২১ বছর আগে আমেরিকার বুকে এক ভয়াবহ নাশকতা চালিয়েছিল বিশ্বের ত্রাস হয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। যার জেরে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত তিন হাজার মানুষের। তা দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দুনিয়া। কিন্তু তার পরেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ৯/১১ হামলার দুই দশকের মধ্যে হামলার মূলচক্রীদের খুঁজে বার করে শাস্তি দিয়েছে ওয়াশিংটন। সময় লাগলেও লক্ষ্যে অবিচল থেকেছে আমেরিকা। মূলচক্রীদের কাউকে পোরা হয়েছে জেলে। কারও মৃত্যু হয়েছে ওসামা বিন লাদেন বা আয়মান আল-জাওয়াহিরির মতো।
২০০১ সালে যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালিয়েছিল আল কায়দা, তখন তার শীর্ষ নেতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। মূলত তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই আমেরিকার বুকে এমন ভয়াবহ নাশকতা সংগঠিত করে আল কায়দা।
৯/১১ হামলার সেই মূল ষড়যন্ত্রী লাদেনকেই ২০১১ সালের ২ মে খতম করে দেয় আমেরিকার নেভি সিল। পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে লুকিয়ে ছিলেন লাদেন। কিন্তু তা আমেরিকান গোয়েন্দাদের নজর এড়ায়নি। সেই ঘাঁটিতে ঢুকে আল কায়দার শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে আমেরিকার বাহিনী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে চলে এই অপারেশন ‘নেপচুন স্পিয়ার’।
৯/১১ হামলার আরও এক চক্রী ছিলেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সংগঠন ঘুরে মিশরীয় ওই শল্য চিকিৎসকের সঙ্গে লাদেনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন তিনি। লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়দার প্রধান হন জাওয়াহিরি।
সেই জাওয়াহিরিকেও খুঁজছিল আমেরিকার গোয়েন্দাদের শ্যেনচক্ষু। তিনি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের শহরতলিতে রয়েছেন বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। বাড়িটির বারান্দায় বহু ক্ষণ কাটাতেন জাওয়াহিরি। সেই সুযোগ নিয়ে চলতি বছরের ৩১ জুলাই সকালে অভিযান চালায় আমেরিকা। ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় জাওয়াহিরিকে।
টুইন টাওয়ার হামলার অন্যতম চক্রী আল কায়দা নেতা খালেদ শেখ মহম্মদ ওরফে কেএসএম। বিমানের মাধ্যমে এমন ভয়াবহ হামলার কথা ভেবেছিলেন কুয়েতের এই নাগরিকই।
আমেরিকার প্রথম ১০ জন মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকার ছিলেন কেএসএম। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইএ। ২০০৬ সাল থেকে ৫৭ বছরের ওই জঙ্গি রয়েছেন গুয়ান্তানামো বে কারাগারে।
আমেরিকার বুকে ওই ভয়াবহ সন্ত্রাস ঘটানোর নেপথ্যে ছিলেন আম্মর আল বালুচি নামে আল কায়দার অন্যতম নেতাও। হামলাকারীদের অর্থ-সহ নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন বছর চুয়াল্লিশের ওই কুয়েতি নাগরিক। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ বালুচি।
২০০৩ সালের ২৯ এপ্রিল বালুচিকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। এর পর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় আমেরিকার হাতে। আপাতত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে রয়েছেন বালুচি।
আল কায়দার অন্যতম প্রবীণ সদস্য মুস্তাফা আল হাবসাবি সংগঠনের অর্থ সংক্রান্ত বিষয় দেখতেন। ৫৩ বছরের হাবসাবি আদতে সৌদি আরবের বাসিন্দা। ৯/১১ হামলাতেও নানা ভাবে অর্থসাহায্য করেন হাবসাবি।
২০০৩ সালে পাকিস্তান থেকে ধরা পড়েন হাবসাবি। এখন রয়েছেন সিআইএ হেফাজতে। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ২০০৮ সালে। তবে তা এখনও কার্যকর হয়নি।
৯/১১ হামলার আরও এক চক্রী হলেন ওয়ালিদ বিন আত্তাশ। আদতে তিনি ইয়েমেনের বাসিন্দা। সংগঠনের ‘লেফটেন্যান্ট’ পদে ছিলেন তিনি। ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ছিলেন আত্তাশ।
ওয়ালিদ বিন আত্তাশকে ২০০৩ সালের ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচি থেকে গ্রেফতার করে পাক রেঞ্জার্স। ৯/১১-র হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভার ছিল আত্তাশের উপর। কী ভাবে বিমানে ধারালো অস্ত্র লুকোতে হয় তার প্রশিক্ষণও দেন তিনি। এখন তিনি সিআইএ হেফাজতে রয়েছেন।
টুইন টাওয়ার হামলার আরও এক চক্রী হলেন রামজি বিন আসল শিভ। ইয়েমেনের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের এই আল কায়দা জঙ্গি আল কায়দা নেতা খালেদ শেখ মহম্মদ ওরফে কেএসএমের ‘প্রতিনিধি’ ছিল। সংগঠনে টুইন টাওয়ার হামলার তারিখ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন এই শিভ-ই।
২০০২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ধরা পড়েন শিভ। সিআইএ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল দীর্ঘ দিন।
৯/১১-র হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী মহম্মদ আল কাথানি। আমেরিকার অভিযোগ, যে বিমান দু’টি টুইন টাওয়ারে ধাক্কা মেরেছিল তার একটিতে কাথানির ওঠার কথা ছিল। কিন্তু হামলার কয়েক মাস আগে কাথানির আমেরিকা সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০০২ সালে কাথানিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০ বছর জেল খাটার পর এখন মুক্ত কাথানি। তাঁর থেকে ততটা ভয় নেই বলেই মনে করছে সিআইএ। জেলে কাথানির উপর চরম অত্যাচার চালানোর অভিযোগও উঠেছিল।