দিল্লি। আজমগড়। বারুইপুর। দেশের তিন প্রান্তে তিন শহর। কিন্তু এখন এক সূত্রে বাঁধা। সূত্রটা হল খুন। আসলে খুনের ধরন আর সেই খুনের তদন্ত। এই তিন খুন কি শুধুই সমাপতন? না কি একে অন্যের থেকে প্রভাবিত হয়েছেন অভিযুক্তেরা?
প্রায় একই সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে এই তিন শহরের তিন ব্যক্তিকে খুনের ঘটনা। পুলিশের দাবি, তিন জনকেই প্রথমে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। তার পর দেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে।
অভিযোগ, প্রথম দুই শহরে প্রেমিকাকে খুন করেছিলেন তাঁদের প্রেমিক। বারুইপুরে মত্ত বাবাকে খুন করে ছেলে দেহ টুকরো করেছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজে সাহায্য করেছিলেন অভিযুক্তের মা।
প্রথম ঘটনা দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুন। গোটা দেশে এখন পরিচিত এই নাম। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিবাদের জেরে একত্রবাসের সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালা গলা টিপে খুন করেছিলেন শ্রদ্ধাকে। গত ১৮ মে সেই কাণ্ড করেছিলেন।
শৌচালয়ে বসে প্রেমিকার দেহ ৩৫ টুকরো করেছিলেন আফতাব। ১০ ঘণ্টা ধরে। পরে ১৮ দিন ধরে সেই টুকরো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। এখন হাজতে আফতাব।
১৫ নভেম্বর আজমগড় শহরের উপকণ্ঠে একটি কুয়োর ভিতর দেহাংশ মেলে। তদন্তে নামে পুলিশ। আধিকারিক অনুরাগ আর্য জানান, দেহটি ছিল অর্ধনগ্ন। প্রায় তিন দিন আগে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান ছিল পুলিশের।
তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে, মৃতার নাম আরাধনা প্রজাপতি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরিবার থানায় অভিযোগও জানিয়েছিল।
তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই প্রকাশ্যে এসেছে একের পর এক ভয়াবহ তথ্য। দু’বছর আগে আরাধনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল প্রিন্সের। চলতি বছরের শুরুতে অন্য এক জনের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় তরুণীর। সে সময় প্রিন্স বিদেশে ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
প্রেমিকার বিয়ের খবর জানতে পেরে দেশে ফিরে এসেছিলেন প্রিন্স। বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তাঁকে। রাজি হননি আরাধনা। পুলিশের দাবি, তখনই খুনের ছক কষতে থাকেন প্রিন্স।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৯ নভেম্বর আরাধনাকে নিজের বাইকে চাপিয়ে একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রিন্স। তদন্তে জানা গিয়েছে, আখের ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে আরাধনাকে গলা টিপে খুন করেন প্রিন্স এবং তাঁর তুতো ভাই সর্বেশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের পর আরাধনার দেহ ছ’টুকরো করেছিলেন দুই ভাই। দেহের টুকরো পলিথিনের ব্যাগে ভরে ফেলে দিয়েছিলেন কাছের এক কুয়োয়। কিছু দূরে একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন কাটা মাথা।
তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক, কার্তুজ এবং ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
আজমগড়ে খুনে অভিযুক্ত প্রিন্স যাদবকে গত শনিবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর পরিবারের সাত সদস্য। ওই সাত জন এখনও ফেরার।
রবিবার এনকাউন্টারে নিহত হন প্রিন্স। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার কাটা মাথা খোঁজার জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রিন্সকে। তাঁর পকেটে বন্দুক ছিল। তা দেখিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশের পাল্টা গুলিতে মারা যান প্রিন্স।
বারুইপুরে খুন হয়েছেন ৫৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিক। নাম উজ্জ্বল চক্রবর্তী। অভিযুক্ত ছেলে এবং স্ত্রী।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, মত্ত ছিলেন উজ্জ্বল। স্ত্রী, ছেলেকে তিনি মারধর করতেন বলেও অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার দিন পরীক্ষার ফি নিয়ে ছেলের সঙ্গে বচসা হচ্ছিল প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিকের। সে সময়ই তাঁকে গলা টিপে ছেলে খুন করেন বলে অভিযোগ। এর পর দেহ লোপাটের জন্য মায়ের সঙ্গে ছক কষেছিলেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবার দেহ টুকরো করে কাটেন ছেলে ও মা। তার পর বার বার সাইকেলে চেপে দেহাংশ ফেলে আসেন বিভিন্ন জায়গায়। মা এবং ছেলে, দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।