টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫১ রান খুবই সাধারণ মানের। তার উপর বিশ্বকাপ। হয়েছিলও তাই। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিংয়ে বুমরা-শামি জুটি ঠেকাতে পারেননি বাবর আজ়ম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ানকে। একটি উইকেটও তুলতে পারেনি ভারত। দুবাইয়ে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা অনেকটাই পরিষ্কার করে ফেলে পাকিস্তান।
দিনটা ছিল রবিবার। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর। দুবাইয়ে প্রথম বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে হারায় পাকিস্তান। ঠিক ৩৬৪ দিন পর আবার এক রবিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। এ বার মহারণের ময়দান অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন।
গত বার বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট কোহলি। এ বার রোহিত শর্মা। পাকিস্তানের অধিনায়কত্বে অবশ্য কোনও বদল হয়নি। বাবর আজ়মই রয়েছেন। যেমন বদলায়নি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ।
গত বারের হারের বদলা নিতে তৈরি ভারত। অন্য দিকে, হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের আগে ভারতকে আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন পাক অধিনায়ক বাবর। তিনি জানান, ভারতের প্রত্যেক ব্যাটারের জন্য তাঁদের আলাদা আলাদা করে নীল নকশা তৈরি আছে।
গত বার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে দিয়েই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল পাকিস্তান। এ বারও শুরুতে আক্রমণে সেই শাহিনই থাকবেন। পাশাপাশি আছেন হ্যারিস রউফ, নাসিম শাহদের মতো ছন্দে থাকা ক্রিকেটার।
ম্যাচের আগে আলাদা করে চাপ নিচ্ছেন না রোহিতরা। তবে প্রস্তুত তাঁরাও। ম্যাচ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে রোহিতের কথায়,‘‘পাকিস্তান ম্যাচ আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।’’
মেলবোর্নের ম্যাচের আগে এক বার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক গত বারের দুবাইয়ের ম্যাচের মহারণে। শুরুতে ব্যাট করতে নেমেছিল ভারত। এবং প্রথমেই ঝটকা। রোহিত এবং কেএল রাহুল, দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। গোল্ডেন ডাক করে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। আর রাহুল মাত্র ৩ রান করেছিলেন।
দলকে লড়াইয়ে ফেরান অধিনায়ক কোহলি। এক সময় স্কোরবোর্ডে ছিল ভারত: ৪ ওভার, ৩১ রান, ৩ উইকেট। শাহিনের শুরুর ধাক্কা সামলে নিতে নিতে সূর্যকুমারের উইকেট হারায় ভারত। অধিনায়ককে সঙ্গত দিতে এগিয়ে আসেন ঋষভ পন্থ।
২টি করে চার-ছয়ে ৩০ বলে ৩৯ করে সাজঘরে ফেরেন পন্থ। কোহলি তখনও ক্রিজে। শেষ পর্যন্ত অধিনায়কোচিত ইনিংস থামে ৪৯ বলে ৫৭ রানে। ইনিংস সাজানো ছিল ৫টি বাউন্ডারি এবং ১টি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে। শেষ দিকে জাডেজা এবং হার্দিক তেমন ঝড় তুলতে পারেননি। ভারতের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ১৫১ রান।
৫০ ওভার হোক কিংবা ২০, কোনও ফরম্যাটের বিশ্বকাপেই ভারতকে হারাতে পারে না পাকিস্তান। সেই ‘অভিশাপ’ মুছে নিজেদের ভাগ্য রচনা করতে এগিয়ে আসেন বাবর আজ়ম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান। মাঠে নেমেই যেন ইচ্ছেসুখে ভারতীয় বোলারদের নিয়ে খেলেছিলেন দুই ওপেনার। ১০৭ বল খেলেছিলেন দুই ওপেনার। তাতেই উঠে এসেছিল জেতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৫২ রান।
শেষ পর্যন্ত রিজ়ওয়ান অপরাজিত ছিলেন ৭৯ রানে। ইনিংস সাজিয়েছিলেন ৬টি চার এবং ৩টি ছক্কায়। অধিনায়ক বাবর করেছিলেন ৬৮ রান। ৫২ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ৬টি চার এবং ২টি ছয়। ১৩ বল বাকি থাকতে থাকতেই সব উইকেট অক্ষত রেখে মাঠ ছাড়েন বাবর-রিজ়।
তবে রবিবারের ভারত-পাক ম্যাচে দু’দল ছাড়াও খেলতে পারে তৃতীয় পক্ষ। তার নাম আবহাওয়া। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, রবিবার সারা দিন আকাশ থাকবে মেঘলা। বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
দুপুরের পর মেলবোর্নে ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া বইতে পারে। দুপুরের পর থেকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা শুনিয়েছে হাওয়া অফিস। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে যথাক্রমে ২০ ডিগ্রি এবং ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তার পরই বাইশ গজের যুদ্ধে দেখা যাবে ভারত-পাকিস্তানকে। তবে গত বারের মতো শাহিনরা হয়তো বেগ দিতে পারবে না টিম ইন্ডিয়াকে।
কারণ, গত বার পাকিস্তান দল ভারতের কাছে নতুন ছিল। এ বার বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচ খেলে ফেলেছে ভারত। দু’দলই অন্যের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে একটা সম্যক ভাল ধারণা রোহিতদের রয়েছে।