প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকেই রেস্তরাঁয় ভিড় জমান। পাতে পছন্দের খাবার, আর সঙ্গে কাছের মানুষ— এমন মধুর সময় কাটাতে সকলেই প্রায় মুখিয়ে থাকেন। তবে অনেক সময়ই অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে মনের মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো যায় না বিভিন্ন রেস্তরাঁয়। ভিড়ভাট্টা অনেকেরই না-পসন্দ। তাই একটু নিরিবিলি অথচ ভাল— এমন রেস্তরাঁয় যেতে চান যুগলরা। সে রকমই এক রেস্তরাঁর হদিস দেওয়া হল এই প্রতিবেদনে।
দেখে মনে হবে যেন বাড়ির ছোটখাটো বৈঠকখানা। ছোট একটি ঘর। সেখানে সযত্নে সাজানো নানা ধরনের আসবাব, ছবি। মধ্যে রয়েছে একটি খাবার টেবিল। যেখানে মাত্র ২টি চেয়ার রাখা। শুধুমাত্র দু’জনের জন্য বসার ব্যবস্থা। চারপাশে অন্য কোনও টেবিল নেই। অর্থাৎ, শুধুমাত্র দু’জনই রেস্তরাঁয় বসে খেতে পারবেন।
ভাবছেন নিশ্চয়ই এ আবার কেমন রেস্তরাঁ! মাত্র দু’জনই রেস্তরাঁয় বসে খেতে পারবেন! হ্যাঁ, এমনই এক খানাপিনার জায়গা রয়েছে ইটালিতে।
ইটালির রাইটি এলাকায় রয়েছে এই ছোট রেস্তরাঁ। যার নাম ‘সোলো পার দিউ’। ইটালিতে যার অর্থ ‘শুধু দু’জনের জন্য’। দাবি করা হয়েছে, ‘সোলো পার দিউ’-ই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট রেস্তরাঁ।
মাত্র ৫০০ বর্গফুটেরও কম এলাকা জুড়ে রয়েছে এই রেস্তরাঁ। নিভৃতে-নির্জনে একান্তে যাতে দু’জনে সময় কাটাতে পারেন, সে কারণেই এমন ব্যবস্থা। এই রেস্তরাঁয় গেলে কেউ আপনাকে বিরক্ত করবেন না। মনে হবে যেন, বাড়ির বৈঠকখানায় বসে রয়েছেন।
তবে এই রেস্তরাঁয় বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। রেস্তরাঁয় চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। যুগলের ব্যক্তিগত মুহূর্ত যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকে সর্বদা নজর থাকে রেস্তরাঁকর্মীদের।
রেস্তরাঁয় সন্ধ্যায় ফোনে বুকিং করা যাবে। তবে যে দিন রেস্তরাঁয় যাবেন, তার ১০ দিন আগে বুকিং প্রক্রিয়া সারতে হয়। কী কী খাবার থাকছে, তা বুকিং নিশ্চিত করার সময় জানানো হয়।
এই রেস্তরাঁয় বেশ কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলা হয়। মানে ধরুন, রেস্তরাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, ভাবলেন ভিতরে ঢুকে দেখি। তেমনটা কিন্তু হবে না। অর্থাৎ, বুকিং ছাড়া কেউই রেস্তরাঁর ভিতরে ঢুকতে পারবেন না।
আবার শেষ মুহূর্তে খাবার বাতিল করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, যে সময়ে আপনার ওই রেস্তরাঁয় যাওয়ার জন্য বুকিং থাকবে, সেই নির্দিষ্ট সময়েই সেখানে যেতে হবে। তার আগে গেলে রেস্তরাঁয় ঢোকা যাবে না। রেস্তরাঁয় পৌঁছনোর আধ ঘণ্টা আগে সেখানে ফোন করে জানাতে হবে। যে নির্দিষ্ট সময়ে আপনার রেস্তরাঁয় যাওয়ার কথা, সেই সময়েই পৌঁছতে হবে।
সাধারণত রেস্তরাঁয় প্রবেশের মুখে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য কর্মীরা থাকেন। এই রেস্তরাঁয় কিন্তু তেমন কেউ নেই। অর্থাৎ, কেউই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন না।
রেস্তরাঁয় চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। এমনকি, রেস্তরাঁ বুকিং না করলে সেখানকার কর্মীদের নাম জানতে পারবেন না।
রেস্তরাঁটি ছোট হওয়ায় চাহিদাও তুঙ্গে। তাই কয়েক মাস আগে থেকেই ওই রেস্তরাঁ বুক করেন অনেকে। তবে এই রেস্তরাঁয় খাওয়ার জন্য খরচও নেহাত কম নয়। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
রেমো নামে রেস্তরাঁর মালিক সিএনএন-কে বলেছেন, ‘‘রেস্তরাঁয় যাঁরা আসেন, তাঁদের আমরা ক্রেতার চোখে দেখি না। অতিথি হিসাবে আপ্যায়ন করি। ওয়েটার রয়েছেন ঠিকই। তবে তাঁকে না ডাকলে তিনি অতিথিদের কাছে যান না।’’
রেস্তরাঁর চারপাশে বাগান রয়েছে। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের মধ্যে নির্জনে প্রিয়জনের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর আদর্শ ঠিকানা এই রেস্তরাঁ।