নাম ‘ভোলে বাবা’। তবে তিনি তাঁর সমনামী দেবতার মতো চালচুলোহীন গুহাবাসী নন। উত্তরপ্রদেশের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরুর ‘কৈলাস’কে প্রাসাদোপম বললেও কম বলা হয়।
ভক্তেরা চেনেন ‘ভোলে বাবা’র আশ্রম বলে। উত্তরপ্রদেশের মইনপুরিতে আলিগড়-জিটি রোড সংলগ্ন ছড়ানো ফাঁকা জমি। তারই ২১ বিঘা উঁচু পাঁচিলে ঘিরে তৈরি হয়েছে আশ্রম। নাম ‘প্রবাস’। মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানেই বাস করেছেন নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’।
বুধবার হাথরসে তাঁকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাণ গিয়েছে ১২১ জন ভক্তের। তার পর থেকে আর ‘প্রবাসে’ ফেরা হয়নি ‘বাবা’র। বদলে তাঁর আশ্রমে গিয়ে পৌঁছেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দল। ২১ বিঘা বিস্তৃত এলাকার কোনায় কোনায় ঘুরে তারা দেখেছে, বাহুল্য আর বিলাসের উপকরণ উপচে পড়ছে সর্বত্র।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে আশ্রমের বর্ণনা। তারা জানিয়েছে, তথাকথিত ‘পাঁচতারা’ বিলাসবহুল হোটেলে যে সমস্ত সুযোগসুবিধা থাকে, তার সবই রয়েছে ‘ভোলে বাবা’র প্রাসাদোপম আশ্রমে।
ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, আশ্রমের মূল জমিটি ‘বাবা’কে দান করেছেন জনৈক বিনোদ বাবু। যিনি মইনপুরিরই বাসিন্দা। তবে তিনি ছাড়াও আরও শ’দুয়েক দাতা আশ্রমকে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত দান করেছেন।
আশ্রমের মূল তোরণের বাইরে সেই ২০০ জন ‘মহান দাতা’র নাম খোদাই করে লেখা আছে। যে তালিকার শুরুতেই রয়েছেন মইনপুরির সেই বিনোদ বাবু। যাঁরা ২৫ হাজার টাকা বা তার কম দান করেছেন, তাঁদের নাম জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি আশ্রম।
প্রায় পাঁচ মানুষ উঁচু সোনালি রঙের ধাতব তোরণ। তার ও পারে সার সার মহল। সাদা রঙের ছোটবড় এক তলা বা দোতলা বাড়ি। ছোট ছোট বাংলোর মতো। পাশে বাঁধানো রাস্তা, কেয়ারি করা বাগান। রয়েছে সরোবরও।
আর এক পাশে প্রশস্ত গ্যারাজ। সেখানে সার বেঁধে দাঁড় করানো ‘ভোলে বাবা’র বাহন। বিলাসবহুল দেশ-বিদেশের গাড়ি।
সেই সব গাড়ি ‘বাবা’ নিজে কিনেছেন না কি ভক্তেরা দান করেছেন, তার খতিয়ান অবশ্য দাতা-তালিকায় নেই। যেমন জানা নেই ‘বাবা’র সৎসঙ্গের জন্য ব্যবহৃত আশ্রম লাগোয়া বিঘার পর বিঘা জমির মালিকের নামও।
আশ্রমের লাগোয়া ওই বিস্তৃত জমিতে প্রায়শই আয়োজন হত ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানের। লাখ লাখ ভক্ত আসতেন ‘ভোলে বাবা’র চরণধূলি পেতে। এলাকায় অনেকেই জানেন, সেই জমি ‘বাবা’ ভাড়া নিয়েছিলেন দরিদ্র গ্রামবাসীদের থেকে। তবে তাঁরা কারা, কত ভাড়াই বা পেতেন আশ্রম থেকে, তার হিসাব কেউ জানেন না।
কনস্টেবল সূরজপাল থেকে নারায়ণ সাকার হরি হয়ে ‘ভোলে বাবা’ হওয়া এ হেন আধ্যাত্মিক গুরুর ধনসম্পত্তি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। ভক্তেরাই জানাচ্ছেন, ‘বাবা’র আরও আশ্রম আছে।
উত্তরপ্রদেশের পাটিয়ালি গ্রামে প্রথম আশ্রম খুলেছিলেন ‘ভোলে বাবা’। তার পর থেকে মইনপুরি, শাহজাহানপুর এবং আগ্রাতেও তাঁর নিবাস তৈরি হয়েছে। রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
শোনা যায়, ভক্তদের ‘বাবা’ বলতেন, হিন্দু পুরাণের তিন দেব— ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তাঁকেই নিজেদের ‘গুরু’ বলে মানেন!
সেই বিশ্বাস থেকেই ‘বাবা’র প্রতি অনুষ্ঠানে তাঁর পদধূলি নিতে উপচে পড়ত ভিড়। যদিও মঙ্গলবারের পর সেই ভিড়ই ‘বাবা’র ঈশ্বরগুণ নিয়ে প্রশ্ন তুলল।
মঙ্গলবার হাথরসের ঘটনায় যাঁরা পদপিষ্ট হয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়েরা প্রিয়জনের দেহের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘‘ভোলে বাবা যদি ভগবানই হবেন, তবে এঁদের মরতে হল কেন?’’ তার অবশ্য জবাব দেননি ‘বাবা’। তিনি কোনও অদৃশ্য শক্তি বলে দূর থেকেই হাথরসে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় রাগ এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন।