করোনা পরবর্তী অধ্যায়ে হৃদ্রোগে আক্রান্তের প্রকোপ যেন ক্রমশই বাড়ছে। চেনা-পরিচিতদের অনেকেই এই রোগের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ তো আবার নিয়মিত শরীরচর্চাও করেন। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন সত্ত্বেও হৃদ্রোগে আক্রান্তের খবর স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে জনমানসে।
গত ২ বছরে বলিউডের কলাকুশলীরাও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই তালিকায় নবতম সংযোজন প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী তথা অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন। ৪৭ বছর বয়সি সুস্মিতা নিয়মিত যোগাভ্যাস করেন। তার নিদর্শন সমাজমাধ্যমের দৌলতেই চাক্ষুষ করা গিয়েছে। অথচ তিনিই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এই বঙ্গললনা নিজেই হৃদ্রোগে আক্রান্তের খবর জানিয়েছেন। কয়েক দিন আগে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। করানো হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। তবে এখন তিনি দিব্য রয়েছেন। আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তিনি তৈরিও বলে জানিয়েছেন। সুস্মিতার হৃদ্রোগে আক্রান্তের খবর তাঁর অনেক অনুরাগীরই হৃদয়কেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
শুধু সুস্মিতা একা নন, বলিউডের আরও অনেক তারকাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁরাও শরীর-স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশেষ ভাবে সচেতন। হৃদ্রোগের ক্ষত সারিয়ে সেই তারারা এখন স্বাভাবিক ভাবেই জীবনযাপন করছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা সইফ আলি খান।
২০০৭ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সইফ। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৬। বলিপাড়ার অন্যতম সুদর্শন নায়ক তিনি। নায়কোচিত ভাবধারা বজায় রাখতে শরীরচর্চার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের প্রতিও তিনি যত্নশীল। কিন্তু বহু মহিলার হৃদয় কাঁপানো সেই সইফই এই রোগের কবলে পড়েছিলেন।
নাচ তাঁর প্যাশন। তিনি ভাল নাচেনও। বলিউডের অন্যতম নামী কোরিওগ্রাফার এবং পরিচালক রেমো ডি’সুজাও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানো হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৬।
বলিপাড়ার কৌতূকাভিনেতা হিসাবে তাঁর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে। কপিল শর্মার শোয়ের হাত ধরে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন। সেই সুনীল গ্রোভারও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গত বছরের শুরুতে সুনীলের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৪।
বি-টাউনের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সায়রা বানু হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০২১ সালের অগস্ট মাসে। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৭।
তার এক মাস আগেই প্রয়াত হন কিংবদন্তী অভিনেতা তথা তাঁর স্বামী দিলীপ কুমার। আর তার পরই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সায়রা।
এ বার দেখে নেওয়া যাক, এই হৃদ্রোগ সিনেমহলের কত তারাকে অকালে কেড়ে নিয়েছে। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর হিন্দি টেলি দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সিদ্ধার্থ শুক্লার আকস্মিক প্রয়াণ নাড়িয়ে দিয়েছিল সকলকে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে সিদ্ধার্থের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪০। নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন সিদ্ধার্থ। তার পরও তাঁর হৃদ্রোগে আক্রান্তের খবর ঘিরে উদ্বেগ ছড়ায়।
সিদ্ধার্থের মতো আরও এক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল সকলকে। গত বছরের ৩১ মে’র কথা। সে দিন কলকাতার নজরুল মঞ্চে শো করতে এসেছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেকে।
গান করতে করতে মঞ্চেই অসুস্থ বোধ করেছিলেন শিল্পী। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
কেকের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন জনপ্রিয় কৌতূকাভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব। গত বছরের ১০ অগস্ট জিমে শরীরচর্চা করার সময় জ্ঞান হারান তিনি।
এর পর টানা ৪১ দিন নয়াদিল্লির এমসে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজু। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন অভিনেতা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ ঝরেছে আরও এক জনপ্রিয় তারকার। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন কন্নড় ছবির দুনিয়ায় পরিচিত মুখ পুনীত রাজকুমার।
২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর প্রয়াত হন পুনীত। রাজু শ্রীবাস্তবের মতো পুনীতও জিমে শরীরচর্চা করতে করতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণ নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর ভক্তদের।
শুধু তারকারাই নন, বহু সাধারণ মানুষও এই ২ বছরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ প্রয়াতও হয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ, হৃদ্রোগ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলেই যেন দেরি না করা হয়। অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে জিমে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনেই শরীরচর্চা করাই বাঞ্ছনীয়।