ঘরের মাঝে একটি চেয়ারে বসে রয়েছেন এক পুরুষ। মুখে গোঁফ-দাড়ি নেই। মাথায় নেই চুলও। তবে তাঁর মুখ, মাথায় ভর্তি চুম্বনের চিহ্ন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অনেকে চুমু খেয়েছেন তাঁর মুখে। এবং সকলেই ঠোঁটে মেখেছিলেন নানা রঙের লিপস্টিক।
সেই পুরুষ অবশ্য মহিলাদের স্বপ্নের সঙ্গী নন, বরং ওই ব্যক্তির কাজই হল সারা দিন চুমু খেতে দেওয়া। তার পরিবর্তে তাঁকে দেওয়া হত মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক।
শুনে অবাস্তব মনে হলেও পঞ্চাশের দশকে এই দৃশ্য ছিল বাস্তবিক। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, লিপস্টিক প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে এমন এক পুরুষকে চাকরি দেওয়া হত যাঁর কাজ ছিল সারা দিন চুপচাপ বসে মহিলাদের চুমু খেতে দেওয়া। অবশ্য তিনি কাউকে চুমু খেতে পারতেন না।
১৯৫০ সালে নামী লিপস্টিক সংস্থার তরফে এমন ব্যক্তির সন্ধান চলত যাঁদের দাড়ি-গোঁফ নেই। মাথা কামানো থাকলে তো উপরি পাওনা। আসলে সেই ব্যক্তিকেই ‘লিপস্টিক টেস্টার’ হিসাবে ব্যবহার করত সংস্থা।
সংস্থার তরফে যে ধরনের লিপস্টিক বানানো হত, তার মান কী রকম অথবা কত ক্ষণ লিপস্টিকের চিহ্ন চামড়ায় লেগে থাকে সে সব পরীক্ষা করার জন্যই লিপস্টিক টেস্টারদের প্রয়োজন হত।
চুমু খাওয়ার জন্য পরীক্ষাগারে বিভিন্ন মহিলা জড়ো হতেন। নানা রঙের লিপস্টিক পরে তাঁরা ওই ব্যক্তির গালে, মাথায় চুমু খেতেন।
মুখে কোন রঙের লিপস্টিক কতটা গাঢ় ছাপ ফেলেছে, খুব সহজে তা মুছে ফেলা যাচ্ছে কিনা, পরীক্ষা করা হত সে সব কিছুই।
লিপস্টিকের মান বিচার করে আবার প্রয়োজন মতো রঙের আধিক্য বাড়ানো অথবা কমানো হত। কোনও লিপস্টিক সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত যে তা বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
কোনও ভুলভ্রান্তি হলে আবার সেই লিপস্টিক তৈরির কাজ নতুন করে শুরু হত। যত ক্ষণ পর্যন্ত না নিখুঁত লিপস্টিক তৈরি করা যাচ্ছে, তত ক্ষণ সেই লিপস্টিক পরে মহিলারা চুমু খেয়ে যেতেন লিপস্টিক টেস্টারের মুখে।
নিজের উপর পরীক্ষা করার ‘পুরস্কার’ হিসাবে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়া হত লিপস্টিক টেস্টারকে।
তবে পঞ্চাশের দশকে নামী লিপস্টিক প্রস্ততকারী সংস্থায় লিপস্টিক টেস্টার পদের প্রচলন থাকলেও ধীরে ধীরে তা থিতিয়ে পড়ে।
নানা ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ইতিহাসের পাতায় মিশে যায় লিপস্টিক টেস্টারদের কাহিনিও।