তাইল্যান্ডে মাদকের রমরমা এবং আসক্তির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু তা বলে সেখানকার বৌদ্ধ মঠের সন্ন্যাসীরাও মাদকে আসক্ত! গত বছর এমন ঘটনাই ঘটেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি মঠে।
২০২২ সালের নভেম্বরের ঘটনা। মাদক পরীক্ষার সময় মঠের সন্ন্যাসীদের দেহে মাদকের উপস্থিতি মেলায় রাতারাতি খালি করা হয় মঠ।
মাদক পরীক্ষায় মঠের প্রায় সব আবাসিক সন্ন্যাসীর শরীরে মাদক খুঁজে পাওয়ায় তাঁদের মঠ থেকে বার করে দিতে বাধ্য হন উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঘটে তাইল্যান্ডের ফেচাবুন প্রদেশের বুং স্যাম ফান জেলার একটি মঠে।
বুং স্যাম ফান জেলার ওই মঠের এক মোহান্ত-সহ মোট পাঁচ সন্ন্যাসীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তাঁদের মাদক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মঠ কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষায় ধরা পড়ে, মঠের ওই পাঁচ সন্ন্যাসীই মাদকাসক্ত। নিয়মিত মাদক সেবন করেন তাঁরা।
পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই মঠের সন্ন্যাসীরা মেথামফেটামিন নামে এক বিশেষ ধরনের মাদক সেবন করেন।
এর পর ওই সন্ন্যাসীদের অবিলম্বে মঠের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মাদকের আসক্তি কাটানোর জন্য তাঁদের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।
পুরনো সন্ন্যাসীদের সরিয়ে নতুন সন্ন্যাসীদের মঠের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে মঠ কর্তৃপক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
তাইল্যান্ডের মাদক সমস্যা সে দেশের একটি বড় এবং বিতর্কিত সমস্যা। বিভিন্ন সমীক্ষা এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাইল্যান্ডে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনাও আগের থেকে অনেক বেড়েছে।
তাই প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে। মাদক নিয়ে অনেক বিধিনিষেধও জারি করেছে সে দেশের সরকার।
কুখ্যাত ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ অর্থাৎ, মায়ানমার, লাওস এবং তাইল্যান্ডের সীমান্ত মাদক পাচার এবং আন্তঃসীমান্ত চোরাচালানের একটি বড় কেন্দ্র।
এই তিন দেশেই মেথামফেটামিন বড়ি (যা ইয়াবা নামেও পরিচিত)-র চাহিদা খুব বেশি। রাস্তায় রাস্তায় মাদকের বড়ি বিক্রি হয়। বিভিন্ন পার্টিতে, বিশেষ করে পর্যটকদের পার্টিতেও এই মাদকের চাহিদা তুঙ্গে থাকে।
তাইল্যান্ডে মেথামফেটামিন বড়ি খুব কম দামে পাওয়া যায়। ভারতীয় মুদ্রায় এক একটি বড়ির দাম ৫০ টাকার কাছাকাছি। আর এই জন্যই মাদকের চাহিদা বেশি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)’-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ২০২১ সালে ওই বিশাল অঞ্চল জুড়ে একশো কোটিরও বেশি মেথামফেটামিনের বড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
তাইল্যান্ড বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। আর সেই কারণেই এখানে মাদকের এত রমরমা বলে প্রশাসনের দাবি।
তাইল্যান্ড এশিয়ার প্রথম দেশ যারা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করেছে। মাদকদ্রব্যের তালিকা থেকে গাঁজার নাম বাদ দিয়েছে সে দেশ। বাড়িতে গাঁজার চাষও করা যায় সে দেশে।
তবে প্রশাসনের কড়া নির্দেশ, গাঁজা শুধুমাত্র চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই চাষ এবং সেবন করা যেতে পারে। জনসমক্ষে গাঁজা খেলে শাস্তিও হতে পারে।
সেই তাইল্যান্ডেরই এক মঠে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাদকের আসক্তি প্রশাসনকে চিন্তায় ফেলেছিল। তবে তাইল্যান্ডে এমন অনেক মঠ রয়েছে যারা দেশকে মাদকমুক্ত করার লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম রাজধানী ব্যাঙ্কক থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৌদ্ধ মঠ থামক্রাবক।