ছোটবেলা থেকেই বাবার মতো অভিনয়ের প্রতি টান ছিল। সে জন্য কম কসরত করেননি। স্কুলজীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়— অভিনয়ের খুঁটিনাটি রপ্ত করে গিয়েছেন। এক সময় বলিউডেও পাড়ি দেন। তবে গোটা চারেক বলিউডি ছবিতে দেখা গেলেও ছাব্বিশেই অভিনয়কে বিদায় জানান বিনোদ মেহরার মেয়ে।
সনিয়া মেহরাকে মনে পড়ে? বলিউডে গোটা চারেক ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’, ‘শ্যাডো’, ‘এক ম্যায় অউর এক তু’ এবং ‘রাগিনী এমএমএস-২’। যদিও সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। অথচ এককালে অভিনয়ই ধ্যানজ্ঞান ছিল সনিয়ার।
প্রয়াত বিনোদ মেহরার মেয়ের অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক থাকাটাই স্বাভাবিক, এমনটাই বলেন অনেকে। শিশুশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার শুরু করে বলিউডে নায়ক হিসাবেও চূড়ান্ত সফল হয়েছেন বিনোদ। সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে ছোট বড় মিলিয়ে ১০০টির বেশি ছবিতে কখনও মুখ্য চরিত্র। কখনও আবার নায়কের পাশে। অমিতাভ বচ্চনের জমানায়ও নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন বিনোদ মেহরা।
জ্ঞান হওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছিলেন সনিয়া। তাঁর দেড় বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বিনোদ। সে সময় বিনোদের বয়স ছিল ৪৫। তবে প্রয়াত অভিনেতা বিনোদের কেরিয়ারের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিজীবনও ছোট্ট সনিয়াকে ঘিরে ছিল। বিশেষ করে বিনোদের বিবাহিত জীবন নিয়ে কম উৎসাহ ছিল না। অনেকেই বলেন, বিনোদের চারটি বিয়ে। তার মধ্যে রেখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে আজও জল্পনার অন্ত নেই।
প্রথম বার মীনা ব্রোকার সঙ্গে ঘর পেতেছিলেন বিনোদ। তবে দু’জনের পরিবারিক সম্মতিতে সে সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তা টেকেনি। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই নাকি হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বিনোদের। সে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নায়িকা বিন্দিয়া গোস্বামীর সঙ্গে স্বামীর ঘরছাড়ার খবর পেয়েছিলেন মীনা। বিনোদের বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন তিনি।
বিন্দিয়ার সঙ্গেও বিনোদের সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। পরিচালক জে পি দত্তকে বিয়ে করার জন্যই নাকি বিনোদের হাত ছেড়ে দেন বিন্দিয়া। বলিউডে জল্পনা, বিনোদের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন রেখা।
কলকাতায় বিয়ের পর নাকি নববধূকে মুম্বইয়ে তাঁদের বাড়ি নিয়ে যান বিনোদ। অনেকে বলেন, সেখানে অপমানিত হতে হয়েছিল রেখাকে। যদিও বিনোদের সঙ্গে বিয়ের কথা বরাবরই অস্বীকার করেছেন রেখা।
১৯৮৮ সালে কেনিয়ার এক ব্যবসায়ীর মেয়ে কিরণের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বিনোদ। তার পর থেকে আমৃত্যু কিরণের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালেই জন্ম হয়েছিল সনিয়ার।
বিনোদের মৃত্যুর সময় অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন কিরণ। বাবার মৃত্যুর পর জন্ম হয়েছিল সনিয়ার ভাই রোহনের। তত দিনে অবশ্য ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কাছে কেনিয়ার ফিরে গিয়েছেন কিরণ।
কেনিয়ার মোম্বাসায় বেড়ে উঠেছিলেন সনিয়া। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি দেন তিনি। কেনিয়ার স্কুল পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। আট বছর বয়স থেকেই অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছিলেন। স্কুলে অভিনয় শেখার ক্লাসেও সনিয়াই সেরা ছাত্রী ছিলেন।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে লন্ডন অ্যাকাডেমি অব মিউজিক অ্যান্ড ড্রামাটিক আর্টস থেকে সঙ্গীত এবং অভিনয়শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন সনিয়া। স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদক জেতা সেই সনিয়া যে অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বাছবেন, তাতে অবাক হননি অনেকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাচের তালিমও নিতেন সনিয়া। স্ট্রিটজ্যাজ, ব্যালে, ছাড়াও বেলিডান্স, হিপহপ, সাম্বা, ট্যাঙ্গোর সঙ্গে কত্থকও শিখেছিলেন তিনি।
বলিউডে অভিনয় করার জন্য ১৮ বছর বয়সে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন সনিয়া। অনুপম খেরের তত্ত্বাবধানে বলিউডি আদবকায়দাও রপ্ত করা শুরু করেন। পরের বছর সটান বড়পর্দায় দেখা যায় তাঁকে। ছবির নাম, ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০১৩’। তবে তাতে কেরিয়ারের বিশেষ সুবিধা হয়নি।
‘এক ম্যায় অউর এক তু’ বা ‘রাগিনী এমএমএস-২’-এর মতো ছবিও সনিয়ার কাজে আসেনি। দু’টি ছবিই হিট ছিল, কিন্তু নায়িকায় ভূমিকায় দেখা যায়নি সনিয়াকে।
এমটিভি-র ভিডিয়ো জকি হিসাবেও বেশ কিছু দিন কাজ করেছিলেন সনিয়া। তাতে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। তবে আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে গ্ল্যামার জগৎ ছেড়ে অন্য পথে চলতে শুরু করেন সনিয়া।
বলিউড ছেড়ে দুবাই গিয়ে ওঠেন সনিয়া। সেখানেই সংসার পেতেছেন তিনি। যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক হিসাবে নামও কামাচ্ছেন।
সনিয়া জানিয়েছেন, বলিউড ছাড়ায় তাঁর আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, ‘‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেশির ভাগ শিল্পী ছবির দুনিয়ায় পা রাখেন। আমারও সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল। সে স্বপ্নপূরণের চেষ্টাও করেছিলাম। বলিউডে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাতে আমি সন্তুষ্ট।’’ তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয়, যে কাজই করুন না কেন, সবেতেই নিজের সেরাটা ঢেলে দেওয়া উচিত। অসফল হলেও চেষ্টা তো করেছি!’’