যন্ত্রবিদ: টমাস আলভা এডিসন এবং ফোনোগ্রাফ। বাঁ দিকে, ওয়াক্স সিলিন্ডার ফোনোগ্রাফ। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স
উত্তর কলকাতার একটি ঘিঞ্জি গলি। নাম, শিবনারায়ণ দাস লেন। অদূরেই বহতা সাবেক কর্নওয়ালিস স্ট্রিট। এ পাড়ায় সে দিন এসেছেন শহরের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি, গায়ক হিসেবে যাঁর গলার পরিচিতি তখনও ফিকে হয়ে আসেনি পুরোপুরি। তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! বার্তা রটে গেল মুখে মুখে— মাঝবয়সি কবিকে দেখতে ক্রমে ঘন হয়ে উঠল হুজুগে ভিড়। বেড়ে চলল ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোল।
সে দফায় রবীন্দ্রনাথের গন্তব্য ছিল হেমেন্দ্রমোহন বসুর বাড়ি। উদ্দেশ্য সহজ, নিজের গলায় ধরে রাখা নিজেরই লেখা কিছু গান। এই প্রস্তাব দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে তদবির করেছিলেন হেমেন বসু নিজেই। তখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের তুঙ্গমুহূর্ত, গান রেকর্ড করার নতুন সব অছিলা পেয়ে বসেছে উদ্যোগপতি হেমেন্দ্রমোহনকে। তাঁর উদ্দেশ্য, যন্ত্রে ধরে রাখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠে গাওয়া গানগুলোকে পৌঁছে দেওয়া শ্রোতার কাছে, ছড়িয়ে দেওয়া স্বদেশের ভাবাদর্শ। “রেকর্ড নিখুঁত করবার জন্য কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথ যখন একটি গান দু’বার গাইতেন, তখন আমাদের অপ্রত্যাশিত আনন্দের সীমা থাকত না”— বহু পরে, ‘দেশ’ পত্রিকায় ওই সব দিনগুলির স্মৃতিচারণে লিখেছিলেন অমল হোম।
কী সেই যন্ত্র, যার দক্ষ মধ্যস্থতায় উত্তর শহরে চিরকালের মতো থেকে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের গলা? যন্ত্রটির নাম ফোনোগ্রাফ। বয়স তখন কুড়ির আশপাশে। ১৮৭৮-র আশেপাশে তার উদ্ভাবন, টমাস আলভা এডিসনের হাত ধরে। এ শহরে ফোনোগ্রাফের মেয়াদ তত দিনে খুব হালের নয় অবশ্য। সিদ্ধার্থ ঘোষ তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই, ১৮৭৯ সালে মহামেডান লিটারারি সোসাইটির বার্ষিক অধিবেশনে, স্যামুয়েল হ্যারাডেনের হাতে প্রদর্শিত হয়েছিল ফোনোগ্রাফ। সেন্ট জেভিয়ার্সের দুঁদে অধ্যাপক ফাদার লাফো আরও একটি ফোনোগ্রাফ আনিয়েছিলেন কলকাতায়, এর বছর দশেকের মধ্যেই। লাফোর গুরুকুল বেয়ে ফোনোগ্রাফ-সংক্রান্ত উৎসাহ চারিয়ে যায় তাঁর ছাত্র জগদীশচন্দ্র বসুর মনে। বছরকয়েকের মধ্যেই যুবক জগদীশচন্দ্র কলকাতায় ফোনোগ্রাফ আনালেন, এমনকি, ঠাকুরবাড়ির খামখেয়ালি সভাতেও নাকি ফোনোগ্রাফ-শ্রবণ দৈনিক কার্যক্রমের অংশ ছিল।
কলকাতায় ফোনোগ্রাফের প্রাক্-ইতিহাস মোটামুটি এমনটাই।
হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসা যাক ১৯০৫-এর ওই উত্তাল দিনগুলিতে। তত দিনে স্বদেশির ঢেউ আছড়ে পড়ছে রুচির ব্যাপারী, সম্পন্ন বাঙালি-মানসে। বঙ্গভঙ্গের খবর পেলেন যখন, রবীন্দ্রনাথ তখন গিরিডিতে। এক ধাক্কায় লিখে ফেললেন অনেকগুলি গান, যা ধরে রাখা আছে ‘বাউল’ নামে ওঁর গানের বইটিতে। সে বইয়েরই দু’টি গান প্রচারিত হয়েছিল ফোনোগ্রাফে: ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’ আর ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’। ইতিহাস জানায়, গান ও কবিতা মিলিয়ে সে যাত্রায় সাকুল্যে একুশ বার হেমেন্দ্রমোহনের স্বরযন্ত্রে গলা জুগিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যদিও, ওই সব গান আর কবিতার কিছুই প্রায় পড়ে নেই আজ। ঠিক যেমন, আজকের জনস্মৃতি থেকে ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে এসেছে ফোনোগ্রাফের অস্তিত্বও। এই বিস্মরণের কারণ হতে পারে একাধিক। এক দিক থেকে ভাবতে গেলে, গ্রামোফোন বা রেডিয়ো বাণিজ্যসফল হয়ে উঠেছিল যে অর্থে, ফোনোগ্রাফ সে ভাবে পসার জমাতে পারেনি কোনও দিনই। তার গায়ে বিষফোড়ার মতো লেগে ছিল স্বদেশি প্রচারযন্ত্র সন্দেহে পুলিশের নির্মম ধরপাকড় আর প্রযুক্তিগত কিছু অবধারিত দুর্বলতা। এ সমস্ত অঘটনেরজেরেই বোধ হয় ফোনোগ্রাফের স্থায়িত্বও ছিল তুলনামূলক কম।
কিন্তু, প্রযুক্তির মাপনিতে কী ভাবেই বা ধরা যাবে পণ্যের জনজীবন? ভোলা উচিত নয় যে টেপ রেকর্ডারও আসার বিস্তর আগে, ঘটমান ধ্বনিকে তাৎক্ষণিক ও অনায়াস ধরে রাখতে ফোনোগ্রাফই ছিল নির্বিকল্প মাধ্যম। উনিশ শতকের শেষে, ১৮৯৭ সাল নাগাদ, ভারত ঘুরতে ঘুরতে সে বার লাহৌর পৌঁছেছেন বিবেকানন্দ, সেখানকার কলেজে একটা বক্তৃতা দেবেন। স্বামী গম্ভীরানন্দের লেখা থেকে জানা যায়, স্থানীয় এক অধ্যাপকের উদ্যোগে সে বক্তৃতার পুরোটা রেকর্ডও হয়েছিল ফোনোগ্রাফে— ধরে রাখা গিয়েছিল বিবেকানন্দের আকাঁড়া আওয়াজ। বছরকয়েক পর, ১৯০৩ নাগাদ, ঠিক একই সুবিধের কথা উল্লেখ করেছিল ‘মহাজনবন্ধু’ পত্রিকা। ফোনোগ্রাফের তখন বাজার গরম। সেই আবহের ভিতরই যন্ত্রের সমর্থনে পত্রিকাটি ছাপল নিবন্ধ— ফোনোগ্রাফের বিস্তর উপযোগিতা দেখিয়ে, তারা খোলসা করেছিল যুক্তি: “ফণোগ্রাফ এবং গ্রামোফোণে প্রভেদ এই যে, গ্রামোফোণে রেকর্ড করা যায় না, এক গান কেবলই গাহে। ফণোগ্রাফে রেকর্ড পরিবর্ত্তন করা যায়। যেমন ধরুন, বঙ্কিম বাবু গাহিলেন “সাধের তরণী আমার ও কে দিল তরঙ্গে।” তৎপরেই মাইকেলের রুষ-জাপান যুদ্ধের ছন্দে “কি বলিলি আমরিকে! রক্ষকুল-রুষ আমি দানবনন্দিনী, ইংরাজ শ্বশুর মম, ফ্রান্স মম স্বামী, আমি কি ডরাই কভু অসভ্য জাপানে।” কিন্তু এমনটী গ্রামোফোণে হইবার যোটী নাই। উহাতে কেবল ‘সাধের তরণী’ বাহির হইবে।” অস্যার্থ: পরিষেবার দিক থেকে ভাবলে, গ্রামোফোনের চেয়ে ফোনোগ্রাফ তুলনামূলক ভাবে দড়— আর, শব্দের স্মৃতি ঝটিতি বন্দি রাখতেও অনেক তৎপর। উপরি পাওনা ছিল অবশ্য আরও একটা। ফোনোগ্রাফ গায়ককে ভুল সংশোধনের যে সুযোগ দিত, চট করে সেই সুবিধে মিলত না গ্রামোফোনে।
অবশ্য ফোনোগ্রাফ নিয়েও বিভ্রাট ঘটত না, এমন নয়। এই যেমন, ১২৯৮ বঙ্গাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজের ফোনোগ্রাফে রবীন্দ্রনাথ-সহ ব্রাহ্ম সমাজের বেশ কয়েক জনের গলা ধরে রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। কিন্তু শেষ অবধি যা ঘটে গেল, তা এক উল্টো বিড়ম্বনা। ‘পরিচারিকা’ পত্রিকায় প্রকাশিত টুকরো খবর থেকেই পড়ে ফেলা যাক বাকিটা: “এ সম্বন্ধে সম্প্রতি বড়ো মজার তামাসা হইয়া গিয়াছে। কোনো বাবু কুকুর বিড়াল পাখির ডাক ডাকিয়াছিলেন, একটি নলে তাহা রক্ষিত ছিল। পরে সেই নলে বাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুদ্ধ ঈশ্বরের মহিমা প্রতিপাদক একটি গান রাখা হয়।… (একদিন যন্ত্রটি ঐ) গান গাইতে গাইতে হঠাৎ ঘেউ ঘেউ রবে কুকুরের শব্দ বাহির হইয়া পড়িল।… পূর্ব্ব-রক্ষিত কুকুরের শব্দ ভালো করিয়া মুছিয়া ফেলা হয় নাই, এই জন্য হঠাৎ কুকুর ডাকিয়া উঠে।”
জীবন
ঠিক কী উপায়ে ফোনোগ্রাফ পসার জমাল কলকাতায়, তার সুলুকসন্ধান করেছেন সিদ্ধার্থ ঘোষ, জে এন জোশী, সন্তোষকুমার দে বা অম্লান দাশগুপ্তের মতো ধীমান গবেষক। কিন্তু, এঁদের চর্চার পাশাপাশি প্রশ্নও থাকে অবধারিত। নিছক ব্যবসাপাতি, প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর রেকর্ডের দস্তাবেজের পক্ষে পণ্যের জনজীবনের কতটাই বা জানানো সম্ভব?
বেশির ভাগই বলবেন, খুব বেশি কিছু নয়। সবটা তো নয়ই। মাথায় রাখতে হবে, উনিশ শতকের শেষাশেষির ভিতরেই আবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ছে ফোটোগ্রাফ, বায়োস্কোপ, গ্রামোফোন। প্রযুক্তির অবাক-করা বিস্ফোরণে দিব্যি সংরক্ষণ করে রাখা যাচ্ছে স্মৃতি। কলের ভেতর লুকোনো থাকছে মানুষের অবয়ব, গলা কিংবা চলাফেরা। বাংলার পাঠকসমাজে এ সময়ই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে একগুচ্ছ সাময়িকপত্র, যেখানে নিয়মিত বেরোয় বিজ্ঞান সংক্রান্ত সমাচার, তাতে ফোনোগ্রাফের উল্লেখও আসে ইতিউতি। সে সমস্ত লেখার মর্মবস্তু ছিল একটাই। এক অপার বিস্ময়বোধ। শব্দ আর ধ্বনি আকাঁড়া ধরে রাখার তীব্র বিস্ময়। আর, সেই পুনরুৎপাদনে আবিষ্ট শ্রোতার ঘোর-লাগা চমক! ‘ভারতী’ কিংবা ‘প্রবাসী’-র পাতায় নিয়মিত অনুবাদ হয় বিদেশি বিজ্ঞানীদের ফোনোগ্রাফ-বিষয়ক লেখাপত্রের, লেজুড় হিসেবে থেকে যায় কারও কারও জীবনচরিতও। এডিসনের জীবন আর কীর্তি নিয়ে লেখা বেরোয় ইতস্তত। এই যেমন, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে ‘প্রবাসী’-র পাতায় রয়েছে বৃদ্ধ এডিসনের সঙ্গে কোনও এক ম্যাকমোহনের সাক্ষাৎকার, লেখক যেখানে তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন বিজ্ঞানীপ্রবরকে, এডিসন নির্দ্বিধায় জানাচ্ছেন ফোনোগ্রাফ আর বায়োস্কোপের কথা, কেন-না, “আমি গান ভালবাসি বলিয়াই ফোনোগ্রাফ ভালবাসি।” আর, কেবল তো বিজ্ঞানই নয়, জনৈক অম্বুজাক্ষ সরকারের কলমে ১৩১৯-এর কার্তিক সংখ্যার ‘ভারতী’-তে অনূদিত হয়েছিল ‘ফোনোগ্রাফ’ নামে এক নাতিদীর্ঘ ব্রিটিশ গোয়েন্দা গল্পও। ভিক্টোরীয় লন্ডনের কুহকিনী প্রেক্ষাপটে লেখা ওই গল্পে থেকে-থেকে হানা দেয় ফোনোগ্রাফে বাসি শব্দ শুনতে পাওয়ার ছমছমে শিহরন।
ইউরোপ-আমেরিকায় ফোনোগ্রাফ নিয়ে চলতে থাকে নিত্যনতুন নিরীক্ষা, আর সেই রোমাঞ্চের ঢেউ এসে লাগে বাংলা সাময়িকপত্রের পাতায়। ১৩১৬ বঙ্গাব্দ, মার্কিন মুলুকে বেরোল ‘এনানসিয়া ফোন’ নামে এক নতুন যন্ত্র আর ‘প্রবাসী’-তে বেরোল টাটকা লেখা। এনানসিয়া-র বাংলা নামও হল একটা: ‘কথনশীল চিঠি’, কেননা, “সাধারণ টেলিফোনের স্থানে এই যন্ত্রটি রাখিয়া দিলে যন্ত্রটি অনুসন্ধানকারীকে সম্বাদ দিবে।” ১৩২৫-বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’-তে দেখছি চলন্ত ছবির সঙ্গে ফোনোগ্রাফ জুড়ে কী ভাবে ছবি দেখাচ্ছেন এডিসন, তারই একটা বিবরণ। চোখ ফেরানো যাক ‘পঞ্চপুষ্প’-র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের একটি সংখ্যায়, যেখানে রয়েছে ‘আমেরিকা থেকে নূতন রকম ফনোগ্রাফ রেকর্ড তৈয়ারি’র খবর। তার বিশেষত্ব, প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, “হাত থেকে পড়িয়া গেলে ভাঙিয়া যায় না, এবং ইচ্ছা করিলে দুই পাট করিয়া পকেটে লওয়া যায়।” ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’-তে থাকে ফোনোগ্রাফের আবিষ্কর্তা কে, সেই নিয়ে বিস্তর বিসংবাদ; তার আশপাশে, ১৩৩৩-তে মিলছে এডিসনের জীবনচরিত; ওরই বছর তিনেকের মধ্যে ছাপা হচ্ছে প্রথম আবিষ্কৃত ফোনোগ্রাফের ১৮৭৯ সালের একটি সাদাকালো ছবি। সমস্তকিছুর উদ্দেশ্য একটাই। প্রথানুগ বিজ্ঞানপত্রিকা না হয়েও, জনপ্রিয় সাময়িকপত্রের চৌহদ্দির মধ্যে থেকেই, পাঠকসমাজের মধ্যে এক ধরনের বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলা— সেই নিয়ে চর্চার একটা আবহের প্রসার।
অবশ্য, ফোনোগ্রাফ নিয়ে বাংলা ভাষায় এই মননশীলতার আরম্ভ কবে, তা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে আরও কিছু দশক। স্বর্ণকুমারী দেবীর অনুরোধে তখন ‘ভারতী’ পত্রিকায় নিয়মিত কড়চা লিখতেন জগদানন্দ রায়। ওই সিরিজ়ের জন্যই, এক কিস্তিতে আস্ত একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন জগদানন্দ, যার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ফোনোগ্রাফ। পরে, ওঁর ‘শব্দ’ বইতেও লেখাটি খুঁজলে পাওয়া যাবে। ওই প্রবন্ধে উৎসাহী পাঠককে আন্তরিক অনুপুঙ্খে জগদানন্দ বুঝিয়ে দেন ফোনোগ্রাফের ভেতরকার কলকব্জা। লেখেন তিনি, “মনে কর, গান বন্ধ হইয়া গিয়াছে। আমরা যন্ত্রের পিছনকার কৌটার সেই ছুঁচটিকে রেকর্ডের গর্ত্তে লাগাইয়া ঢাকটিকে উল্ট পাকে ঘুরাইতে লাগিলাম।… ছুঁচ সেই পাতলা চামড়ার গায়ে আঁটা আছে। সুতরাং গর্ত্তে উঠানামা করিয়া তাহা যেমন কাঁপিতে থাকিবে, সঙ্গে সঙ্গে চামড়াটাও কাঁপিতে থাকিবে।… চামড়ার কাঁপুনিতে বাতাস কাঁপিতেছে। কাজেই ইহাতে যে-শব্দের ঢেউ উঠিবে, তাহাতে আমরা আগের গানই শুনিতে পাইব। ইহাই ফোনোগ্রাফ হইতে গান বা অপর শব্দ বাহির করার কৌশল।”
ফোনোগ্রাফে ধ্বনি-পুনরুৎপাদনের কারিগরি সুবিধেটুকু যে তাঁর নজর এড়ায়নি, জগদানন্দের শব্দের ব্যবহারেই যেন অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে যায় তা। রেকর্ড তাঁর জবানে ‘শব্দ-লিপি’। অর্থাৎ, কলমে যেমন খাড়া করা যায় অক্ষরের চেহারা, ফোনোগ্রাফের কার্যকারিতাও অনেকটা তার কাছাকাছি। জগদানন্দই একা ছিলেন না অবশ্য। সে আমলের নিয়মিত বিজ্ঞানলেখকদের আরও অনেকের কলমেই উঠে আসছিল ফোনোগ্রাফ-প্রসঙ্গ। যেমন, চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য। ১৩২৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ওঁর ‘নব্য-বিজ্ঞান’ বইয়ের প্রথম পরিচ্ছেদ ফোনোগ্রাফের জন্য বরাদ্দ। এ বইতে চারুচন্দ্র লেখেন এডিসনের ক্ষিপ্রবুদ্ধি আবিষ্কারের কথা, কিশোর পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নেন ফোনোগ্রাফ-আবিষ্কারের টুকরো কিছু কথাকণিকা।
শ্রুতি
অবশ্য, সে-ই শেষ উল্লেখ নয়। অনেকটা সময় পেরিয়ে, আরও এক বার ফোনোগ্রাফ নিয়ে কলম ধরতে হয়েছে চারুচন্দ্রকে, দেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ খানিকটা পরে, ১৩৬৫ সালের ‘বসুধারা’ পত্রিকার সংখ্যায়। লেখার বিষয় ছিলেন, আর কেউ নন— ফোনোগ্রাফ বিষয়ে প্রথম বাঙালি নিরীক্ষক, জগদীশচন্দ্র বসু।
‘আচার্যদেব স্মরণে’ নামের সে লেখায় মর্মান্তিক এক অভিজ্ঞতা শুনিয়েছিলেন চারুচন্দ্র। সময়টা ১৯০৩-এর আশপাশে, তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের ছাত্র। এক দিন বাড়িতে নেমন্তন্ন করে তাঁকে ডেকে নিয়ে গেলেন জগদীশচন্দ্র, সঙ্গে আরও বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব, কথাবার্তা জমে উঠেছে; হঠাৎ সামনে রাখা, চোঙাসদৃশ রেকর্ডটা চালিয়ে দিলেন। নেপথ্যে চলতে আরম্ভ করল একটা গান, “মাঝি, তোর বৈঠা নে রে/ আমি আর বাইতে পারলাম না।” দুটি স্তবক হতে না হতেই কল বন্ধ করে দিলেন জগদীশচন্দ্র। “তোমরা ভাল করে গানটা শোন; একটা চাষা সমস্ত দিন মাঠে পরিশ্রম ক’রে বাড়ি ফেরবার সময় কি গাইতে গাইতে আসছে,” বললেন তিনি। বাকিটা চারুচন্দ্রের বয়ানেই শোনা যাক— “গান আবার আরম্ভ হল। শেষ হলে দেখা গেল, তাঁর মুখ লাল হয়ে উঠেছে। বলে উঠলেন, ‘আমার সব চেয়ে বড়ো দুঃখ এই, আমাদের যথার্থ গৌরব ভুলে গিয়ে মিছে আড়ম্বর নিয়ে আমরা ভুলে আছি। অনেক দেশ তো ঘুরে এলুম, কোন দেশে সভ্যতা এমন নিম্নস্তর অবদি পৌঁছেছে?’”
জগদীশচন্দ্রের এই কথাটিতেই খোলসা হয় ফোনোগ্রাফের আদত গুরুত্ব। সে আর গান শোনার বিনোদন সরবরাহ করছিল না শুধু। স্বদেশি আমলের সেই যুগসন্ধিতে, স্বদেশ হয়ে উঠছিল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এক অভিজ্ঞতা— কেবলই বইয়ের শুকনো পাতায় আটকে থাকা জড়, মৃত কোনও অস্তিত্ব নয়। ফোনোগ্রাফ সেখানেই পালন করছিল এক জরুরি রাজনৈতিক কাজ, ধরে রাখছিল খোদ দেশের মানুষের কথা, তার বাক্য, নিত্য জীবন আর সংস্কৃতি। স্বদেশি আমলে ধুয়ো উঠছিল: রোজকার বুলির সঙ্গে শামিল হতে হবে, পল্লিতে পল্লিতে জোগাড় করতে হবে মানুষের মুখের বয়ান, ছাড়তে হবে বইমুখো শিক্ষার ঠুনকো অভিমান। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর অভিভাষণে প্রত্যাশা রাখছিলেন রবীন্দ্রনাথ— কেতাবিয়ানার আগল ডিঙিয়ে পরিষৎ-কে এ বার দায়বদ্ধ হতে হবে স্বদেশের ‘আদত’ ইতিহাস বার করার কাজে। সে ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে, ওঁর ভাষায়, ‘দেশের জনপ্রবাহকে অবলম্বন করিয়া’— তার কথ্য ঐতিহ্যে, তার শ্রুতিসাহিত্যে। এই বোধে দীক্ষা নিয়েই, ময়মনসিংহে গ্রামের পর গ্রাম চষে ফেলছেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার— মোমের ফোনোগ্রাফ সিলিন্ডারে ভরে নিচ্ছেন একের পর এক গল্প, ধরে রাখছেন বয়স্ক ও প্রবীণাদের মুখের বোলচাল। ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’-তে মুদ্রিত রয়েছে দক্ষিণারঞ্জনের এ কথাগুলি: “কথা ও সঙ্গীতের দোলা বাজে এসে জাতির অন্তরের তারে।… দেশের, বিদেশের, যিনি অভিলাষ করেন বাংলাকে জানার, নিবিড় সন্ধান তাঁকে নিতে হবে বাংলার কথা ও গানে।” ভদ্রলোকি পরিসরে জাঁকিয়ে বসছিল ‘দেশ’কে শুনতে পাওয়ার তুমুল আকুতি, চারিয়ে যাচ্ছিল বিরল এক শ্রবণ-সংস্কৃতি। স্বদেশকেখুঁজে পাওয়ার বারো বছরব্যাপী সেই অক্লান্ত সন্ধানে, দক্ষিণারঞ্জনের যথার্থ দোসর হয়েউঠেছিল ফোনোগ্রাফ।
অবশ্য, এমন অগাধ ফোনোগ্রাফ-নির্ভরতা দক্ষিণারঞ্জনের জীবনে এক দুর্ঘটেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বইকি। কেননা, রেকর্ড-করা গল্পগুলির হুবহু অনুলিপি করে বাজারে এসেছিল ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’-র যে সংস্করণ, কিছু কাল যেতেই ভাষার দুর্বোধ্যতা আর নাগরিক পাঠকের অসমর্থনের জেরে প্রত্যাহার করে নিতে হয় সে বই। ‘সাধারণী’-র সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার অভিযোগ তুলতে থাকেন ‘ঠাকুরমার ঝুলি’-র বিরুদ্ধে। বাজারের হাল ধরতে দক্ষিণারঞ্জন গল্পগুলোর আদ্যন্ত পরিমার্জনায় নামেন বাধ্য হয়ে। কেবল তা-ই নয়, ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র জানাচ্ছেন, দক্ষিণারঞ্জনের হস্তাবলেপ-সমৃদ্ধ সংস্করণে “কথ্য গল্পের সংহত লেখ্য রূপ দেওয়া হয়েছে, রকমফের ঘটে গেছে গল্প আস্বাদনের তারে।” যা এত কাল বরাদ্দ ছিল স্রেফ শ্রবণের জন্য, আজ তা শহরবাসী পাঠকের খাদ্য। শুধুই কি দক্ষিণারঞ্জন? শ্রুতি-জোগাড়ের অনুসন্ধিৎসা কিন্তু বহাল ছিল স্বদেশি যুগ পেরিয়েও। চোঙাটে মোমযন্ত্রে সুর আর শব্দের এথনোগ্রাফি চলেছিল নিদেন পক্ষে তিরিশের দশক অবধি। আর্নল্ড বাকে-ই তার মস্ত বড় উদাহরণ। হল্যান্ডের নাগরিক এবং শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন পড়ুয়া, পড়ার পাট মিটে যাওয়ার পর ময়দানে নেমে পড়লেন সুর-সন্ধানের কাজে। বাংলা, নেপাল আর শ্রীলঙ্কা জুড়ে চলতে থাকল বাকে-র কাজ। জড়ো হল এক গুচ্ছ স্বর, সঙ্গ জোগাল একটি সবেধন ফোনোগ্রাফ।
জমায়েত
কেবলই মুখের কথা জোগাড় করাতেই সে দিন ফুরিয়ে যায়নি ফোনোগ্রাফের দায়। স্বদেশি আমলে তাকে কাজে লাগানো হয়েছিল আরও বড় এক লক্ষ্যে। সে উদ্দেশ্য অংশত বিনোদন, বাকিটুকু রাজনৈতিক। ১৩১২ সালের ‘প্রবাসী’-র রিপোর্ট উল্লেখযোগ্য: “গত ২৬শে ফাল্গুন কাশীনরেশের বাড়িতে প্রয়াগস্থ বাঙ্গালীদের একটি সম্মেলন হইয়া গিয়াছে। সম্মিলনক্ষেত্রে অত্রস্থ অধিকাংশ বাঙ্গালী উপস্থিত হইয়াছিলেন। ছেলে ও যুবকদের নানাবিধ ব্যায়াম ও ক্রীড়া হইয়াছিল। ঐকতান বাদ্য ও সঙ্গীত হইয়াছিল ফনোগ্রাফের গান হইয়াছিল। কলিকাতার শ্রীযুক্ত বাবু হেমেন্দ্রমোহন বসু (H. Bose) মহাশয় নিজ ব্যয়ে উৎকৃষ্ট ফনোগ্রাফ ও রবিবাবু, দ্বিজেন্দ্রবাবু প্রভৃতির কণ্ঠে গীত গানের রেকর্ডসহ একজন বাদক পাঠাইয়া প্রবাসী বাঙ্গালীদিগকে কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ করিয়াছেন। তাঁহার রেকর্ডগুলি বেশ ভাল; অনেক যন্ত্রে যেরূপ একটা অস্বাভাবিক শব্দ বাহির হয়, এগুলিতে তাহা নাই বলিলেও চলে।” বাংলার বাইরের প্রবাসীদের জড়ো করা, গড়ে তোলা মজবুত সমিতি, ছড়িয়ে দেওয়া বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল: স্বদেশি চেতনার এ-ও এক দিক ছিল। ফোনোগ্রাফ ধরতাই জুগিয়েছিল তাতে। সম্মেলনের চার দশক পর, ‘প্রবাসী’-র পাতাতেই রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে শান্তা দেবী স্মৃতি খুঁড়ে লিখেছেন ‘গোল গোল গেলাসে’র চেহারার ফোনোগ্রাফ রেকর্ডের কথা। “বৎসরে একবার ইহাদের (প্রবাসী বাঙালি সমিতি-র) খুব ঘটা করিয়া উৎসব হইত। সেখানে লাঠিখেলা, ছুরিখেলা, tent pegging প্রভৃতি বহু খেলাহইত। কলিকাতা থেকে ফনোগ্রাফ আনাইয়া রবীন্দ্রনাথের ‘ভুবনমনমোহিনী’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ’ প্রভৃতি গান, ‘বন্দেমাতরম’ গান ও দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান প্রভৃতি শুনাইবার ব্যবস্থা পিতৃদেব করিতেন।”
ফোনোগ্রাফের তদানীন্তন বিজ্ঞাপনগুলি খুঁটিয়ে দেখলে চোখে পড়বে ‘স্বদেশি’র সঙ্গে তার এমন অন্তরঙ্গ লগ্নতা। সিদ্ধার্থ ঘোষ বা অমিত ভট্টাচার্যের সঙ্কলিত বইতে সেই সংযোগের দু’-একটা ঝটিতি নমুনা মেলে সহজেই। হেমেন বসুদের সংস্থার তরফে একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য়। বিজ্ঞাপনের উপরে, ইংরিজি হরফে সটান ঘোষণা, ‘ডোন্ট ইউজ় ফরেন রেকর্ডস’, নীচে, খানিক ছোট হরফে ও স্তিমিত ভঙ্গিমায় ব্যাখ্যা, ‘রেকর্ডস মেড ইন ইয়োর ওন কান্ট্রি হুইচ আর/ ডেফিনিটলি বেটার এভ্রিওয়ে/ ইট মে বি হার্ড টু বিলিভ বাট ইট ইজ় ট্রু অল দ্য সেম, / এইচ বোসে’জ় রেকর্ডস/ আর অ্যানাদার প্রুফ অব দ্য গ্রেট সাকসেস অলরেডি অ্যাচিভ্ড বাই আস ইন আওয়ার/ এনডেভর টু সাপ্লাই ওন নিড্স’। নিজেদের চাহিদামতো পণ্য বানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য যে এই মুহূর্তে বাঙালির আছে এবং উপভোগের জন্য তাকে যে আর তাকিয়ে থাকতে হয় না বিলেতের দিকে, এই সগর্ব ঘোষণাটুকু জাহির করেছিল এই সমস্ত বিজ্ঞাপন। এমনকি, তথাকথিত প্রমোদমূলক প্রচারেও উঁকিঝুঁকি মারছিল স্বরাজের আবছা নির্ঘোষ। সিদ্ধার্থ ঘোষ ‘প্রবাসী’-তে ছাপা একটি বাংলা বিজ্ঞাপন উল্লেখ করেছেন, যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে হেমেন বসু লিখেছেন, “আপনার পরিবারের মধ্যে বিমল আনন্দ প্রদান করিবার পক্ষে/ বিশেষ উপযোগী এমন কি একান্ত প্রয়োজনীয়।/ ইহার দ্বারা আপনি স্বদেশের সর্ববশ্রেষ্ঠ গায়কদিগের গান যখন ইচ্ছা শুনিতে পাইবেন।” সওদা-করা পণ্যে বাজার থইথই— উপরন্তু, মধ্যবিত্ত বাঙালির নিজস্ব, নিভৃত অবসরটুকুও চলে যাচ্ছে সাম্রাজ্যের খপ্পরে। এমন ক্রান্তিমুহূর্তে, ফোনোগ্রাফ বাংলা ভাষাতেই বাঙালি গায়কের গান শোনাতে সক্ষম। সংস্কৃতির ধর্মযুদ্ধে এ-ও এক গর্বের উপকরণ বইকি।
গর্ব অবশ্য টেকেনি খুব বেশি দিন। দেশের মাটিতে তৈরি হওয়া ফোনোগ্রাফ ক্রমেই ধাক্কা খেতে থাকল আগুয়ান বাস্তবতার সামনে। এক দিকে রেকর্ডের বিরুদ্ধে পুলিশি জুলুম, প্লেগ-প্রতিরোধী জীবাণুনাশক ছাড়তে এসে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিল সমস্ত রেকর্ড। ফোনোগ্রাফের চাহিদা পড়ে আসছিল ক্রমে। ব্যবসা তুলে দিলেন হেমেন্দ্রমোহন, ফরাসি বণিকদের সঙ্গে যৌথ মিতালিতে বানালেন ‘প্যাথিফোন’, কার্যত উঠে গেল পুরনো কারখানা, আস্তে আস্তে নিভে এল স্বদেশির সবটুকু উদ্দীপন। আর তার সঙ্গেই সম্প্রসারিত হতে থাকল সঙ্গীত-বিপণনের নয়া অধ্যায়, বাজার ছেয়ে যেতে থাকল আসন্ন ডিস্ক আর গ্রামোফোনের দাপটে। শ্রবণের সংস্কৃতিতে কার্যত মুছে গেল রাজনীতি আর জনপরিসর। এ বারের আমল মুনাফা-শাসিত, বিশুদ্ধ প্রমোদের। দশক দুই-আড়াইয়ের ভেতরেই সত্যজিৎ রায় নামের এক কিশোর খদ্দেরকে আনাগোনা করতে দেখা গেল চৌরঙ্গির‘কার অ্যান্ড মহলানবিশ’-এ— দোকানদার বুলাকাকার থেকে সে ইতস্তত কিনছে পিগমিফোন, কিডিফোন, ক্রিস্টালসেট।
বাকিটা, অন্য ইতিহাস।
পুনশ্চ
বিস্তর গম্ভীর ও নীরস তথ্যের ভিড়ে একটা মজার উদ্ধৃতি থাক শেষে। ১৩২৮-এর আষাঢ় মাসের ‘প্রবাসী’-তে লিখছেন অবনীমোহন চক্রবর্তী। বিষয়: দাঁত দিয়ে ফোনোগ্রাফ শোনা।
“একদিক ধারালো একটা শক্ত কাঠের লাঠি দাঁতে ধরে লাঠির ধারালো দিকটা রেকর্ডে লাগিয়ে দিলে, আঙ্গুল দিয়ে কান বন্ধ করেও পরিষ্কার গান শোনা যায়। কোনো জন্মবধিরকে দিয়ে যদিও এ বিষয়ের পরীক্ষা হয় নই, তথাপি সাধারণতঃ যারা পীড়াগ্রস্ত হয়ে কানে শোনে না, দেখা গিয়েছে তারা এভাবে ফনোগ্রাফ পরিপাটি উপভোগ করেছে। মজা আর কি! এতদিন কান দিয়েই শোনা যেত, আজ দাঁতে শোনারও ব্যবস্থা হলো।”
তথ্যঋণ: কলের শহর কলকাতা, রেকর্ডে রবীন্দ্রসংগীত- সিদ্ধার্থ ঘোষ; কমোডিটিজ় অ্যান্ড কালচার ইন দ্য কলোনিয়াল ওয়ার্ল্ড- সুপ্রিয়া চৌধুরী এবং অন্যান্য (সম্পা.); আ কনসাইজ় হিস্ট্রি অব দ্য ফোনোগ্রাফ ইন্ডাস্ট্রি ইন ইন্ডিয়া (পপুলার মিউজ়িক)-জি এন জোশী; বিজ্ঞাপন ও স্বদেশী শিল্প- অমিত ভট্টাচার্য; কবিকণ্ঠ- সন্তোষকুমার দে; নিম্নবর্গের ইতিহাস- গৌতম ভদ্র ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় (সম্পা.)