আশি এবং নব্বইয়ের দশকে বলিউডের প্রথম সারির তারকা হিসাবে যাঁদের নাম উঠে আসে তাঁদের মধ্যে অন্যতম সানি দেওল।
সেই সময় ‘ঘায়েল’, ‘ক্রোধ’, ‘বিশ্বাত্মা’ এবং ‘দামিনী’র মতো একের পর এক ‘হিট’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে তাঁকে কেউ কেউ বলিউডের ‘এক নম্বর তারকা’র তকমাও দিয়েছিলেন।
বলি পাড়ায় এমনও প্রচলিত ছিল, সানিকে নিয়ে ছবি তৈরি করলে তা সাফল্যের মুখ দেখবেই। আর সেই কারণে তাঁর বাড়ির বাইরে পরিচালক এবং প্রযোজকেরা নাকি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতেন।
তবে অভিনেতা হিসাবে সানি যে শুধু নিজের কেরিয়ার গড়েছিলেন এমনটা নয়, শাহরুখ খান এবং সলমন খানের কেরিয়ার গড়ার নেপথ্যেও তাঁর বড় অবদান রয়েছে বলে মনে করা হয়।
১৯৯৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ এবং সলমন অভিনীত ছবি ‘করণ অর্জুন’। এই ছবিতে দুই অভিনেতা দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
১৯৯৩ সাল থেকেই এই ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন অভিনেতা তথা পরিচালক রাকেশ রোশন।
রাকেশ এই ছবির প্রস্তাব নিয়ে প্রথমে গিয়েছিলেন সেই সময় কেরিয়ারের শীর্ষে থাকা সানির কাছে। রাকেশের কাছে ছবির গল্প শুনেই তা মনে ধরে সানির। এক কথায় তিনি ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান।
‘করণ অর্জুন’ ছবিতে সানিকে বড় ভাই ‘করণ’-এর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাকেশ। কিন্তু ছবিতে তাঁর ভাই ‘অর্জুন’-এর চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, সে কথাই সানির মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সেই কথা তিনি রাকেশকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন।
রাকেশ জানান, অর্জুনের চরিত্রে সানির ভাই ববি দেওলের কথা ভেবে রেখেছেন তিনি। যাতে পর্দায় দুই ভাইয়ের রসায়ন ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, সে জন্যই তিনি ববিকে দিয়ে অর্জুনের চরিত্রে অভিনয় করানোর কথা ভেবেছেন বলে রাকেশ জানান।
এই কথা শুনেই ছবি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন সানি। সাফ জানিয়ে দেন, ববিকে দিয়ে অভিনয় করালে তিনি এই ছবিতে কাজ করবেন না। এর পর তিনি সেই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
কিন্তু কেন নিজের ভাইয়ের সঙ্গে অভিনয় করতে রাজি হননি সানি? শোনা যায়, ববি সেই সময় ‘বরসাত’-এর কাজে হাত দিয়েছিলেন। বলিউডে সেটিই ছিল তাঁর প্রথম ছবি। সেই ছবির কাজ ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল।
সানি হিসাব কষে দেখেন, সব ঠিক থাকলে ‘করণ অর্জুন’ ছবিটি ‘বরসাত’ ছবির আগে মুক্তি পাবে। সে ক্ষেত্রে তিনি ববির সঙ্গে অভিনয় করলে ববির চরিত্র তাঁর চরিত্রের ভারে ঢাকা পড়ে যাবে। ফলে কেরিয়ার শুরু থেকেই পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে বিবেচিত হতে পারেন ববি।
কিন্তু সানি চাইতেন ববি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করুন হিরো হিসাবে। সানি-ববির বাবা তথা অভিনেতা ধর্মেন্দ্রও চাইতেন ছোট পুত্রের আগমন যেন বলিউডে সাড়া ফেলে দেয়। সানির মতো ববিও যেন খুব বলিউডে তাড়াতাড়ি নাম তৈরি করতে পারেন, তাই তাঁকে কোনও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দিতে চাননি তাঁর দাদা এবং বাবা। আর সেই কারণেই রাকেশের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সানি।
তবে ‘করণ অর্জুন’-এর গল্প শোনার পর সানি নাকি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই ছবিতে যিনিই অভিনয় করুন না কেন, ছবিটি বক্স অফিসে সাড়া ফেলবে।
তবুও ভাইয়ের কেরিয়ারের কথা ভেবে রাকেশের ছবিতে অভিনয়ের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সানি।
সানি ছবি ছেড়ে দেওয়ার পর সেই ছবির প্রস্তাব নিয়ে শাহরুখ এবং সলমনের কাছে যান রাকেশ। তাঁরা দু’জনেই এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান।
১৯৯৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘করণ অর্জুন’। রাকেশ পরিচালিত সেই ছবি যে শুধু বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিল তা-ই নয়, জনপ্রিয়তার জেরে ছবিটি বলিউডের অন্যতম সেরা হিট ছবির তকমাও পেয়েছিল।
‘করণ অর্জুন’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই শাহরুখ এবং সলমনের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। দর্শকদের দাবি ছিল, এই ছবিতে শাহরুখ বা সলমন— কাউকেই পার্শ্বচরিত্র বলে মনে হয়নি। দু’জনেই ছবিতে সমান গুরুত্ব পেয়েছেন। অর্থাৎ, সানি তাঁকে এবং ববিকে নিয়ে যে ভয় পেয়েছিলেন, বাস্তবে তা হত না।
এর পর থেকে শাহরুখ এবং সলমনের ঝুলিতে একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। শীঘ্রই তারকার তকমা পান দুই অভিনেতা। অর্থাৎ সানি যে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, সেই ছবির জেরেই ভাগ্য ফিরেছিল শাহরুখ-সলমনের।
অন্য দিকে ববির ‘বরসাত’ ছবি বক্স অফিসে সফল হলেও তেমন সা়ড়া ফেলতে পারেনি। ববিকে দর্শক গ্রহণ করলেও তাঁকে নিয়ে খুব মাতামাতি হয়নি।