Chinese Aggression in Yellow Sea

মাঝসমুদ্রে ইস্পাতের বিশাল কাঠামো! ‘মাকড়সার জাল’-এ মাছচাষের অভিনয় করে সোলকে চমকাচ্ছে ড্রাগন

দক্ষিণ চিন সাগরের পর এ বার পীত সাগরেও বাড়ছে চিনা আগ্রাসন। স্যামন মাছ চাষের নাম করে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা’য় ধীরে ধীরে ঢুকছে ড্রাগনের নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনী।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ১৬:৪৩
Share:
০১ ১৯
China plays Gray Zone Tactics in Yellow Sea to grab South Korean Exclusive Economic Zone

দক্ষিণ চিন সাগরের পর এ বার পীত সাগর (ইয়েলো সি)। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেড়েই চলেছে চিনা নৌসেনার উপদ্রব। বেজিঙের দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ দক্ষিণ কোরিয়া রুখে দাঁড়াতেই জটিল হয়েছে পরিস্থিতি। বিরক্ত সোলের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবে প্রমাদ গুনছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। দুই প্রতিবেশীর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।

০২ ১৯
China plays Gray Zone Tactics in Yellow Sea to grab South Korean Exclusive Economic Zone

বিবাদের সূত্রপাত কোরীয় উপকূলের কাছে একটি ইস্পাতের কাঠামোকে কেন্দ্র করে। সোলের অভিযোগ, তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (স্পেশ্যাল ইকোনমিক জ়োন) ঢুকে ওই কাঠামো তৈরি করছে চিনা নৌসেনা। একে ড্রাগনের আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওই উপদ্বীপ।

Advertisement
০৩ ১৯
China plays Gray Zone Tactics in Yellow Sea to grab South Korean Exclusive Economic Zone

সোলের জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ‘ইয়োনহাপ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণের খবর পেয়ে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করতে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী। ঠিক তখনই তাদের বাধা দেয় চিনা নৌসেনা। ফলে পীত সাগরে তৈরি হয় অচলাবস্থা। প্রায় দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল দুই দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী।

০৪ ১৯

সূত্রের খবর, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার জেজ়ু দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে সোকোত্রা রকের কাছে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এলাকাটি সোলের প্রভিশনাল মেরিটাইম জ়োনের (পিএমজেড) অন্তর্গত। একে চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সামুদ্রিক সীমান্ত বলা যেতে পারে।

০৫ ১৯

সোলের সরকারি খাতায় অবশ্য পীত সাগরের উল্লেখ নেই। ওই এলাকাটিকে পশ্চিম সাগর বলে থাকে তারা। ‘ইয়োনহাপ’ লিখেছে, সেখানে ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণের খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র গবেষণায় ব্যবহৃত জাহাজ ‘ওন্নুরিক’। কিন্তু ড্রাগনের নৌসেনা তাকে ফেরত পাঠালে উপকূলরক্ষী বাহিনীকে সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সোল।

০৬ ১৯

এর আগে ফিলিপিন্সের জলসীমান্তে ঠিক একই ধরনের বিবাদে জড়়ায় চিনা নৌসেনা। বিশ্লেষকদের দাবি, দক্ষিণ চিন সাগরের পর পীত সাগরে আধিপত্য বিস্তার করতে পুরনো কায়দা নিচ্ছে ড্রাগন। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বেজিঙের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, ইস্পাতের যে কাঠামোর কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে একটা অ্যাকোয়াফার্ম। অবৈধ ভাবে এর নির্মাণ করা হয়নি।

০৭ ১৯

বেজিঙের এই যুক্তি অবশ্য মানতে নারাজ দক্ষিণ কোরিয়া। আর তাই কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে তড়িঘড়ি চিনা দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিদের তলব করে সোল। তাঁদের সামনে কৃত্রিম উপগ্রহে তোলা ছবি পেশ করা হয়। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি চুক্তির ভিত্তিতে পিএমজ়েড এলাকার সীমানা নির্ধারণ করেছে দুই রাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী এটি বিতর্কিত এলাকা। তবে সেখানে মাছ শিকার ও নৌকা চলাচলের অনুমতি রয়েছে।

০৮ ১৯

চিন জানিয়েছে, পিএমজ়েডে যে ইস্পাতের কাঠামোর কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে ৭১.৫ মিটার লম্বা একটা খাঁচা। স্যামন মাছের চাষের জন্য সেটাকে ওখানে বসানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার আবার অভিযোগ, মাছচাষের নাম করে ধীরে ধীরে তাদের জলসীমায় ঢুকে আসছে বেজিং। তা ছাড়া ড্রাগন সরকার ২০০১ সালে হওয়া মৎস্যচুক্তি ভাঙছে বলেও বিবৃতি দিয়েছে সোল।

০৯ ১৯

চুক্তি অনুযায়ী, পিএমজ়েডে কোনও কাঠামো বসানোর ক্ষেত্রে দু’টি দেশের একে অপরকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ, কোনও রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই সেটা করেছে চিন। শুধু তা-ই নয়, আগে ওই এলাকায় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিল বেজিং। সোল তা নিয়ে তীব্র আপত্তি করায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় ড্রাগন ফৌজ।

১০ ১৯

বর্তমানে পিএমজ়েডে চিন যে ইস্পাতের কাঠামোটি বসিয়েছে, তার তিনটি পা রয়েছে। কাঠামোটিকে সমুদ্রের গভীরে একেবারে তলদেশ পর্যন্ত নামানো যেতে পারে। বিশ্লেষকদের দাবি, এর মাধ্যমে নিজের উপস্থিতির জোরালো প্রমাণ দিতে চাইছে বেজিং। পীত সাগরে দুই দেশের সীমান্তবর্তী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খনিজ তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভী ড্রাগনের মূল নজর সে দিকেই, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১১ ১৯

পীত সাগরে চিনের বসানো ইস্পাতের কাঠামো নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র সুরক্ষা বিষয়ের গবেষক রয় পাওয়েল। উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘‘২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সম্ভবত ওই ইস্পাতের খাঁচা সেখানে নিয়ে আসে চিন।’’ ২০১৮ সালে ড্রাগন একই রকমের পদক্ষেপ করেছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।

১২ ১৯

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, গত বছরের শেষ থেকে পীত সাগরে নিয়মিত টহল শুরু করেছে চিনা উপকূলরক্ষী বাহিনী। তাদের সঙ্গে সব সময় থাকছে অন্তত তিনটে করে রাবারের তৈরি অসামরিক নৌকা। তাঁরাই দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা জাহাজের রাস্তা আটকেছিল। ওই সময়ে রাবার নৌকার ক্রু-রা ছুরি হাতে বেরিয়ে এসে সংশ্লিষ্ট গবেষণা জাহাজটির ক্যাপ্টেন-সহ অন্যদের হুমকি পর্যন্ত দেয় বলে অভিযোগ।

১৩ ১৯

চিন অবশ্য প্রথম থেকেই ওই ইস্পাতের কাঠামোটিকে মাছচাষের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে দাবি করে আসছে। খাঁচাটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বেজিঙের সরকারি সংস্থা শানডং মেরিন গ্রুপ। এর পোশাকি নাম শেন ল্যান ২ হাও। খাঁচাটি ন’হাজার ঘনমিটার জলে স্যামন চাষ করতে সক্ষম বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ১৯

ড্রাগন প্রেসিডেন্ট তথা চেয়ারম্যান শি জিনপিঙের সরকার জানিয়েছে, পীত সাগরে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওই খাঁচাটিকে বসানো হয়েছে। ফলে ২০০১ সালের চুক্তি কোনও ভাবেই ভাঙা হয়নি। সাগরে নিমজ্জিত বিবাদের কেন্দ্রস্থল সোকোত্রা রকের দুই প্রতিবেশী দেশে দু’রকমের নাম রয়েছে।

১৫ ১৯

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন, পীত সাগরে ডুবে থাকা ওই শিলাস্তম্ভকে ইওডো বলে থাকে। কিন্তু, চিনে এর নাম সুয়ান দ্বীপপুঞ্জ। নিমজ্জিত শিলাস্তম্ভটির অধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। ২০০৩ সালে ইওডো ওশান রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করে সোল। এই পদক্ষেপকে একতরফা এবং অবৈধ বলে উল্লেখ করেছিল বেজিং।

১৬ ১৯

সমুদ্রবিজ্ঞানী পাওয়েলের দাবি, দক্ষিণ চিন সাগর বা পীত সাগরে অন্যের এলাকা কব্জা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ‘ধূসর এলাকা কৌশল’ নিয়ে চলে চিন। বেজিঙের অসামরিক মাছ ধরার নৌকা বা ছোট ট্রলারকে বিশ্বাস করা এ ক্ষেত্রে চরম মূর্খামি। কারণ, এগুলির সাহায্যেই প্রতিবেশীর উপর নজরদারি এবং গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে থাকে ড্রাগন সরকার।

১৭ ১৯

দক্ষিণ চিন সাগরের স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে ছ’টি দেশের মধ্যে চলছে টানাটানি। তালিকায় রয়েছে চিন, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই। শক্তির নিরিখে এদের মধ্যে কয়েকশো গুণ এগিয়ে রয়েছে ড্রাগন। আর তাই স্প্র্যাটলি নিয়ে বেজিঙের উৎপাত দিনের পর দিন মুখ বুজে সইতে হচ্ছে বাকি দেশগুলিকে।

১৮ ১৯

কেন স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ধরে দড়ি টানাটানিতে নেমেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাকি পাঁচটি দেশ? এর মূল কারণ হল, স্প্র্যাটলির অবস্থানগত গুরুত্ব এবং প্রাকৃতিক সম্পদ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই এলাকার রয়েছে খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বিরাট ভান্ডার। মাটির গভীরে থাকা সেই ‘তরল সোনা’র লোভ ছাড়তে পারছে না কেউ।

১৯ ১৯

দক্ষিণ চিন সাগরের মানচিত্রের কিছু এলাকা চিহ্নিত করতে অনেকটা ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো দেখতে ছোট ছোট ড্যাশ বা রেখা ব্যবহার করে থাকে চিন। বেজিঙের দাবি, রেখা দিয়ে ঘেরা গোটা এলাকাটিই তাঁদের। এই ‘ড্যাশ লাইন’ তত্ত্বকে সামনে রেখে দীর্ঘ দিন ধরে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জকে দখল করতে চাইছে ড্রাগন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement