জনপ্রতিনিধিত্ব: জনতার জন্য জনতার প্রতিনিধি দ্বারা জনতাকে বাঁশ দেওয়ার পদ্ধতিকে গণতন্ত্র বলা হয়। অমর্ত্য সেন বলেছেন স্বাধীনতার আসল লক্ষণ হল চয়েস, তাই গণতন্ত্রে নিজের বাঁশ তথা প্রতিনিধি নিজেই বেছে নেওয়ার অপার স্বাধীনতা। এই ব্যবস্থায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইরাকে বোম ফেলেন, সমকামীদের ভবিতব্য নির্ধারণ করেন বিষমকামী প্রতিনিধিরা, আমিষাশীরা গরু খাবেন কি না ঠিক করে দেন নিরামিষাশী প্রতিনিধিবৃন্দ। সম্প্রতি ভারতে আত্মহত্যার অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, কারণ, গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরু জনতাই ভোট দিয়ে ঠিক করে, তারা কোন প্রতিনিধিদের হাতে বোমা খেয়ে মরবে।
বিচারব্যবস্থা: সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে চলে বলে গণতন্ত্রে সংখ্যালঘুরা ভিন্নমত দিলে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হয়। যেমন গুপি-বাঘাকে গ্রাম, তসলিমা নাসরিনকে ঢাকা থেকে বিতাড়ন। এর নাম সামাজিক ন্যায়বিচার। এই ব্যবস্থানুসারেই প্রাচীন গণতন্ত্রে ডাইনি পোড়ানো হত বা নরখাদকরা সংখ্যাগুরুর মতামতের ভিত্তিতে কাকে খাওয়া হবে ঠিক করত। সে-সব প্রথা উঠে গেলেও, এখনও সংখ্যাগুরু জনতা ঘটি-চোর সন্দেহে অন্যকে পিটিয়ে মারে, খাপ-পঞ্চায়েত বানিয়ে দোষীকে ন্যাংটো করে ঘোরায়, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দাঙ্গা করে, ক্যাডাররা বেফাঁস কথা শুনলেই বিরোধীদের ডান্ডাপেটা দেয়। ন্যায়বিচারে জনতার প্রবল উদ্দীপনা দেখা যায় বলে একে গণতন্ত্রের অন্যতম উৎসব বলা হয়।
কার্যনির্বাহী: হুমকি, দাদাগিরি, খুন ইত্যাদি নানা ন্যায়বিচারের উৎসব থাকলেও গণতন্ত্রের আসল মোচ্ছব ভোটপুজো। একমাত্র এই সময়েই দেবদেবীরা লোকসভা ও বিধানসভা থেকে মর্তে অবতরণ করে কিঞ্চিৎ কার্যনির্বাহ করেন। একে গণতন্ত্রের কার্যনির্বাহী শাখা বলে, যার মেয়াদ চার দিনের। সপ্তমীতে ওপিনিয়ন পোল, মহাষ্টমীতে ভোটাভুটি ও নাড়ুবিতরণ, নবমীতে বুথ-ফেরত সমীক্ষা, দশমীতে ফললাভেন গণতন্ত্রের বিসর্জন। গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ পূজারীরা অবশ্য বিসর্জনের পরেও ফ্লেক্স-প্রতিমা রেখে দিয়ে অনির্দিষ্ট কাল মাইক বাজিয়ে নৃত্যগীতে ওভারটাইম দেন। এই কার্যনির্বাহী স্বেচ্ছাশ্রমের নাম কর্মসংস্কৃতি।
মূল্যবোধ: ইদানীং সকাল-বিকেল নির্বাচন। পাড়ার কো-অপারেটিভ, বেপাড়ার কলেজ, মিউনিসিপ্যালিটি, কর্পোরেশন, পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা। প্রায় সবই আবার তিন আর পাঁচ দফায়। হিসেব রাখতে ভোটপূজারীদের কালঘাম ছোটে বলে প্রায়ই উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চড়ে। ভোটপুজোর মাইকে হার্ট-পেশেন্টের জান যায়, বিরোধী নেতার বরাদ্দ বোমা পুলিশের ঘাড়ে পড়ে, সংখ্যালঘু পার্টিকে চমকাতে গিয়ে পথচারী পেটে পেটো খায়। এর নাম কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ, যা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যখন-তখন মূল্য দিতে হয় বলে একেই গণতন্ত্রের মূল্যবোধ বলে। জনতা চোখ-কান বুজে মূল্যবোধ মেনে চলে বলেই গণতন্ত্রের বাকি তিনটি স্তম্ভ এত দিন টিকে আছে। তাই জনগণই গণতন্ত্রের আসল শক্তি।
bsaikat@gmail.com