Roma Reshmi Ekka

কাজ করেছেন টলিউডে, গাড়িতে নীলবাতি জ্বেলে বিতর্কে জড়ানো রোমার তৃণমূলে উত্থান কী ভাবে?

২০২২ সালের জুন মাস। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার পরিকল্পনা করে বিজেপি। সেই সময় আলোচনায় উঠে আসেন তৃণমূলের আদিবাসী প্রার্থী রোমা রেশমি এক্কার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১১
Share:
০১ ১৬

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তিনি। আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা রোমা শিলিগুড়ির রাজনৈতিক মহলে বেশ পরিচিত মুখ। সব কিছুই চলছিল ভাল। কিন্তু বিতর্কের শুরু গাড়িতে নীলবাতি লাগানো নিয়ে। মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি হয়ে কেন গাড়িতে নীলবাতি লাগালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। শুরু তরজা।

০২ ১৬

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে রাজনীতির ময়দানে উঠে এসেছেন অভিনেত্রী রোমা। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সিংহভাগ এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। কাজেই আঞ্চলিক ভাষায় সিনেমার পরিচিত মুখ রোমাকে তুরুপের তাস করে তৃণমূল।

Advertisement
০৩ ১৬

রোমাকে ফাঁসিদেওয়া-২ ব্লকের ৯ নম্বর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বামেদের এক সময়কার দুর্গ ভেঙে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করে ঘাসফুল শিবির। আর মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি হন রোমা। সেই রোমা কেন নীলবাতিওয়ালা গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

০৪ ১৬

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের খারুভাঙা এলাকায় বাড়ি রোমার। বাবা আধা সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। রোমার পরিবারের মধ্যে মা এবং ভাই-বোন থাকেন ইসলামপুরে। অভিনেত্রী তথা সমাজসেবী রোমা আদিবাসীদের শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করানো থেকে তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে কুসংস্কার রোধ করা নিয়ে রোমা কাজ করছেন।

০৫ ১৬

ঘনিষ্ঠরা বলেন, নিজের হাতে ভাগ্য তৈরি করতে চান এই মেয়ে। অনেক ওঠাপড়া আছে জীবনে। তবে নিজের আত্মবিশ্বাসটুকু তাঁর সম্প্রদায়ের নবীনদের মধ্যে সঞ্চার করতে চান রোমা। ২০০৭ সালে শিলিগুড়ির জ্যোৎস্নাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে থেকে পড়াশোনা শেষ করে রেশমি ভর্তি হয়েছিলেন শিলিগুড়ি কলেজে। ছোট থেকেই নাচে আগ্রহ রোমার। ২০১৫ সালে তিনি বারাণসীতে যান স্নাতকোত্তর স্তরে ভরতনাট্যম নিয়ে পড়াশোনা করতে।

০৬ ১৬

পড়াশোনা শেষ করে সিনেমার জগতে হাতেখড়ি হয় রোমার। চলচ্চিত্র নিয়েও কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ পান। আঞ্চলিক ভাষায় ‘মোর স্বপ্ন’ এবং ‘টেম্পার’ নামে দু’টি ছবিতে অভিনয় করেন এই তৃণমূল নেত্রী। এ ছাড়া টলিউডেও কাজ করেছেন। ‘তোমায় আমায় মিলে’ এবং ‘কিরীটী রায়’ নামেও দু’টি ছবিতে দেখা গেয়েছে রোমাকে।

০৭ ১৬

ভোটের ময়দানে নবাগতা হলেও, রাজনীতিতে একেবারেই নতুন নন রোমা। ২০২০ সালে সক্রিয় ভাবে রাজনীতির আঙিনায় পা দেন। সে বছরই যোগ দেন তৃণমূলে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদকের দায়িত্ব পান এই অভিনেত্রী।

০৮ ১৬

বাংলার পাশাপাশি সাদরি ভাষার ছবিতে কাজ করেছেন রোমা। তবে রাজনীতির ময়দানে সিনেমার সংলাপ নয়, বরং রাজনীতির সংলাপই শোনা যায় নেত্রীর গলায়।

০৯ ১৬

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ৯ নম্বর ফাঁসিদেওয়া নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রোমা। ভোটপ্রচারে নেমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে চলার বার্তা দিতেন। নির্বাচনের সময় রোমার বক্তব্য ছিল, ‘‘ভবিষ্যতে পিছিয়ে পড়া জনজাতির উন্নয়নকে লক্ষ্য রেখেই আমি কাজ করে যেতে চাই।’’

১০ ১৬

ভোটে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রোমা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দল আমাকে সুযোগ দিয়েছে। আমি খুবই খুশি। এর পর মানুষ আমাকে কাজ করার সুযোগ দিলে হতাশ করব না, এটুকু বলতে পারি। বছর চারেক আগে থেকেই পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ শুরু করেছিলাম নিজের গ্রামে।’’

১১ ১৬

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে তুরুপের তাস ছিল রোমা। সেখানে বাজিমাত করে তৃণমূল। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন রোমা। মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

১২ ১৬

তৃণমূলের একাংশ বলে, রোমার উত্থান নাটকীয়। কেমন? ২০২২ সালের জুন মাস। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার পরিকল্পনা করে বিজেপি। সেই আলোচনার মধ্যেই আলোর বৃত্তে চলে আসেন রোমা। শিলিগুড়ি মহকুমার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের আদিবাসী প্রার্থী হন তিনি। তবে তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। তিনি অভিনেত্রী। ওঁরাও জনজাতির তরুণী রোমার জনপ্রিয়তা কাজে লাগায় শাসকদল।

১৩ ১৬

ক্ষমতা অনেক কিছুই পাল্টে দেয়। রোমার ক্ষেত্রেও কি তাই? আচমকা গাড়িতে নীলবাতি লাগাতে গেলেন কেন? রোমার দাবি, বুধবার পর্যন্ত তাঁর গাড়িতে নীলবাতি ছিল না। বৃহস্পতিবার তাঁর গাড়ির চালক নীলবাতি লাগিয়ে দেখেছিলেন, কেমন লাগে। তাঁর কথায়, ‘‘নীলবাতি লাগানো থাকলে প্রশাসনিক কাজের সুবিধা হবে। কাজের জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। রাস্তায় যানজট থাকলে জরুরি বৈঠকে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। গাড়িতে লাগানো বোর্ড অনেক সময় ট্র্যাফিকের দায়িত্বে থাকা লোকজনের চোখে পড়ে না। তাই নীলবাতি থাকলে ভাল।’’

১৪ ১৬

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ আবার রোমার এই গাড়িতে নীলবাতি লাগানোর বিরুদ্ধে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চান না। রোমার সঙ্গে এমনিতেই নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এসেছেন রোমা। কিন্তু এই নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘোরা, ‘অন্য রকম’ থাকা— এ সবের জন্য অচিরে নিজের ভাষাভাষী মানুষদের কাছ থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছেন রোমা। পাশাপাশি এখন তো এসে গেল নীলবাতি বিতর্ক।’’

১৫ ১৬

দীর্ঘ সময় ধরে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ছিল বামেদের দখলে। সহকারী সভাধিপতির নীলবাতির গাড়ি চড়া নিয়ে বামেদের প্রাক্তন মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপসকুমার সরকার বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে কারা নীলবাতি ব্যবহার করতে পারবেন, আর কারা লালবাতি লাগাতে পারবেন। আমি যখন সভাধিপতি হই, নির্দেশিকা দেখে তার পরই গাড়িতে আলো লাগিয়েছিলাম। মহকুমা পরিষদের শুধুমাত্র অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক (এইও) এবং সভাধিপতির গাড়িতে আলো লাগাবার নির্দেশ রয়েছে।’’

১৬ ১৬

বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘এটা তৃণমূলের চরিত্র। মানুষের সামনে এরা নিজেকে কেউকেটা হিসাবে তুলে ধরছেন। রোমাও তাঁদের মধ্যে এক জন।’’ তাঁদের বক্তব্য, এমন কোনও কারণ নেই যে মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতিকে গাড়িতে নীল আলো ব্যবহার করতে হবে। উনি অত বড় নেত্রীও নন যে, আলাদা করে নিরাপত্তারক্ষী লাগবে। এটা আসলে আইনের অপমান। মহকুমা পরিষদের মানুষদের অপমান করা। কিন্তু এই বিতর্কের মধ্যে কি আর নীলবাতি লাগিয়ে রাখবেন গাড়িতে? মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতির রোমার জবাব, ‘‘নীলবাতি লাগানোর নির্দেশিকা যদি সরকার থেকে পাওয়া যায়, তা হলে খুবই সুবিধে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement