DRDO’s Surya Weapon

‘সূর্য’-এর তাপে মাঝ আকাশে পুড়ে ছাই ড্রোন-রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র! নয়া প্রযুক্তির ‘মেঘনাদ’ তৈরিতে ব্যস্ত ভারত

আমেরিকা এবং রাশিয়ার মতো সরাসরি শক্তির হাতিয়ার (ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন) তৈরিতে মন দিয়েছে ভারত। অত্যাধুনিক ওই মারণাস্ত্রের নাম ‘সূর্য’ রেখেছে ডিআরডিও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৩
Share:
০১ ১৮
India is going to develop direct energy weapon Surya by DRDO within 2027

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রকেট। ড্রোন বা লড়াকু জেট। প্রথাগত এই ধরনের হাতিয়ার বাদ দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভয়ঙ্কর এক মারণাস্ত্র তৈরিতে হাত দিয়েছে ভারত। অতি গোপনে চলছে তার গবেষণা। আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, যে কোনও যুদ্ধের রং একাই বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ওই হাতিয়ারের। আগামী দু’বছরের মধ্যে সেটি ফৌজের অস্ত্রাগারে শোভা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

০২ ১৮
India is going to develop direct energy weapon Surya by DRDO within 2027

নতুন যুগের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওই অস্ত্রটির নাম ‘সূর্য’। বর্তমানে হাতিয়ারটি তৈরির গবেষণার কাজ দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)। সূত্রের খবর, ‘সূর্য’কে সরাসরি শক্তির অস্ত্র (ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন বা ডিইডব্লিউ) হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছেন দেশের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। সে দিক থেকে এর নির্মাণকাজ যে যথেষ্টই জটিল হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement
০৩ ১৮
India is going to develop direct energy weapon Surya by DRDO within 2027

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশই আগামী দিনের লড়াইয়ে ‘সূর্য’কে গেম চেঞ্জার হিসাবে দেখছেন। তাঁদের এ হেন মন্তব্যের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। যে প্রযুক্তিতে হাতিয়ারটিকে তৈরি করা হচ্ছে, তা অতি চমৎকার। এতে লেজ়ার, মাইক্রোওয়েভ বা পার্টিকল বিমের (কণা রশ্মি) মতো কেন্দ্রীভূত শক্তিকে শত্রুর উপর সরাসরি প্রয়োগের সুবিধা পাবে ভারতীয় ফৌজ।

০৪ ১৮

ডিআরডিও সূত্রে খবর, লেজ়ার, মাইক্রোওয়েভ বা পার্টিকল বিমের কেন্দ্রীভূত শক্তিকে ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুকে সহজেই ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করা যাবে। হাতিয়ারটিকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ডিইডব্লিউ হিসাবে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার। আর পাঁচটা প্রচলিত অস্ত্রের তুলনায় এর শক্তি কয়েক গুণ বেশি হবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৫ ১৮

‘সূর্য’কে মূলত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) হিসাবে ব্যবহার করা যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ডিআরডিও। এর শক্তি হবে ৩০০ কিলোওয়াট। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ভারতের আকাশকে সুরক্ষা দিতে পারবে ‘সূর্য’। ড্রোন, রকেট থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, এক বার এর নজরে পড়লে আর নিস্তার নেই। নিমেষে উচ্চ শক্তির লেজ়ার, মাইক্রোওয়েভ বা পার্টিকল বিম ছুড়ে তা পুড়িয়ে শেষ করে দেবে এই হাতিয়ার।

০৬ ১৮

‘সূর্য’ নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ডিআরডিওর লেজ়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজ়ি সেন্টার। প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থাটির দাবি, ২০২৭ সালের মধ্যে হাতিয়ারটির প্রোটোটাইপ তৈরি করার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারবেন তারা। তবে এর জন্য একাধিক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

০৭ ১৮

সরাসরি শক্তির অস্ত্র ব্যবহারের জোড়া সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, খালি চোখে একে দেখতে পাওয়া যায় না। লেজ়ার, মাইক্রোওয়েভ বা পার্টিকল বিমগুলি সর্বদা অদৃশ্যই থাকে। দ্বিতীয়ত, অন্য বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির নিরিখে এর খরচ খুবই কম। ফলে যুদ্ধের সময় যৎসামান্য ব্যয়ে শত্রুর হামলা রুখে দিতে পারবে এই হাতিয়ার।

০৮ ১৮

তবে সরাসরি শক্তির অস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতকে পথিকৃৎ বলা যায় না। বর্তমানে এই নিয়ে গবেষণায় মেতে আছেন বিশ্বের একাধিক দেশের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। ১০০ কিলোওয়াটের শক্তি সম্পন্ন লেজ়ার অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। এই প্রতিযোগিতায় আছে চিনও।

০৯ ১৮

অন্য দিকে, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে রাশিয়া। মস্কোর প্রতিরক্ষা গবেষকেরা যে লেজ়ার হাতিয়ার তৈরি করেছেন, তার পোশাকি নাম ‘পেরেসভেট’। অস্ত্রটি পৃথিবীর নিম্নকক্ষ পথে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহকেও ধ্বংস করতে সক্ষম। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও যুদ্ধে এটিকে ব্যবহার করেনি ক্রেমলিন।

১০ ১৮

গত বছরের নভেম্বরে নতুন লেজ়ার হাতিয়ারের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে গোটা দুনিয়াকে চমকে দেয় ইজ়রায়েল। অস্ত্রটির পোশাকি নাম আয়রন বিম। ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) সূত্রে খবর, যাবতীয় হাওয়াই হামলা রুখতে সক্ষম তাঁদের এই নতুন হাতিয়ার।

১১ ১৮

ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, আয়রন বিম রকেট এবং ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও মর্টারের গোলা এবং ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম। ২০২১ সালে এই হাতিয়ারের একটি নমুনা তৈরি করা হয়েছিল। তখন থেকেই আইডিএফের অস্ত্রাগারে আয়রন বিমকে যুক্ত করতে মরিয়া ছিলেন ইহুদি প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১২ ১৮

সংবাদ সংস্থা ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের এই নতুন হাতিয়ারটি থেকে ১০০ কিলোওয়াটের লেজ়ার বিম ছোড়া যায়। এর পাল্লা সাত কিলোমিটার। অর্থাৎ, এই দূরত্বে কোনও রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন বা মর্টার চিহ্নিত হলে, তা আকাশেই ধ্বংস করতে পারে আয়রন বিম। চলতি বছর থেকে বিভিন্ন মোর্চায় আইডিএফ এটিকে মোতায়েন করবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১৩ ১৮

অন্য দিকে, এ বছরের মার্চে ড্রোন ধ্বংসকারী নতুন সমরাস্ত্রের প্রদর্শন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা এপিরাস আইএনসি। স্পার্টার ইতিহাসখ্যাত গ্রিক রাজাকে মনে রেখে হাতিয়ারটির নামকরণ করা হয়েছে ‘লিওনাইডাস সিস্টেম’। স্টার্ট আপ কোম্পানিটির দাবি, সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি থেকে বেরিয়ে আসা উচ্চ শক্তির মাইক্রোওয়েভ নিমেষে পুড়িয়ে ছাই করবে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা মানববিহীন উড়ুক্কু যান।

১৪ ১৮

আমেরিকা, রাশিয়া, ইজ়রায়েল হোক বা ভারত, এই ধরনের সরাসরি শক্তির হাতিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, এই অস্ত্র নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালিয়ে যেতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সেটা না পাওয়া গেলে উচ্চ শক্তির লেজ়ার বা মাইক্রোওয়েভ তৈরি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, শত্রুপক্ষ যদি যুদ্ধের গোড়াতেই বিদ্যুৎশক্তি সরবরাহের কেন্দ্রগুলি উড়িয়ে দেয়, তা হলে একরকম অকেজো হয়ে পড়বে এই সমরাস্ত্র।

১৫ ১৮

দ্বিতীয়ত, সমস্ত রকমের আবহাওয়ায় সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি কাজ করতে পারবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। প্রবল বৃষ্টি বা ঘন কুয়াশার সময়ে ড্রোন, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করে নিখুঁত নিশানায় লেজ়ার ছুড়ে সেগুলিকে ধ্বংস করতে না পারলে বিপদ বাড়বে। পাশাপাশি, এই অস্ত্রের ব্যবহারে সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় নিজের দেশেরই অসামরিক নানা কাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

১৬ ১৮

সমর বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, আগামী দিনে শুধুমাত্র ড্রোন নিয়ে শত্রুপক্ষ আক্রমণ শানাবে এমনটা নয়। তার সঙ্গে থাকবে যুদ্ধবিমান। আবার ড্রোনের সঙ্গে মাঝারি বা দূরপাল্লার রকেট এবং অতি শক্তিশালী ক্রুজ়, ব্যালেস্টিক বা হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসতে পারে।

১৭ ১৮

ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন ‘সূর্য’ এগুলির সব ক’টিকে একসঙ্গে আটকাতে পারবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ফলে এর পাশাপাশি প্রথাগত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মোতায়েন রাখতে হবে ফৌজকে। সেগুলির আবার কর্মপদ্ধতি আলাদা। ফলে অস্ত্রগুলিকে একসঙ্গে ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৮ ১৮

কিন্তু, তার পরও ডিআরডিওর ‘সূর্য’কে ঘিরে চড়ছে প্রত্যাশার পারদ। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এই অস্ত্র বাহিনীতে শামিল হলে সমরাস্ত্রের প্রযুক্তির দিক থেকে আমেরিকা এবং রাশিয়ার সমকক্ষ হয়ে উঠবে ভারত। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী চিন এবং পাকিস্তানের থেকে সে ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি যে কয়েক যোজন এগিয়ে থাকবে, তা বলাই যায়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement