Rain in West Bengal

বৃষ্টি থামছেই না, সঙ্গে ডিভিসির জল! জেলায় জেলায় বুধবারের দুর্ভোগের ছবি এক নজরে

বুধবার সকাল ১০টায় তিস্তা ব্যারাজ থেকে ৮২৫২.৪০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আরও জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বস্তুত, সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ জলস্ফীতি হয়েছে তিস্তায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৩২
Share:
০১ ২২

টানা বর্ষণে বাংলার জেলায় জেলায় ভোগান্তি। তবে এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিস্তা নদী উত্তাল। তার জেরে উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড় থেকে সেই আতঙ্ক ধেয়ে আসছে সমতলের দিকে। তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর। সংরক্ষিত এলাকায় জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি।

০২ ২২

বুধবার সকাল ১০টায় তিস্তা ব্যারাজ থেকে ৮২৫২.৪০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আরও জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বস্তুত, সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ জলস্ফীতি হয়েছে তিস্তায়।

Advertisement
০৩ ২২

তিস্তার দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকার জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

০৪ ২২

বুধবার উত্তর সিকিমের ভয়ঙ্কর সব ছবি কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে গোটা উত্তরবঙ্গে।

০৫ ২২

উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী এবং আমলাদের অকুস্থলে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাহাড় থেকে বিপুল জলরাশি বয়ে তিস্তা তা এনে ফেলবে জলপাইগুড়ি জেলায়।

০৬ ২২

ফলে নদী ছাপিয়ে বন্যায় ডোবার আশঙ্কা রয়েছে জলপাইগুড়ি-সহ একাধিক জেলার। দুর্যোগের আশঙ্কায় জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ওই জেলার সমস্ত স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। উত্তর সিকিমের লাচেন উপত্যকায় চুংথাও লোনক হ্রদ ফেটে যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, তার জেরে তিস্তার জলস্তর বেড়েই চলেছে। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকার কুচলিবাড়ি এবং নিজতরফ দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অসংরক্ষিত এলাকা থেকে ভোর থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত জায়গায় রাখা হয়েছে। অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি দল সেখানে মোতায়েন রাখা হয়েছে । মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি সংলগ্ন তিস্তার নিচু এলাকার মানুষদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইক যোগে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। মেখলিগঞ্জ ব্লকের বিডিও অরুণকুমার সামন্ত জানান, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। নদীর জলস্তর অনেকটাই বেড়েছে। তবে আর যদি ৬ থেকে ৭ ফুট জলস্তর বাড়ে, তা হলে কুচলিবাড়ি, নিজতরফ এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তিস্তা নদীর আশপাশ অঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই কাজে প্রশাসনের পাশাপাশি হাত লাগিয়েছে বিএসএফ। জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি সীমান্তে চলছে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ।

০৭ ২২

উত্তর ও দক্ষিণ দক্ষিণ দিনাজপুরে আকাশ মেঘলা। সকাল থেকে কয়েক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়েছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষত বালুরঘাট মহকুমায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। এখনও পর্যন্ত জেলার প্রধান তিন নদী পুনর্ভবা, আত্রেয়ী ও টাঙ্গন নদীর জলস্তর স্বাভাবিক। কিন্তু যে ভাবে পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে জলস্তর বাড়তে পারে ওই নদীগুলোতে। যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে প্রশাসন। জানিয়েছেন জেলাশাসক বিজন কৃষ্ণ। এর মধ্যে সিকিম বেড়াতে গিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের দুই ভাই-সহ তিন যুবকের নিখোঁজের খবর পাওয়া গিয়েছে।

০৮ ২২

নিম্নচাপের বৃষ্টিতে নাজেহাল মালদহবাসী। কখনও ঝিরঝির, তো কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে মালদহে। জেলা আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০.৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪১৯ মিলিমিটার। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত ১৫৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অর্থাৎ, ইতিমধ্যে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে মালদহে। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, শীতকালীন সব্জি উৎপাদনের জন্য গাছ রোপণ করা হয় এই সময়। কিন্তু এই বৃষ্টির ফলে শীতকালীন সব্জি উৎপাদনেও প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার তিন মূল নদী গঙ্গা, ফুলহার এবং মহানন্দার জলস্তর হু হু করে বাড়ছে। মহানন্দার জলে ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহ পুরসভার অন্তত ১৭টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। নদী সংলগ্ন ব্লকের আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুত রাখা হয়েছে।’’ পাশাপাশি, তিনি বলেন, ‘‘পুনর্ভবা নদীর জলে প্লাবিত বামনগোলা ব্লকের ন’টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। তাঁদের জন্য ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

০৯ ২২

ডিভিসির দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাঁকুড়ার দামোদর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা কমেছে। বাঁকুড়ায় চিন্তা বাড়াচ্ছে দ্বারকেশ্বর নদ। বুধবারও বাঁকুড়া জেলা জুড়ে লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় নদের জলস্তরের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। নদের উপর থাকা তিনটি সেতু জলের তলায় চলে গিয়েছে। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া মীনাপুর, ভাদুল ও কেঞ্জাকুড়া গ্রাম লাগোয়া ভেলাইডিহা সেতু ডুবে থাকায় সেতুগুলি দিয়ে যাতায়াত আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনায় সোনামুখী, ইন্দাস এবং পাত্রসায়ের ব্লকের নিচু এলাকাগুলিতে বন্যার যে আশঙ্কা তৈরী হয়েছিল, সেই আশঙ্কা আপাতত কেটেছে বলে জানিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বুধবার বিকালে সরেজমিনে সোনামুখী ব্লকের নিচু এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক এন সিয়াদ ও পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে জেলা জুড়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪০টি কাঁচা বাড়ি। আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৬৪টি কাঁচা বাড়ি।

১০ ২২

অতি ভারী বৃষ্টির কারণে কমলা সতর্কতা ছিল রবিবার। সোমবার জারি হয়েছিল হলুদ সর্তকতা। বুধবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী তীরবর্তী এলাকার গ্রামের মানুষকে পুজোর আগে বন্যার মুখে পড়তে হয়েছে। জামালপুরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে আশপাশের ১৩টি গ্রামে। জামালপুর ব্লকের অমরপুর গ্রামে যে অস্থায়ী কাঠের সেতু ছিল, সেটি খুলে দেওয়া হয়েছে দামোদরের নদে জলস্তর বৃদ্ধির কারণে। অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন অমরপুর, শিয়ালী, কোরা, মাঠশিয়ালী, মুইদিপুর, উজিরপুর, রেশলাতপুরের সাধারণ মানুষ। রায়না-২ ব্লকের গোতান গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটশিমুল গ্রামের কাছে মুণ্ডেশ্বরী নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দরা। খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকেই ভাঙন মেরামতিতে নামে সেচ দফতর। গ্রামবাসীদের দাবি, ১০০ ফুট মতো অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেচ দফতর যদিও মনে করছে, খানিকটা জল নামলে মেরামতের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেচ দফতরের আধিকারিক রমেশ চন্দ্র জানান, এই সমস্যাটি এখনও খুব বড় আকার নেয়নি। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

১১ ২২

পশ্চিম বর্ধমানে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও কমাল ডিভিসি। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে মোট ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে বুধবার দুপুরের পর থেকে। মাইথন জলাধার থেকে ১৫ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসি সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। তাই জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডিভিসিকে আবেদন করেছেন, জল ছাড়ার পরিমাণ যদি কিছুটা কমানো সম্ভব হয়, ভাল হয়। সব দিক খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়লেই হবে।

১২ ২২

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গা জলমগ্ন। ইতিমধ্যে পটাশপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাগুই নদীর জল ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত। বস্তুত, নদীর জল উপচে হু হু করে জল ঢুকছে দুই মেদিনীপুরেই। রবিবার রাত থেকে টানা বর্ষণের পাশাপাশি একাধিক জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে। বাগুই এবং কেলেঘাই নদী উপচে জল ঢুকছে পটাশপুর-১ ব্লকের গ্রামগুলোতে। ঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছেন এলাকাবাসীরা। বেশ কিছু মাটির বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। রাস্তাঘাট চলে গিয়েছে জলের তলায়। বিঘার পর বিঘা জমি থেকে পুকুর— সব ডুবেছে। প্রশাসনের তরফে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ত্রাণশিবির।

১৩ ২২

এই মুহূর্তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে চরম সতর্কতা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে বিভিন্ন জলাধার থেকে যে জল ছাড়া হচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। এমনিতেই খালবিল জলে পরিপূর্ণ। তার উপর বাইরে থেকে জল ঢুকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এই মুহূর্তে কেলেঘাই, কংসাবতী নদীর জলস্তর ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাগুই নদী থেকে জল ঢুকছে বেশ কিছু এলাকায়। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসন তৈরি আছে” বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৪ ২২

অতিবর্ষণে সবং ব্লকের ছয়-সাতটি অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ১১ নম্বর মহাড় অঞ্চলের কানুচক বুথে বেশ কয়েকটি পরিবারকে তুলে এনে একটি স্কুলের ত্রাণশিবিরে করে রাখা হয়েছে। সবংয়ের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক তুহিনশুভ্র মহান্তি, জেলা পরিষদের সদস্য তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ আবু কালাম বক্স প্রমুখ উদ্যোগী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। সবংয়ের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া দিল্লি থেকে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন প্রশাসনের সঙ্গে। ডুবে গিয়েছে ঘাটালও।

১৫ ২২

ঝাড়খণ্ডের গালুডি ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় ফুলেফেঁপে উঠেছে সুবর্ণরেখা নদীর জলস্তর। এর ফলে ঝাড়গ্ৰামের প্রতিটি নদী তীরবর্তী ব্লকে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নদীতে নৌকা পারাপার থেকে শুরু করে স্নান এবং মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে নদীতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফ থেকে। ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে সোমবার ৯২ হাজার কিউসেক এবং মঙ্গলবার সকাল ৮ টার সময় এক লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে ঝাড়খণ্ডের গালুডি ব্যারেজ থেকে। ফলে ঝাড়গ্ৰাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ এবং ২ ব্লক, সাঁকরাইল এবং নয়াগ্ৰাম ব্লক প্রশাসন নদী তীরবর্তী এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে। প্রতি মুহূর্তে নদীর জলস্ফীতি পর্যবেক্ষণ করছেন ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা। এ বিষয়ে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বিডিও দেবজ্যোতি পাত্র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছেন গালুডি ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। নদীর জল বিপদসীমার দু’মিটার নীচ দিয়ে বইছে। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’

১৬ ২২

টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নদী উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোয় আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার করেন মুড়ি গঙ্গা নদীতে। কাকদ্বীপ ৮ নম্বর ঘাট থেকে কচুবেড়িয়া ঘাট পর্যন্ত প্রায় ছ’কিলোমিটার নদী পথ প্লাবিত। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বকখালির সমুদ্রসৈকতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে নামখানা ব্লক প্রশাসন। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি বুধবার। বকখালি সমুদ্রসৈকতে ব্লক প্রশাসনের তরফে চলছে লাগাতার প্রচার। সোমবার থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকালে বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢেকে ছিল আকাশ। সমুদ্র উপকূলে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয় হাওয়া অফিস। জেলা জুড়ে জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা। তা ছাড়া, গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে বারণ করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি থানার প্রধানত উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করছে প্রশাসন। বকখালি, বালিয়াড়া-সহ গঙ্গাসাগরের সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

১৭ ২২

টানা বৃষ্টিতে জল জমেছে এলাকায় এলাকায়। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য এই সমস্যা বলে জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সোনারপুরের মতো এলাকাতেও একমাত্র রাস্তায় প্রায় হাঁটুসমান জল। স্কুলের ছাত্রছাত্রী হোক বা পথচলতি সাধারণ মানুষ প্রত্যেকের সমস্যা হচ্ছে। এমনকি, আশপাশের বাড়িতেও জল ঢুকে গিয়েছে। রান্নাঘরের উনুনে পর্যন্ত জল ঢুকে যাওয়ায় এক রকম রান্নাবান্নাও বন্ধ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের ভগবানপুর অঞ্চলের গাবতলা এলাকার অনেক বাড়িতে। গাছতলা এলাকার গোলদারপাড়াতেও একই পরিস্থিতি। নিকাশি অবস্থার বেহাল দশার ফলে এই দুরবস্থা বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

১৮ ২২

একটানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বেড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কিছু কিছু নিচু এলাকায় জল জমেছে। প্রশাসনের তরফে নিচু এলাকা থেকে জল সরানোর কাজ করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েছেন অফিসযাত্রী থেকে অন্যান্য নিত্যযাত্রী।

১৯ ২২

মঙ্গলবারের পর আজ সকালে ডিভিসি থেকে ফের জল ছাড়ার ফলে বন্যার আশঙ্কা তীব্র হয়েছে হাওড়ার আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরে। দফায় দফায় বৃষ্টির ফলে একাধিক নদীর জলস্তর হু হু করে বাড়ছে। এই জোড়া ফলার জেরে রাতের ঘুম ছুটে গিয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার ডিভিসি থেকে এক লক্ষ ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে বেশ কিছু জায়গায় প্লাবন হতে পারে।

২০ ২২

উদ্বেগ বেড়েছে হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া চিতনান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মুণ্ডেশ্বরী নদী ফুলেফেঁপে ওঠায় বন্যাতঙ্ক গ্রাস করেছে স্থানীয়দের। বুধবারও দেখা গিয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং হচ্ছে এলাকায় এলাকায়। দুই জায়গায় ত্রাণশিবির খোলার পাশাপাশি সেখানে খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য দিকে, দামোদর নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় উদয়নারায়ণপুরের ডিভুশুট, হরালি, দাসপুর, সীতাপুর, সুলতানপুর, কুড়চি হরিহরপুর, হোদল, রামপুর বালিচক, শিবপুর, খলতপুর, বিনোদবাটি, জঙ্গলপাড়া, শিবানীপুর, পাঁচারুল, রাজাপুর জোকা-সহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তৎপরতার সঙ্গে প্রশাসনও ব্যবস্থা নিচ্ছে। এলাকায় নজরদারি বাড়াতে উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছে। পাশাপাশি, ত্রাণশিবিরগুলোতে শুকনো খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর মুখে কৃষিজমি প্লাবিত হলে ধানচাষের পাশাপাশি সব্জিচাষেও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

২১ ২২

ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত হুগলির তারকেশ্বর ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। নিম্ন দামোদরের তীরে অবস্থিত বিঘার পর বিঘা জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। জল ঢুকেছে দেড়শোর বেশি বাড়িতে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দামোদরের জল বাড়লেই ফি বছর প্লাবিত হয় এই সব এলাকা। তারকেশ্বর ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ। কেশবচক, তালপুর, চাঁপাডাঙা— এই তিনটি পঞ্চায়েতের সাতটি গ্ৰামে জল ঢুকেছে। এর মধ্যে শুধু চাপাডাঙাতেই একশোর বেশি বাড়ি জলমগ্ন বলে জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ কয়েকটি জায়গায় ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। নদীর বাঁধে ত্রিপল খাটিয়ে কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ডিভিসির ছাড়া জলে তারকেশ্বর ব্লকের পাশাপাশি জাঙ্গিপাড়া ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে যাচ্ছেন জলমগ্ন এলাকার মানুষজন। কেউ ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘জেলার খানাকুল-১ এবং ২ ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তারকেশ্বর ও জাঙ্গিপাড়ার একাংশও প্রভাবিত হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত রকম সাহায্য করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ধারণ করা শুরু হয়েছে।”

২২ ২২

ধাপে ধাপে জল ছাড়ছে তিলপাড়া জলাধার। তার ফলে সিউড়ির অজয়পুরের কাছে দুই ভাগে ভাগ হয়েছে ময়ূরাক্ষী নদী। দ্বীপের কাছে রয়েছে প্রায় দশটি গ্রাম। হঠাৎই নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা এখন নৌকা।

সব ছবি: নিজস্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement