁর মৃত্যু। বছর কয়েক আগে তাঁর পুত্র জয়বিমল রায় সেই নেগেটিভগুলি আচমকা স্টুডিয়োর এক ক্যানে খুঁজে পান। প্রায় ৭৮ মিনিটের ফুটেজ। পুত্র সেগুলি সম্পাদনা করে ১২ মিনিটে নিয়ে আসেন, তৈরি হয় ‘ইমেজেস অব কুম্ভমেলা’ নামে সংলাপহীন এক ছবি। নেটে ‘বিমল রায় কুম্ভমেলা’ দিয়ে সার্চ করলেই মিলবে সেটি।

বারো মিনিটের সেই তথ্যচিত্রে হারিয়ে যাওয়া এক বালক আছে, আছে সঙ্গমের নৌকো, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানে পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে তাঁবুনগরীর দিকে ভিড়ের যাত্রা। বহু পরে, ১৯৮২ সালে বাংলায় সেই উপন্যাস নিয়েই শুভেন্দু, অপর্ণা সেনদের নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন দিলীপ রায়। তিন দশক ধরে, হিন্দি বাংলা নির্বিশেষে চলচ্চিত্রকারদের কাছে ফুরোয়নি উপন্যাসের আবেদন।

শুধু খোঁড়া বলরামের মৃত্যুতেই থেমে যায়নি কলকাতার কুম্ভসাহিত্য। তার ঝুলিতে আছে স্বাধীনতার কয়েক বছর পর ব্রহ্মপুরে দুই নদীর সঙ্গমে ভিভিআইপি, নাগা সন্ন্যাসীতে ভর্তি পুলমেলায় স্নানের দিন দুর্ঘটনায় অজস্র মৃত্যুর কাহিনিও। আপাতত পুলমেলায় পদস্থ এক বাঙালি আমলার অবাক হওয়ার কাহিনি…

ব্রহ্মপুরের পুলমেলা

‘বালিয়াড়ি বেয়ে জিপটা দুর্গের নীচে পৌঁছতেই দীপঙ্কর চ্যাটার্জি অবাক হল। পুলমেলার সব রাস্তা আর বাঁধ তাঁবুতে ভর্তি। মাথায়, ঘাড়ে পিঠে তোশক ও রান্নার ডেকচি, ডেঁয়ো ঢাকনা, খাবারের বস্তা নিয়ে কাতারে কাতারে মানুষ। কাপড়ের ব্যাগ, বস্তা, বালতি, লাঠি, ঝান্ডা, গাঁদাফুলের মালা, সব কিছু নিয়েই চলেছে তারা। কেউ রোদ্দুরে হা-ক্লান্ত, বাচ্চাদের কোলে-কাঁখে নিয়ে পথ চলেছে। কেউ বা চলেছে গল্প করতে করতে, কেউ বা ভজন গাইতে গাইতে। শেষে মা গঙ্গার দর্শনে যাবতীয় ক্লান্তি ঘুচে তারা উৎফুল্ল। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, কালো, ফর্সা, গরিব, বড়লোক, ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল থেকে তামিল, কাশ্মীরি, গেরুয়াধারী সাধু, নাগা সাধু সবাই সেই ভিড়ে মিলেমিশে। ধূপ এবং গাঁজার গন্ধ, ঘাম এবং দুপুরের ভাত ফোটার গন্ধ, শিশুর কান্না, লাউডস্পিকারের চিৎকার থেকে মেয়েদের কীর্তন, পুলিশের চিল্লানি, রোদ্দুরে দূরে গঙ্গার জল চিকচিক করে ওঠা, যেখানে ভিড় নেই, বালির ওড়াউড়ি সবই যেন দীপঙ্করকে উদ্বেল করে তুলছিল।…’

এ তো মেলা শুরুর কথা। ব্রহ্মপুরের দুই নদীর সঙ্গমে দুর্গ, বালিয়াড়ি, নাগা সন্ন্যাসী, বাঁধের উপর পিলপিল করা মানুষের ভিড়, পুলমেলার আড়ালে কোন মেলার কথা বলছেন লেখক, পরিষ্কার। আর শেষের সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা? সে-ও তো দূর থেকে দেখেছিল এই বাঙালি আমলা…

‘জনতার মধ্যে আনন্দের চিৎকার উঠল। নাগা সাধুরা আসছেন। তরুণী ও মাঝবয়সি কয়েক জন মহিলা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে সেই নাগাদের প্রণাম করতে ছুটল। নাগা সাধুরা এই উপদ্রব পছন্দ করলেন না। তাঁরা ত্রিশূল উঁচিয়ে তেড়ে গেলেন।… আচমকা মিছিলটা থেমে গেল। কেন, কেউ জানে না। সবাই ভাবল, এখনই মিছিল এগোবে। কিন্তু সেটা হল না। ঢালু জায়গায় লোকের চাপ বাড়তে লাগল। মিছিল থমকে যাওয়ায় নতুন আসা জনতা ধাক্কাধাক্কি শুরু করল। ঢালু রাস্তা যেখানে শুরু, সেই উপরে দাঁড়ানো লোকগুলি দেখতে পেল, নাগা সন্ন্যাসীদের হাতিও দাঁড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আগের মিছিল কেন থমকাল, কেউ জানে না। মিছিল এবং দর্শনার্থীদের ভিড় তত ক্ষণে মিলেমিশে একাকার।

ঢালু জায়গাটায় বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে গলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কয়েক জন। কিন্তু গত রাতের বৃষ্টিতে জায়গাটা পিচ্ছিল হয়ে আছে, পাশের নালাগুলিও জলে ভর্তি। প্রায় শ’খানেক ভিখিরি সেই নালার ধারে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ খঞ্জ, কেউ বা অন্ধ। আহত পুণ্যার্থীরা শ্বাস নিতে হাঁপাচ্ছিল, ঢালু জায়গায় পা রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে তারা ওই ভিখিরি, বৈষ্ণবদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ভিখিরিরা কেউ পিষে মারা গেল, কেউ বা জলের দিকে ছুটল। কিন্তু সে জল তখন রক্তে রাঙা। ওটাই ছিল পালানোর একমাত্র রাস্তা। সবাই আর্তনাদ করে এ ওর ঘাড়ের ওপর পড়তে লাগল।…’

একটি ইংরেজি উপন্যাস থেকে সরাসরি অনুবাদ করে দিলাম। দুন স্কুল ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত এই লেখক আমাদের কলকাতার বাটানগরের ছেলে। বিক্রম শেঠ। তাঁর বৃহদায়তন ম্যাগনাম ওপাস ‘আ স্যুটেবল বয়’ উপন্যাসেই আছে কুম্ভমেলার আদলে পুলমেলার এই বর্ণনা।

চটি ভাসে সঙ্গমস্রোতে

১৯৫৪ সালে কালকূটের অমৃতকুম্ভে, বিক্রমের পুলমেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছিল মৌনী অমাবস্যার স্নানে। ১৯৭৮ সালের প্রয়াগকুম্ভে মৌনী অমাবস্যার স্নানের মাহেন্দ্রক্ষণও বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছে শেষ রাতের ঠান্ডায়, উজ্জ্বল ফ্লাডলাইটের নীচে সঙ্গমস্রোতে চটি ভেসে যাওয়ার বর্ণনায়—

“উরিঃ বাপরে বাপ! কী ঠান্ডা!... পুণ্য প্রয়াগধামে এসেছি যখন, পিতৃপুরুষদের একটু জল দিয়ে নিই। বাবার মৌদ্গল্য গোত্র, শ্বশুরমশাইয়ের ধন্বন্তরী, আমার প্রিয় মামীমাও মৌদ্গল্য— এঁদের স্মরণ করে আমি নিচু হয়ে অঞ্জলি ভরে জল নিয়ে প্রথমে আগচ্ছন্তু মে পিতর ইমং বলতে বলতেই দেখি গঙ্গার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে আমার একপাটি চটি জুতো, কিছু ভাববার আগেই খপ করে সেটি ধরে ফেলেছি। ধরতে ধরতে ইতিমধ্যে মুখ দিয়ে মন্ত্রটি বেরিয়ে গেল যেটি বেরুচ্ছিল, গৃহ্নন্তু অপোঞ্জলিম্।… হেআমার পূজনীয় পিতৃপুরুষগণ, পরমহংস যেমন নীর বাদ দিয়ে ক্ষীরটুকু গ্রহণ করেন, তোমরাও তেমনি জুতোর জলটুকু বাদ দিয়ে, হৃদয়নিঃসৃত জলটুকুনি গ্রহণ করো।”

প্রয়াগকুম্ভের এই সরস বর্ণনা যে নবনীতা দেবসেনের ‘করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে’ থেকে নেওয়া, বাঙালি পাঠককে মনে করিয়ে দেওয়া নিরর্থক। বিবাগী কালকূট-পুরুষ নন, লেখিকার হাত থেকে কুম্ভস্নানের এ হেন বর্ণনা অন্যান্য ভারতীয় ভাষাতেও দুর্লভ। তারও আগে রানী চন্দ লিখেছিলেন হরিদ্বারের কুম্ভমেলা নিয়ে ‘পূর্ণকুম্ভ’। হরিদ্বার বলেই প্রয়াগকুম্ভের আলোচনায় তিনি আসেন না, কিন্তু বাংলা ছাড়া ভারতের আর কোন ভাষায় দু’-দু’জন কৃতবিদ্য নারী লিখে গিয়েছেন কুম্ভ নিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা?

শীর্ষেন্দুর পারাপারে

কালকূটের লেখার দুই দশক পর, ১৯৭৭ সালের প্রয়াগকুম্ভে আনন্দবাজার পত্রিকার হয়ে রিপোর্টিং-এ গেলেন আর এক বিখ্যাত লেখক। তত দিনে মেলায় আছড়ে পড়ছে দেশি-বিদেশি মিডিয়ার কৌতূহলী নজরদারি— “‘সঙ্গমের স্নানদৃশ্যের ফোটো তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ’ বলে ফিল্ম ডিভিশনের ক্যামেরাম্যান ভোলা ম্রিয়মাণ। কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান এক সুদর্শন ভারতীয় যুবক প্রেস ক্যাম্পে মহা ভাবনায় পড়েছেন। তাঁকে আজই স্নানের দৃশ্যের ছবি তুলে যেতে হবে দিল্লি, দিল্লি থেকে আজই পৌঁছবেন হংকং। আর আজই রাতে তাঁর তোলা ছবি প্রসেসড হয়ে সারা বিশ্বের টিভি নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়বে। অথচ ছবি এরা কিছুতেই তুলতে দেবে না। অন্তত বিশ-তিরিশ হাজার টাকার ঝুঁকি বৃথা যাবে।… তীর্থযাত্রীরা জানেও না তাদের পুণ্যস্নানের দৃশ্য ক্যামেরায় তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক একজন ফটোওলার পিছনে কী বিপুল টাকা ও দুশ্চিন্তার তরঙ্গ,” লিখছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

বলা বাহুল্য, ফোটো তোলার সরকারি নিষেধাজ্ঞা পরে ব্যবহারিক কারণেই ম্লান হয়ে যায়। একুশ শতকে দু’বার প্রয়াগকুম্ভে দেখেছি, সঙ্গমতটে নিউজ়-ফোটোগ্রাফারদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাঁধা মাচা, বাঁশের সিড়ি বেয়ে সেখানে উঠে টেলি লেন্স তাক করলেই হল! কুম্ভমেলা স্থবির নয়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে চলে।

কালকূট বনাম শীর্ষেন্দু

একটা কথা পরিষ্কার বলা ভাল। বাঙালি পাঠক যা-ই ভাবুক না কেন, ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ বইটিকে উপন্যাস হিসাবেই ধরতেন লেখক স্বয়ং। তাঁর লেখা ‘নির্জন সৈকতে’ বা ‘আরব সাগরের জল লোনা’র মতোই এক মরমি উপন্যাস। উপন্যাস বলেই সেখানে তিনি ঢুকিয়ে দেন কল্পবাসের রোমাঞ্চকথা… “দেখলাম, গঙ্গার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আর একটি নারী। মনে হল, শাড়ি পরে আছে। আলুলায়িত কেশরাশি ছড়িয়ে আছে তার সারা পিঠ জুড়ে। কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখলাম, আপাদমস্তক আবৃত এক পুরুষ এসে দাঁড়াল তার পাশে। আরও খানিকক্ষণ পরে আর একটি মেয়ে এল, একটি বালকের হাত ধরে।… বালকটি এই ভয়াবহ শীতে জামাকাপড় খুলে এগিয়ে গেল জলের দিকে। দেখলাম, মেয়েটিও বিবস্ত্রা হয়েছে। সে নেমে গেল জলের দিকে।”

অতঃপর পুরুষটি জানায়, “শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী এর নাম মাঘব্রত, কল্পবাসীর অবশ্য কর্তব্য। মকর সংক্রান্তি থেকে গঙ্গাচরে বাস করতে হয়। থাকতে হয় উপোস করে। শুনতে হয় ধর্মের কথা। শোনাতে হয়, আপনা সাধন করতে হয়। আর ব্রাহ্মমুহূর্তে নগ্ন হয়ে নাইতে হয়।” শীর্ষেন্দু কিন্তু প্রয়াগকুম্ভ নিয়ে তাঁর লেখার শুরুতেই জানিয়ে দেন, “পৌষ পূর্ণিমা তিথি থেকে মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত কিংবা মকর সংক্রান্তি থেকে কুম্ভ সংক্রান্তি পর্যন্ত যাঁরা মেলাপ্রাঙ্গণে বসবাস করেন তাঁরাই কল্পবাসী। অবস্থানকালে তাঁরা এক পবিত্র জীবন যাপন করেন। সাধুসঙ্গ, ভজন-কীর্তন, পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁদের অভিযাত্রা বিশুদ্ধতার দিকে।” ব্রাহ্মমুহূর্তে নারী-পুরুষ মিলে নগ্নস্নানের কথা তাঁর লেখায় নেই।

সেটিই একশো ভাগ সত্য। সুইস টেন্ট নয়, প্রয়াগকুম্ভে এখনও নদীতীরে সাধারণ হোগলা আর চাটাইয়ের কিছু ঘর বাঁধা হয়। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা মানুষেরা সেখানে এক মাস থাকেন, স্নান করেন, মন্দিরে পুজো দেন, নিরামিষ আহার করেন, চাটাই পেতে নিদ্রা যান ও তুলসীদাস পাঠ করেন।

বস্তুত, ফি-বছর প্রয়াগের চরে মাঘ মাসে এক মাসের এই মেলা হয়, তার নাম মাঘমেলা। বারো বছর অন্তর এই মাঘমেলা বড় আকারে, তারই নাম তখন কুম্ভমেলা। প্রয়াগ ছাড়া আর কোথাও এই মাঘমেলা হয় না, কল্পবাস হয় না। তবে সস্ত্রীক ও সপরিবার না থাকলে পুণ্য হবে না। আমি বেশ কয়েক বার ওই ভাবে কাটাব স্থির করেও পিছিয়ে এসেছি। টানা এক মাস চাকরি থেকে ছুটি পাওয়া, প্রস্তাব শুনেই স্ত্রীর গঞ্জনা ইত্যাদি বহুবিধ ‘বাঙালিসম্মত’ কারণে পুণ্যার্জন সম্ভব হয়নি।

উপন্যাস, অবশ্যই! কিন্তু কালকূটের অমৃতকুম্ভই কি কুম্ভমেলা নিয়ে ভারতীয় সাহিত্যে প্রথম ডকু-নভেল? এখানে শ্যামা, দিদিমা, পাঁচু ডাক্তারের মতো কাল্পনিক চরিত্রের পাশাপাশি স্বনামে এসেছেন জওহরলাল নেহরু। নির্বাণী আখড়া হয়েছে নির্বাণী আশ্রম। মানে, কুম্ভমেলা নিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস রচনার সময়েও আখড়া শব্দটা বাংলায় এত পরিচিত হয়নি। ভাষার বিবর্তনের নিঃশব্দ ইতিহাস ধরা আছে আমাদের কুম্ভ-সাহিত্যেও!

উপন্যাসে ইতিহাসে

নবনীতা দেবসেন কুম্ভে গিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক আলোচনাচক্রের শেষে। শীর্ষেন্দু কর্মস্থলের অ্যাসাইনমেন্টে। কিন্তু কালকূট? এর আদিকথা তিনি নিজেই লিখে গিয়েছেন। নৈহাটির বাসিন্দা, ‘আদাব’-এর মতো ছোট গল্প, ‘উত্তরঙ্গ’ বা ‘নয়নপুরের মাটি’-র তরুণ লেখক এক দিন এসে দাঁড়ালেন ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকের দফতরে, “সাগরদা, কুম্ভমেলায় যেতে চাই।” পুরনো ফাইল ঘেঁটে দেখছি, অতঃপর ১৯৫৪ সালের ৭ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার কাগজে সমরেশ বসুর দু’টি রিপোর্টিং। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘দেশ’ পত্রিকায় উপন্যাসের ধারাবাহিক প্রকাশ। নভেম্বরে বই হয়ে বেরোনো।

জিজ্ঞাস্য একটাই। কী এমন ঘটেছিল যে কমিউনিস্ট পার্টি-করা, জেলখাটা তরুণ লেখক স্বেচ্ছায় এই প্রস্তাব দিলেন, সম্পাদকও সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিলেন? লেখকের প্রতিভা বা সম্পাদকের জহুরির চোখ উত্তর বটে, কিন্তু আধখানা। পুরোটার জন্য সামাজিক ইতিহাসটাও জানা জরুরি।

স্বাধীনতার পর সেটাই প্রথম প্রয়াগকুম্ভ। এর ঠিক বারো বছর আগে, ১৯৪২ সালের প্রয়াগকুম্ভ সে রকম জমেনি। এক দিকে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন, অন্য দিকে কুম্ভের জমায়েতে জাপানি বোমা পড়বে বলে ব্রিটিশ শাসকের ভয়। কুম্ভের জন্য বিশেষ ট্রেন, বাস কিছুই থাকল না। যুক্তপ্রদেশের তৎকালীন গভর্নর স্যার মরিস হ্যালেট ১৪ জানুয়ারি কুম্ভের এক জমায়েতে সে জন্য জনতার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “অমৃত ওঠার আগে দেবতা ও অসুরের যুদ্ধে এই রকম কালো দিন থাকে।”

উপনিবেশের শাসকও কুম্ভে অমৃত খোঁজে। সে জিতলে দেবতার জয়, আর জাপানিরা জিতলে অসুরের জয়।

এই সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জন্মশহরে সে বার স্বাধীনতার পর প্রথম কুম্ভমেলা। খবরের কাগজ ও সর্বত্র বিজ্ঞাপন দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল সরকারি প্রচারযন্ত্র। সর্বত্র ঘোষণা করা হল, ১৪৪ বছর পর এটিই মহাকুম্ভযোগ। সেই ট্রাডিশন এখনও চলছে।

শুধু তা-ই? সে বার ২৬ জানুয়ারি সঙ্গমে হল প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক মেলা ভরিয়ে দিল পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জয়গাথায়। চলল পরিবার পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য নিয়ে প্রচার। জানানো হল, “গত সাত বছরে দায়িত্বশীল সরকার, সামাজিক প্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নতি, গণতন্ত্র ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য দেশ যে বিপুল ভাবে এগিয়ে চলেছে, এ বারের কুম্ভমেলা তারই প্রতিচ্ছবি।”

এই প্রেক্ষিতে কোন তরুণ লেখক না আকৃষ্ট হবে? সে বস্তিতে থেকে ডিম বেচে সংসার চালিয়েছে, কারখানায় কমিউনিস্ট পার্টি করে জেলে গিয়েছে। সে দেখবে না এই সরকারি ঢক্কানিনাদের আড়ালে মেলার সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন? দরকারে বন্ধুর সাহায্য নিয়েও?

‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ উপন্যাসে ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখকের এক বন্ধুর কথা আছে। কালকূটের অকালমৃত্যুর পর সেই বন্ধু লিখেছিলেন, সমরেশ ইলাহাবাদে তাঁর বাড়িতেই থাকত। তাঁরই সাইকেলে রোজ ভোরে প্রয়াগকুম্ভে যেত, সারা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যার পর ফিরত। বন্ধুও বাংলা কবিতায় বিখ্যাত, অরুণ মিত্র!

বাংলা ভাষার লেখক, প্রকাশকরা এই সব মনে রাখলেই মঙ্গল। শূন্যে নেমে আসা কমিউনিস্ট পার্টিও ভেবে দেখতেই পারে। সমরেশ বসু প্রতিবাদী সত্তা, কালকূট মানবতাবাদী— এই সব কথা নিতান্ত অসার। দুটো একই ব্যক্তিত্বের সম্প্রসারণ। এ বার এ সব বিশেষণ থেকে তাঁকে মুক্তিদেওয়া হোক। কলকাতার এই মহাকুম্ভে, কালকূটের জন্মশতবার্ষিকীতেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement