সমুদ্র মানেই নানা রোমাঞ্চ হাতছানি দেয়। নৌকা হোক কিংবা অন্য কোনও জলযান— সমুদ্র সফরের মজাই আলাদা। তবে এই আনন্দের মধ্যে রয়েছে নানা ঝুঁকি। ওঁত পেতে থাকে বড়সড় বিপদ। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে এমনই এক বিপদের মুখে পড়েছিল একটি পরিবার।
সাল ১৯৭১। সেই বছরই প্রশান্ত মহাসাগরে নৌকায় চড়ে সাগর ভ্রমণে বেরিয়েছিল রবার্টসন পরিবার। যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের ফালমাউথ থেকে।
তাঁদের এই সমুদ্র সফরের পরিণতি যে ভয়ঙ্কর হবে, তা বোধহয় কেউ ভাবেননি। মাঝসমুদ্রে একটি তিমির আক্রমণে রবার্টসন পরিবারের নৌকা ডুবে গিয়েছিল।
কিন্তু তাঁরা সকলেই বেঁচে গিয়েছিলেন। টানা ৩৮ দিন ধরে একটি ছোট ডিঙিতে চড়ে সমুদ্রে ভেসে দিন কাটিয়েছিলেন তাঁরা। রবার্টসন পরিবারের এই বেঁচে থাকার লড়াই জানলে শিহরিত হবেন।
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে ফালমাউথ থেকে যাত্রা শুরু করে রবার্টসন পরিবার। যে বোটে তাঁরা যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার নাম লুসেট।
ওই নৌকায় মোট ৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জনই রবার্টসন পরিবারের সদস্য। সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলেন তাঁরা। আচমকাই একটি তিমির আক্রমণের মুখে পড়ে তাঁদের নৌকা। যার ফলে ডুবে যায় সেটি। তার পর একটি ছোট ডিঙিতে চড়ে ভেসে ছিলেন তাঁরা।
সেই সময় রবার্টসন পরিবারের সদস্য ডগলাসের বয়স ছিল ১৮। পরে ডগলাসই সেই অভিজ্ঞতার কথা একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কৃষক ছিলাম। সমুদ্রে যাত্রার অভিজ্ঞতা আমাদের কারওরই ছিল না।’’
মাঝসমুদ্র। চারপাশে কোথাও কেউ নেই। সাহায্যের জন্য তাই সেই সময় কাউকেই পায়নি রবার্টসন পরিবার। ফলে ওই ডুবন্ত নৌকায় কোনওরকমে ভেসে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা।
ডগলাস জানিয়েছেন, ওই অবস্থায় কী খাব, তা নিয়ে খুব মাথাব্যথা ছিল। তবে সকলে মিলে ঠিক করেছিলেন যে, মৃত্যুর কাছে হার মানা চলবে না। যে করেই হোক এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে হবে।
সেই অবস্থায় বেঁচেবর্তে থাকার জন্য সমুদ্রের প্রাণীদের উপরই ভরসা করতে হয়েছিল তাঁদের। সমুদ্রে মাছ, কচ্ছপ যা কিছু পেতেন, তা-ই দিয়েই পেট চালাতেন। সবই কাঁচা অবস্থাতেই খেতেন তাঁরা। তবে নিজেরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পেটের টানে একে অপরকে খুন করবেন না।
ডগলাস জানিয়েছেন, সেই সময় বেঁচে থাকার জন্য কচ্ছপের রক্ত পান করতেন তাঁরা। এ সব খেয়েই তাঁরা টানা ৩৮ দিন ধরে সমুদ্রে নিজের প্রাণশক্তি ধরে রেখেছিলেন।
এই ৩৮ দিনে অনেক ঝড়ঝাপটাই সামলাতে হয়েছে রবার্টসন পরিবারকে। ঝড়বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যেমন যুঝতে হয়েছে, তেমনই দীর্ঘসময় কিছু না খেয়েই তাঁদের দিন কাটাতে হয়েছে।
মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করতে করতে এই ভাবে ৩৮ দিন সমুদ্রে দিন গুজরান করেছে রবার্টসন পরিবার। শেষে ৩৮ দিন পর আশার আলো দেখেন তাঁরা।
৩৮ দিন পর রবার্টসন পরিবারকে মাঝসমুদ্র থেকে উদ্ধার করে জাপানের একটি ট্রলার। তার পর সেই ট্রলারে করে রবার্টসন পরিবারের সদস্যদের পানামা ক্যানালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডগলাসদের এই বেঁচে থাকার লড়াই অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনটা রোমাঞ্চকর। কখনওই হার মানেবন না। যে সমস্যাই আসুক না কেন, মোকাবিলা করুন...।’’