ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল
ইস্টার্ন বাইপাস থেকে নেমে দু’কিলোমিটার মতো গেলেই কালীপুর ফাঁড়ি। শান্ত পুলিশ স্টেশন। থানার বাইরে সন্ধে নামছে। ভিতরে নিজের চেম্বারে টেবিলের উপর বিশাল খাতা খুলে কী যেন লিখছেন এস আই মলয় দত্ত। বয়স চল্লিশের আশপাশে। উনিই এই ফাঁড়ির ইন-চার্জ। উল্টো দিকের চেয়ারে ষাটোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক। চোখমুখ সন্ত্রস্ত। টেবিলের উপরে রাখা মানুষটির দু’হাতে নকল গোঁফ-দাড়ি। এস আই দত্তর লেখা সম্ভবত শেষ হয়ে এসেছে, মুখ না তুলেই বললেন, “এটা তার মানে আপনার এক ধরনের খেয়াল?”
দীর্ঘ বিরতিতে ষাটোর্ধ্ব একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। সচকিত হয়ে উত্তর দিলেন, “খেয়াল ঠিক নয়। খেলা বলতে পারেন।”
“খেলা! তা হলে তো বলতে হয় খেলাটা বেশ বিপজ্জনক!” বলে খাতা ছেড়ে এ বার কম্পিউটারের দিকে ঘুরলেন এস আই। কি-বোর্ডে আঙুল চালিয়ে স্ক্রিনে কী যেন দেখছেন!
অবাক গলায় ষাটোর্ধ্ব জানতে চাইলেন, “বিপজ্জনক কেন?”
উত্তর এল না। এস আই দত্ত সন্ধানী চোখে তাকিয়ে রইলেন মনিটরের দিকে।
আধ ঘণ্টা হল এই বয়স্ক মানুষটিকে থানায় নিয়ে এসেছিল পাবলিক। একটা বাসে ধরা পড়েছিল পকেটমার। ষাটোর্ধ্ব ছিলেন সেই বাসেরই যাত্রী। পকেটমারকে ঘিরে যখন হইহট্টগোল, মারধর চলছে, ষাটোর্ধ্ব কৌতূহলবশত সিট ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন দেখতে। ভিড়ের ধাক্কায় আচমকাই ভদ্রলোকের নকল দাড়ি-গোঁফ খুলে যায়।
পাবলিক অবাক! এই লোকটা ছদ্মবেশে ঘুরছে কেন? নিশ্চয়ই কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আছে? শুরু হয় জেরা। পকেটমারকে ঘিরে ধরা ভিড় ঘুরতে থাকে বয়স্ক মানুষটির দিকে। জেরার মুখে ভদ্রলোক প্রথমে মেজাজ চড়ান, “আমার ইচ্ছে আমি ছদ্মবেশ নিয়েছি। কার কী! আইনে তো কোথাও বারণ নেই ছদ্মবেশ নেওয়ার ব্যাপারে। লোকে তো পরচুলো পরে। আমি তেমন নকল দাড়ি-গোঁফ লাগিয়েছি। পরচুলোও তো এক ধরনের ছদ্মবেশ।”
শুনে জনতা আরও খেপে যায়। বলে, “ইয়ার্কি মারার জায়গা পাননি! লোকে টাক ঢাকতে পরচুলো পরে। আর আপনার দাড়ি-গোঁফ থাকতেও এই গরমে এ সব পরেছেন কেন? কিছু একটা কারণ তো আছেই!”
তর্কাতর্কির ফাঁকে পকেটমার সুযোগ বুঝে পালাল। যে পার্সটা চুরি করেছিল, সেটা অবশ্য আগেই উদ্ধার হয়েছে। কিছু উৎসাহী প্যাসেঞ্জার বয়স্ক মানুষটিকে বাস থেকে নামিয়ে জমা করে দিয়ে গেল থানায়। পুলিশ কী স্টেপ নেয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল কয়েক জন। এস আই দত্ত তাদের ফেরত পাঠালেন। নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন ভদ্রলোকের। লিখে নিলেন কাগজে। নাম জীবন ঘোষাল। থাকেন বাটানগর অঞ্চলে। এস আই মোবাইলে জীবনবাবুর ছবি তুলে মেল করে দিলেন উপরতলায়। সেখান থেকে ছবি যাবে সব থানায়। দেখা হবে জীবনবাবুর অপরাধের কোনও ইতিহাস আছে কি না। এর পর জীবনবাবুকে একটু জেরা করেছিলেন এস আই দত্ত। জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ছদ্মবেশে আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন?”
জীবনবাবু বলেছেন, “বারুইপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে।”
“ছদ্মবেশ কেন?” জানতে চেয়েছিলেন এস আই।
জীবনবাবুর উত্তর ছিল, “এমনিই, মজা। দেখতাম বন্ধু আমাকে চিনতে পারছে কি না।”
“এ রকম মজা কি আপনি প্রায়ই করেন?” প্রশ্ন করেছিলেন এস আই।
জীবনবাবু বলেছেন, “প্রায়ই নয়। মাঝে মাঝে। যখন মন চায়।” তার পরই এস আই দত্ত বলেছেন, “বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার! দাঁড়ান, হাতের কাজটা সেরে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।”
তার পর বিশাল খাতাটায় কী যেন লিখতে লাগলেন। লেখা শেষ করে এখন মনিটরে চোখ। এ বার ঘুরলেন জীবনবাবুর দিকে। বললেন, “নাঃ, এখন অবধি আপনার ছবি দেখে কোনও থানা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেনি। মেল আসেনি কোনও। কিন্তু আপনার এই মেকআপ নেওয়াটা আমার বেশ সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।”
“আপনি একটু আগে ব্যাপারটাকে বিপজ্জনকও বলেছেন,” বললেন জীবনবাবু।
এস আই বললেন, “বিপজ্জনক তো বটেই। এটাকে নেহাত খেলা বলা যাবে না। আমাদের শহর তো এখন সিসি টিভিতে মোড়া। ওই ক্যামেরার চোখ এড়াতে অপরাধীরা ছদ্মবেশ নিতে পারে। ধরুন আপনি কারও হার ছিনতাই করলেন, এটিএম লুঠ করলেন কিংবা কাউকে খুন করলেন, সিসি টিভিতে যদি ধরাও পড়ে যান, আপনাকে আমরা শনাক্ত করতে পারব না। কারণ ক্রাইম করার পরই আপনি মেকআপ খুলে ফেলবেন।”
থামলেন এস আই। কী যেন চিন্তা করে ফের বলে উঠলেন, “আপনাকে ঠিক কোন ধারায় অ্যারেস্ট করা যায় সেটাই ভাবছি।”
“খুঁজে পাবেন না স্যর। আমি কোনও অপরাধ করার জন্য চেহারা বদল করলে সেটা আইনের চোখে অন্যায়। আমি তো অপরাধ করিনি। শুধু চেহারাটা পাল্টেছি।”
“বাব্বা! আইন-কানুন তো ভালই বোঝেন দেখছি!”
প্রশংসা শুনে একটু বুঝি সঙ্কুচিত হলেন জীবনবাবু। দৃষ্টি নামিয়ে বললেন, “অফিসে ল’ সেকশনে কাজ করতাম। প্রায়ই কোর্টে যেতে হত। অনেক উকিল বন্ধু ছিল। ওদের থেকেই কিছু শিখেছি।”
“চাকরি করতেন তার মানে। দেখে মনে হচ্ছে রিটায়ার করেছেন।”
“হ্যাঁ, তিন বছর।”
“কোথায় ছিল অফিস? নাম-ঠিকানা বলুন।”
বললেন জীবনবাবু। যে লেটার প্যাডে জীবনবাবুর নাম-ঠিকানা লিখেছিলেন এস আই দত্ত, সেখানেই অফিসের তথ্যটা লিখলেন। তার পর জানতে চাইলেন, “এই আজব খেলাটা কবে থেকে শুরু করেছেন?”
“রিটায়ারমেন্টের তিন মাস পর থেকে। অফিসে খুব ব্যস্ত থাকতাম, জানেন। যেচে প্রচুর কাজ করতাম। কোলিগরা সামান্য ব্যাপারে আমার সাহায্য চাইত। অফিসের পর কিংবা ছুটির দিনেও কোলিগ, হায়ার অফিসাররা কাজের ব্যাপারে ফোন করত। রিটায়ারমেন্টের পরের দিন থেকে স্বাভাবিক ভাবেই ফোন আসা বন্ধ হল। ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করল...” কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে গেছেন জীবনবাবু।
এস আই বলেন, “তার পর?”
“বেশ কিছু দিন নিঃসঙ্গ থাকার পর মাথায় এল বুদ্ধিটা। ছদ্মবেশে অফিসটা ঘুরে এলে কেমন হয়? স্ব-চেহারায় গেলে কেউ পাত্তা দেবে, কেউ দেবে না। তাতে মন খারাপ হতে পারে। তার চেয়ে ছদ্মবেশে গিয়ে আমিই আমার খোঁজ নেব কোলিগদের কাছে। বলব, কী ব্যাপার ঘোষালবাবুকে দেখছি না!”
আবার থেমে গেছেন জীবনবাবু। এস আই বলেন, “গেলেন অফিসে? কেউ চিনতে পারল?”
“কেউ না! ‘ঘোষালবাবু রিটায়ার করে গেছে’— এটুকু বলতেও তাদের যেন কষ্ট! দুজন তো বলল, ‘নিজে খুঁজে নিন’।”
“তার মানে আপনার মেকআপ নিখুঁত হচ্ছে। তাই কেউ চিনতে পারছে না। ইয়াং বয়সে নাটক-টাটক করতেন নিশ্চয়ই?”
“তা করতাম। নাটকের দল ছিল আমাদের। অফিসের অ্যানুয়াল ফাংশনে কোলিগদের নিয়ে নাটক প্রযোজনা করেছি। সাধারণ নাটকে কত ভাল আর মেকআপ হয়! ওই দুর্বল ছদ্মবেশ ভেদ করে কোলিগরা আমায় চিনতে পারল না! যাদের সঙ্গে আমি সর্বক্ষণ ওঠাবসা করেছি! শুধু তাই নয়, ছদ্মবেশে ছিলাম বলেই জানতে পারলাম, আমার আর কোনও মূল্যই নেই ওদের কাছে। আমাকে ভুলে গেছে সবাই!”
কথা শেষ করে হাতে ধরে রাখা নকল দাড়ি-গোঁফ নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন জীবনবাবু। চেম্বারের বাইরে চাপা কথোপকথন। ভারী বুটের পদচারণা, সম্ভবত কনস্টেবলদের। ফের শুরু করলেন জীবন ঘোষাল, “অফিসে আরও কয়েক বার ছদ্মবেশে গেলাম। একই রেজ়াল্ট। ব্যাপারটা নেশার মতো হয়ে গেল। তার পর থেকে আমি নানা ছদ্মবেশ নিয়ে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে যাওয়া শুরু করলাম। বিশেষ করে তাদের কাছে, যাদের আমি কখনও না কখনও উপকার করেছি। উপকার পেয়েছি এমন মানুষের কাছেও গেছি। কেউ আজ অবধি চিনতে পারেনি।”
“কিন্তু আপনার গলার স্বর শুনে তো চিনে ফেলা উচিত!” এস আই দত্তর গলায় বিস্ময় আর অবিশ্বাস।
জীবনবাবু উত্তর দিলেন, “নাটক করতাম তো, গলাটা একটু পাল্টে নিতে পারি। বদলে ফেলি স্পিচ প্যাটার্ন। ওই সামান্য বদলেই ওরা আমাকে খুঁজে পায় না।”
সন্দেহের স্বরে এস আই জিজ্ঞেস করলন, “আচ্ছা, এখন আপনি নিজের গলায় কথা বলছেন তো?”
ঘাড় কাত করে হ্যাঁ বোঝান জীবনবাবু। এস আই বলেন, “তবু ভাল।” সামান্য বিরতি নিয়ে এস আই ফের বলে ওঠেন, “আপনার জীবনে নাটকের বেশ প্রভাব আছে। এত ক্ষণ যা বললেন নাটকের মতোই শোনাল। গ্রুপ থিয়েটারের নাটক। সে যা-ই হোক, আপনি যে বন্ধুর কাছে যাচ্ছিলেন, তাঁর ফোন নম্বরটা দিন। তিনি আপনার অল্প বয়সের বন্ধু, না কি অফিসের?”
“অফিসের,” বলে বন্ধুর নাম-ফোন নম্বর বললেন জীবনবাবু।
এস আই নিজের মোবাইল থেকে কল করলেন জীবনবাবুর বন্ধুকে। নিজের পরিচয় দিয়ে জীবনবাবুকে চেনেন কি না জিজ্ঞেস করলেন। অপর প্রান্ত বোধহয় উদ্বেগ প্রকাশ করল। তাকে আশ্বস্ত করলেন এস আই। ফোন রেখে জীবনবাবুকে বললেন, “বন্ধু আর অফিসের ব্যাপারটা মিথ্যে বলেননি। কিন্তু বন্ধুটি সাজানো নয় তো? যে অপরাধটা করবেন ভাবছিলেন, এই ফোন নম্বরের লোকটি সেই কাজে হয়তো আপনার পার্টনার!”
কথাটা যেন ঠিক মাথায় ঢোকেনি জীবনবাবুর। অবাক দৃষ্টিতে এস আই-এর দিকে তাকিয়ে আছেন। ফের এস আই দত্ত জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি বাড়ি থেকেই মেকআপ নিয়ে বেরোন?”
“না। ব্যাপারটা তো অদ্ভুত, এবং একান্ত ব্যক্তিগত। বাড়ির লোক জানুক, আমি চাই না। পাবলিক টয়লেটে গিয়ে চেহারা বদলে ফেলি।”
“এ তো পাকা অপরাধীদের আইডিয়া। পেলেন কোথায়?”
“একটা নাটকে ঘটনাটা ছিল।” বলে সামান্য লাজুক হাসি হাসলেন জীবন ঘোষাল।
এস আই দত্ত বলেন, “বুঝলাম। আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?”
“স্ত্রী, ছেলে আর বৌমা। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এসে থাকে। কাছেই শ্বশুরবাড়ি।”
“এ তো একেবারে ভরা সংসার। বাড়ির লোকেদের সঙ্গেই আপনার সময় কেটে যাওয়ার কথা। ছদ্মবেশে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ান কেন?”
“মানুষের জীবন তো চার দেওয়ালে আটকে থাকার জন্য নয়। আমি সে ভাবে কখনও থাকিনি। তা ছাড়া বাড়ির লোকও আমাকে খুব একটা পাত্তা দেয় না। তাদের লাইফস্টাইল আলাদা। আমার রুচির সঙ্গে মেলে না। পার্টি, শপিং মল নিয়ে ওরা থাকে। খুব দরকার ছাড়া আমার সঙ্গে কথা বলে না। এক রাতে হিসেব করে দেখলাম সে দিন বাড়ির লোকের সঙ্গে আমার সাকুল্যে ছ’টা বাক্য বিনিময় হয়েছে। তাও খুব ছোট ছোট। আসলে আমাকে আর ওদের প্রয়োজন নেই। কোনও প্রত্যাশাও নেই আমার থেকে।”
“তা কেন? ভাল চাকরি করতেন। অনেক টাকা আছে আপনার। সে সব তো ওরাই পাবে। আপনাকে খুশি রাখা ওদের স্বার্থেই দরকার।”
“আমার ছেলে অনেক বড় চাকরি করে। শেষ যে মাইনে আমি পেয়েছি, তার চার গুণ রোজগার করে এখনই। আমার স্ত্রী ছেলে-অন্ত-প্রাণ।”
“আপনার স্ত্রীর ফোন নম্বরটা দিন তো,” বলে নিজের মোবাইল হাতে নিলেন এস আই।
জীবনবাবু নম্বর দিতে ইতস্তত করছেন। এস আই দত্ত বললেন, “চিন্তা নেই। আপনি এখানে আছেন বলব না।”
নম্বর বললেন জীবনবাবু। এস আই মোবাইল থেকে কল করলেন। কল রিসিভ হতে নিজের পরিচয় দিয়ে এস আই জানতে চাইলেন, “এটা কি জীবন ঘোষালের বাড়ি?” ও প্রান্ত থেকে সদর্থক উত্তর এল সম্ভবত। জীবনবাবু ওপারের কথা শুনতে পাচ্ছেন না। এস আই দত্ত ফোনে এবার জানতে চাইলেন, “ঘোষালবাবু কি বাড়ি আছেন?... কোথায় গেছেন, জানেন?... আচ্ছা বাড়ি ফিরলে এক বার এই নম্বরে ফোন করতে বলবেন তো।... না না, চিন্তার কিছু নেই। থানা থেকে ফোন মানেই পুলিশি ব্যাপার নয়। অন্য একটা প্রয়োজন আছে।”
ফোন কাটলেন এস আই। বললেন, “এত ক্ষণে আমি নিশ্চিন্ত হলাম। ছদ্মবেশের পিছনে আপনার অসৎ উদ্দেশ্য নেই।’’ থেমে গিয়ে কী একটু ভেবে এস আই দত্ত বললেন, “এক বার আপনার বাড়ির লোকের সঙ্গে তো খেলাটা খেলতে পারেন।”
“ধরা পড়ে যাব। আসলে মানুষের হাইট একটা বড় ব্যাপার। ওখান থেকেই চিনতে শুরু করে লোকে। যাদের সঙ্গে অনেক দিন দেখা নেই, তারা হাইট মনে রাখতে পারে না। বাড়ির লোক তো সারা ক্ষণ দেখছে আমাকে, আমার সমস্ত মুভমেন্ট, মুদ্রাদোষ চেনে। ঠিক চিনে ফেলবে। তা ছাড়া মানুষ যতই মেকআপ করুক, নিজের চাহনি পাল্টাতে পারে না। কাছের লোক ওই দৃষ্টি দেখেই ছদ্মবেশীকে চিনে ফেলবে।”
জীবনবাবুর কথা শেষ হতেই চেম্বারে ঢুকে এল এক কনস্টেবল, সঙ্গে মাতাল হয়ে থাকা একটা লোক। কপাল, ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে তার। কনস্টেবল কিছু বলে ওঠার আগেই জীবনবাবু এস আই-কে বললেন, “আমি কি এ বার যেতে পারি?”
ঘাড় কাত করে এস আই সম্মতি দিলেন। বললেন, “এই খেলাটা আর খেলবেন না প্লিজ়। শুধু শুধু হ্যারাসমেন্ট হল।”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন জীবনবাবু।
ঘণ্টাতিনেক কেটে গেছে। এস আই দত্ত চেম্বারে এখন একা। মাঝে নানা কমপ্লেন এসেছে। ব্যস্ত থাকতে হয়েছে কাজে। তবু মাথা থেকে জীবনবাবুকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। ভারী আশ্চর্য কেস! জীবনবাবুর সূত্রে নিজের বাবার কথা মনে এসেছে মলয় দত্তর। বাবা থাকতেন দেশের বাড়িতে। মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। তাঁদের কি যথেষ্ট খোঁজ নিতেন মিস্টার দত্ত? ছেলের প্রতি কোনও অভিমান ছিল না তো দুজনের?
কী মনে হতে এখন মোবাইলের কল লিস্ট থেকে জীবনবাবুর স্ত্রী-র নম্বর বার করে এস আই দত্ত ফের কল করলেন। ও প্রান্তে জীবনবাবুর স্ত্রীর ‘হ্যালো’ শুনে এস আই বললেন, “কালীপুর থানা থেকে বলছি। আগে এক বার ফোন করেছিলাম।”
“হ্যাঁ, বলুন?”
“জীবনবাবু বাড়ি ফিরেছেন?”
“এখনও ফেরেননি। এত দেরি তো হয় না। ওঁর জন্য এক ভদ্রলোক কখন থেকে এসে বসে আছেন।”
কপালে ভাঁজ পড়ল এস আই দত্তর। জিজ্ঞেস করলেন, “যিনি এসেছেন, তাঁর দাড়ি-গোঁফ আছে?”
“হ্যাঁ, কেন বলুন তো?”
উত্তর এড়িয়ে গিয়ে এস আই ব্যস্ত গলায় বললেন, “নিশ্চয়ই বাইরের ঘরে বসিয়েছেন ভদ্রলোককে? আগে গিয়ে দেখুন তো তিনি আছেন কি না!”
ফোন কেটে তড়িঘড়ি বসার ঘরে এলেন জীবনবাবুর স্ত্রী। দেখলেন দাড়ি-গোঁফওয়ালা লোকটা সেখানে নেই! চলে গেছে।