ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল
ভিতর থেকে একটা ঘসঘসে মহিলা কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘‘নেক্সট কে আছেন?”
অনুব্রত একটু গলা খাঁকারি দিয়ে ভিতরে ঢুকল।
ভিতরটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। হালকা গোলাপি একটা আলো জ্বলছে। দরজা, জানলাগুলো ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা। কী একটা না-ওষুধ না-রুমফ্রেশনার জাতীয় গন্ধ নাকে আসছে। দেওয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো অজানা সব চিহ্নের ছবি টাঙানো। এক পাশে দুটো উঁচু চেয়ার বসানো। চেয়ার দুটোর মাথায় অদ্ভুত একটা আলো ঝোলানো।
ডাক্তারবাবুর হাসিখুশি চেহারা দেখে অনুব্রতর মনে একটু স্বস্তি এসেছিল। কিন্তু চোখ দুটোর দিকে নজর পড়তেই সেই স্বস্তি উড়ে গেল।
কিসের চোখ ও দুটো? বিড়ালের না নেকড়ের?
ভিতরে কোনও মহিলাকে দেখতে না পেয়ে অনুব্রত কিছু ক্ষণ আগে শোনা কণ্ঠস্বরের মালিক সম্পর্কে একটু ধন্দে পড়ে গিয়েছিল। এমন সময় একটা সাদা রুমালে হাত মুছতে মুছতে ডাক্তারবাবু ঘসঘসে মেয়েলি গলায় বললেন, “বসুন।’’
পুরুষের গলা পাতলা হলে ব্যক্তিত্বের ওজন কমে যায়। কিন্তু এই গলাটা যেন ডাক্তারবাবুকে আরও রহস্যময় করে দিল।
অনুব্রত বসল।
ডাক্তারবাবু হেসে বললেন, “আপনিই অনুব্রত শর্মা?”
অনুব্রত মাথা নাড়ল।
ডাক্তারবাবু যত্ন করে রুমালটা ভাঁজ করলেন। তার পর মাথায় এক বার ব্রাশ চালিয়ে নিলেন।
এখন রাত সাড়ে ন’টা। অনুব্রতকে আসতে বলা হয়েছিল ন’টা পনেরোয়। মিনিট পনেরো বারান্দায় বসিয়ে রেখে ভিতরে ডাকা হয়েছে। এই পনেরো মিনিটে অনুব্রত কাউকে দেখেনি এখানে।
অনুব্রত সহজ হওয়ার জন্য বলল, “আমিই বোধহয় আজকের শেষ পেশেন্ট। বাইরে তো আর কাউকে দেখলাম না।’’
ডাক্তারবাবু মুচকি হাসলেন, “আপনিই আজকের একমাত্র রোগী। আমি তো দিনে একটার বেশি রোগী দেখি না। তাও রোজ নয়। যে দিন মনের মতো রোগী পাই সে
দিন দেখি।’’
অনুব্রত অবাক হল। মনে মনে ভাবল, এ কেমন ডাক্তার!
অবশ্য অবাক তো প্রথম থেকেই হচ্ছে। রাত ন’টা পনেরোয় ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীকে ডাকাটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। দু’সপ্তাহ আগে খবরের কাগজে দেখা ডাক্তারের বিজ্ঞাপনটা, যাতে ডাক্তারের নামের নীচে লেখা ছিল ‘গোপন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ’ এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের বলা হয়েছিল ছবি, নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর-সহ রোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ একটা বিশেষ ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও বিজ্ঞাপনটায় একটা আকর্ষণ ছিল। তাই অনুব্রত ওই ঠিকানায় রোগের বিবরণ-সহ নিজের বায়োডেটা পাঠিয়েই দিয়েছিল। তিন দিন আগে অচেনা নম্বর
থেকে একটা ফোন এসেছিল। এই কণ্ঠস্বরই জানিয়ে দিয়েছিল অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডিটেলস। তখন অনুব্রত ভেবেছিল হয়তো ডাক্তারবাবুর অ্যাসিস্ট্যান্ট হবে।
তবে ফিজ় নিয়ে অনুব্রত একটু চিন্তায় আছে। বেছে বেছে রোগী দেখেন মানে নিশ্চয়ই ভাল টাকা ভিজ়িট নেন। সঙ্গে পাঁচ হাজার আছে।
অনুব্রত আমতা আমতা করে বলল, ‘‘আপনার ভিজ়িটটা যদি একটু বলতেন। মানে বাইরে তো কাউকে দেখলাম না, তাই আর জিজ্ঞেস করা হয়নি।’’
“কেউ নেই তাই দেখেননি। ডাক্তার আর পেশেন্টের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি আমার পছন্দ নয়। আর ভিজ়িট? সেটা আপনার রোগের সমাধানের পর ঠিক করব।’’
অনুব্রতর চিন্তা আরও একটু বেড়ে গেল।
ডাক্তারবাবু কাজের কথায় এলেন, ‘‘এ বার আপনার সমস্যায় আসা যাক অনুব্রতবাবু। আপনি লিখেছেন, প্রায়শই রাতে আপনি রক্তের স্বপ্ন দেখেন। ঘুম ঠিকঠাক হয় না। এ ছাড়া লাল কোনও কিছু দেখলেই আপনার রক্তের কথা মনে পড়ে। তাই তো?”
অনুব্রত মাথা নাড়ল, ‘‘ঠিক তাই। এর জন্য খাওয়া, ঘুম— সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। দিন পনেরো হল আমার বিয়ে হয়েছে। আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গেও সহজ হতে পারছি না। বুঝতেই পারছেন, এতে...’’
“সে তো অবশ্যই। আচ্ছা অনুব্রতবাবু, আপনি স্বপ্নে শুধুই রক্ত দেখেন? আর কিছু দেখতে পান না?”
অনুব্রত একটু চিন্তা করে বলল, ‘‘মাঝে মাঝে যেন দেখি, একটা পাহাড়ের গায়ে একটা ফাটল। সেই ফাটল দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। আর তেমন কিছু তো মনে পড়ছে না।’’
“কোনও আওয়াজ? কোনও চিৎকার?”
অনুব্রত মাথা নাড়ল, ‘‘না।’’
ডাক্তারবাবু বললেন, ‘‘আর এক বার চিন্তা করে দেখুন?’’
কিছু ক্ষণ চিন্তা করল অনুব্রত। তার পরে বলল, ‘‘না ডাক্তারবাবু। সত্যি স্বপ্নে কোনও আওয়াজ বা চিৎকার শুনতে পাই না। তা হলে তো মনে থাকত। যেমন স্বপ্নের অন্য দৃশ্যগুলো মনে আছে।’’
ডাক্তারবাবু খানিকক্ষণ চোখ বুজে চুপ করে বসে থাকলেন। তার পর চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘সমস্যাটা কবে থেকে শুরু হয়েছে?’’
অনুব্রত মনে মনে হিসাব করে নিয়ে বলল, ‘‘এই জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে। মাস তিন হবে।’’
“এর আগে দেখিয়েছেন কাউকে?’’
“নাহ্। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম তেমন কিছু না। এমনিই কাজের প্রেশারে দুঃস্বপ্ন দেখছি। কিন্তু দিন দিন সমস্যাটা বাড়তে লাগল। শেষে আপনার ঠিকানা পেয়ে যোগাযোগ করলাম।’’
ডাক্তারবাবু ভ্রু কুঁচকে টেবিলে আঙুল ঠুকলেন, ‘‘আমরা কোনও স্বপ্নই কিন্তু এমনি এমনি দেখি না। আমাদের অবচেতন মন সচেতন মনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখনই এ সব স্বপ্ন দেখি। হোয়াটএভার! স্বপ্ন দেখতে শুরু করার পরে দিনের বেশির ভাগ সময় আপনার মনটা কেমন থাকে? ভাল, খারাপ না অন্য রকম?’’
‘‘মনটা খারাপ হয়ে থাকে।’’
ডাক্তারবাবু ঠোঁট কামড়ালেন, ‘‘আই সি। এ সব স্বপ্ন দেখার আগে কিছু কি দেখেছিলেন আপনি? অ্যাক্সিডেন্ট বা কিছু?”
অনুব্রত মাথা নাড়ল, ‘‘না তো।’’
ডাক্তারবাবু চোখ সরু করে অদ্ভুত হাসলেন, ‘‘আপনি জোর দিয়ে বলতে পারবেন কিছু ঘটেনি এ রকম?’’
অনুব্রতর বুকটা যেন একটু কেঁপে উঠল। পরক্ষণেই ধন্দ ঝেড়ে ফেলে বলল, “হ্যাঁ। কিছুই ঘটেনি তেমন।’’
ডাক্তারবাবু চোখ স্বাভাবিক করলেন। উঁচু চেয়ার দুটোর দিকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘তবে ওই দুটোতে বসা যাক। চলুন।’’
চেয়ার দুটোর দিকে তাকিয়ে যেন অনুব্রতর ভয় লাগল।
“কেন? ওখানে বসলে কী হবে?”
ডাক্তারবাবু হাসলেন, “কিচ্ছু হবে না। একটু মেন্টাল ইনভেস্টিগেশন হবে বলতে পারেন। ভয় নেই। হার্মলেস প্রসেস।’’
মনে হচ্ছে যেন এখানে না এলেই ভাল হত। কিন্তু এসে যখন পড়েছে তখন আর কিছু করার নেই।
অনুব্রত উঠে দাঁড়াল।
ঘড়িতে দশটা বাজে। সুন্দর একটা মিউজ়িক বাজছে।
******
অনুব্রতর ঝাপসা দৃষ্টিটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হল। এত ক্ষণ চোখের সামনে যে হিজিবিজি গোলাপি-সবুজ রেখাগুলো চলে ফিরে বেড়াচ্ছিল সেগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল।
ডাক্তারবাবু শান্ত গলায় বললেন, ‘‘রিল্যাক্স। নেমে আসুন।’’
অনুব্রত আগের চেয়ারে বসল।
ঘড়িতে দশটা কুড়ি বাজে। শহরের বুকে রাত তেমন না হলেও এখানে যে আশপাশ নিঝুম হয়ে গিয়েছে, সেটা অনুব্রত এই বদ্ধ ঘরে বসেই টের পাচ্ছে।
ডাক্তারবাবু গভীর ভাবে কিছু চিন্তা করছেন। একটু আগে যে জিনিসটা হল সেটা যেন অনেকটা গভীর ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের মতো ছিল বলে মনে হল অনুব্রতর।
অনুব্রত জিজ্ঞেস করল, ‘‘কী বুঝলেন ডাক্তারবাবু?’’
ডাক্তারবাবু তাঁর ‘না বিড়াল না নেকড়ে’ চোখ দিয়ে সোজাসুজি তাকালেন অনুব্রতর মুখের দিকে, ‘‘কথায় কী আছে জানেন অনুব্রতবাবু? ডাক্তার আর উকিলের কাছ থেকে কিছু গোপন করতে নেই। বাট ভেরি স্যাড। আপনি সেটাই করেছেন। আপনাকে কিছু ক্ষণের জন্য হিপনোটাইজ় না করলে সে সব কথা আমি জানতেই পারতাম না।’’
অনুব্রতর শরীরের ভিতর দিয়ে কী যেন ছুটে গেল। ও কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘‘আপনি কী জেনেছেন ডাক্তারবাবু?’’
“বেটার টু লিসন ইয়োরসেল্ফ।’’
ড্রয়ার থেকে একটা ছোট্ট টেপরেকর্ডার বার করে চালিয়ে দিলেন ডাক্তারবাবু।
“স্বপ্নে আপনি ঠিক কী দেখছেন অনুব্রতবাবু?”
“একটা বিশাল পাহাড়ের ফাটল থেকে রক্ত গড়াচ্ছে।’’
“কোনও আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন না?”
“পাচ্ছি তো। একটা আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। কে যেন বলছে, ‘আমায় ছেড়ে দিন’।’’
“কবে থেকে শুরু হয়েছে
এ সব?’’
“জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে।’’
“এর আগে কাউকে দেখিয়েছেন?’’
“দু’জনকে দেখিয়েছি। কিচ্ছু হয়নি। আসলে আসল কথাটা তো বলতেই পারিনি।’’
“ও। তা এ সব স্বপ্ন দেখতে শুরু করার পর থেকে দিনের বেশির ভাগ সময় আপনার মনটা কেমন থাকে?”
“আতঙ্কে থাকে।’’
“কেন? ভয়ের কিছু ঘটেছিল?’’
“হ্যাঁ। পয়লা জানুয়ারি আমি, শুভময় আর ধৃতিরূপ— তিন বন্ধু মিলে বেরিয়েছিলাম। সারা দিন প্রচুর ঘুরেছিলাম, হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেছিলাম। সন্ধেবেলা একটা মাঠের মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মদ খেতে বসেছিলাম।’’
“মাঠটা কোথায়?’’
“যদ্দূর মনে হচ্ছে এই রাস্তাতেই। এই চেম্বারের আশেপাশেই হবে। আজও এসে থেকে খুব মনে পড়ছে মাঠটার কথা।’’
“আচ্ছা। তার পর কী হল?”
“আমরা প্রচুর মদ খেয়েছিলাম। মাঠে বসেই গল্প করছিলাম। তখন রাত দশটা। মাঠের পাশ দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। শুভময় আর ধৃতিরূপ আচমকা মেয়েটার মুখ চেপে ধরে গাড়িতে তুলেছিল। তার পর গাড়ির কাচ তুলে খুব বাজে ভাবে রেপ করেছিল।’’
“আর আপনি?’’
“খুব ইচ্ছে থাকলেও রোগ-অসুখের ভয়ে রেপ করিনি। তবে কাচের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সব। মেয়েটা শেষ পর্যন্ত কথা বলার অবস্থায় ছিল না।’’
“তার পর কী করলেন?”
“আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই জীবন্ত মেয়েটার গলায় দুটো ইট বেঁধে ওকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলাম। সেই নদীর জলেই গাড়িটা ধুয়ে নিয়েছিলাম।’’
“আপনার আর দুই বন্ধুর খবর কী?”
“আমারই মতো। দিন পনেরো আগে ধৃতিরূপ এক্সপায়ার করে গিয়েছে। সাডেন সাফোকেশন। শুভময় ডাক্তার দেখাচ্ছে। কিন্তু কিচ্ছু হচ্ছে না।’’
“আপনাদের তিন বন্ধুর বাইরে এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানে?”
“না না।’’ ডাক্তারবাবু টেপরেকর্ডার বন্ধ করলেন।
অনুব্রত ঘাম জবজবে গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ডাক্তারবাবুর পায়ের উপর, “আমি কিছু করিনি ডাক্তারবাবু। প্লিজ় এটা পুলিশে দেবেন না।’’
ডাক্তারবাবু অনুব্রতর কাঁধে হাত রাখলেন, ‘‘আপনি শান্ত হয়ে চেয়ারে বসুন। ডাক্তার আর পেশেন্টের কথা তৃতীয় ব্যক্তির না জানাই উচিত। আমি কাউকে জানাব না।’’
অনুব্রত উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘‘প্লিজ় কিছু করুন ডাক্তারবাবু। আমার ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
ডাক্তারবাবু মাথা নাড়লেন, ‘‘নিশ্চয়ই করব। আচ্ছা বলুন তো, সে দিনের সেই মাঠটা কি অন্ধকার ছিল?”
“খুব অন্ধকার।’’
“এ রকম অন্ধকার?”
হঠাৎ করেই গোলাপি আলোগুলো নিভে গেল। অনুব্রত দেখল ও সেই মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে রহস্যের হাসি হাসছেন ডাক্তারবাবু। শুধু ওঁর শরীর বাদে আর সব নিকষ কালো অন্ধকার।
অনুব্রত চিৎকার করে উঠল, ‘‘এ সব কী ডাক্তারবাবু?’’
ডাক্তারবাবু অনুব্রতর কথাটা যেন শুনতে পেলেন না। বললেন, ‘‘এটাই তো সেই মাঠ অনুব্রতবাবু? জানেন মেয়েটা একটা ডাক্তার ছিল? সাইকিয়াট্রিস্ট। সে দিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল বেচারার।’’
অনুব্রত বসে পড়ল মাঠের মাঝখানে, ‘‘ কী করে জানলেন?”
ডাক্তারবাবু আকাশের দিকে তাকালেন।
অনুব্রতর সামনে এখন আর ডাক্তারবাবু নেই। দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটা। বিবস্ত্র শরীরে আঘাতের চিহ্ন। যোনি দিয়ে রক্ত বইছে।
পালানোর কথা ভুলে দু’হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে উঠল অনুব্রত, ‘‘আমায় ছেড়ে দাও। আমি তো কিছু করিনি।’’
মেয়েটা প্রেতহাসি হাসল, ‘‘ডাক্তারের কাছ থেকে রোগ না সারিয়েই ফিরে যাবেন? আমি তো চিকিৎসা ঠিক করে ফেলেছি। মৃত্যুই মুক্তি। আর ভিজ়িট কী নেব জানেন? আপনার শ্বাস।’’
মেয়েটা এগিয়ে আসছে একটু একটু করে। রক্তের ধারা অনুব্রতর নাক পর্যন্ত ঢেকে ফেলেছে। অনুব্রত চাইলেও সাঁতার কেটে ভেসে থাকতে পারছে না। অনুব্রত আবছা আবছা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে।
“দম বন্ধ হয়ে মরার যন্ত্রণাটা রেপ করার চেয়েও মজার না?”
******
অফিসার বললেন, ‘‘এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি, ফাঁকা মাঠে গাড়ি রেখে ভদ্রলোক করছিলেন কী?”
ডাক্তারবাবু মাথা নাড়লেন, ‘‘সেটাই তো। রক্তে অ্যালকোহলের চিহ্ন নেই। কিন্তু বডিতে ভর্তি জল। খোলা মাঠে জলে ডুবলেন কী করে? জামাকাপড়ে, শরীরে কোথাও জলের চিহ্ন নেই। অথচ জলে ডুবে সাফোকেশনে মৃত্যু হয়েছে।’’
অফিসার চিন্তিত মুখে বললেন, ‘‘সেটাই তো ভাবাচ্ছে। পুরো ধৃতিরূপ হাজরার মতো কেস। ইনি নাকি বাড়িতে বলে বেরিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন। ফিরতে রাত হবে। ধৃতিরূপ হাজরার মতো এরও কল লিস্টে বা অন্য কিছুতে সন্দেহজনক কিছুই পাচ্ছি না। কোনও পাকা সিরিয়াল কিলারের কাজ, না কি অন্য কিছু, কে জানে!”
“অন্য আর কী-ই বা হবে! আপনাআপনি শরীর জলে ভরে ওঠে এ রকম অসুখের কথা তো শুনিনি। কার্সিনোজেনিক হলে তবু নাহয়... যাই হোক। কী করবেন এখন?”
অফিসার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “কোনও প্রমাণই যখন নেই, তখন মার্ডার কী করে বলি! অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথই ফাইল করি।’’
ডাক্তারবাবু সায় দিলেন।
******
ঘরের ভিতর থেকে ডাক এল, ‘‘নেক্সট?”
এত ক্ষণ যে ভদ্রলোক অপেক্ষা করছিলেন তিনি ভিতরে ঢুকলেন।
গোলাপি আলোয় ভরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মাঝখানে বসে সাদা রুমালে হাত মুছছিলেন ডাক্তারবাবু। রোগীকে ঢুকতে দেখে তাঁর রহস্যজনক চোখ দুটো দিয়ে তাকালেন। ঘসঘসে পাতলা গলায় বললেন, “আপনিই তো শুভময় বসু? বসুন।”