লুজ টক বন্ধ রাখুন, কারণ যুগটাই কারেক্টনেসের। কারেক্টনেস এক বহুস্তরীয় ব্যাপার। দলীয় কারেক্টনেস মোসায়েবিতে, ধর্মীয় কারেক্টনেস গোমাতায়। এনআরআই-এর সায়েবিয়ানায়, ভদ্দরলোকের ইংরিজিতে। ওয়েলফেয়ার বলে ফেললে শিকাগো স্কুলের জাত যায়, এফিশিয়েন্সি উচ্চারণ করে ফেললে বামপন্থীদের। কারেক্টতর বলে ভদ্রজনে বাংলা ছেড়ে ইংরিজিতে চার-অক্ষর ঝাড়েন, লিঙ্গকে পেনিস বলেন, স্তনকে ব্রেস্ট। র্যাডিকালের কারেক্টনেস ঐতিহ্য অস্বীকারে— রেওয়াজ, সাধনা এ-সবে পুরাতনপন্থার ছোঁয়াছুঁয়ি আছে বলে র্যাডিকাল পাঁঠার নাম রেওয়াজি, সঙ্গীতসাধনার জ্যাম। ফেমিনিস্টের কারেক্টনেস শভিনিজম বিরোধিতায়— তাঁরা ছেলেখেলাকে মেয়েখেলা এবং ম্যানহোলকে পার্সনহোল বলে পিতৃতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দেন। লিবারালের কারেক্টনেস রাজনৈতিক, তাঁরা ব্ল্যাক হোলকে হোয়াইট হোল আর হোয়াইট হাউসকে রেনবো-ভবন নামে ডেকে শ্বেত প্রভুত্বের হাত থেকে জগৎকে উদ্ধার করেন।
ফাজলামি থামিয়ে নিজের কারেক্টনেস নিজে বেছে নিন, কারণ, ‘ওরে হেগো কাপড় ছুঁসনে’-র মতোই কারেক্টনেসও একটি নো-ননসেন্স বিজনেস। শুচিবাইরক্ষার পরশুরামরা নিজের কাজে প্রচণ্ড সিরিয়াস, ফক্কুড়ি একদম পছন্দ করেন না। দন কিহোতের মতো শঙ্খ-চক্র-গদা হস্তে চান্স পেলেই অশুদ্ধ ফক্কড়দের মুন্ডু কেটে বেড়ান। তাঁদের বিচার ইনস্ট্যান্ট, মুন্ডু কাটার পদ্ধতির নাম গিলোটিন, ভাবাবেগে আঘাত লাগলেই কচাং। খুব নরম মনের বলে কার কখন কোন আবেগে আঘাত লাগবে তা বোঝা শিবেরও অসাধ্য, সে জন্য পাবলিকের মুন্ডু সব সময় হাই রিস্কে। মোসায়েবিতে ভুল হলে বেণির সঙ্গে মাথা যায়, কার্টুনের ফাজলামিতে কেশের সঙ্গে অম্বিকেশ। ধর্মে ইনকারেক্ট হলে মুন্ডু কাটার ভিডিয়ো সোজা ইন্টারনেটে তুলে দেওয়া হয়, মূলত সিরিয়া-র কাণ্ড বলে এই ধর্মধ্বজীদের সিরিয়াল কিলার বলা হয়। পলিটিকালি কারেক্টদের নরম মনে আঘাত দিয়ে ফাজলামি মারলে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরও মুন্ডু যায়, যে জন্য টিম বানিয়ে সহজ টার্গেট শিকার করার নতুন নাম এখন টিম হান্টিং। সে অবশ্য নতুন কিছু না, আগে দল বেঁধে রাজা দশরথও ওই কারবার করতেন। কে জল খাচ্ছে, আদৌ খাচ্ছে কি না, দেখাদেখির বালাই নেই, টুইটারে তির চালিয়ে দিলেই হল, খেল খতম পয়সা হজম, মেল-শভিনিস্ট বরাহ শিকার কমপ্লিট। এই কারণে টিম হান্টিংকে উন্নততর কালমৃগয়াও বলা হয়।
বেমক্কা ফক্কুড়ি বন্ধ রাখুন, কারণ, গোটা দুনিয়াই এখন জঙ্গল, কালমৃগয়া সর্বত্র। কারেক্টনেসের চক্করে যে কোনও মুহূর্তে মুন্ডু যেতে পারে। এখন লেটেস্ট মার্গ হল ছুঁৎমার্গ। মুন্ডু রক্ষা করতে হলে যে কোনও ফর্মের ছুঁৎমার্গ প্র্যাকটিস করুন। দল বেঁধে লাইন করে চলুন, একই সুরে হাম্বা বলুন। পাবলিক প্লেসে হাসি পেলে চেপে রাখুন, প্রয়োজনে সুলভে গিয়ে সারুন। মুন্ডু বাঁচাতে উটপাখি-ধর্ম অবলম্বন করুন। কারণ, কে না জানে, কেবলমাত্র অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে।
bsaikat@gmail.com