রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার ব্যবসায়িক অংশীদার নন। তবে তাঁর সঙ্গে রাধাকিশন দমানী ওরফে আরকের ‘ব্যক্তিগত লেনদেনের’ মূল্য ছিল অসীম। রাধাকিশনকে নিজের ‘গুরু’ বলে মানতেন রাকেশ।
গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছাড়া রাকেশ এবং আরকের মধ্যে আরও একটি সম্পর্ক ছিল। রাকেশের ভরসার পাত্রও ছিলেন তাঁর গুরু আরকে। রাকেশের মৃত্যুর পর তাঁর বিপুল সম্পত্তির দেখভাল করার জন্য অছি পরিষদের হালও ধরতে পারেন তিনি। শেয়ার বাজারের জোর জল্পনা, রাকেশের অছি পরিষদের প্রধান ট্রাস্টি হতে পারেন আরকে। কে এই আরকে?
বেশ কয়েক বছর আগে আরকে প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে রাকেশ বলেছিলেন, ‘‘আপনারা জানেন না, আমরা পরস্পরের কতটা কাছের। যদিও আমরা আলাদা থাকি আর কোনও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বও নেই।’’
ভারতীয় শেয়ার বাজারের ‘বিগ বুল’ হিসাবে পরিচিত রাকেশের আদর্শ বন্ধু ছিলেন আরকে। তাঁর পথপদর্শকও বটে। দু’জনের মধ্যে প্রথম দেখাটা আচমকাই হয়েছিল। ১৯৮৭-’৮৮ সালে তৎকালীন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরের রাস্তায়।
ধীরে ধীরে পরস্পরের ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন রাকেশ এবং আরকে। রাকেশের কথায়, ‘‘জীবন যে ঈশ্বরের দান আর বড়দের আশীর্বাদ, তা একটি কারণেই বিশ্বাস করি, তা হল রাধাকিশন দমানী।’’
শেয়ার বাজারের বাইরের দুনিয়া চাক্ষুষ করার ক্ষেত্রেও আরকের মতাদর্শের অপরিসীম প্রভাব ছিল বলে জানিয়েছিলেন রাকেশ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আরকেই আমাকে শিখিয়েছিলেন যে মা-বাবার থেকে বড় জীবনে আর কিছু নেই।’’
১৪ অগস্ট ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন রাকেশ। রেখে গিয়েছেন দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী রেখাকে। সঙ্গে রয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বিপুল সম্পত্তি। তা দেখভালের জন্য আরকে-কেই আদর্শ ব্যক্তি বলে মনে করেন অনেকে।
৬৮ বছরের রাধাকিশন শিবকিশন দমানীর জীবন শুরু হয়েছিল বেশ সাদামাটা ভাবে। ছোটবেলা কেটেছে মুম্বইয়ের এক কামরার অ্যাপার্টমেন্টে। মারোয়াড়ি পরিবারের ছেলের প্রথাগত পড়াশোনা ছিল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হলেও বছরখানেক পর তাতে ইতি টানেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে নিজের বলবিয়ারিংয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন আরকে। তবে বাবা শিবকিশনজি দমানীর মৃত্যুর পর সে ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলেন তিনি। এর পর বাবার মতোই দালাল স্ট্রিটের পথে পা বাড়ান।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি স্টক ব্রোকার হিসাবেও কাজ শুরু করেছিলেন আরকে। নব্বইয়ের দশকে হর্ষদ মেহতার শেয়ার কেলেঙ্কারির জেরে শর্ট সেলিং শেয়ারের দাম হু হু করে চড়েছিল। সে সময় ওই শেয়ারে বিনিয়োগে প্রভূত মুনাফা করেছিলেন আরকে।
অনেকের দাবি, ১৯৯৫ সালে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির পর ওই সংস্থার সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী ছিলেন আরকে।
১৯৯৯ সালে নভি মুম্বইয়ের ‘আপনা বাজার’ নামে একটি সমবায় ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলেন আরকে। তবে সেই ‘বিজনেস মডেলে’ আস্থা ছিল না তাঁর। পরের বছর শেয়ার বাজারের পথ ছেড়ে নিজের হাইপারমার্কেট চেন খুলে বসেন আরকে।
‘ডিমার্ট’ নামের ওই হাইপারমার্কেট চেনের প্রথম স্টোর খুলেছিল ২০০২ সালে, মুম্বইয়ের পোয়াইয়ে। আট বছরের মধ্যেই আরও ২৫টি স্টোর খুলে ফেলেছিলেন আরকে। দ্রুত মুনাফা বাড়তে থাকায় ২০১৭ সালে নিজের সংস্থাকে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করেন তিনি।
আজ দেশ জুড়ে ২৩৪টি ডিমার্ট স্টোরের মালির আরকে। অনেকের দাবি, আরকের হাত ধরেই শেয়ার বাজারের খুঁটিনাটি শিখেছেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা।
আমেরিকার একটি পত্রিকার দাবি, রাকেশের অছি পরিষদের হাল সামলানোর দায়িত্ব পেলে আরকের সম্পত্তি বেড়ে ৫৮০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৬ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা)-এ পৌঁছবে। তখন দেশের ৪৮তম ধনী ব্যক্তির তকমা পাবেন আরকে।
রাকেশের অছি পরিষদের প্রধান ট্রাস্টি হলে তাঁর ফার্মের সমস্ত বিনিয়োগে শেষ কথা বলবেন আরকে-ই। সেই সঙ্গে তাঁর বিনিয়োগ করা শেয়ারের মূল্য বেড়ে হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বস্তুত, ট্রেন্ডলাইন ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইটের রিপোর্ট জানিয়েছে যে ২৫ জুলাইয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আরকের কাছে ১৬৩,৩৯৫.৩ কোটি মূল্যের ১৪টি শেয়ারের দখল রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে অ্যাভিনিউ সুপারমার্টস এবং ইন্ডিয়া সিমেন্ট নামে দু’টি সংস্থার শেয়ারও।