বছরের প্রথম সপ্তাহেই রাজ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। উত্তুরে হাওয়ার দাপটে ধাপে ধাপে তাপমাত্রার পারদপতন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু কলকাতা নয়, তাপমাত্রা কমেছে রাজ্যের সর্বত্র।
আগের বছর ১৭ ডিসেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। সে দিন মরসুমের শীতলতম দিন ছিল বলে হাওয়া অফিস সূত্রের খবর। তবে বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নেমে সেই নজির ভেঙেছে।
শুধু কলকাতাতেই নয়, রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতেও তাপমাত্রার পারদপতন হয়েছে বলে আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। উত্তরের জেলাগুলিতে শীতের কনকনে আমেজে মেতে রয়েছেন উত্তরবঙ্গবাসী।
শীতের মরসুমে ঠাণ্ডা উপভোগ করতে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা। এই জেলাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ১০ ডিগ্রির নীচে নেমেছে। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কালিম্পঙে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় দার্জিলিঙের দ্বিগুণ। আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কালিম্পঙে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১২ ডিগ্রি এবং ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিকিমে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ধরা পড়েছে। সাদা তুষারে ঢেকে গিয়েছে সিকিমের অধিকাংশ অঞ্চল। মঙ্গলবার সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের তাপমাত্রা নেমে যায় শূন্য ডিগ্রিতে।
খারাপ আবহাওয়ার জন্য নাথুলা এবং ছাঙ্গু যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সিকিমের প্রশাসন এবং পর্যটন বিভাগ। চলতি সপ্তাহের পরিস্থিতি দেখে আবার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার গ্যাংটকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকালে গ্যাংটকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারও তুষারপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
পাহাড়ি এলাকা শুধু নয়, মালদহ এবং কোচবিহারের মতো জেলাও তাপমাত্রার পতনে টক্কর দিচ্ছে কলকাতাকে। ১০ ডিগ্রির আশপাশেই রয়েছে জেলাগুলির তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার মালদহ এবং কোচবিহারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১০.৯ এবং ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পাশাপাশি তাপমাত্রা দশের নীচে নেমেছে পুরুলিয়া, বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া এবং বর্ধমানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৯.৮ ডিগ্রি এবং ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া এবং বহরমপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১১.৩ ডিগ্রি এবং ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পানাগড় এবং শ্রীনিকেতনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১০.৬ ডিগ্রি এবং ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতে হাতে একটু সময় থাকলেই ডায়মন্ড হারবার এবং দিঘাতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। বৃহস্পতিবার দুই জায়গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ক্যানিং এবং মেদিনীপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১২.৪ ডিগ্রি এবং ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সব মিলিয়ে আপাতত শীতের ইনিংস জারি থাকবে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে শীতের খোঁজে উৎসুক পর্যটকেরা ছুটি পেলে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা সেরে নিতেই পারেন।
বাংলায় তাপমাত্রা হ্রাসের নেপথ্যে উত্তুরে বাতাস। উত্তর ভারতে শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার মরসুমের ‘শীতলতম দিন’ দেখেছে রাজধানী দিল্লি। রাজধানী শহরের সফদরজং এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কনকনে ঠাণ্ডার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে মোড়া ছিল দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বেশির ভাগ রাজ্য। যার ফলে কমেছে দৃশ্যমানতা। তার প্রভাব পড়েছে যানবাহন চলাচলেও।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিন ঘন থেকে অত্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকবে পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই রাজ্যগুলিতে বর্তমানে গড় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।