মাত্র ১ বছর আগেই তিনি পর্ন ছবির দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন। তার পর এক লহমায় বদলে গিয়েছিল তাঁর জীবনধারা। তবে এই পরিবর্তন তাঁর জন্য মোটেই সুখকর হয়নি। নীল ছবির দুনিয়ায় দ্যুতি ছড়ানোর কিছু দিনের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই পর্ন তারকা। তবে তাঁর মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল? এখনও কাটেনি সেই রহস্য।
২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি। ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় পর্ন তারকা অলিভিয়া নোভার অর্ধনগ্ন দেহ। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০। এত অল্প বয়সে এক পর্ন তারকার মৃত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।
পর্ন ছবির দুনিয়ায় পা রাখার পর আমেরিকার লাস ভেগাসে একটি ঘর ভাড়া করে থাকছিলেন অলিভিয়া। সেই ঘর থেকেই উদ্ধার করা হয় অলিভিয়ার দেহ।
অলিভিয়ার আসল নাম লেক্সি ফোর্ড। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, অলিভিয়ার মুখ গোঁজা ছিল বিছানায়। দেহের নিম্নাংশ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল। বিছানার পাশে রাখা ছিল কিডনি ও মূত্রনালির সংক্রমণের ওষুধের বোতল।
ওই বাড়ির এক বাসিন্দাই প্রথমে অলিভিয়াকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আপৎকালীন নম্বরে ফোন করেন। তার পরই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
যে অবস্থায় অলিভিয়ার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তা মোটেই স্বাভাবিক ঠেকেনি পুলিশের। খবর দেওয়া হয় খুনের ঘটনার তদন্তরকারীদের। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয় যে, মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পর অলিভিয়ার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কী ভাবে মৃত্যু হল অলিভিয়ার? এই প্রশ্নের উত্তর ঘিরে ধোঁয়াশা রয়েছে। অলিভিয়ার মৃত্যু অস্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছিল পুলিশ। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, অলিভিয়ার মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়। মূত্রনালিতে সংক্রমণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
অলিভিয়া যে অসুস্থ ছিলেন, তা জানতেন তাঁর বন্ধুরা। মূত্রনালির সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। কিডনির সমস্যাও ছিল পর্ন তারকার। এমনকি, এ জন্য তাঁকে সতর্ক হতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
অলিভিয়ার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগেই চিকিৎসকরা তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। এক জন পর্ন তারকা হওয়ায় তাঁর জীবনযাপনের ধারা যেমন, তাতে তাঁর শরীর আরও খারাপ হতে পারে, এ কথা অলিভিয়াকে বলেছিলেন চিকিৎসক। এমনকি, অলিভিয়া যদি নিজের জীবনধারা না বদলান, তা হলে মৃত্যু হতে পারে, এই সাবধানবাণীও দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
পর্ন দুনিয়ায় পা রাখার পর অলিভিয়ার স্বাস্থ্যের যে অবনতি ঘটেছে, তা জানতেন তাঁর বন্ধুরা। নিজের জীবনধারা না বদলালে তাঁর যে মৃত্যু হবে, এ কথা অলিভিয়া জানতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর এক বন্ধু। এমনকি, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে নিজের জীবনধারা বদলানোর কথাও ভেবেছিলেন অলিভিয়া।
অলিভিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেমি রোমারো বলেছেন, ‘‘ও জানত যে, ওর হাতে আর বেশি সময় নেই। ওকে এ কথা চিকিৎসকরাই জানিয়েছিলেন। ও বলেছিল, নিজেকে বদলাবে। বলেছিল, ‘আমার জীবনটা বদলাতে চাই। আমার কাছের মানুষরা রয়েছেন, যাঁরা আমায় ভালবাসেন।’’
কিন্তু নিজেকে বদলানোর সেই সময়টাই আর পাননি অলিভিয়া। তার আগেই তাঁকে কেড়ে নিল মৃত্যু। অলিভিয়ার ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁকে প্রথমে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা জোরাজুরি করেছিলেন। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাতই করেননি তিনি।
২০১৪ সালে মত্ত অবস্থায় স্নোমোবাইল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন অলিভিয়া। সেই সময় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেই ঘটনার পর অলিভিয়া বন্ধুদের বলেছিলেন যে, আর কখনও তিনি মদ্যপান করে গাড়ি চালাবেন না।
কিন্তু পর্ন দুনিয়ায় পা রাখার পর অলিভিয়ার বেপোরোয়া জীবনযাপনে ছেদ পড়েনি। বরং তা বেড়েই চলছিল। তার জেরেই কি এই মর্মান্তিক পরিণতি হল অলিভিয়ার?
পর্ন দুনিয়ায় পা রাখার আগে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অলিভিয়া। ২০১৬ সালে অলিভিয়ার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আত্মঘাতী হন। আর এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে মৃত্যু হয় অলিভিয়ার প্রেমিক নোলানের।
অল্প দিনের ব্যবধানে দু’জন কাছের মানুষকে হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অলিভিয়া। এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর বন্ধুরা। প্রেমিকের মৃত্যুর পরেই নীল ছবির দুনিয়ায় রা রাখেন অলিভিয়া। আর তার পরই বদলে যায় তাঁর জীবনরেখা। যে জীবন বেশিদিন আগলে রাখতে পারলেন না।