বাল্টিক সাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকাই হারিয়ে গেল উড়ানের যাবতীয় বৈদ্যুতিন সিগন্যাল। বিমানচালক কিছুতেই বুঝতে পারছেন না কী ঘটল। প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। তবে কিছু ক্ষণ পর আবার ফিরে এল সব সিগন্যাল!
পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার সীমান্তে অবস্থিত কালিনিনগ্রাদে রয়েছে রুশ নৌসেনার শক্ত ঘাঁটি। বাল্টিক সাগরের ওই অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই উড়ানের ‘গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম’ (জিপিএস) বা অন্য বৈদ্যুতিন সিগন্যাল কাজ করে না। কেন এমন কাণ্ড ঘটে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদ্যুতিন সিগন্যাল ব্যাহত করছে ‘টোবোল’ নামে একটি অস্ত্র! রাশিয়া নাকি এই অস্ত্র গোপনে ব্যবহার করছে বাল্টিক সাগরের উপর। ওই সাগরে রুশ সীমানার মধ্যে কোনও বিমান চলে এলেই তার জিপিএস বা অন্য বৈদ্যুতিন সিগন্যাল কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে।
রাশিয়া এখন বৈদ্যুতিন হামলার পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিমানের স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমেই মূলত আঘাত হানে ‘টোবোল’। যার ফলে আকাশে ওই বিমানের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’ একটি ছবি প্রকাশ করে। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। ছবিটি একটি স্যাটেলাইট ডিশের।
ওই স্যাটেলাইট ডিশটি কালিনিনগ্রাদে অবস্থিত রুশ ঘাঁটিতে আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই স্যাটেলাইট ডিশই হল ‘টোবোল’। রাশিয়া এই অস্ত্র ব্যবহার করেই নাকি বিমানের বৈদ্যুতিন সিস্টেমের উপর হামলা চালাচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া য়ায়নি।
‘দ্য সান’ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাশিয়া জুড়ে এ হেন ১০টি ‘টোবোল’-এর অস্তিত্ব রয়েছে। ভ্লামিদির পুতিন সরকার এই অস্ত্র দিয়ে বিমানের বৈদ্যুতিন সিগন্যালকে সাময়িক ভাবে অকেজো করছে।
কেন এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া? দাবি, নেটোর ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে রাশিয়ান ঘাঁটিগুলিকে রক্ষা করতেই পুতিন সরকার ‘টোবোল’ ব্যবহার করছে। শত্রুপক্ষ যদি আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করে, তবে তা রুখে দেওয়া সম্ভব হবে এই অস্ত্রের মাধ্যমে।
কী ভাবে ‘টোবোল’ কাজ করে? ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করছে, ‘টোবোল’ থেকে যে সিগন্যাল ছড়ায় তা বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সিগন্যালকে বিভ্রান্ত করে। ফলে সেই সব বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যবহারকারীরা ভুলভাল তথ্য পেতে শুরু করেন।
আমেরিকার গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, ইউক্রেনে স্টারলিঙ্ক ট্রান্সমিশনে ব্যাঘাত ঘটাতেই রাশিয়া ‘টোবোল’কে কাজে লাগাচ্ছে। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের যোগাযোগের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হয় স্টারলিঙ্কের মতো স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ‘টোবোল’ সেই সব নেটওয়ার্কের উপর হামলা চালায়।
সমস্ত আধুনিক বিমানে জিপিএস এবং গ্যালিলিওর মতো স্যাটেলাইট সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা এই সব স্যাটেলাইট সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল। মাঝ আকাশে বিমানচালককে সঠিক পথ দেখাতে কাজ করে এই ব্যবস্থা।
স্যাটেলাইট সিস্টেম থেকে কিছু সিগন্যাল বার হয়। সেই সিগন্যালের মাধ্যমেই বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজ করে। ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ যদি ওই সিগন্যাল ‘জ্যাম’ করে দেন, তবে বিমানের সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাই ব্যাহত হয়। ‘টোবোল’ বিমানের যাবতীয় স্যাটেলাইট সিগন্যাল ‘জ্যাম’ করে।
ইউক্রেনের উপর আক্রমণের তেজ ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে রাশিয়া। মাঝেমধ্যেই ছক পাল্টে ফেলছে পুতিনের দেশ। ২৫ মাস কেটে গেলেও দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের আবহের কোনও পরিবর্তন হয়নি। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সঙ্গে ব্যবধান তৈরি করতে রাশিয়া নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। অনেকেই মনে করছেন, রাশিয়া এ বার ‘টোবোল’ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে।
পশ্চিমের দেশগুলির দাবি, ২০২২ সালের রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই ফিনল্যান্ড থেকে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত জিপিএস বা কোনও বৈদ্যুতিন সিগন্যাল অকার্যকর করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।