বিয়েটা বেশ সাদামাটা ভাবেই সেরেছেন। পরিজন-বন্ধুবান্ধব মিলিয়ে অতিথিদের তালিকায় ছিলেন মেরেকেটে ৫০ জন। যদিও ব্যক্তিজীবনে জাঁকজমকের অন্ত নেই সদ্যবিবাহিত কপূর দম্পতির। রণবীর কপূর এবং আলিয়া ভট্ট দু’জনেরই সম্পত্তির ঝলক দেখেই মাথা ঘুরে যেতে পারে।
বাংলা নববর্ষের ঠিক আগের দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন জীবন পেতেছেন ‘রণলিয়া’। তবে তার আগে থেকেই বান্দ্রার শহরতলিতে কপূরদের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে নজর ছিল অনুরাগীদের। পালি হিলসের যে ‘বাস্তু’ অ্যাপার্টমেন্টে রণবীর-আলিয়ার চার হাত এক হল, তার মূল্য কত?
‘বাস্তু’-র অভিজাত বহুতলের আটতলায় রয়েছে রণবীরের অ্যাপার্টমেন্ট। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, ৩৫ কোটি টাকায় তা কেনা হয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টের সাজসজ্জায় মাথা খাটিয়েছেন শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী খান। বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই ছিমছাম তার অন্দরসজ্জা। চারপাশে প্যাস্টেল রঙের ছোঁয়া। তাতে আস্ত একটি সিনেমাহল বানিয়ে ফেলেছেন রণবীর। সঙ্গে তাঁর দু’টি পোষ্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে বিশাল জায়গা।
সিনেমার বহু চরিত্রের মতো ব্যক্তিজীবনেও নাকি বেশ ক্যাজুয়াল রণবীর। সেই ‘লুক’ বজায় রাখতে একগাদা মানানইসই স্নিকার্সও কিনেছেন। কখনও রণবীরকে দেখা যায় ‘নাইকে এক্স’-এর ফ্যাকাসে সাদা স্নিকার্সে। কখনও আবার ঘুরছেন ওই ব্র্যান্ডেরই ‘এয়ারম্যাক্স-১ অ্যাটমস’ পরে। প্রথমটা কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লক্ষ টাকা। আর পরেরটা প্রায় লাখ টাকা। রণবীর তো বলেই ফেলেছেন, ‘আমি তো ‘স্নিকারহেড’। সাধারণত একসঙ্গে দু’জোড়া কিনি। ওই যে কথায় বলে না— ওয়ান টু রক, ওয়ান টু স্টক!’’
স্নিকার্স ছা়ড়া দামি হাতঘড়িও পছন্দ রণবীরের। তার সংগ্রহে রয়েছে অমিতাভ বচ্চনের দেওয়া রিচার্ড মাইল আর এম ০১০-র মতো ঘড়ি। ৫০ লাখি ওই ঘড়ির যন্ত্রাংশ গ্রেড ৫ টাইটেনিয়ামের মতো হালকা অথচ শক্তিশালী ধাতু দিয়ে তৈরি। এ ছাড়াও রোলেক্স থেকে হাবলট— প্রায় সব নামী ব্র্যান্ডেই মজেছেন রণবীর।
কপূর খানদানের ছেলের জেটগতির জীবনে খান কয়েক গাড়ি থাকবে না, তা কি হয়! রণবীরের গ্যারাজেও দামি গাড়ির অভাব নেই। ফলে সওয়া দু’কোটিতে ল্যান্ড রোভার রেঞ্জ রোভার ভোগ-এর ২০১৭ সালের মডেল কিনে ফেলেছেন তিনি।
রণবীরের ওই এসইউভি-তে রয়েছে ৩.০ লিটারের ভি৬ ইঞ্জিন। ২৫০ অশ্বশক্তির ওই মডেলটিতে রয়েছে ৬০০ এনএম টর্ক। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০৯ কিলোমিটার গতি তুলতে সক্ষম এই গাড়ি। আট স্পিডের গিয়ারবক্স ছাড়াও রয়েছে অল হুইল ড্রাইভ (এডব্লিউডি) সিস্টেম। এই গা়ড়িটির ১৬ ধরনের মডেল রয়েছে। তার এক-একটির দাম আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
রণবীরের গাড়ির গল্প কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বলিউড তারকাদের মধ্যে খুব কম জনেরই কাছে মার্সিডিজ বেঞ্জ জি-৬৩ এএমজি মডেলটি রয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন রণবীর। ৫.৫ লিটার ভি৮ ইঞ্জিনের এই দৈত্যের ভিতরে রয়েছে ৫৬৩ অশ্বশক্তির ক্ষমতা। ৭৬০ এনএম টর্কের মার্সিডিজের এই ম়ডেলটিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়াও সাত স্পিডের অটোমেটিক ট্রান্সমিশন বা সানরুফ রয়েছে।
জার্মান গাড়ির প্রতি কি রণবীরের বিশেষ টান রয়েছে? মার্সিডিজ ছাড়াও অডি আর৮-এর মতো আরও একটি জার্মান প্রযুক্তির গা়ড়ি থাকে তাঁর গ্যারাজে। ৫.২ লিটার ভি১০ পেট্রল ইঞ্জিন থেকে সর্বোচ্চ ৬০২ অশ্বশক্তি তৈরি হতে পারে। এর টর্ক ৫৬০ এনএম। এত কিছুর জন্য কত খরচ হয়েছে রণবীরের? দাম ২.৭২ কোটি টাকা। তবে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে গাড়ির দাম আরও বেশি দাঁড়িয়েছে।
‘বাস্তু’-তে রণবীরের মতো আলিয়ারও একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিয়ের আগেই তা কিনেছিলেন মহেশ ভট্টের মেয়ে। তবে তা রয়েছে ছ’তলায়। ২,৪৬০ বর্গফুটের ওই অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে নাকি ৩২ কোটি টাকা খরচ করেছেন আলিয়া।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও নেমেছেন আলিয়া। ২০২০ সালে ‘ইটার্নাল সানশাইন প্রোডাকশন’ নামে প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেন তিনি। ২,৮০০ বর্গফুটের সেই অফিসটির জন্য ২ কোটি খরচ করেছেন আলিয়া।
মুম্বইয়ের ভিড় থেকে দূরে একটি বাড়ির স্বপ্ন ছিল। সংবাদমাধ্যমের কাছে আলিয়া সে কথা বহু বার বলেছেন। এই ২৯ বছরেই তাঁর সে স্বপ্নপূরণ হয়েছে। বান্দ্রায় অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি লন্ডনেও একটি বাড়ি কিনেছেন। সেই ২০১৮ সালে। বাগানঘেরা সে বাড়িতে মাঝেমধ্যে গিয়ে ওঠেন আলিয়ার ছোট বোন শাহিন ভট্ট। সংবাদমাধ্যমের দাবি, লন্ডনের বাড়িটির দাম প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
রণবীরের মতো ল্যান্ড রোভার রেঞ্জ রোভার ভোগ গাড়িটি কিনেছেন আলিয়া। সেই ২০১৯ সালে। ডিজেলচালিত সেই গাড়িটিতে ৩ লিটারের ভি৬ ইঞ্জিন রয়েছে। দামও রণবীরের গাড়ির মতোই।
এই বয়সেই একটি বিএমডব্লিউ ৭ সিরিজের ৭৪০ এলডি ম়ডেলের মতো দামি গাড়ির মালকিন আলিয়া। ৩ লিটারের টুইন-পাওয়ার টার্বোচার্জড ৬ সিলিন্ডারের ইঞ্জিনের এই গাড়িটির দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। সর্বোচ্চ ২৬১ অশ্বশক্তির ক্ষমতাসম্পন্ন এই গাড়িটির টর্ক ৬২০ এনএম পর্যন্ত হতে পারে।
এই মুহূর্তে আলিয়া নাকি বলিউ়ডের এক নম্বর নায়িকা। বলিপাড়ার অনেকেই এমন দাবি করছেন। তা এমন তারকার যে ঝাঁ চকচকে একটি ভ্যানিটি ভ্যান থাকবে, তা-ই তো স্বাভাবিক। আলিয়ার বিশালাকায় সে ভ্যানের দাম জানা যায়নি। তবে এটা জানা গিয়েছে যে আলোয়-আয়নায় সাজানো সে ভ্যানের অন্দর সাজিয়েছেন গৌরী খান।