রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি হোক বা থ্রিলার ঘরানার— ভারতীয় ছবি অথচ তার মধ্যে কোনও গান থাকবে না, এমনটা সাধারণত চোখে পড়ে না। তবে গানের সংখ্যা ছবি অনুযায়ী কমবেশি হয়। কখনও গানগুলি শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, কখনও বা গানের জন্যই ছবিটি আরও বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আশির দশক এবং তার আগে বেশ কয়েকটি ভারতীয় ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে যে ছবিগুলিতে সর্বাধিক ১২টি গান ছিল। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সে নজির ভেঙে দেয় বলি অভিনেতা সলমন খানের ছবি।
১৯৯৪ সালে সুরজ বরজাতিয়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’। সলমনের সঙ্গে এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় মাধুরী দীক্ষিতকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে মোট ১৪টি গান রয়েছে, যা হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি ভারতীয় ফিল্মজগতেও সর্বাধিক গান রয়েছে, এমন ছবি হিসাবে নজির গড়ে তোলে।
কিন্তু হিন্দি ফিল্মজগতে এমন একটি ছবি রয়েছে, যাতে সত্তরটিরও বেশি গান রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেই ছবিকে গানের সংখ্যার দিক থেকে অন্য কোনও ভারতীয় ছবি টেক্কা দিতে পারেনি।
১৯৩২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ইন্দ্রসভা’ নামের একটি পৌরাণিক ঘরানার ছবি। সাড়ে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ এই ছবিটি একই নামের নাটকের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ইন্দ্রসভা’ ছবিতে মোট ৭২টি গান রয়েছে। ছবি বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ছবিতে মুখ্যচরিত্র এবং পার্শ্বচরিত্রের পাশাপাশি গৌণচরিত্রের কোনও দৃশ্যে প্রথম আগমনের সময় প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ‘এন্ট্রি সং’ বা বিশেষ ধরনের গান ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৩১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতের প্রথম শব্দযুক্ত ছবি বা ‘সাউন্ড ফিল্ম’-এর নাম ‘আলম আরা’। এই ছবি মুক্তির এক বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ইন্দ্রসভা’।
‘ইন্দ্রসভা’ ছবিটি যে নাটকের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে, তা আসলে উর্দু ভাষার নাটক। এই নাটকের রচয়িতা ছিলেন আঘা হাসান আমানত। ১৮৫৩ সালে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়।
১৮৮০ সালে ‘ইন্দ্রসভা’ নাটকটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ইউনিভার্সিটি অফ লেইপজ়িগে-তে গবেষণামূলক কাজের জন্য এই নাটকটির অনুবাদকের দায়িত্বে ছিলেন ফ্রেডরিক রোসেন।
১৯২৫ সালে ‘ইন্দ্রসভা’ ছবিটি প্রথম বার পর্দায় দেখানো হয়। তবে সেখানে শব্দের কোনও ব্যবহার ছিল না। সম্পূর্ণ ছবিটিই ছিল শব্দহীন, নির্বাক ছবি অর্থাৎ ‘সাইলেন্ট ফিল্ম’।
১৯৩১ সালে ‘আলম আরা’ ছবিতে শব্দের প্রথম ব্যবহারের পর তা সারা ভারতে সাড়া ফেলে দেয়। তার পর ‘মদন থিয়েটার’-এর তরফে এই ছবিটি বড় পর্দায় ‘সাউন্ড ফিল্ম’ হিসাবে দেখানোর আয়োজন করা হয়।
‘ইন্দ্রসভা’ ছবিতে ৩১টি গজল, ন’টি ঠুংরি এবং চারটি হোরি ঠুংরি রয়েছে। এ ছাড়াও নানা ঘরানার গান রয়েছে ‘ইন্দ্রসভা’ ছবিতে।
ভারতের দ্বিতীয় ‘সাউন্ড ফিল্ম’ হিসাবে তো বটেই, ভারতীয় ফিল্মজগতে এখনও সর্বাধিক গান রয়েছে, এমন ছবি হিসাবে নজির গড়ে রেখেছে ‘ইন্দ্রসভা’ ছবিটি।