Rebecca Syndrome

প্রাক্তনের সঙ্গে বর্তমান প্রেমের তুলনা থেকে মনোরোগ! ‘রেবেকা সিনড্রমে’ আক্রান্ত নন তো?

‘রেবেকা সিনড্রম’— এই নামেই অসুখটিকে চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। অবশ্য এর একটি বিজ্ঞানসম্মত নামও রয়েছে— ‘রেট্রোঅ্যাক্টিভ জেলাসি’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ১৪:৫০
Share:
০১ ১৪

বিয়ের সময় ভেবে দেখার অবকাশ পাননি। অবশ্য এ কথা জানতেন, যে পুরুষটিকে বিয়ে করতে চলেছেন, তিনি পূর্ববিবাহিত। বিয়ের পরে ক্রমশ শুরু হল তুলনা। পূর্ববর্তী স্ত্রীর সঙ্গে পরবর্তিনীর। দ্বিতীয়া এ বার প্রথমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করলেন। এবং সেই ভাবনা এক সময়ে মানসিক অসুখে পর্যবসিত হল।

০২ ১৪

‘রেবেকা সিনড্রম— এই নামেই অসুখটিকে চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। অবশ্য এর একটি বিজ্ঞানসম্মত নামও রয়েছে— ‘রেট্রোঅ্যাক্টিভ জেলাসি’। এবং এই সমস্যা যে এক সময়ে শারীরিক আকার ধারণ করে, সে কথাও মনোবিদেরা জানান।

Advertisement
০৩ ১৪

শুধু বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়, প্রেমের সম্পর্কেও দেখা দিতে পারে রেবেকা সিনড্রম। প্রেমিকের পূর্বতন প্রেমিকার সঙ্গে বর্তমান সঙ্গিনীর তুলনা থেকে জন্ম নিতেই পারে রেট্রঅ্যাক্টিভ জেলাসি। বাস্তবে এমন ঘটনা আদৌ বিরল নয়। বরং এ ধরনের সমস্যায় প্রায়শই পড়তে দেখা যায় পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই।

০৪ ১৪

রেবেকা সিনড্রমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত এক সহিত্যকর্মের নাম। ব্রিটিশ সাহিত্যিক দাফনে দু’ মরিয়েরের উপন্যাস ‘রেবেকা’র নামানুসারেই এই বিশেষ মনোবৃত্তিটিকে চিহ্নিত করা হয়।

০৫ ১৪

১৯৩৮ সালে ‘রেবেকা’ প্রকাশিত হয়। সেই উপন্যাসের কথক চরিত্রটি একজন মহিলা। উপন্যাসের কোথাও তার নাম উল্লিখিত হয়নি। বোঝা যায় তার বয়স বিশের কোঠায়। মাক্সিম ডে উইন্টার নামর এক ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে স্বল্প আলাপ পর্বের পর তার বিয়ে হয়। বিয়ে ও মধুচন্দ্রিমার পর সে স্বামীর সঙ্গে তার এস্টেটে বসবাস শুরু করে।

০৬ ১৪

রেবেকা ছিল মাক্সিমের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর নাম। কথকের সঙ্গে মাক্সিমের বিয়ের এক বছর আগে সে এক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়। মাক্সিমের এস্টেটের হাউসকিপার মিসেস ডানভার্স ক্রমাগত নববধূর সঙ্গে প্রয়াত রেবেকার তুলনা শুরু করে। প্রকাশ্যে সে মনিবের নবোঢ়া পত্নীকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থাও করতে শুরু করে। বার বার মনে করিয়ে দিতে থাকে, রেবেকার সৌন্দর্যের কাছে সে কিছুই নয়।

০৭ ১৪

কাহিনির কথক মহিলা যখন তার স্বামীর এস্টেটে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়, তখন মিসেস ডেনভার্স তাকে জানায়, রেবেকার এস্টেট পরিচালনার সঙ্গে তার তুলনাই চলে না। ডেনভার্সের এই তুলনা কথকের আত্মবিশ্বাসকে আহত করে।

০৮ ১৪

কথক ক্রমে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, মাক্সিম তাকে বিয়ে করার পর প্রয়াত স্ত্রীর সঙ্গে তার তুলনা করে হতাশায় ভোগে। তার মনে হতে থাকে, রেবেকার মধ্যে যে সৌন্দর্য, আকর্ষণীশক্তি এবং পরিশীলন ছিল, তা তার মধ্যে নেই। এবং ক্রমশ প্রয়াত রেবেকার সঙ্গে নিজের তুলনা করে যেতে যেতে সে প্রায় মনোবিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

০৯ ১৪

মরিয়েরের উপন্যাস এর পর রহস্যকাহিনির দিকে মোড় নেয়। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে ক্রমেই উন্মোচিত হতে থাকে প্রয়াত রেবেকার প্রকৃত চরিত্র। জানা যায়, মাক্সিমের সঙ্গে রেবেকার বিয়ে আদৌ সুখের ছিল না। রেবেকাও ছিল অত্যন্ত ক্রুর চরিত্রের মহিলা। স্বামী মাক্সিমের প্রতিও সে বিশ্বস্ত ছল না। শেষ পর্যন্ত মাক্সিমই তাকে হত্যা করে। এবং তার মৃতদেহটিকে এক নৌকায় ভাসিয়ে দুর্ঘটনার রূপ দেয়। এর পরে অবশ্য কাহিনি অন্য দিকে মোড় নেয়।

১০ ১৪

মরিয়ারের উপন্যাস ১৯৪০ সালে আলফ্রেড হিচকক চলচ্চিত্রায়িত করেন। অভিনয়ে ছিলেন লরেন্স অলিভিয়ের, জোয়ান ফন্টেনের মতো ব্যক্তিত্বেরা। ‘রেবেকা’কে হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম বাণিজ্যসফল ছবি হিসাবেও গণ্য করা হয়ে থাকে।

১১ ১৪

সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রে রেবেকার কাহিনি আধুনিক পশ্চিমি সভ্যতার এক কিংবদন্তি হিসাবে অবতীর্ণ হয়। কার্যত উত্তর-ভিক্টোরীয় সমাজে কোর্টশিপ ও বিবাহের অন্তঃসারশূন্যতার কথাই তুলে ধরে মরিয়ারের এই উপন্যাস। একই সঙ্গে মানব মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ঈর্ষা এবং তা থেকে জন্মানো অবসাদের কাহিনিও জানায় ‘রেবেকা’।

১২ ১৪

আধুনিক কালেও ‘রেবেকা’ তার ছায়া প্রলম্বিত রেখেছে। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, রেবেকা সিনড্রমে ভুগতে থাকা মানুষের শুধু মন নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের শরীরও। আজানা প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে প্রতিষোগিতায় নেমে এই অসুখে ভুগতে থাকা মানুষ তাঁর যাবতীয় সম্পর্ককেই এক সময় বিষময় বলে ভাবতে থাকেন। মনে করতে থাকেন, তাঁকে হেয় করার জন্যই যেন তাঁর স্বামী (ক্ষেত্র বিশেষে স্ত্রী)-র সঙ্গে সবাই তুলনা করে চলেছেন।

১৩ ১৪

রেবেকা সিনড্রমে ভুগতে থাকা ব্যক্তি এক সময়ে আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করেন। এবং এক সময়ে অবসাদগ্রস্তও হয়ে পড়েন।

১৪ ১৪

রেবেকা সিনড্রম থেকে মুক্তির উপায় তা হলে কী? মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, ভূতপূর্ব প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর তুলনা না করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পূর্বতন সম্পর্কের স্মৃতির মধ্যে বাস করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। না হলে অসতর্ক মুহূর্তেও তা বেরিয়ে এসে বর্তমান সঙ্গীকে আহত করতে পারে। এ দিক থেকে দেখলে আগে থেকে সাবধানি হওয়াই এর দাওয়াই। এক বার রেবেকা সিনড্রমে আক্রান্ত হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যে খুব সহজ নয়, তা প্রকারান্তরে বোঝা যায়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement