ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪
Bengali Serial Novel

শূন্যের ভিতর ঢেউ

অক্ষম রাগ চেপে সে বলল, “তনুময় কেন পালিয়ে গেল? ওর লজ্জা হবে কেন? যারা এই র‌্যাকেট চালাচ্ছিল তাদের লজ্জা-ঘৃণার অনুভূতিই নেই। চলেই যদি গেল, যে কালপ্রিটগুলোর মাধ্যমে ডিল হয়েছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিল না কেন?

Advertisement

সুমন মহান্তি

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৩
Share:

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

পূর্বানুবৃত্তি: দেবারতিকে আর পড়াতে যেতে হবে না অভ্রকে, তার মানে মাসে অনেকগুলো করে টাকা কমে গেল। অন্য দিকে, সান্যাল স্যরও ওকে ফোনে জানিয়েছেন, কলেজের পার্ট-টাইম চাকরিটা তাঁর পক্ষে অভ্রকে করে দেওয়া সম্ভব হবে না। গভীর হতাশায় তার মধ্যে মদ্যপানের ইচ্ছে তীব্র হয়ে উঠল। নেশার ঝোঁকে মল্লারকে ফোন করে সে জানিয়ে দিল যে, চিরশ্রীর সঙ্গে মল্লারের পরকীয়ার কথা সে জানে। অভ্রর অবস্থা বুঝে মল্লার আর তাকে বিশেষ কিছু বোঝাতে যায় না। নেশায় বেহেড হয়ে তার মনে হয় রুমকিকে ফোন করে তার জুয়া খেলা ও অন্যান্য হতাশার কথা সব জানাবে। কিন্তু ফোন করে বসে সুমিকে, এবং তাকেই রুমকি ভেবে যা-যা মনে আসে বলে যায়। সুমির কথায় সে জানতে পারে, সুমি ডিভোর্সি। কোনও ক্রমে টোটো চেপে বাড়ি ফেরে সে। পর দিন সকালে, মায়ের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে যখন সে চায়ের দোকানে গিয়ে বসেছে, তখনই মল্লারের ফোন আসে। সে অভ্রকে জানায়, তাদের স্কুলেরবন্ধু তনুময় আত্মহত্যা করেছে।

Advertisement

রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করছিল অভ্রর। চায়ের দোকানের বেঞ্চ লাথি মেরে ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছিল, হাতে থাকা গ্লাসটা ছুড়ে চুরমার করে দিতে চাইছিল। কিছুই পারল না। অক্ষম রাগ চেপে সে বলল, “তনুময় কেন পালিয়ে গেল? ওর লজ্জা হবে কেন? যারা এই র‌্যাকেট চালাচ্ছিল তাদের লজ্জা-ঘৃণার অনুভূতিই নেই। চলেই যদি গেল, যে কালপ্রিটগুলোর মাধ্যমে ডিল হয়েছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিল না কেন? নামগুলো তো বলতে পারত! যারা টাকা নিয়েছিল তাদের শাস্তি কবে হবে? আদৌ হবে?”

মল্লার বলল, “জানি না। আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসাটা তো আকছার এ দেশে ঘটে। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটাই হবে।”

Advertisement

“মাঝখান থেকে তনুময়রা ভিক্টিম হয়ে গেল! সুইসাইড করার আগে ওর মেন্টাল কন্ডিশন কেমন ছিল তা কি আমরা জানি?”

অভ্র বিষণ্ণ ভাবে বলল, “হ্যাঁ। মুখে অনেক কিছুই বলা যায়। যার হয় সে শুধু বোঝে। জানিস, বাজারে এক দিন দেখা হয়েছিল। তখনই ওর হাবভাব, কথাবার্তা কেমন অসংলগ্ন লেগেছিল। কাউকে নাকি ও মার্ডার করতে চায়। সে জন্য সুপারি-কিলারের খোঁজ করছিল।”

“তনুময় তো যথেষ্ট মেধাবী ছিল। ও কেন যে ট্র্যাপড হল!”

“পরিস্থিতি হয়তো ওকে বাধ্য করেছিল। কেউ বা কারা বুঝিয়েছিল যে এই রাস্তা ছাড়া জীবনে চাকরিই পাওয়া যাবে না।”

মল্লার বলল, “খুব ডিপ্রেসড লাগছে। কিছুতেই মন বসছে না। স্কুলমেট ছিল। কাছ থেকে দেখেছি। তোকেও কাল ডিপ্রেসড লাগছিল ফোনে। অভ্রনীল পাইনকে অচেনা মনে হচ্ছিল তখন।”

“একটা তিন হাজার টাকার টিউশন চলে গেল। প্যারামেডিক্যাল কলেজের অল্প মাইনের চাকরিটাও হল না। সব মিলিয়ে উদ্‌ভ্রান্ত লাগছিল। বাদ দে। নিজেদের দুঃখের সাতকাহন করেই বা কী লাভ? তনুময় সংসারী ছিল। ওর সংসারটা এ বার ভেসে যাবে হয়তো।”

“দেখতে যাবি নাকি এক বার? শেষ দেখা?”

অভ্র বলল, “না। পারব না। ওই দৃশ্য আমার নার্ভ নিতে পারবে না।”

“আমারও।”

“আজ এক বার দেখা করলে হয় না? কত দিন দু’জনে এক সঙ্গে বসে গল্প করা হয়নি।”

মল্লার বলল, “না। আজ একা থাকতে চাই। তা ছাড়া আমাদের জীবনে গল্প ফুরিয়ে গিয়েছে। নতুন কোনও গল্প না এলে কী নিয়ে কথা বলব?’’

“তোর জীবনে তা-ও নতুন গল্প আছে।”

“চিরশ্রীর কথা বলতে চাইছিস?”

“হ্যাঁ।”

“এই গল্পের পরিণতি আসলে মর্মান্তিক। কাল রাতে তুই বলেই দিয়েছিস,” মল্লারের গলা ভারী হয়ে আসে, “হার নিশ্চিত জেনেও আবার বাজির দান দেয় জুয়াড়ি। তাই না? জীবনে আর কিছুই নেই। জীবন শুকিয়ে গেলে স্বয়ং ঈশ্বরও করুণাধারায় আসেন না। চিরশ্রী হয়তো অক্সিজেন, যে জন্য বেঁচে থাকাটা পানসে লাগে না। তবে তোর সঙ্গে এক দিন নিশ্চয়ই সব শেয়ার করব। এখন রাখি।”

চা শেষ করে বসেই থাকে অভ্র। কোনও এক অদৃশ্য শক্তি যেন তার সমস্ত এনার্জি শুষে নিয়েছে। মনে হচ্ছে সে আর তিন পা-ও হাঁটতে পারবে না এখন। সে নিজেও আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল, কেন এবং কিসের তাড়নায়, এখন মনে করতে পারে না।

তনুময়ের অকালে চলে যাওয়া তার ভিতরটাকে একেবারে চুরমার করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, তাকেও এক দিন হয়তো এমন একটা পথ বেছে নিতে হবে। নিজের কাছে হেরে গেলে আয়নার সামনে দাঁড়াতেও ভয় হয়। নিজেকে অনেক অসম্মান ও অপমান থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল তনুময়। তাই হয়তো সে অমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কে জানে, সে-ও হয়তো এক দিন তনুময় হয়ে যেতে পারে।

তার মতো হাজার-হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী ঝুলন্ত সাঁকোর উপর দিয়ে হাঁটছে। যে কোনও মুহূর্তে নীচে পড়ে চোরাস্রোতে তলিয়ে যাবে চিরতরে। না পাওয়ার মধ্যে দুঃখ আছে, পেয়ে হারানোর মধ্যে যন্ত্রণা আছে। যন্ত্রণার তীব্রতার কাছে দুঃখ কিছুই নয়। তনুময়ের যন্ত্রণার তীব্রতা হয়তো সহ্যসীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। ক’জন আর আত্মার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে?

আবার ফোনে রিংটোন বাজতেই অভ্র আচ্ছন্ন অবস্থা থেকে ফিরে এল। সর্বনাশ, সুমি কল করেছে।

“হ্যালো।”

“ঘুম থেকে উঠেছ তা হলে?”

“হ্যাঁ। অনেক ক্ষণ।”

“হ্যাংওভার কেটেছে?’’

সুমির প্রশ্নে অবাক হল সে, জিজ্ঞেস করল, “তুমি এ সব বোঝো?”

“কী ভাবো আমাকে? গেঁয়ো, ব্যাকডেটেড!”

অভ্র একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বলল, “তা কেন ভাবব? কালকে রাতের ফোনের জন্য এক্সট্রিমলি স্যরি। তবে আমি ও সব কালেভদ্রে খাই। আমাকে মাতাল ভেবো না।”

সুমি হাসল, “এত ফর্ম্যালিটি করছ কেন? কালেভদ্রে খেলে কি মাত্রা ছাড়াতে হয়?”

“ও রকম প্রথম বার হল।”

“সাবধান থাকাই ভাল। আজ সকাল থেকে তোমার কথাই ভাবছিলাম।”

অভ্র চুপ হয়ে গেল, কী বলবে ভেবে পেল না।

“শুনে ভেবলে গেলে মনে হচ্ছে! তোমার জন্য কী করা যায় ভাবছিলাম। সুপ্রীতিপিসির ছেলে ফ্রাস্ট্রেশনে মদে আশ্রয় নিচ্ছে, এটা ভাল লাগছে না। আজ সন্ধেয় তোমার বাড়ি যাচ্ছি। কথা আছে।”

অভ্রর ভারী রাগ হল। ওই মেয়েটাকে তার ব্যাপারে কে ভাবতে বলেছে? বাড়ি বয়ে এসে যেচে একগাদা জ্ঞান বিলোবে। করে তো পনেরো হাজার টাকার চাকরি, তার জন্য এত ভাব নেওয়া কেন? বাড়িতে থাকবেই না অভ্র, মোবাইল অফ করে দেবে। স্পষ্ট বুঝিয়ে দেবে যে সে ইচ্ছে করেই সুমিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তার ব্যাপারে কারও নাক গলানো সে বরদাস্ত করবে না।

“কী হল? আবার যে চুপ মেরে গেলে!”

“সন্ধেয় থাকব না। দুটো টিউশন আছে।”

“ও! কাল?”

“কালকে জরুরি কাজ আছে,” অভ্র মিথ্যে বলল।

“বেশ। আমি সময়ে যোগাযোগ করে নেব।”

“কী ব্যাপারে বলতে চাও আগে একটু হিন্ট দিলে ভাল হয়।”

সুমি বলল, “এমন কিছু করতে চাও যাতে তোমার হাতে কিছু টাকা আসবে?”

“হুম, তেমন কিছু পেলে মন্দ হয় না।”

“তা হলে ট্রেডিং করো।”

“সেটা কী?”

“ভেরি সিম্পল। শেয়ার কেনাবেচা করা।”

অভ্র প্রচ্ছন্ন রাগে বলল, “আমি অত রইস আদমি নই। ক্যাপিটাল থাকলে কোনও কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর হতাম, এমন ফ্যা-ফ্যা করা বেকার থাকতাম না। যেটুকু টাকা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আছে তা ভেঙে বিপদ ডেকে আনতে রাজি নই। ওটা ফিউচার সিকিয়োরিটির জন্য। ভুল জায়গায় উপদেশ দিতে এসেছ। আমার ভালমন্দ না বুঝলেই খুশি হব।”

“ঠিক আছে। অত মেজাজ দেখাও কেন? তুমি ভুল ধারণা নিয়ে থাকো। তোমাকে ডিসটার্ব করব না। তবে জানিয়ে রাখি যে, ওটা করে আমি চাকরির থেকে বেশি ইনকাম করি। ওটা করার জন্য প্রচুর টাকা লাগে না। ঝুঁকি আছে। সেটা নিতেই হয়। খানিক বুদ্ধি লাগে। তা তোমার আছে। তবে তোমাকে জোর তো করছি না। রেখে দিচ্ছি।”

অভ্র বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কী অদ্ভুত তার জীবন! তার কাছাকাছি এখন পুরোপুরি বিপরীত সত্তার দু’জন নারী, এক জন লটারি-জুয়া ইত্যাদিতে আসক্ত হতে বারণ করে, অন্য এক জন তাকে ফাটকা খেলার জন্য বোঝায়। তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই?

তিন হাজার টাকার ঘাটতি কী ভাবে মেটাবে সে? এই কম্পিটিশনের বাজারে নতুন টিউশন জোটানো বেশ মুশকিল। প্রখ্যাত স্কুলটিচার, বিখ্যাত কোচিং সেন্টার ছেড়ে তার কাছে সেশনের মাঝপথে কেউ পড়তে আসবে না।

তার কাছে পড়া তিন জন স্টুডেন্টের এক জনও নেটে ভদ্রস্থ র‌্যাঙ্ক করতে পারেনি। এক জন সফল হলেও তার দরজায় অনেকেই হয়তো টিউশন পড়ার জন্য আসত। এখানেও তার ভাগ্য ক্লিক করল না।

দুপুরে স্নান করে অভ্র ঘুমোল। ঘুম থেকে উঠতেই রাজ্যের বিষণ্ণতা তাকে গ্রাস করল। বাইক না নিয়ে পায়ে হেঁটেই সে বেরোল। আজ সে বার বার ফুটপাতের দোকানগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। লজ্জা ঘৃণা ছেড়ে ফুটপাতেই দোকান দেবে সে। মোমোর দোকান না ফাস্ট ফুডের দোকান? দু’রকম দোকানেই বিক্রি ভাল, খদ্দের আছে।

মল্লারকে সে টোটো চালানোর কাজ করতে বারণ করেছিল। এখন তার মনে হচ্ছে টোটো চালানো মন্দ নয়। একটা নতুন টোটো কেনার খরচ তার সাধ্যের মধ্যে। তবে যে দিন সে টোটো চালাবে কিংবা ফুটপাতে ব্যবসা খুলবে সে দিন সমস্ত মার্কশিট আর সার্টিফিকেট কুচি কুচি করে ছিঁড়ে কংসাবতীর জলে ভাসিয়ে আসবে।

মোবাইলটা বেজে ওঠে। সুমি! নিশ্চয়ই ঘরে আসার কথা বলবে। ভদ্র ভাবে ‘ না’ বলে দেবে সে।

“হ্যালো।”

“এত বার যে ডাকলাম শুনতে পাওনি? কী এত আকাশ-পাতাল ভাবছিলে?”

“ডাকছিলে?”

“হ্যাঁ। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাও। ডান দিকের ফুচকা স্টলে আছি। পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলে,” সুমি প্রায় নির্দেশের স্বরে বলল, “ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। আমি যাচ্ছি। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না। ডাকিনী-যোগিনী নই যে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে হবে।”

“অভ্রনীল কাউকে ভয় পায় না।”

“তাই টিউশনের মিথ্যে বাহানা দিয়েছিলে? শোনো, গলার স্বর শুনেই বুঝে যাই কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্যি।”

অভ্র অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সুমি তার দিকেই হেঁটে আসছে। এ কোন উৎপাত যে তার জীবনে হাজির হল!

“ফুচকা খাচ্ছিলাম,” সুমি হাসল, “অনেক দিন টেস্ট করা হয়নি।”

“আচ্ছা।”

“আমি মেয়েটা একটু নাছোড়বান্দা টাইপ। সকালে অত ক্যাটকেটে কথা শোনালে, তবু দেখতে পেয়ে না ডেকে পারলাম না,” সুমি কপালে আসা চুল সরিয়ে বলল, “কোথাও একটু বসি চলো। কোথায় বসা যায় তুমিই বলো। তোমার শহর, তুমি জানবে।”

অভ্র বলল, “সামনে একটা পার্ক আছে।”

“তা হলে যাওয়া যাক।”

পার্কে ঢুকে একটা কাঠের বেঞ্চে দু’জন বসল।

“অস্বস্তি হচ্ছে?”

“না।”

সুমির চোখের তারায় দুষ্টুমির ঝিলিক, “অমন কাঠপুতুলের মতো বসে আছে কেন? ভয় নেই। তোমাকে প্রেমপ্রস্তাব দেব না।”

“যার আর্থিক মেরুদণ্ডই নেই তার কাছে প্রেম-ভালবাসা ব্যাপারটাই নেহাতই হাস্যকর,” অভ্র চোয়াল শক্ত করল, “তা ছাড়া নিজেকে অত গুরুত্বপূর্ণ ভাবা ঠিক নয়।”

“ও রকম ভাবিও না। এক জন সাধারণ মেয়ে, সাদামাটা দেখতে, সাধারণ একটা চাকরি করি। কী সব অ্যাপিল-ট্যাপিল বলে তা আমার চেহারায় নেই। কেউ আমার প্রেমে পড়বে কেন? তা ছাড়া প্রেম-ভালবাসায় বিশ্বাস কম, ও-পথে যেতেও চাই না। তুমি নিশ্চয়ই জানো যে, আমি ডিভোর্সি?”

অভ্র বিব্রত হল, “না, জানি না। তবে কাল সম্ভবত মাতাল বরের রেফারেন্স দিয়েছিলে।”

“হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে সুপ্রীতিপিসি হয়তো বিস্তারিত বলেছে তোমাকে।”

“আমার মায়ের পিএনপিসি করার স্বভাব নেই।”

“কিন্তু লোকজনের পিএনপিসি-র জন্য আমি উপযুক্ত টপিক। বিয়ের দু’বছর বাদে আমার ডিভোর্স হয়েছে। তিতিবিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছিল। আমিই কেস ফাইল করি,” সুমি কিছু ক্ষণ থেমে বলল, “আমার কথা বাদ দাও। কতকগুলো প্রশ্ন ছিল। কিছুটা কনফিডেনশিয়াল, ইচ্ছে হলে উত্তর না-ও দিতে পারো। প্রাইভেসিতে নাক গলাচ্ছি ভাবতেও পারো।”

অভ্র বলল, “আগে প্রশ্নগুলো শুনি।”

“তোমাদের সেভিংস কত তা জানতে চাইছি না। বলছি যে লাখখানেক টাকা ইনভেস্ট করতে কি খুব অসুবিধে হবে?”

“তা হয়তো হবে না। তবে টাকাটা জলে গেলে আফসোস হবে।”

“বেশি নয়, পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে তুমি ট্রেডিং-এ নেমে পড়ো। আমি দু’লাখ ইনভেস্ট করেছি, বিভিন্ন শেয়ারে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে করি। মাসে কমবেশি কয়েক হাজার করে উপরি এসেই যায়। আর ঝুঁকির কথা যদি বলো, অল্পবিস্তর সবেতেই আছে। সেটুকু নেওয়াই যায়। তোমার পরিস্থিতি কি তেমন দাবি করে না?”

অভ্র মাথা নাড়ে, “তা করে। জীবন নিয়ে ফাটকা খেলাই যায়।”

“জোর করছি না। ওটা একটা পথ। ভেবেচিন্তে নামবে। পড়াশোনা এবং খোঁজখবর করে মাঠে নেমো। না হলে শুধু লস খাবে। আর অন্য কোনও রাস্তা ভেবেছ?”

অভ্র বলল, “ভাবিনি এখনও। এক বার খেটেখুটে এসএসসি দিতে চাই। সেই সুযোগ পাব কি না জানা নেই।”

“এখানকার প্যারামেডিক্যাল কলেজ থেকে ফিজ়িয়োথেরাপির কোর্সটা করে নিতে পারো। চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি। ওটা করলে সেল্ফ-ডিপেন্ডেন্ট হতে পারবে। বয়স তোমার এমন কিছু বেশি হয়নি, চার বছর পরে প্রফেশনাল ফিল্ডে নামার সময় নিশ্চয়ই বুড়ো হয়ে যাবে না।”

“তা হব না। তখন আটত্রিশ বছর বয়স হবে।”

“ভেবে দেখো।”

“থ্যাঙ্কস ফর ইয়োর অ্যাডভাইস।”

“কিছু একটা অন্তত করো। বিয়ের তাড়া নিশ্চয়ই নেই। বেকার যুবকের জন্য কেউ মালা হাতে বসেও থাকবে না। ওটা আমি জানি। যদিও সুপ্রীতিপিসি দেখলাম তোমার বিয়ের ব্যাপারে বড়ই উতলা। আমাকে পাত্রীর খোঁজ করতে বলেছে। গাঁ-ঘরের গরিব মেয়ে হলেও চলবে।”

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement