অবিরাম ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে। শুক্রবার থেকে বর্ষণ চলছে সেখানে। শনিবারও তা থামার লক্ষণ নেই।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রশাসন। ভারী বৃষ্টির কারণে নিউ ইয়র্কের বিমান এবং মেট্রো পরিষেবাও কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নিউ ইয়র্কে গত কয়েক দশকে এক দিনে এত বৃষ্টি বিরল। শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল জুড়েই ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
রাতভর এই বৃষ্টিতে নিউ ইয়র্কের একাধিক রাস্তা ডুবে গিয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জলে ডোবা গাড়ি। লোকজন জল এড়াতে রাস্তার ধারের রেলিংয়ে উঠে পড়ছেন— এমন ছবিও দেখা গিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক আমেরিকার সর্বাধিক জনবহুল শহর। এই শহরকে সচল রাখে সেখানকার মেট্রো পরিষেবা সাবওয়ে।
কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে সুড়ঙ্গে জল ঢোকায় বন্ধ রাখা হয়েছে সাবওয়ে পরিষেবা।
জরুরি অবস্থা জারি করে শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস নাগরিকদের কাছে বাড়ি থেকে না বেরোনোর আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি আপনি বাড়িতে থাকেন, তবে বাড়িতেই থাকুন। আপনি যদি কাজে কিংবা স্কুলে থাকেন, তবে কোথাও আশ্রয় নিন। কারণ এই পরিস্থিতিতে শহরে চলাচল করা মুশকিল।
ভারী বৃষ্টিতে জল থৈ থৈ অবস্থা শহরের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরেও। সেখানকার একটি টার্মিনাল বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। একাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকেও।
এই অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। আবহাওয়া দফতরকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, শুক্রবার শহরের নানা অংশ ২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এই বর্ষণের নেপথ্যে রয়েছে আটলান্তিক মহাসাগরের উপর তৈরি হওয়া ঝড় ‘ওফেলিয়া’। এই ঝড়ের দোসর হয়েছে পশ্চিম দিক থেকে আসা একটি ঘূর্ণাবর্ত।
এই দুইয়ের প্রভাবেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া দফতরের অন্যতম আবহবিজ্ঞানী রস ডিকম্যান। ঝড় আছড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত এই দুর্যোগ চলতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মেয়রের নির্দেশকে কার্যত ‘অমান্য’ করেই শহরের জলমগ্ন সেন্ট্রাল পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে পড়ে একটি সি লায়ন। পরে যদিও নিজের এনক্লোজ়ারে ফিরে আসে সেটি।
এই ভারী বর্ষণ নিউ ইয়র্কবাসীদের একাংশকে ২০২১ সালের ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্ক ছাড়াও নিউ জার্সি, পেনসিলভ্যানিয়া, কানেকটিকাটে বন্যার কারণে ৪০ জন মানুষ প্রাণ হারান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বন্যার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাকেই দুষছেন। পুর প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই এক তলা বা নিচু এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় উঠে যেতে বলা হয়েছে।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন যে, শহরের জমা জলের স্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কিছু গাড়ি রাস্তায় নেমেও জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। জল বার করতে প্রশাসন যথার্থ পদক্ষেপ করছে না বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের একাংশের।
তবে জলযন্ত্রণার শিকার একাংশের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনই এই ধরনের দুর্যোগের জন্য দায়ী। তাঁদের মতে, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকাও যে এই ধরনের দুর্যোগগুলি থেকে রেহাই পাবে না, তারই ইঙ্গিত নিউ ইয়র্কের এই ঘটনা।