বরিস জনসনের পর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে কে যাবেন, তা জানা যাবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। ওই দিন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যেরা ভোটাভুটির মাধ্যমে তাঁদের পরবর্তী নেতা নির্বাচন করবেন। তিনিই হবেন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এই দৌড়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক-সহ মোট আট জন। আট জনের চার জন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত। দু’জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এক জন নাইজেরীয় এবং এক জন কুর্দ বংশোদ্ভূত।
প্রাথমিক ভাবে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু’জনকে বেছে নেওয়া হবে। সেই দু’জনের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে এক জনকে বেছে নেবেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যেরা। এই প্রার্থী তালিকায় যে নামগুলি উঠে আসছে তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম অর্থমন্ত্রী তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক।
ঋষিকে বেছে নেওয়া হলে তিনিই হবেন ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী। তিনি আবার বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাতা।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েলা ব্রেভারম্যান। গ্রেটার লন্ডনে জন্ম সুয়েলার মায়ের নাম উমা ফার্নান্ডেজ। মরিশাস থেকে পরে ব্রিটেনে বসবাসকারী উমার জন্ম হিন্দু পরিবারে। মায়ের পূর্বপুরুষরা থাকতেন ভারতেই।
কেম্ব্রিজের কুইন্স কলেজের ছাত্রী সুয়েলা ইউরোপীয় এবং ফরাসি আইন নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ২০১৫ সালে ফেয়ারহামের সাংসদ হন তিনি। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস প্রদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
বরিস জনসনের পর প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রয়েছেন সরকারেরই বিদেশমন্ত্রী লিজ ট্রাস। আইন, বাণিজ্য, রাজস্বের মতো একাধিক দফতর সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার পিছনে ভূমিকা ছিল লিজের। ঋষির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ঘোষণা করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে ইংল্যান্ডের মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় সঙ্কোচনে মন দেবেন। প্রধানমন্ত্রী হলে নাকি তাঁর প্রথম পদক্ষেপই হবে বিভিন্ন খাতের কর কমানো।
ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী। নাম কেমি বেডনোচ। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য কেমি জন্মসূত্রে নাইজেরীয়। সামলেছেন ব্রিটেনের সমানাধিকার মন্ত্রক।
কেমির সম্পর্কে কনজারভেটিভ দলের নেতা মাইকেল গোভের মন্তব্য, ‘‘সাহসী, কর্তব্যপরায়ণ, চৌখস এবং দয়ালু।’’ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে রাজনীতিক হওয়া কেমিও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে।
৫৫ বছর বয়সি ইরাকি প্রৌঢ় নাদিম যাহায়োই ছিলেন বরিস জনসনের সরকারের অর্থমন্ত্রী। নাদিম তার আগে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব।
কুর্দ পরিবারের সন্তান নাদিম খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে ব্রিটেনে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে ইংরেজি বলতেই পারতেন না ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার দৌড়ে থাকা এই রাজনীতিক। করোনা আবহে ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে তাঁর কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ঋষি সুনকের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন পেনি মরডন্ট। ৪৯ বছর বয়সি এই রাজনীতিক বরাবরই ব্রেক্সিটের সমর্থক।
বরিস সরকারে সহ-বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন তিনি। এখনও সরকারি ভাবে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়নি। তবে কনজারভেটিভ পার্টি পরিচালনার অন্যতম মুখ হিসেবে তাঁর উপরই বাজি ধরছেন অনেকে।
টম টুগেনধাট রয়েছেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে। প্রাক্তন এই সেনা ছিলেন আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধে।
বরিস জনসনের প্রবল সমালোচক টম ঘোষণা করেছেন, দায়িত্ব পেলে একটি স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেবেন মানুষকে। ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোটদানকারীর অবশ্য সরকার পরিচালনায় কোনও অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৯ সালে বরিস জনসনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন জেরেমি হান্ট। প্রাক্তন বিদেশ এবং স্বাস্থ্য সচিব ঘোষণা করেছেন এ বারের ভোটেও তিনি লড়বেন।
৫৫ বছর বয়সি রাজনীতিক জাপানি ভাষায় দারুণ দক্ষ। তবে জনসনের মতো জনপ্রিয়তা নেই তাঁর। ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতায় এলে কর্পোরেশন ট্যাক্স কমিয়ে দেবেন। অর্থনৈতিক সংস্কারে জোর দেবেন।