গত রবিবারই আকাশে উড়েছিল তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় আকাশা এয়ারলাইন্সের বিমান। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আর এক রবিবার আচমকা থামল ভারতীয় ‘বিগ বুল’-এর দৌড়। প্রয়াত ধনকুবের রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে জীবনাবসান হয়েছে ঝুনঝুওয়ালার। বয়স হয়েছিল ৬২।
মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুঁদে ধনকুবেরকে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
১৯৬০ সালের ৫ জুলাই হায়দরাবাদে জন্ম রাকেশের। রাজস্থানি পরিবারে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। পরে তাঁরা চলে আসেন মুম্বই।
মুম্বইয়ের সিডেনহাম কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। পরে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব ইন্ডিয়া থেকে পড়াশোনা করেন।
তৎকালীন বম্বেতে আয়কর দফতরের কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন তাঁর বাবা। স্টক মার্কেট নিয়ে তাঁর বাবার চর্চা ছিল।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই স্টক মার্কেটের প্রতি রাকেশের আগ্রহ ছিল। তাঁর বাবার কাছ থেকেই এ বিষয়ে তিনি উৎসাহ পান।
স্টক মার্কেটের দুনিয়ায় রাকেশের উত্থান ছিল চোখধাঁধানো। একের পর এক সাফল্যের মুকুট মাথায় উঠেছে তাঁর।
১৯৮৫ সালে স্টক মার্কেটে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করেছিলেন রাকেশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে টাকার অঙ্কটা বেড়ে হয় ১১ হাজার কোটি টাকা।
২০২২ সালের জুলাই মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের ৩৬ তম বিত্তবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।
২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত রাকেশের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৩০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে রাকেশ ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলেন। এটা তাঁর জীবনের বড় উপার্জনগুলির মধ্যে অন্যতম।
রাধাকৃষ্ণ দামানির কাছে শেয়ার বাজারের খুঁটিনাটি শিখেছিলেন রাকেশ।
করোনা অতিমারির সময়ও তাঁর উপার্জনের অঙ্ক চোখে পড়ার মতো। করোনাকালে তাঁর উপার্জন ছিল ১৪০০ কোটি টাকা।
রাকেশকে ‘ভারতের ওয়ারেন বাফেট’ বলা হয়। শেয়ার বাজারে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার বিনিয়োগ মানেই তা ছিল অব্যর্থ, এমনটাই মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
রাকেশের নিজস্ব স্টক ট্রেডিং ফার্ম ‘রেয়ার এন্টারপ্রাইজ’ প্রথম সারির সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম।
২০১৭ সালে ট্রেডিংয়ের একটি মরসুম থেকে রাকেশ উপার্জন করেছিলেন ৮৭৫ কোটি টাকা।
দালাল স্ট্রিটের ‘বিগ বুল’ও বলা হয় রাকেশকে। বলা হয়, তিনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে কখনওই ভুল করতেন না।
কিছু দিন আগে রাকেশ একটি জুতো সংস্থার শেয়ার কিনেছিলেন, সেটিও কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে পৌঁছে যায়। এক দিনে তিনি লাভ করেন ২২১ কোটি টাকা।
২০২১ সালে টাইটান সংস্থায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ছিল রাকেশের। বিনিয়োগের অঙ্ক ৭ হাজার ২৯৪.৮ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে ১৭৬ কোটি টাকায় মালাবার হিলে রিজওয়ে অ্যাপার্টমেন্টের ৬টি ইউনিট কিনেছিলেন রাকেশ।
২০১৭ সালে এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক থেকে ১৯৫ কোটি টাকায় আরও ছয়টি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন এই ধনকুবের।
২০২১ সালে সাত হাজার বর্গ ফুটের ১৪ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন রাকেশ। কিন্তু সেই বাড়িতে আর থাকা হল না ‘বিগ বুলের’।
এত যশ-খ্যাতির পরও তাঁর জীবনে এসেছে নানা বিতর্ক। হর্ষদ মেটাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, সেবি-র নজরে ছিলেন রাকেশও।
হিসেবি পদক্ষেপে বিশ্বাসী হলেও রাকেশ জীবনে ঝুঁকি নিতে ভালবাসেন। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রকল্পেও তাঁর ভূমিকা সক্রিয়। সম্পত্তির ২৫ শতাংশ তিনি দান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন।