বিদেশে চাকরির সুযোগ মিলতে চলেছে ভারতীয়দের। চিনের পড়শি দেশ ভারত থেকে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে এক লক্ষ ভারতীয়কে ওই দেশে চাকরি করতে পাঠানো হতে পারে।
কথা হচ্ছে তাইওয়ানকে নিয়ে। সেখানকার সরকারের সঙ্গেই কর্মসংস্থান নিয়ে ভারতের কথাবার্তা চলছে। ভারত থেকে এক লক্ষের বেশি যুবক-যুবতীকে চাকরি দিতে পারে তাইওয়ান।
তাইওয়ানে ভারতীয়দের চাকরির বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে ভারত এবং তাইওয়ানের মধ্যে। তার শর্ত অনুযায়ী বিদেশে পাড়ি দেবেন ভারতীয় তরুণেরা।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, ভারত এবং তাইওয়ানের মধ্যে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চুক্তি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই কাজের সূত্রে সেখানে যেতে পারবেন ভারতীয়েরা।
তাইওয়ানের শ্রম মন্ত্রক জানিয়েছে, কর্মী পাঠাতে পারে এমন যে কোনও দেশের সঙ্গে তারা সহযোগিতা এবং চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে ভারত তাদের অন্যতম পছন্দের জায়গা।
কেন হঠাৎ বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে চাইছে তাইওয়ান? প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের এই দ্বীপরাষ্ট্র বর্তমানে কর্মীসঙ্কটে ভুগছে। সে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক কাজ করতে অক্ষম।
তাইওয়ানের নাগরিকেরা অধিকাংশই ‘বয়স্ক’। দেশের মানুষের গড় বয়স ৪০.৮ বছর। গত কয়েক বছরে তাইওয়ানে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সে দেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগের গড় বয়স অনেকটাই বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ সালে তাইওয়ানে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ ৩১ হাজার। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪০ লক্ষ ৮৬ হাজার।
এই ‘বয়স্ক’ জনসংখ্যা নিয়ে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় অগ্রগতি করতে পারছে না তাইওয়ান। ফলে কৃষি, শিল্প দুই-ই মার খাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতি বদল করতে বদ্ধপরিকর তাইওয়ান সরকার।
তাইওয়ানের কারখানা, খামার, হাসপাতাল, নির্মাণশিল্প প্রভৃতি বিবিধ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হবে। আগামী মাস থেকেই ভারতীয় কর্মীরা তাইওয়ানে যেতে শুরু করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তাইওয়ানের অর্থনীতির মোট মূল্য ৭৯ হাজার কোটি ডলার। এই অর্থনীতিকে সচল রাখতে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা কসরৎ করছে তাইওয়ান সরকার। ২০০০ সাল থেকে সে দেশে বেকারত্বের হার লক্ষণীয় ভাবে কমেছে।
তাইওয়ানের সঙ্গে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ভারতীয়দের জন্য তা সুখবর বয়ে আনবে ঠিকই, কিন্তু অন্য সমস্যাও রয়েছে। ভারত সরকার সে ক্ষেত্রে চিনের রোষের মুখে পড়তে পারে।
চিনের পূর্ব উপকূলে উত্তর এবং দক্ষিণ চিন সাগরের মাঝে অবস্থিত তাইওয়ান। দেশ হিসাবে এই দ্বীপরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র অস্তিত্বই স্বীকার করে না চিন। তাদের দাবি, তাইওয়ান তাদেরই অঙ্গ।
আমেরিকা অবশ্য তাইওয়ানকে মদত দেয় এবং রাষ্ট্র হিসাবে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করে। এ ভাবে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে আমেরিকা এবং চিনের দ্বন্দ্ব জটিল হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের সঙ্গে চুক্তি করার অর্থ সে দেশের সরকারের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া। ভারত তা করলে চিন রুষ্ট হতে পারে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতি হয়ে উঠতে পারে আরও উত্তেজনাপূর্ণ।
চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা স্বস্তির নয়। প্রায়ই লাদাখ বা অরুণাচল সীমান্তে চিনা সৈনিকদের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের খবর শোনা যায়। তাইওয়ানের সঙ্গে যে কোনও ধরনের সরকারি চুক্তির বিরোধিতা করে চিন। সেই আবহে ভারতকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের আবহে সেখান থেকেও ভারতীয় শ্রমিকদের ডাক এসেছে। এক লক্ষ ভারতীয়কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ করতে পারে ইজ়রায়েল। তাদেরও এখন বড় সমস্যা কর্মীসঙ্কট।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইজ়রায়েলের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত প্যালেস্তিনীয়দের ছাঁটাই করে দিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। সেই কারণে তাদের আরও কর্মী প্রয়োজন।
সুলভ শ্রমিকের আখড়া ভারত। এই দেশের জনসংখ্যা বিপুল। বহু মানুষ কর্মহীন। তাই ভারত থেকে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। ইজ়রায়েল হোক বা তাইওয়ান, সকলেই কর্মী নিয়োগের জন্য তাই ভারতকে বেছে নেয়।