৩১ অক্টোবর অর্থাৎ সোমবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনালি চক্রবর্তী।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে শুক্রবার থেকে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেত্রী।
অসুস্থতা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দু’দিন পর প্রয়াত হলেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলা ধারাবাহিক ‘গাঁটছড়া’য় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলেন সোনালি।
সেই ধারাবাহিকের কাজ চলাকালীনও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। চলতি বছরের অগস্ট মাসেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
চিকিৎসকেরা শারীরিক পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, অভিনেত্রীর পেটে ফ্লুইড জমা রয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সোনালি।
চিকিৎসক নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুস্থ হলে তিনি আবার কাজে ফিরতে পারবেন। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন সোনালি।
তাঁর স্বামী অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, অনেক দিন ধরেই যকৃতের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল সোনালির। সেই পুরনো অসুস্থতাই ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে।
অভিনেত্রী মারা যাওয়ার খবর সোমবার সকালে শঙ্কর ফেসবুকে জানিয়ে স্ত্রীর ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়।’’
পরিবার সূত্রে খবর, অভিনেত্রীর মৃতদেহ তাঁর বাসভবনে নিয়ে আসার পর শেষকৃত্যের জন্য কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে।
সোনালির মৃত্যুর খবর শোনার পর টলিপাড়ায় শোকের ছায়া পড়েছে। ‘গাঁটছড়া’ ধারাবাহিকে খড়ির জেঠিমা হিসাবেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ‘খড়ি’ মানে শোলাঙ্কি রায় সোনালির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘সকাল সকাল এ রকম একটা খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি জানি সোনালিদি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল যে দিদি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু ভাগ্যের লিখন আমরা কেউই তো বদলাতে পারব না।’’
তিনি শুধু ছো়ট পর্দার জনপ্রিয় মুখ ছিলেন না, বড় পর্দাতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
তবে, মুখ্যচরিত্রে নয়, পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোনালি।
২০০২ সালে অনুপ সেনগুপ্তর পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘হারজিত’ ছবিটি।
সেই ছবিতে ফিরদৌস আহমেদ, রচনা বন্দোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গেও অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
মিলন ভৌমিকের পরিচালনায় ২০০৮ সালে মুক্তি পায় ‘সত্যমেব জয়তে’ ছবিটি।
এই ছবিতে মিঠুনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সোনালি। শুধু সোনালিই নন, এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁর স্বামী অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীকেও।
ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘চোখের বালি’ ছবিটি।
এই ছবিতে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেনের মতো প্রথম সারির তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সোনালি।
শুধু মিঠুন, প্রসেনজিৎ নন, নয়া প্রজন্মের টলি তারকাদের সঙ্গেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালে রবি কিনাগীর পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘বন্ধন’ ছবিটি। টলি পাড়ায় এই ছবিটি বিপুল সাড়া ফেলেছিল।
এই ছবিতেই টলিপাড়ার শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা জিৎ-এর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সোনালি। জিৎ ছাড়া এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রঞ্জিত মল্লিকের কন্যা কোয়েল।
এ ছাড়াও ‘সংসার সংগ্রাম’, ‘দাদার কীর্তি’-সহ বহু বাংলা ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সোনালি।
অধিকাংশ সময় তাঁর স্বামী শঙ্করের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করতেন অভিনেত্রী।
এক জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেলে ‘বরিশালের বর আর কলকাতার কনে’ নামের এক রিয়্যালিটি শোতে শঙ্করের সঙ্গে সঞ্চালনা করতেন সোনালি।
এই শো এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে, একটানা ছয় বছর এই শো’টি চলে।
ধারাবাহিক এবং সিনেমা ছাড়াও নাটক করতেন সোনালি। শঙ্করের সঙ্গেও বহু নাটকে তাঁকে দেখা গিয়েছে।
সোনালি এবং শঙ্করের মেয়েও ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত। মুম্বইয়ে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন তিনি।