বিচ্ছেদের পর এক মাসও কাটেনি। এই সময়ের মধ্যেই ক্রিকেটার হার্দিক পাণ্ড্যের নাম কখনও জড়াচ্ছে তাঁর অনুরাগীর সঙ্গে, কখনও আবার বলি অভিনেত্রীর সঙ্গে। আবার নতুন করে চর্চায় এসেছেন হার্দিক। নেপথ্যে সেই নারীচরিত্রই। বদলে গিয়েছে ‘বান্ধবী’ও। তাঁর সঙ্গেই নাকি গ্রিসে একান্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্রিকেটার। তাঁর সঙ্গে নাকি যোগসূত্র রয়েছে বলি অভিনেতা কার্তিক আরিয়ানেরও। হার্দিকের সেই নতুন ‘বান্ধবী’ কে?
সম্প্রতি হার্দিক তাঁর ইনস্টাগ্রামের পাতায় এক়টি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। পরনে ঘিয়ে রঙের প্যান্ট, সাদা টি শার্টের উপর সাদা-কালো প্রিন্টের শার্ট। শার্টের বোতাম খোলা, চোখে রোদচশমা। একটি সুইমিং পুলের ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। পিছনে পাহাড়, সমুদ্র। পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট বাড়ি। হার্দিক নয়, বরং সকলের নজর কেড়েছে আশপাশের দৃশ্য। কারণ, এক তরুণী গায়িকাও প্রায় একই সময়, একই জায়গার ছবি পোস্ট করেছেন তাঁর সমাজমাধ্যমে। তিনি জ্যাসমিন ওয়ালিয়া।
গ্রিসের মায়কোনোসের এক বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় ঘুরতে গিয়েছেন জ্যাসমিন। নীল বিকিনি পরে সেখান থেকেই ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। জ্যাসমিনের পোস্ট করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই হার্দিক সমাজমাধ্যমে একই জায়গা থেকে নিজের ভিডিয়ো পোস্ট করেন। তার পর থেকেই শুরু হয় জল্পনা। নেটব্যবহারকারীদের অধিকাংশের দাবি, নাতাশা স্তানকোভিচের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরেই জ্যাসমিনকে ডেট করছেন হার্দিক। তাঁরা নাকি একসঙ্গে ঘুরতেও গিয়েছেন গ্রিসে। তার পরেই জ্যাসমিনকে নিয়ে কৌতূহল জেগে ওঠে নেটাগরিকদের মধ্যে।
১৯৯২ সালের ২৩ মে ইংল্যান্ডের এসেক্সে জন্ম জ্যাসমিনের। সেখানে বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
পরিবারের কেউ সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল জ্যাসমিনের। টেলিভিশনের পর্দায় কখনও ভারতীয় সঙ্গীত শুনে, কখনও বা অভিনেতার কণ্ঠ শুনে তা নকল করতেন তিনি।
জ্যাসমিনের যখন মাত্র আট বছর বয়স, তখন থেকেই গান করতে শুরু করেন তিনি। ১০ বছর বয়সে নাটক শেখার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ভর্তি হন জ্যাসমিন।
২০০০ সালে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান জ্যাসমিন। ‘ডক্টরস’ নামে একটি ধারাবাহিকে শিশু অভিনেতা হিসাবে দেখা যায় তাঁকে।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন নিয়ে পড়ে স্নাতক হন জ্যাসমিন। কলেজ থেকে পাশ করার পর লন্ডনের একটি ব্যাঙ্কে গ্রাহক পরিষেবা সংক্রান্ত কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
কয়েক বছর ব্যাঙ্কে চাকরি করার পর তা ছেড়ে দেন জ্যাসমিন। পরে অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন বলে একটি কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু মাঝপথে সেটিও ছেড়ে দেন তিনি।
২০১০ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ‘দ্য ওনলি ওয়ে ইজ় এসেক্স’ নামের ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাসমিনকে। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি মনোনিবেশ করতে চান বলে সেই ধারাবাহিকে অভিনয় ছেড়ে দেন তিনি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খোলেন জ্যাসমিন। সেই চ্যানেলেই গান গেয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করতেন তিনি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গানের একটি জনপ্রিয় শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জ্যাসমিন। কিন্তু তাঁর গান বিচারকদের পছন্দ না হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান তিনি।
২০১৫ সালে ‘দেশি রাস্কাল্স’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান জ্যাসমিন। এই ধারাবাহিকে শুটিং চলাকালীন তাঁর আলাপ হয় রস ওয়ার্সউইকের সঙ্গে। জ্যাসমিনের সহ-অভিনেতা ছিলেন তিনি। পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও সেখান থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রেম হয় দু’জনের।
কানাঘুষো শোনা যায়, রসের সঙ্গে দু’বছর সম্পর্কে ছিলেন জ্যাসমিন। গান নিয়ে পুরোদমে নিজের কেরিয়ার শুরু করতে চান বলে রসের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন গায়িকা।
ব্রিটেনের জনপ্রিয় গায়ক জ্যাক নাইটের সংস্পর্শে আসেন জ্যাসমিন। জ্যাকের সঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। তার পরেই জ্যাসমিনের কেরিয়ার নতুন ছন্দ পায়। গায়িকা হিসাবে রাতারাতি পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তরুণী।
শুধু বিদেশের মাটিতেই নয়, কেরিয়ার গড়তে বলিপাড়ায়ও পা রাখেন জ্যাসমিন। ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সোনু কে টিটু কি সুইটি’ নামের একটি হিন্দি ছবি। কার্তিক আরিয়ান অভিনীত এই ছবিতে ‘বম ডিগি’ গানটি গেয়েছেন জ্যাসমিন।
‘বিগ বস্’-এর ত্রয়োদশ সিজ়নের প্রতিযোগী আসিম রিয়াজ়ের সঙ্গে ২০২২ সালে একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাসমিনকে।
জ্যাসমিনই প্রথম ভারতীয় ব্রিটিশ গায়িকা, যিনি নিউ ইয়র্কের টাইম্স স্কোয়্যারের বিলবোর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পর পর দু’বছর এশিয়ার প্রথম ৫০ জন ‘সেক্সিয়েস্ট উওম্যান’-এর তালিকায় স্থান পান তরুণী।
সমাজমাধ্যমে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে জ্যাসমিনের। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় সাড়ে ছ’লক্ষেরও বেশি অনুগামী রয়েছে তাঁর।
জ্যাসমিনের সঙ্গে হার্দিক ডেট করছেন কি না, তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। তবে এই প্রথম বার নয়, নাতাশার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর একাধিক মহিলার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে ক্রিকেটারের।
সদ্য নাতাশার সঙ্গে চার বছরের সংসারের বিচ্ছেদ হয়েছে হার্দিকের। সেই সময় সমাজমাধ্যমে হার্দিকের সঙ্গে ছবি দেখা যায় প্রাচী সোলাঙ্কির। তার পর থেকেই কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, প্রাচীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন হার্দিক।
শুধুমাত্র হার্দিকের সঙ্গে নয়, প্রাচীকে দেখা গিয়েছিল হার্দিকের পরিবারের সঙ্গেও। সমাজমাধ্যমে হার্দিকের দাদা ক্রুণাল পাণ্ড্যর সঙ্গেও ছবি দিয়েছিলেন প্রাচী।
প্রাচী পেশায় রূপটানশিল্পী। নিজেকে হার্দিকের অনুরাগী বলেই দাবি করেছিলেন তরুণী। তবে হার্দিকের সঙ্গে কী ভাবে তাঁর পরিচয় হয়, সে বিষয়ে কিছু খোলসা করেননি তিনি।
মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানীর বিয়েতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হার্দিক। সেখানে অধিকাংশ সময় বলি অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডের সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায় ক্রিকেটারকে।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, বলি অভিনেতা আদিত্য রায় কপূরের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন অনন্যা। কানাঘুষো শোনা যায়, আদিত্যের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন অভিনেত্রী। তার পরেই অম্বানী-পুত্রের বিয়েতে হার্দিকের সঙ্গে দেখা যায় অনন্যাকে।
নেটব্যবহারকারীদের অধিকাংশের দাবি, আদিত্যের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর হার্দিককে ডেট করছেন অনন্যা। কিন্তু তার মধ্যেই গ্রিসে গিয়ে অন্য ‘বান্ধবী’র সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে ফেলেছেন ক্রিকেটার। আদৌ তাঁর জীবনে কোনও নারী রয়েছেন কি না, তা গোপনই রেখেছেন হার্দিক।