ভিন্গ্রহে প্রাণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে তর্কের অন্ত নেই। এ বার সে জোয়ারে গা ভাসালেন স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক। দাবি করে বসলেন, আসল উত্তরটি জানেন একমাত্র তিনিই। কেন এ হেন দাবি করলেন মাস্ক? নিজের জবাবের পক্ষে কী ব্যাখ্যা দিলেন তিনি?
ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব কি শুধুমাত্র কল্পনা, না কি ব্রহ্মাণ্ডের কোনও এক কোণে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মুনির নানা মত।
এ নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে আমেরিকার সংস্থা নাসা-ও। তাদের মত, ভিন্গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব না থাকাটাই বিস্ময়কর। ভিন্গ্রহে অথবা সৌরমণ্ডলের কোনও গ্রহে প্রাণের উদ্ভব এবং তার বিকাশই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি মাস্কের কাছেও প্রায় একই প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিন্গ্রহে কি প্রাণ রয়েছে? সে সময় ৭৪তম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল কংগ্রেসের একটি আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন টেসলা-কর্তা মাস্ক। আজ়ারবাইজ়ানের বাকুতে ওই কংগ্রেসে অবশ্য সশরীরে হাজির ছিলেন না তিনি।
৫ অক্টোবর বাকুর ওই সভায় ভিডিয়ো কনফারেন্সে হাজিরা দিয়েছিলেন মাস্ক। এক্স বা সাবেক টুইটার অধিগ্রহণের পাশাপাশি স্পেসএক্স নামে সংস্থারও মালিক তিনি। ওই কংগ্রেসে মূলত মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মঙ্গলাভিযান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ভিন্গ্রহীদের প্রসঙ্গও উঠে আসে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ধনকুবের মাস্ক জানিয়েছেন, স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘স্টারশিপ’কে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে মঙ্গলে পাঠানো যাবে। যে পরীক্ষামূলক অভিযানে ব্যর্থতা হজম করতে হয়েছে মাস্ক। গত এপ্রিলে সাউথ টেক্সাস থেকে উৎক্ষেপণের সময় বিস্ফোরণে টুকরো হয়ে গিয়েছিল স্টারশিপ।
‘স্টারশিপ’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করার সময় একে যাত্রী পরিবহণকারী বিমানের সঙ্গে তুলনা করেছেন মাস্ক। তাঁর দাবি, ভবিষ্যতে এই যানে চড়ে লস অ্যাঞ্জেলসে প্রাতরাশ সেরে লন্ডনে মধ্যাহ্নভোজ করে সিঙ্গাপুরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোনোর জন্য ফের লস অ্যাঞ্জেলসে ফিরে আসা যাবে। এতটাই দ্রুত গতির হবে ‘স্টারশিপ’।
বাকুর কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ভিন্গ্রহীদের সম্পর্কে প্রশ্নের মুখোমুখিও হন মাস্ক। যদিও তিনি সাফ জানিয়েছেন, ভিন্গ্রহীদের যে অস্তিত্ব রয়েছে, এমন মনে করেন না তিনি। এ সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনও প্রমাণই মেলেনি।
মাস্কের কথায়, ‘‘ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে কোনও প্রমাণ পেয়েছি কি না, প্রায়শই তা আমার কাছে জানতে চান অনেকে। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ পাইনি।’’
এখানেই থামেননি মাস্ক। স্পেসএক্স-কর্তার আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয়, (ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে) যদি কেউ কিছু জানতে পারে, সে সম্ভবত আমি।’’
অন্য গ্রহে প্রাণ রয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে খানিকটা দার্শনিকের মতো মন্তব্য করেছেন মাস্ক। বলেছেন, ‘‘ভিন্গ্রহীদের সম্পর্কে কোনও প্রমাণ দেখতে পাইনি আমি। সুতরাং সম্ভবত তা এটাই বোঝায় যে এই অনন্ত আঁধারে মানবতাই হল বিবেকের ক্ষীণ আলো। এবং সেই আলো যাতে নিভে না যায়, সে প্রচেষ্টা করাই উচিত আমাদের।’’
এই প্রথম নয়, এর আগেও ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মাস্ক। গত এপ্রিলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ়’-এর সঞ্চালক টাকার কার্লসনের কাছে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মহাকাশ সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল আমি। তবে ভিন্গ্রহীদের সম্পর্কে কোনও প্রমাণ পাইনি।’’
অন্য গ্রহের অজানা প্রাণীর খোঁজ পেলে তিনি তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তা জানাবেন বলেও জানিয়েছেন মাস্ক। রসিকতার সুরে তিনি বলেন, ‘‘সেটি বোধহয় সর্বকালের সেরা টুইট হবে।’’
সেই টুইটে কী লিখবেন, তা-ও জানিয়েছিলেন মাস্ক। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এক জন করে খুঁজে পেয়েছি। আমি তো সঙ্গে সঙ্গে এই টুইট করব।’’ ওই টুইটটি যে জ্যাকপট পাওয়ার শামিল, তা-ও জানিয়ে দিতে ভোলেননি মাস্ক।
মাস্কের কথায়, ‘‘ওই টুইটটি হবে জ্যাকপট। তাতে ‘লাইকস’ই পড়বে ৮০০ কোটি!’’
অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হলেও নিজেকেই ভিন্গ্রহী বলে দাবি করেন মাস্ক। জুলাই মাসে একটি টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘লোকজনকে প্রায়শই বলি, আমিই হলাম ভিন্গ্রহী। তবে কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না।’’ ওই টুইটটির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন চোখ মটকানোর একটি ছোট্ট ‘ইমোজি’।