ডিজিটাল লেনদেনের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে ভারত। অনলাইনে টাকার লেনদেনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত দিন নগদ টাকা বা কার্ডের মাধ্যমে টাকার লেনদেন চলত। কিন্তু এখন অনেকেই চটজলদি টাকার লেনদেনের জন্য অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন। তার প্রমাণও এ বার হাতেনাতে মিলল।
গত ছ’বছরে ভারতে ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই লেনদেন লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। আগামী দিনে এই মাধ্যমে লেনদেন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সহজ যেমন, তেমন বিপদও রয়েছে ইউপিআই লেনদেনে। সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেনের সময় প্রায় এক লক্ষ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
পেটিএম, গুগ্ল পে, ফোন পে-র মতো ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সময়ই মানুষকে জালিয়াতদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে বলেও ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ইউপিআই লেনদেনের ক্ষেত্র্রে অনেকেই গুগ্ল পে অ্যাপকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন। ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহারও করেন। নিরাপত্তার কারণেও অনেকে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য গুগ্ল পে ব্যবহার করেন।
গ্রাহকদের লেনদেন সুরক্ষিত রাখতে কৃত্রিম মেধা এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ প্রযুক্তির মতো পাহারাদার ‘নিয়োগ’ করেছে গুগ্ল পে। এই সব প্রযুক্তি জালিয়াতি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।
তবে একাধিক ‘নিশ্ছিদ্র পাহারাদার’ রেখেও সবসময় জালিয়াতি আটকাতে পারে না গুগ্ল পে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য অনেকটাই দায়ী ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’ অ্যাপ। জালিয়াতেরা গ্রাহকের ইউপিআই এবং ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য পেতে অনেক সময়ই এই সব অ্যাপ ব্যবহার করেন।
স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপগুলি কী? কী ভাবে এগুলি ক্ষতি করতে পারে? যে অ্যাপগুলিতে মূলত ভিডিয়োর সাহায্যে নিজের ফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের স্ক্রিন দেখানো যায়, সেগুলিই স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপ।
দূরে বসে কর্মক্ষেত্রে হওয়া বৈঠকে যোগ দিতে বা অন্য কাউকে ভিডিয়োর সাহায্যে সহযোগিতা করতে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা হয়।
তবে এই অ্যাপগুলির অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেই এক জন গ্রাহকের গুগ্ল পে সংক্রান্ত যাবতীয় নথি হাতিয়ে নিতে পারে প্রতারকরা। কোনও গ্রাহক যদি ইউপিআইয়ের লেনদেনের সময় স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপ খুলে রাখেন, তা হলে জালিয়াতি করা আরও সহজ হয়ে যায়।
এই অ্যাপগুলি যদি কেউ হ্যাক করে রাখে, তা হলে যে মুহূর্তে কোনও গ্রাহক গুগ্ল পে-র পিন দেবেন, সেই মুহূর্তে তা চলে যাবে জালিয়াতের কাছে। নিমেষে লোপাট হয়ে যাবে বহু কষ্টে সঞ্চিত টাকা।
অনেক সময় হ্যাকারেরা গ্রাহকের ফোনে থাকা স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপগুলি নিয়ন্ত্রণও করতে পারেন।
গুগ্ল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘গুগ্ল পে কখনওই তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডাউনলোড বা ইনস্টল করতে বলে না। আপনি যদি এই অ্যাপগুলি ডাউনলোড করেও থাকেন, তা হলে গুগ্ল পে ব্যবহার করার আগে সেগুলি বন্ধ করে দিন।’’
গুগ্লের বিবৃতি অনুযায়ী, “যদি কেউ গুগ্ল পে-র প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেন এবং এই অ্যাপগুলি ডাউনলোড করার নির্দেশ দেন, তা হলে অবিলম্বে রিপোর্ট করা উচিত।’’
তাই যদি স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপ সে ভাবে কাজে না লাগে, তা হলে সেগুলিকে ফোন থেকে দূরে রাখারই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
প্রসঙ্গত, নগদে লেনদেন ছেড়ে এখন অনলাইন লেনদেনেই স্বচ্ছন্দ অনেকে। একে টাকা বয়ে বেড়ানোর ঝক্কি কম। তার উপর কয়েকটি পদ্ধতি মেনে মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই লেনদেন সম্ভব।
ভারতে ইউপিআইয়ের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেনের গতি বেড়েছে অনেকটাই। আর সেই কারণে জালিয়াতির সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।