ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কি পরমাণু অস্ত্রের ধ্বংসলীলা দেখাও যাবে? আশঙ্কা উস্কে দিয়েছিল মস্কোর কাছে ঘোরাফেরা করা একটি ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’। সে ‘ভূতুড়ে’ ট্রেনের মাধ্যমেই পরমাণু অস্ত্র ছোড়া যায়। এমন দাবি করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আস্তিনে যে এমন একটি অস্ত্র রয়েছে, সে দাবিও করেছিল তারা। কেমন দেখতে সেই ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’? এর ভিতরেই বা কী রয়েছে?
পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার কথা মনে এলে অনেকেই ভাবেন যে, আকাশপথে জেটবিমান থেকে উড়ে এসে শত্রুপক্ষের মাটিতে গিয়ে পড়বে সেটি। যার অভিঘাতে ধ্বংস হয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন অগণিত বাসিন্দা। তবে পুতিনের অস্ত্রাগারে যেটি ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’ নামে পরিচিত, তা নাকি চলে রেলপথে।
বস্তুত, আধুনিক যুগের প্রযুক্তির সহায়তায় যুদ্ধকৌশলের সঙ্গে সঙ্গে এর অস্ত্রসম্ভারও অত্যাধুনিক হয়েছে। ব্রিটিশদের হাতে উঠে এসেছে ‘ট্রাইডেন্ট’-এর মতো পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলিতেও এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।
পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুশদের পরমাণু অস্ত্রসম্ভারও সেজে উঠেছে। সেই সোভিয়েত-যুগ থেকেই তার ভোলবদল চলছে বলে দাবি। লক্ষ্য— আরও ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরি করা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, পরমাণু অস্ত্রসম্ভার সাজাতে পশ্চিমি দেশগুলি যখন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে এবং সে জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করেছে, সে সময় নিজস্ব পদ্ধতিতে এগিয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরমাণু অস্ত্রবহনের জন্য জেটবিমান বা স্যাটেলাইট রকেটের পরিবর্তে একটি পুরনো দিনের ট্রেনের উপরেই নাকি ভরসা রেখেছে তারা।
অক্টোবরের গোড়ায় ইউক্রেনের মাটিতে রুশদের একের পর এক শহর দখলের মধ্যেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, পুতিনের ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’টি মস্কোর কাছে দেখা গিয়েছে। রাশিয়ার ১২তম মুখ্য অধিদফতরের সে ট্রেনটি নাকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক গুপ্ত ইউনিটের মালিকানাধীন।
সম্প্রতি ওই ট্রেনটিকে ক্রেমলিনের উত্তর দিকে এগোতে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি। যদিও তার গন্তব্য নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে তাতে একটি কামান-সহ অস্ত্রবোঝাই গাড়ি উঠতে দেখা গিয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল।
পুতিনের এই অস্ত্রটি দেখতে নাকি আর পাঁচটা সাধারণ ট্রেনেরই মতো। বস্তুত, পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে ট্রেনটি পরিচিত ‘আরটি-২৩ মোলোডেতস’ নামে। রুশ ভাষায় ‘মোলোডেতস’-এর আক্ষরিক অর্থ ‘সাহসী মানুষ’।
নেটোর খাতায় এই অস্ত্রটির আরও একটি নাম রয়েছে। নেটোর সাঙ্কেতিক ভাষায় একে ‘এসএস-২৪ স্ক্যালপেল’ বলে ডাকা হয়। তবে শুধু রাশিয়াই নয়, চিন-সহ পূর্ব ইউরোপের সামরিক যন্ত্রপাতিকে ওই সাঙ্কেতিক নামই দিয়েছে নেটো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাশিয়া জুড়ে ঘুরেফিরে বেড়ালেও ‘আরটি-২৩ মোলোডেতস’কে প্রায় চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সে জন্য এটি ‘ভূতুড়ে নিউক্লিয়ার ট্রেন’ বলেও পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে।
কতটা ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাধারী এ ট্রেন? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকার গোটাটাই ধ্বংস করে দিতে পারে এই ট্রেনটি।
‘ফাউন্ড অ্যান্ড এক্সপ্লেনড’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের দাবি, এই ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’টি রাশিয়া জুড়ে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে। দৈনিক ১,৬০৯ কিলোমিটার সফর করে এই ট্রেনটি।
আশির দশকে তৎকালীন সোভিয়েতের ইউক্রেনে ইউঝনোয়ে ডিজ়াইন ব্যুরো এই ট্রেনের নকশা তৈরি করেছিল। দেখতে একেবারে সাধারণ ট্রেনের মতো। এতে রয়েছে ৩টি করে লোকোমোটিভ এবং ওয়াগন। সঙ্গে রয়েছে ৪টি রেলকার। যাতে দেখে মনে হয় যেন যাত্রিবাহী ট্রেন।
ইউটিভিব চ্যানেলের আরও দাবি, রাশিয়ার প্রায় সবক’টি পরমাণুকেন্দ্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেও এই ট্রেনের হদিস পাননি আমেরিকার গোয়েন্দারা। এটি যে অতি সাধারণ ট্রেনের ‘ছদ্মবেশে’ ঘোরাফেরা করছে!
এই ট্রেনটি নাকি টানা ২৮ দিন ধরে নিজে থেকেই ঘোরাফেরা করতে সক্ষম। এমনকি, রাশিয়ার বিদ্যুৎব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও এ ট্রেনের গতি কমে না।
এতে নাকি রয়েছে ১০টি এমআইআরভি ওয়ারহেড (যার মাধ্যমে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব), যা থেকে ৫৫০ কিলোটিএনটি বিস্ফোরণ ঘটানো যায়। এমনকি, ট্রেনের মধ্যে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ওয়ারহেডগুলি থেকে যে কোনও চলমান জাহাজ বা ডুবোজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া যায়। মস্কোর সবুজ সঙ্কেত পেলে মাত্র ৩ মিনিটেই নাকি এটি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম।