তিন ফরম্যাটে খেলা হয় ক্রিকেট। এর মধ্যে ৫০ ওভারের এক দিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) অন্যতম। ১৯৭৫ সালে এই ফরম্যাট দিয়েই শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ওই সময়ে অবশ্য ৬০ ওভারে হত এক দিনের আন্তর্জাতিক। পরবর্তী কালে যা ৫০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়।
আগামী বছর (পড়ুন ২০২৫ সাল) ৫০ বছরে পা দেবে এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এ নিয়ে এখন থেকেই উৎসাহের পারদ চড়তে শুরু করেছে।
ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও এক দিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে খেলা আলাদা সম্মানের। এর জন্য বরাবরই মুখিয়ে থাকেন তাঁরা। আর তাই বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেতে মাঠে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে দেখা যায় তাঁদের।
কিন্তু, এত কিছু সত্ত্বেও বহু প্রতিভাবান ক্রিকেটার বিশ্বকাপে জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে একাধিক রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাদ দিয়েই দল তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট দেশ, যা ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট অবাক করেছে।
এই তালিকায় প্রথমেই আসবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার জাস্টিন ল্যাঙ্গারের নাম। একটা সময়ে জাতীয় দলের ওপেনার ছিলেন তিনি। ১৪ বছরের ক্রিকেট জীবনে ১০৫টি টেস্ট খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। টেস্টে সাত হাজারের বেশি রান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। গড় ৪৫।
১৯৭০ সালের ২১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার পার্থে জন্ম হয় ল্যাঙ্গারের। দেশের হয়ে ১৯৯৩ সালে প্রথম টেস্ট খেলেন তিনি। এর পর ২০০৭ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর সাদা জার্সিতে দেখা গিয়েছে এই বাঁ-হাতি ব্যাটারকে। কিংবদন্তি ম্যাথু হেডেনের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে খেলতেন তিনি।
১৯৯৪ সালের ১৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হলুদ জার্সিতে দেশের হয়ে প্রথম বার মাঠে খেলতে নামেন ল্যাঙ্গার। তিনি কেরিয়ারের শেষ এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তারিখ ছিল ১৯৯৭ সালের ২৫ মে।
ল্যাঙ্গারের ওয়ান ডে কেরিয়ারে একটিমাত্র এক দিনের বিশ্বকাপ খেলেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সে বার ফাইনালে উঠে অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার কাছে হার মানতে হয় ক্যাঙারু ব্রিগেডকে। সালটা ছিল ১৯৯৬। সেই অসি টিমে জায়গা হয়নি ল্যাঙ্গারের। পরবর্তী ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের আগেই এক দিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।
এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে খেলা হয়নি ব্রিটিশ ক্রিকেটার ম্যাথু হগার্ডেরও। মাত্র ৬৭টি টেস্ট খেলা ম্যাথুর শিকার ২৪৮ উইকেট। নিজের সময়কার অন্যতম সেরা ইংরেজ সিমার ছিলেন তিনি।
২০০৫ সালের অ্যাসেজ সিরিজ়ে ইংল্যান্ডের কাছে ল্যাজেগোবরে দশা হয় শক্তিশালী অসিদের, যার নেপথ্যে হগার্ডের ভূমিকা ছিল অনেকটাই। তাঁর পেসের সামনে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটাররা সে ভাবে দাঁড়াতেই পারেননি। তবে জীবনের সেরা বোলিং তিনি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ২০৫ রানে ১২ উইকেট তুলে নেন ম্যাথু।
২০০১ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম বার এক দিনের জার্সিতে ‘থ্রি লায়নস্’দের হয়ে খেলতে নামেন ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে জন্ম নেওয়া হগার্ড। প্রতিপক্ষ ছিল জ়িম্বাবোয়ে। তাঁর এক দিনের কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। এই খেলা হয় ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল।
ক্রিকেট কেরিয়ারে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়েছিল ম্যাথুর। কিন্তু টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও খেলেননি তিনি। জাতীয় দলের হয়ে মোট ২৬টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন এই ইংরেজ পেসার। নিয়েছেন ৩২ উইকেট। জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৪৯ রানে পাঁচ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং।
নিউজ়িল্যান্ডের ক্রিস মার্টিনের ভাগ্যও ম্যাথুর মতোই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পান এই কিউয়ি বোলার। কিন্তু মেগা টুর্নামেন্টে দেশের জার্সিতে কোনও ম্যাচ খেলেননি তিনি। চোট পাওয়া ড্যারিল টাফির জায়গায় দলে জায়গা হয়েছিল তাঁর।
কিউয়ি পেসার ক্রিসের জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট কেরিয়ার খুবই ভাল। দেশের শীর্ষ উইকেটশিকারি রিচার্ড হ্যাডলি ও ড্যানিয়েল ভেত্তরির পরেই রয়েছে তাঁর নাম। ১৩ বছরের টেস্ট জীবনে মোট ৭১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাঁর শিকার মোট ২৩৩ উইকেট। মোট ১০ বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৮০/১১ তাঁর সেরা বোলিং।
টেস্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও এক দিনের ম্যাচে কখনওই নির্বাচকদের নজর কাড়তে পারেননি ক্রিস। এই ফরম্যাটে মাত্র ২০টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। নিয়েছেন ১৮ উইকেট। যে কারণে বিশ্বকাপে তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নিতে চাননি অধিনায়ক ও কোচ।
জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলা হয়নি ব্রিটিশ ব্যাটার অ্যালেস্টার কুকেরও। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে দেশের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। ৯২টি ওডিআই খেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজারের বেশি রান রয়েছে তাঁর। জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ এক দিনের ম্যাচ কুক খেলেন ২০১৪ সালে। সে বারও প্রতিপক্ষ ছিল লঙ্কা ব্রিগেড।
কুকের ক্রিকেট কেরিয়ারে দু’টি এক দিনের বিশ্বকাপ খেলা হয়েছিল। সালগুলি ছিল ২০০৭ ও ২০১১। কিন্তু কোনও বারই থ্রি লায়নসের হয়ে মাঠে নামা হয়নি এই ইংরেজ ব্যাটারের। এই দুই বিশ্বকাপে এক বারও ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি ইংরেজ বাহিনী।
তালিকায় শেষ নাম কিংবদন্তি ভারতীয় ব্যাটার ভিভিএস লক্ষ্মণের। দেশের জার্সিতে মোট ৮৬টি ওডিআই খেলেছেন এই হায়দরাবাদি ডানহাতি ব্যাটার। এক দিনের আন্তর্জাতিকে ছ’টির মধ্যে চারটিই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। গড় ছিল ৪৬.১৮।
১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল দেশের হয়ে নীল জার্সিতে এক দিনের ম্যাচে অভিষেক হয় লক্ষ্মণের। প্রতিপক্ষ ছিল জ়িম্বাবোয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ এক দিনের ম্যাচ খেলেন এই হায়দরাবাদি ব্যাটার। সালটা ছিল ২০০৬।
লক্ষ্মণের ক্রিকেট জীবনে ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে দু’টি এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি, যার আয়োজক দেশ ছিল যথাক্রমে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কোনও বারই জাতীয় দলে থাকতে পারেননি তিনি।