‘অতুল্যভবন’-এর টিনের চালওয়ালা মাটির বাড়ি।
খাতড়া শহর থেকেও যাওয়া যায়, আবার মুকুটমণিপুর কংসাবতী প্রকল্পের অপরূপ শোভা দেখেও যেতে পারেন। কিছু দূর যাওয়ার পর নজরে পড়বে শাল-পলাশের বনের গায়ে ছোট ছোট জনপদ। দূরে ইতস্তত পাহাড়। ভুল করে এই অঞ্চলটাকে ছোটনাগপুরের অংশও ভেবে ফেলতে পারেন। শাল-পলাশের জঙ্গল দু’পাশে রেখে চলতে চলতে চোখে পড়বে হরীতকী, আমলকী, বহেড়া, পিয়াল, অর্জুন-সহ বেশ কিছু ভেষজ গাছের সমারোহ। তাদের নিবিড় আত্মীয়তা আর সুশীতল আহ্বানে কখন যে দেওলাগড়া পৌঁছে গেছেন, টেরও পাবেন না। দেওলাগড়া গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটি বাড়ি, যেটি আশপাশের আর-পাঁচটা বাড়ির চেয়ে আলাদা। সবুজ বনস্পতির নিবিড় পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে ‘পাহাড়তলী’ নামের এই বাড়িটি। গ্রামের মানুষদের কাছে ‘অতুল্যভবন’। হ্যাঁ, এটাই ‘দাদা’ বা ‘বড়বাবু’র বাড়ি, ফি-বছর বেশ কিছু মানুষ আসেন এই বাড়ি দেখার টানে। ‘দাদা’, ‘বড়বাবু’ শব্দগুলো অচেনা লাগতেই পারে, কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিতে অতুল্য ঘোষকে ‘ম্যাকিয়াভেলি’ ‘চাণক্য’ ইত্যাদি যা-ই বলা হোক না কেন, প্রথম ‘দাদা’ও অতুল্য ঘোষই। রাজ্য কংগ্রেসে তিনিই আবার ‘বড়বাবু’ নামে পরিচিত।
১৯৫২ নাগাদ অতুল্য ঘোষের একদা কারাসঙ্গী ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমার মশিয়ারা গ্রামের মতিলাল রায় তাঁকে ২২ বিঘা জমি দান করেছিলেন। সেই জমিতে দেওলাগড়ার বাড়িটি নির্মাণ করেন অতুল্য ঘোষ। ১৩ বিঘা জমিতে বাগান-সহ বাড়ি, বাকিটা চার পাশে পতিত রয়ে গেছে। টিনের চালওয়ালা, চার কামরার, দক্ষিণ বারান্দাওয়ালা মাটির বাড়িটার পাশেই একটা পাকা বাড়ি। এখানে তিনটি ছোট ছোট শয়নকক্ষ। একটা লম্বা খোলা বারান্দায় ‘বড়বাবু’র আরামকেদারা। এখনও যে শাল, সেগুন, মেহগনি, আম, কাঁঠাল, লেবুগাছ দেখা যায়, সবই নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন অতুল্য ঘোষ। তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি এই রুখাশুখা মাটিতে এত গাছ কী ভাবে বেঁচে গেল। স্বাধীনতার লড়াই করতে করতে বিভিন্ন জেলে দিন কাটানোর সময় কিছুটা অবসরের অভ্যেস তাঁর হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে ভারতের বড় দলের বড় দায়িত্ব সামলানো, তার সঙ্গে সরকারের নানাবিধ কাজে সেই অবসর মাথায় উঠেছিল। কাজের চাপে যখন হাঁপিয়ে উঠতেন, চলে আসতেন ‘পাহাড়তলী’তে। রাজনীতির কোলাহল থেকে ক্ষণিক মুক্তির আশায়। সেখানে প্রথম দিকে টেলিফোন থাকলেও পরে লাইন কেটে দিয়েছিলেন। রাখতেন না কোনও খবরের কাগজ। জানা গেল, উন্নত নাগরিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এক বার বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু দেওলাগড়ার অনতিদূরে ছেঁদাপাথর নামের এক জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় বেশ কিছু দিনের জন্য আত্মগোপন করেছিলেন। এই জঙ্গলেরই এক নির্জন গুহায় চলত বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। বিপ্লবী কর্মযজ্ঞে শামিল ছিলেন ধলভূম অঞ্চলের অম্বিকানগরের রাজা রাইচরণ ধবল দেব মহাশয়।
যে অর্থে দেশের বাড়ি বলা হয়, তেমন দেশের বাড়ি ছিল না ‘পাহাড়তলী’ বা ‘অতুল্যভবন’। বাড়িটিকে ঘিরে এলাকার মানুষের একটা আবেগ গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় এক বয়স্ক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লম্বা কালো রঙের গাড়িতে করে উনি যে দিন আসতেন, নিস্তরঙ্গ গ্রামে প্রাণ সঞ্চার হত। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে এই বাড়িটার যাতে একটা যোগসূত্র নির্মাণ হয়, সেই চেষ্টা করতেন সব সময়। তাই এই বাড়ির সঙ্গে গঠনমূলক কিছু কর্মকাণ্ডকে যোগ করতে চেয়েছিলেন তিনি। এক সময় দেওলাগড়ার অতুল্যভবনে চলত নৈশ স্কুল, গ্রামের মানুষদের সাক্ষর করে তোলার পাশাপাশি বাচ্চাদেরও নিয়মিত পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল। স্থানীয় কৃষকদের কৃষিতে উন্নত বীজ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কাজ চলত। তিনি কৃষি-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসতেন বাইরে থেকে। এখান থেকে চাষিদের সার ও বীজ সরবরাহ করা হত। অতুল্যবাবু খেতে ভালবাসতেন ‘ভূতমুড়ি’ চালের ভাত। তাঁর অন্যতম সহচর নির্মলেন্দু দে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে ওই কালো ধানের চাষ করতেন সেখানে। অতুল্যভবনের মাটির বাড়ি লাগোয়া চাতালে এক সময় অসংখ্য ঢেঁকি ছিল। এখনও একটা-আধটার দেখা মেলে। সেই ঢেঁকিতে গ্রামের মেয়েরা ধান ভানতে আসতেন। বাঁকুড়ার এই অঞ্চলের রুক্ষ বন্ধ্যা ভূমিকে ফলবতী করার কিছু উদ্যোগও নিয়েছিলেন তিনি। তবে সবটা করে উঠতে পারেননি।
অতুল্য ঘোষ।
পাথুরে মাটির এলাকায় গ্রীষ্মে তীব্র জলসঙ্কট হত। অতুল্যভবনের কুয়ো আশপাশের গ্রামের মানুষের তৃষ্ণা মেটাত। ষাটের দশকের মাঝামাঝি খাদ্যসঙ্কটের সময় অতুল্যভবন থেকেই বেসরকারি কিছু সেবা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় শিশুদের জন্য দুধ, সকলের জন্য খিচুড়ি বিতরণ করা হত। বইয়ে ডুবে থাকতে ভালবাসতেন অতুল্যবাবু। তাঁর সংগ্রহের দেশি-বিদেশি বহু দুষ্প্রাপ্য বই ছিল বাড়িতে। অযত্নে অনেক বই নষ্ট হয়ে গেছে, কিছু বই বিধান শিশু উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান লেগে থাকত। জন্মাষ্টমীতে বিশেষ অনুষ্ঠান হত। পুজোর সময় গ্রামের মানুষদের বস্ত্রদান, বিজয়ার দিন দেওলাগড়া গ্রাম-সহ আশপাশের গ্রামের মানুষজনদের জন্যও ভূরিভোজের আয়োজন হত। পুজোর ক’টা দিন এখানেই কাটাতেন, সকলের সঙ্গে আনন্দ করতেন। একাদশীর দিন এখান থেকে গিরিডির উদ্দেশে রওনা দিতেন।
ক্ষমতার কেন্দ্রে বিচরণ করলে এক জন রাজনীতিককে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, ক্ষমতালিপ্সা, বিলাস, স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁক ইত্যাদি শব্দবন্ধের নিরিখে বিচার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো তা প্রাসঙ্গিকও। কিন্তু সে নিয়মের ব্যতিক্রমী রাজনীতিক এ বঙ্গে দুর্লভ নয়। এবং বলতে দ্বিধা নেই, অতুল্য ঘোষ ছিলেন তেমনই এক জন। যদিও সমকালীন রাজনৈতিক বিতর্ক তাঁকেও রেহাই দেয়নি। তাঁকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল মিথ্যার নির্মাণ। আপাতনজরে যতটুকু আমরা সত্য বলে দেখি, তার বাইরেও কিছু সত্য থাকে। সেটা তলিয়ে দেখার জন্য উপযুক্ত নিষ্ঠার দরকার হয়। না হলে সত্যের খণ্ডিত অংশকে দেখা হয়, যা অনেক সময় মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর। যেমন ‘পাহাড়তলী’-র বাড়িটিকে নিয়ে নিয়মিত অতিকথন এক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। কে বা কারা রটিয়েছিল, বাড়িটির নীচে সোনা পোঁতা আছে। সেই গল্প এক সময় স্থানীয় ক্ষেত্রে বেশ রহস্য তৈরি করেছিল। তবে সেই সোনা-রহস্য আজও সমাধান হয়নি। অতুল্য ঘোষ তাঁর ‘কষ্টকল্পিত’ বইয়ে লিখেছেন, এই বাড়িটিকে ঐতিহাসিক করার নেপথ্যে ছিলেন বামপন্থী সাংসদ ভূপেশ গুপ্ত। তিনি রাজ্যসভায় এ বাড়ি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “বাড়িটি বিরাট। সরকারি বন বিভাগের বারো জন লোক ঐ বাড়িতে সব সময় কাজ করেন। আর ওঁর পুত্রবধু নাকি ওখানে বাস করেন।” পরে ভূপেশ গুপ্তর সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেছিলেন, “আমার পুত্রবধূ তো বটেই, সমগ্র পরিবার আপনার কাছে কৃ্তজ্ঞ। আপনার জন্যই কাগজ মারফত আমাদের নাম প্রচার পেল। আপনাকে এক দিন ভাল করে খাওয়াব।” এই রকম সরস প্রত্যুত্তরে অভ্যস্ত ছিলেন মানুষটি। আর এক বার এ রাজ্যের বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যতীন চক্রবর্তী দেওলাগড়ার বাড়িটি সম্পর্কে বলেছিলেন, “পাহাড়ের নীচে গাছগাছালি ঘেরা সুরম্য রাজপ্রাসাদ, সেখানে একটা সুইমিং পুলও আছে, সেই সুইমিং পুলে বঙ্গেশ্বর ফুর্তি করেন।” পরে প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে এলে এই বক্তব্যের জন্য যতীন চক্রবর্তী প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। আন্তরিক অনুতপ্তও ছিলেন। নিজে উদ্যোগ নিয়ে হীড়বাঁধ থানার সুপুর গ্রাম থেকে দেওলাগড়ার ‘পাহাড়তলী’র এই বাড়িটি পর্যন্ত দীর্ঘ আট কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দেন। বিধান শিশু উদ্যানেও শ্রীচক্রবর্তীর নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের অনেক নেতাই এখানে কাটিয়ে গেছেন। মোরারজি দেশাই, কামরাজ, সঞ্জীব রেড্ডি, মোহনলাল সুখারিয়া, দেবকান্ত বড়ুয়া... কে না এসেছেন ‘দাদা’র বাড়ি। ১৯৫৯-এ যখন কংসাবতী প্রকল্পের কাজ চলে, তখন সেই প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এলে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ও রাত্রিবাস করতেন এই বাড়িতে। দুর্গাপুর থেকে নিয়মিত আসতেন লাবণ্য ঘটক, আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়রা। অতুল্যবাবু দেওলাগড়ার বাড়িতে এলে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃ্ত্ব যেমন মতিলাল রায়, কালীকিঙ্কর কুণ্ডু, শচীন মাহান্তি, কাশীনাথ মিশ্ররাও আসতেন।
অতুল্য ঘোষের সাহিত্যপ্রীতি ছিল গভীর। সাহিত্যানুরাগে ছুটে যেতেন কখনও শান্তিনিকেতন, তারাশঙ্করের লাভপুর অথবা কুমুদরঞ্জনের কোগ্রাম। প্রমথনাথ বিশী, গজেন্দ্রকুমার মিত্রর সঙ্গেও যথেষ্ট নিবিড় সম্পর্ক ছিল। দেওলাগড়ায় আসতেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, সুমথনাথ ঘোষ, শান্তিনিকেতনের সুরেন্দ্রনাথ কর প্রমুখ। চলত গল্প-কবিতা পাঠ, সঙ্গে লম্বা আড্ডা। দেওলাগড়ার বাড়িটির ‘পাহাড়তলী’ নামকরণ করেন স্বয়ং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সজনীকান্তর পরিহাসপ্রিয়তা, সঙ্গে আলপিন ফোটানো শ্লেষ পাহাড়তলীর আড্ডাকে অন্য মাত্রা দিত। সেই আড্ডার গল্প বলেছেন অতুল্য ঘোষ। এক বার দেওলাগড়ার বাড়িতে এক আড্ডায় কথাপ্রসঙ্গে অতুল্য ঘোষই একটা প্রশ্ন করে বসেন সজনীকান্ত দাসকে। প্রশ্নটা ছিল তাঁর ‘কে জাগে’ কবিতাটি কি এলিয়টের ‘র্যাপসডি অন আ উইন্ডি নাইট’ অবলম্বনে লেখা? সঙ্গে সঙ্গে সজনীকান্তর নির্বিকার উত্তর— ‘হতে পারে এলিয়ট আমার কবিতাটি পড়ে তাঁর ঐ কবিতাটি লিখেছেন।’ এই রকম নির্ভেজাল সাহিত্যিক আড্ডায় মশগুল থাকত ‘পাহাড়তলী’। সবাই চলে গেলে সঙ্গী হত এম এস শুভলক্ষ্মী, ডি কে রায় অথবা সুচিত্রা মিত্রর গ্রামোফোন রেকর্ড।
‘এই বাড়িটি ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হয়’— ঘনিষ্ঠ মহলে বার বার এ কথা বলতেন। বাকি জীবনটা এই নির্জন প্রান্তরেই কাটাতে চেয়েছিলেন। পারিবারিক আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। শেষ দিকটায় যাতায়াতের ঝক্কি নিতে পারতেন না। কষ্ট পেতেন। শেষ বারের মতো এসেছিলেন ১৯৮৫ নাগাদ, কথা দিয়ে গিয়েছিলেন আবার আসবেন, কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি। কুমুদরঞ্জন মল্লিকের একটা কবিতার কয়েকটি লাইন তাঁর খুব প্রিয় ছিল, ‘এই পথেতে আবার আমায়/ আসতে যদি হয়/ যেখানেতে ছিলাম দিয়ো/ সেইখানে আশ্রয়’। রাজনীতি শেষ পর্যন্ত তাঁর আশ্রয় থাকেনি। গত শতকের ষাটের দশকের একেবারে শেষ ভাগে রাজনীতি থেকে সরেই এসেছিলেন। শিশু আর বনভূমির কাছেই আশ্রয় চেয়েছিলেন। তিনি নেই, কিন্তু তাঁর স্নিগ্ধ আশ্রয় এখনও অটুট আছে। ‘পাহাড়তলী’র গাছগাছালি, পাখিদের কলকাকলি, কিছু মানুষের গাঢ় আতিথেয়তা আর শিশুদের কিচিরমিচিরে কোনও রাজনীতি নেই।
প্রাঙ্গণে ‘পাহাড়তলী’ নামাঙ্কিত পাথরের ফলক ।
নবতিপর বৃদ্ধ প্রভাকর সর্দার বয়সের ভারে সে সব দিনগুলির কথা মনে রাখতে পারেন না। নিষ্পলকে ‘পাহাড়তলী’র দিকে তাকিয়ে এখনও খুঁজে ফেরেন তাঁর ‘বড়বাবু’কে। তাঁরই পুত্র শ্যামল সর্দার একাই রক্ষা করে চলেছেন দেওলাগড়ার এই গড়। নানা অজানা ছোট ছোট গাছ ঘিরে ফেলেছে ‘পাহাড়তলী’ লেখা ফলককে। আদর্শের উত্তরাধিকার খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন ঠিকই, তবুও এই আকালেও কিছু মানুষ পাওয়া যায়, যাঁরা নিতান্ত আদর্শের জন্যই রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে শামিল হন, অথবা আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে চান। সেই টানেই কলকাতা থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা আসেন মাঝে মাঝে। মূলত তাঁদের সাধ্যমতো প্রচেষ্টায় এবং শুভানুধ্যায়ী কিছু মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় ‘পাহাড়তলী’ এখনও সাবয়বে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম ইন্দ্রাণী মিত্র (মিঠু) সম্পর্কে অতুল্য ঘোষের নাতনি। তাঁর ‘কষ্টকল্পিত’ বইটি তিনি এঁকেই উৎসর্গ করেছিলেন। এঁরাই এখনও অতুল্য ঘোষের আমলের কিছু রেওয়াজ টিকিয়ে রেখেছেন। এখনও প্রতি রবিবার এখানে ডাক্তারবাবুরা আসেন, পাঁচ-সাতখানা গ্রামের মানুষজন এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধপত্র পান। বাড়িটা একটা নিছক বাড়ি হিসেবেই থাকেনি কোনও দিন, এখনও গ্রামবাংলার অন্দরে তাঁর এই বাসভবন প্রান্তিক মানুষদের বিশেষ ভরসার স্থল হিসেবে রয়ে গেছে।