ইস্কুলে আসবেন পঞ্চম জর্জ। ছেলেদের গাইতে হবে সাহেব প্রভুর বন্দনা। বেঁকে বসল সাত বছরের বালক। ফল শিক্ষকদের হাতে বেতের মার। বড় হয়ে দেশের কাজেই নিজেকে উৎসর্গ করেন। সঙ্গে সারা জীবন দুঃস্থ মানুষের সেবা।

Swami Asimananda Saraswati: ছোট্ট ছেলের জেদ, সাহেবদের গুণ গাইবে না

বন্ধু সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে তৈরি তাঁর চক্ষু হাসপাতাল এখন মহীরুহ। তিনি অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী, সন্ন্যাসজীবনে অসীমানন্দ সরস্বতী।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:২৫
Share:

মানবদরদী: অসীমানন্দ সরস্বতী। ডান দিকে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত রামচন্দ্রপুর নেতাজি চক্ষু হাসপাতালের বর্তমান ক্যাম্পাস। ছবি: পাপন চৌধুরী

Advertisement

১৯৪০ সাল। স্বদেশি আন্দোলনের নানা কর্মকাণ্ডে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বছরখানেক আগেই তৈরি করেছেন ফরোয়ার্ড ব্লক। স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রয়াসের সঙ্গে সঙ্গে চলছে নিজের রাজনৈতিক দলকে মজবুত ভিতের উপরে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া। এই উদ্দেশ্যে মানভূম এলাকায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গোপন রাজনৈতিক সভা ও বৈঠক করে চলেছেন তিনি। এমনই এক শীতের রাতে পুরুলিয়ার রামচন্দ্রপুর গ্রাম থেকে মোটর গাড়ি চেপে আদ্রা রেলস্টেশনে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখান থেকে রাতের ট্রেনে চেপে তাঁর কলকাতা যাওয়ার কথা। তাঁর সফরসঙ্গী তাঁর অন্যতম প্রিয় সহযোগী অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী।

রাতের আঁধারে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ধীর গতিতেই যাচ্ছিল তাঁদের মোটরগাড়ি। আচমকা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায় সেটি। গাড়ির চালক জানালেন, হঠাৎ সামনে কেউ এক জন এসে পড়েছেন। তাই আচমকা ব্রেক কষে গাড়ি থামাতে হয়েছে। গাড়ি থেকে নামলেন নেতাজি ও অন্নদাপ্রসাদ। তাঁরা লক্ষ করলেন, গাড়ির সামনের বনেটে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন এক বৃদ্ধ মানুষ। বয়স আন্দাজ আশির উপরেই। চোট আঘাত তেমন লাগেনি। তবে ভয় পেয়ে গিয়েছেন খুব। ওই বৃদ্ধের শুশ্রূষা শুরু করে নেতাজি ও অন্নদাপ্রসাদ বুঝতে পারেন, বৃদ্ধ দৃষ্টিহীন। বৃদ্ধের অসহায়তায় দু’জনের চোখেই জল। কাতর চোখে অন্নদাপ্রসাদের দিকে তাকিয়ে নেতাজি বলেছিলেন, “অন্নদা, এদের জন্য কি কিছু করা যায় না?” সুভাষের সেই আকুলতা নীরবে অন্নদার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল।

Advertisement

১৯৪১ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার এলগিন রোড বাসভবন থেকে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে অন্তর্হিত হলেন সুভাষ। জানা যায়, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বারকয়েক অন্নদার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। প্রতি বারই তিনি দুঃস্থ দৃষ্টিহীনদের চিকিৎসার জন্য অন্নদাকে বলা তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সে কথা রেখেওছেন অন্নদাপ্রসাদ।

তবে কাজ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে বহু বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। প্রথমত নেতাজির সহযোগী ও স্বদেশি আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তাঁর যে কোনও সমাজসেবামূলক উদ্যোগই সন্দেহের চোখে দেখত ব্রিটিশ সরকার। সব বিষয়েই তাঁকে কৈফিয়ত দিতে হত। তবে তিনি দমে যাননি। তিনি প্রথমে রামচন্দ্রপুর গ্রামের আশপাশের দরিদ্র দৃষ্টিহীনদের তালিকা তৈরি করেন। প্রয়োজন মতো তাঁদের হাতে খরচ তুলে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে শুরু করেন। দু’বছর এ ভাবেই চলল তাঁর সেবাকাজ। কিন্তু এক দিন তিনি ভাবলেন, এ পর্যন্ত যত রোগীকে চিকিৎসায় পাঠিয়েছেন, তাঁরা সবাই কেমন আছেন এক বার খোঁজ নেওয়া উচিত। কিন্তু খোঁজখবর নিতে গিয়ে হতাশ হলেন অন্নদাপ্রসাদ। জানা গেল, অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসাই করাতে যাননি। তাঁরা চিকিৎসার জন্য পাওয়া টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালিয়েছেন। অন্নদাপ্রসাদ বুঝতে পারলেন, এ ভাবে হবে না। তা হলে? ঠিক করলেন, নিজের তত্ত্বাবধানে গড়ে তুলবেন চক্ষু হাসপাতাল।

এই কাজে নেমে প্রথম দিকে তাঁকে খানিক বেগ পেতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে শুরু হয়েছে উদ্যোগ। ১৯৪৩ সালে পরিবারের কুলগুরু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর নামে বিজয়কৃষ্ণ রিলিফ সোসাইটি-র জন্ম। সেই সংগঠনের উদ্যোগে রামচন্দ্রপুর গ্রামে মাঝে মাঝেই অস্থায়ী শিবির করে দরিদ্র চক্ষুরোগী বা দৃষ্টিহীনদের অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শুরু হয়। এ ভাবেই চলল বেশ কয়েক বছর। তখন দেশ জুড়ে জোরদার স্বদেশি আন্দোলন। গ্রামগঞ্জ থেকে স্বদেশিদের তুমুল ধরপাকড় করছে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে দিশাহারা অন্নদাপ্রসাদ বাধ্য হয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিলেন। ফলে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফেরানোর কাজে ভাটা পড়তে শুরু করল। কিন্তু সুভাষের আবেদন অন্নদাপ্রসাদ ভুলে যাননি। অবশেষে স্বাধীন হল ভারত। নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করলেন অন্নদাপ্রসাদ। তাঁর ধর্মগুরু স্বামী কিরণচাঁদ দরবেশের নির্দেশে তিনি সন্ন্যাস নিলেন। তাঁর নতুন নাম হল স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী। এ বার নতুন উদ্যমে চক্ষু হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ শুরু করলেন।

১৯৫৩ সালের ২৩ জানুয়ারিতে রামচন্দ্রপুর গ্রামেই দুঃস্থ রোগীদের জন্য তৈরি করা হল নেতাজি আই হসপিটাল। প্রথম দু’বছর এই হাসপাতালে শুধুমাত্র অস্থায়ী শীতকালীন অস্ত্রোপচার শিবির করা হয়েছে। ১৯৫৫ সালে ১০ শয্যার স্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করলেন কপর্দকশূন্য এই বিপ্লবী সন্ন্যাসী।

অন্নদাপ্রসাদের পূর্বপুরুষরা মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা ছিলেন। বহু বছর আগে পুরুলিয়ার পঞ্চকোট রাজপরিবারের কুলপুরোহিত হয়ে এখানে এসেছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষেরা। পরবর্তী কালে পঞ্চকোট রাজ পরিবারের তরফে তাঁদের রামচন্দ্রপুরে জমিদারি দেওয়া হয়। ১৯০৪ সালে এই গ্রামেই জন্ম অন্নদাপ্রসাদের। জমিদারির কাজে বিশেষ মন ছিল না তাঁর। ভালবাসতেন সামাজিক কাজকর্ম ও দুঃস্থদের সেবা করতে। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হবে। অন্নদাপ্রসাদেরও স্কুলে পঞ্চম জর্জের গুণগান করে একটি গান গাওয়ার কথা। কিন্তু বেঁকে বসেন তিনি। স্কুলের শিক্ষকদের জানিয়ে দেন, দেশের মানুষের উপরে যাঁরা অত্যাচার করছে, তাঁদের বন্দনা তিনি করবেন না। এই বিদ্রোহের ফল পেতে হয়েছিল তাঁকে। উপর্যুপরি বেত্রাঘাতে একরত্তি ছেলের পিঠ লাল করে দিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা।

বাল্য থেকে কৈশোর হয়ে যুবক। বয়স যত বেড়েছে, ততই স্বদেশপ্রেম বেড়েছে অন্নদা প্রসাদের। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে মানভূম থেকে বর্ধমান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। সেই সঙ্গে চলতে থাকল সমাজসেবা ও দুঃস্থদের সেবা। সারা দিন মাঠে-ঘাটে কাজ করা বয়স্ক গ্রামবাসীদের অক্ষরজ্ঞানের শিক্ষা দিতে চালু করলেন রাতের স্কুল। নারীশিক্ষা প্রসারে খুললেন মহিলা স্কুলও।

অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তাঁকে বেশ কিছু দিন বর্ধমানে বসবাস করতে হয়েছিল। এই সময় একাধিক গণ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে অন্নদাপ্রসাদের। খুব জনপ্রিয়ও হন তিনি। তবে তিনি বেশি দিন বর্ধমান জেলায় থাকেননি। কারণ এক সময় উপলব্ধি করলেন, গ্রাম ছেড়ে থাকার জন্য ব্যাহত হচ্ছে দুঃস্থদের সেবাকাজ। তাই রামচন্দ্রপুরে ফিরে এসে আবার সেই কাজে মন দিলেন। কিন্তু বিপ্লবী কার্যকলাপ থেকে বিরত হননি কখনওই।

সুভাষের ইচ্ছেয় ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে রামচন্দ্রপুরে একটি রাজনৈতিক কর্মিসভার আয়োজন করেন অন্নদা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিপ্লবীরা যোগ দিলেন সেই কর্মিসভায়। বাংলার স্বদেশিরাও জোট বেঁধে যোগ দিলেন। অতিথিদের দেখাশোনার জন্য সুভাষের নির্দেশে যে অভ্যর্থনা কমিটি তৈরি হয়, তার সভাপতি করা হয় অন্নদাপ্রসাদকে। দু’দিনের কর্মিসভার সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র। এই সভা থেকে ‘মানভূম কর্মী সংসদ’ নামে একটি নতুন সংগঠনের জন্ম হয়। এর সভাপতি হলেন সুভাষচন্দ্র বসু, সম্পাদক অন্নদাপ্রসাদ। এই সংগঠন তৈরি হওয়ার পর মানভূম অঞ্চলে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে গতি আসে। নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন সুভাষচন্দ্র। সাধারণ গ্রামবাসী ও আদিবাসী মানুষজনের মধ্যেও বৈপ্লবিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। জানা যায়, এ সময় ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে রামচন্দ্রপুর গ্রামের গোপন আস্তানায় বহু দিন কাটিয়েছেন সুভাষচন্দ্র।

অন্নদার কার্যকলাপকে অনেক দিন ধরেই সন্দেহের চোখে দেখছিল ব্রিটিশ সরকার। ১৯২৮ সালের রাজনৈতিক সভা ও সেই সভায় সুভাষের উপস্থিতি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীদের যোগদান রীতিমতো ভাবিয়ে তুলল ব্রিটিশদের। ‘তরুণ শক্তি’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করার জন্য অন্নদাপ্রসাদকে রাষ্ট্রদ্রোহী ঘোষণা করে প্রায় দেড় বছর কারাবাসের সাজাও দেয় ব্রিটিশ সরকার।

কারামুক্ত হওয়ার পর দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর উৎসাহ দ্বিগুণ হল। সুভাষের প্রত্যক্ষ মদতে আরও বেশি করে দেশ ও দশের কাজে ঝাঁপালেন। সংগঠিত করলেন আইন অমান্য আন্দোলন। ভয় পেল ব্রিটিশ সরকার। ফলে এদের আক্রমণ আরও নির্মম হল। ১৯৩০ সাল, শীতের ভোর। তখনও ঘুম ভাঙেনি গ্রামের। তাঁর কুটিরের দোরে কড়া নাড়ার শব্দ। সঙ্গে ভারী বুটের আওয়াজ। অতিথিদের চিনতে অসুবিধে হয়নি অন্নদাপ্রসাদের। দরজা খোলার পর দেখতে পেলেন, সৈন্যসামন্ত নিয়ে হাজির মানভূমের দুই সাহেব ম্যাজিস্ট্রেট। অন্নদাপ্রসাদের পাঠাগারে অভিযান চালিয়ে সমস্ত স্বদেশি বইপত্র পুড়িয়ে ছাই করা হল। স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে তাঁকে মাটিতে ফেলে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে একটি পাকুড় গাছের গুড়ির সঙ্গে বেঁধে শুরু হল বেত্রাঘাত। এই নির্মম অত্যাচারের দৃশ্য দূর থেকে দেখলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু অস্ত্রে সুসজ্জিত সৈন্যসামন্তের ভয়ে বিদ্রোহ করার সাহস পেলেন না কেউ। যন্ত্রণায় জ্ঞান হারালেন অন্নদা। এ বার তাঁকে দড়ি দিয়ে একটি ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ির পিছনে বেঁধে বহু দূর টেনে নিয়ে যাওয়া হল। অন্নদা মারা গিয়েছেন ভেবে তাঁর শরীরটি একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে গেল দুই ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট। ছুটে এল গ্রামবাসীরা। তাঁকে পুকুর থেকে তুলে সামনের গ্রাম জোসপুরে অন্নদার এক জন অনুগামীর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানে খুব সামান্যই পরিচর্যা হল তাঁর। অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখে গ্রামবাসীরা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু কেউই তাঁর চিকিৎসা করতে রাজি হলেন না। এমন সময় হাজারিবাগ কলেজের অধ্যাপক শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁকে হাজারিবাগে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালেন।

বছরখানেক পরে সুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরলেন অন্নদাপ্রসাদ। তাঁর উপরে ব্রিটিশের এই অত্যাচারের কথা জানতে পেরে জোরদার আন্দোলনের ডাক দিলেন সুভাষ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে উত্তাল হল মানভূম এলাকা। লাগাতার পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলেন আশপাশের জনজাতীয় মানুষজন। ১৯৪০ সালে এক শীতের রাতে অন্নদাপ্রসাদের সঙ্গে মোটরগাড়িতে চেপে আদ্রা রেলস্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য যাচ্ছিলেন সুভাষ। পথের মাঝে ওই দৃষ্টিহীন ব্যাক্তি গাড়ির সামনে চলে আসায় অন্নদাপ্রসাদকে দরিদ্র নিপীড়িত দেশবাসীর জন্য একটি দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল তৈরির অনুরোধ করেছিলেন।

সে দিনের সেই অনুরোধের ফল থেকে জন্ম নিয়েছিল যে উদ্যোগ, তা এখন মহীরুহ। দেশের স্বাধীনতার পর সন্ন্যাস নিয়ে অন্নদাপ্রসাদ নিজের নাম পরিবর্তন করে অসীমানন্দ সরস্বতী হন। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সর্বক্ষণের সমাজসেবায় নিয়োজিত হন। কার্যত একক প্রচেষ্টায় রামচন্দ্রপুর নেতাজি চক্ষু হাসপাতালের উন্নয়ন করেন। ১৯৬৮ সালের ১৩ অগস্ট প্রয়াত হন অন্নদাপ্রসাদ। তাঁর অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন অন্নদাপ্রসাদের পুত্র নন্দদুলাল চক্রবর্তী। ২০১৩ সালে তিনিও মারা যাওয়ার পর এখন এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্নদাপ্রসাদের নাতি তথা নন্দদুলালের পুত্র, হিমাদ্রিশেখর চক্রবর্তী। হিমাদ্রিশেখর জানালেন, রামচন্দ্রপুর নেতাজি চক্ষু হাসপাতালে এই মুহূর্তে প্রায় ২৫০ শয্যার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ১৭ জন চিকিৎসক দিনরাত এক করে রোগীদের চোখের চিকিৎসা করছেন। বছরে সাত থেকে দশ হাজার রোগীর চোখে নানা ধরনের অস্ত্রোপচার করে দৃষ্টি ফেরানো হচ্ছে। দেশের নানা প্রান্তেও গড়ে উঠেছে নেতাজি চক্ষু হাসপাতালের সংগঠন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আজও নিয়মিত চোখের ছানির অস্ত্রোপচার শিবির করা হয় এখানে। হিমাদ্রিশেখর জানালেন, সুভাষচন্দ্র ও অসীমানন্দ সরস্বতীর দর্শন ছিল, মানুষের অন্ধত্ব ঘুচলে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হবে। তাঁরা তাই বলতেন, দেশবাসীর অন্ধত্ব ঘোচাতে তাঁদের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। আজীবন প্রচেষ্টায় সেই অসাধ্য সাধন করেও দেখিয়েছেন অসীমানন্দ, তথা অন্নদাপ্রসাদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement