আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, যার সন্ধান ইতিহাসের পাতায় মেলে না। কোনও ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হওয়ার পর বিশদ গবেষণার উপর ভিত্তি করে এমন প্রচুর অজানা তথ্য জানা যায় যা ইতিহাসের নৃশংসতাকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। এর মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হল ‘রুম্মু প্রিজন’।
১৯৩০ সালে এই জেল তৈরি হয়। তবে, প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৯ বছর পর পর্যন্ত এই জেলে বন্দিদের আটক রাখার জন্য আলাদা কোনও কুঠুরি ছিল না।
সেই সময় অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়া। তখন বন্দিদের এই হাজতে রাখা হত। এলাকাটি প্রথমে পাথর তৈরির খনি ছিল।
বন্দিদের জোর করে এই খনিতে কাজ করানো হত। মাটির তলার জল সরবরাহ করা হত পার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে। এমনকি, সমস্ত খামারেও এই জল ব্যবহার করা হত।
কিন্তু, ইউএসএসআর ভেঙে যাওয়ার পর ভূগর্ভস্থ জল ধীরে ধীরে এই এলাকায় জমা হতে থাকে। বর্তমানে এই জেলের অনেকাংশই জলের তলায় নিমজ্জিত।
এক কালে ইউএসএসআর-এর অধীনে থাকা এই জেলটি ইউরোপের উত্তরাংশে এস্তোনিয়ার অন্তর্গত। প্রায় ১,৫০০টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত এস্তোনিয়ার দ্রষ্টব্য স্থানগুলির মধ্যে ‘রুম্মু প্রিজন’ অন্যতম।
ভূগর্ভস্থ জল চার দিকে জমে একটি হ্রদের আকার ধারণ করেছে। এই হ্রদের জলের গভীরতা ৬ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে।
জলের উপর আংশিকভাবে ডুবে থাকা এই হাজতে আগে ৪০০ জন বন্দি ছিলেন। তাঁরা মাটির তলার জল পাম্প করে বের করতেন।
কিন্তু ১৯৯১ সালের পর পরিস্থিতি বদল হলে জায়গাটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ফলে, অতিরিক্ত জল পাম্প করে বের করারও কেউ ছিলেন না।
দীর্ঘ দিন ধরে ওই জল জমতে থাকে জেলখানার চারপাশে। সেই জল জমা হয়েই রুম্মু হ্রদের সৃষ্টি।
এই ঘটনার বহু বছর পর এই জেলখানার দিকে নজর পড়ে ফিনল্যান্ডের বাসিন্দা তাঞ্জা পালমুনেন ও কিম্মো পারহিআলার। দুনিয়ার যত পরিত্যক্ত স্থান খুঁজে বের করাই তাঁদের কাজ।
শীতকালের কনকনে ঠান্ডায় যখন হ্রদের জলের তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেই পরিস্থিতিতে হাজতের নিমজ্জিত অংশ জলের তলায় নেমে পর্যবেক্ষণ করেন তাঞ্জা ও কিম্মো।
পারহিআলা এই প্রসঙ্গে জানান, এত ঠান্ডা জলে নেমে তাঁদের সারা শরীর কেঁপে উঠেছিল। তবুও, অজানাকে জানার কৌতূহল থাকায় তাঁরা ওই জলেই নেমে পড়েন।
জলের উপরে জেলখানার যতটুকু অংশ দেখা যেত, জলের নীচে ডুবে থাকা বাকি অংশও কি একই রকম দেখতে, এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগে তাঁদের মনে।
আদতেও জলের তলায় এত দিন ডুবে থাকার পর কোনও ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে কি না, তা দেখার জন্য হ্রদের জলে ‘ড্রাইস্যুট’ পরে নেমেছিলেন তাঁরা।
জেলখানার যতটুকু জলের উপরে রয়েছে, তার সঙ্গে জলের তলায় ডুবে থাকা অংশের কোনও মিলই নেই।
জেলখানার পুরোটাই কম দামি ধূসর ইট দিয়ে বানানো। ইটের দেওয়ালগুলির কোনও কোনও জায়গায় দেওয়ালবাতি লাগানোও ছিল।
এ ছাড়া জেলখানায় অসংখ্য ঘর বানানো হয়েছিল যেগুলি বর্তমানে জলের তলায় নিমজ্জিত থাকার কারণে শৈবাল-ছত্রাকের বাসায় পরিণত হয়েছে।
ঘরের ভিতর জানালা থেকে শুরু করে বেড়াজাল, জেলখানার ভিতরের সিঁড়ি— সবই নতুন করে আবিষ্কার করেন দু’জন মিলে।
বর্তমানে অবশ্য এই এলাকায় স্কুবা ডাইভিং, জেট সার্ফিং-সহ বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস করানো হয়। গ্রীষ্মকালে এই হ্রদে অনেকে সাঁতার কাটতেও আসেন। এক সময় রাশিয়ার ‘লেবার ক্যাম্প’ হিসাবে কুখ্যাত রুম্মু এখন ভ্রমণপিপাসুদের গন্তব্যস্থল।