Lakshadweep vs Maldives

মোদীর লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের নেপথ্যে কি ‘গোপন পরিকল্পনা’? কোন প্রতিবেশীকে চাপে ফেলতে চাইছে ভারত?

ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী মলদ্বীপের সম্পর্কে চিড় ধরতে দেখা গিয়েছে সে দেশের শাসকের গদিতে মহম্মদ মুইজ়ু আসার পর। কূটনীতিক সম্পর্কেও বেশ কিছুটা ফাটল ধরেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৩
Share:
০১ ২১

সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও মোদী করেছেন। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

০২ ২১

কিন্তু কেন লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন মোদী? মূলত প্রশাসনিক কিছু কার্যক্রমের কারণেই কেন্দ্রশাসিত লক্ষদ্বীপে তিনি গিয়েছিলেন। কোচি-লক্ষদ্বীপ ডুবোজাহাজ অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের উদ্বোধন করাও ছিল উদ্দেশ্য। তবে তাঁর এই সফর অন্য একটি দিক দিয়েও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মোদীর ওই সফর প্রতিবেশী দেশকে চাপে ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

Advertisement
০৩ ২১

কোন প্রতিবেশী দেশ? উত্তর হল মলদ্বীপ। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ। সেখানে সম্প্রতি ক্ষমতার রদবদল ঘটেছে। মসনদে বসেছেন নতুন শাসক। তার পর থেকেই একের পর এক অস্বস্তি বাড়ছে ভারতের জন্য।

০৪ ২১

ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী মলদ্বীপের সম্পর্কে চিড় ধরতে দেখা গিয়েছে সে দেশের শাসকের গদিতে মহম্মদ মুইজ়ু আসার পর। কূটনৈতিক সম্পর্কেও বেশ কিছুটা ফাটল ধরেছে।

০৫ ২১

মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ সোলি ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে নীতি নিয়ে চলতেন, সেই ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন মুইজ়ু। ভোটে জিতে তিনি যে ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট।

০৬ ২১

মইজ়ুর সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের জন্য ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র। প্রথমে ভারতীয় সেনা অপসারণের বিষয়ে মোদী সরকারকে অনুরোধ জানানোর পর ভারতের সঙ্গে ৪ বছরের পুরনো একটি চুক্তিও বাতিল করেছে মলদ্বীপের নতুন সরকার।

০৭ ২১

সে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনা। দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণ পাঠাত ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টারগুলিই। কিন্তু সম্প্রতি ভারতকে সেই সেনা সরিয়ে ফেলার বার্তা দেয় মলদ্বীপ। দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘরোয়া রাজনীতিতেও মুইজ়ুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপস (পিপিএম) এই বলে প্রচার চালায় যে, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত।

০৮ ২১

মুইজ়ুর এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতিকে মলদ্বীপের কূটনৈতিক অবস্থানে বড়সড় পরিবর্তনের সূচক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভারত-ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে সম্প্রতি নতুন বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করছে মলদ্বীপ।

০৯ ২১

গণতন্ত্রের রাস্তা ধরে পথচলা শুরু করার পর মলদ্বীপের সব প্রেসিডেন্টেরই প্রথম গন্তব্য হয়েছে ভারত। এমনকি, ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত প্রেসিডেন্টরাও শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই এসেছেন। কিন্তু মইজ়ু সেই নিয়ম ভেঙে দিয়েছেন।

১০ ২১

মুইজ়ু তাঁর বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তুরস্কে গিয়ে। ভারতে আসার আগেই এ বার চিন সফরে যেতে চলেছেন তিনি। প্রথম বন্ধু হিসাবেই যে দেশকে মুইজ়ু বেছে নিয়েছেন, সেই তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ‘মধুর’ নয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) তুলে দেওয়া নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিল তুরস্ক।

১১ ২১

তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, মুইজ়ুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির নেপথ্য কাজ করছে অন্য প্রতিবেশী দেশ চিনের উস্কানি।

১২ ২১

ভারতের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের যুক্তি খাড়া করলেও মুইজ়ুর প্রশাসন কিন্তু সে দেশে চিনের একটি নজরদার জাহাজকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। সূত্রের খবর, কলম্বো বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করতে না-পেরে মলদ্বীপের কোনও বন্দরে ভিড়তে চলেছে সেটি।

১৩ ২১

ফলে মনে করা হচ্ছে মলদ্বীপকে আর গুরুত্ব দিতে রাজি নয় ভারত। আপাতত মুইজ়ুকে নিয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে নয়াদিল্লি। মলদ্বীপের পরিবর্তিত বিদেশনীতি, সেখানকার ঘরোয়া রাজনীতির ওঠাপড়া, মুইজ়ুর চিন-‘ঘনিষ্ঠতা’র দিকেও কড়া নজর রেখেছে ভারত।

১৪ ২১

আর সেই হিসাবেই মোদীর লক্ষদ্বীপ সফর তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১ সালে কোভিডের ধাক্কায় ভারতের পর্যটন ব্যবসার কাঁধ নুইয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী, দেশবাসীকে জম্মু ও কাশ্মীরের জাবারওয়ান রেঞ্জের পাদদেশে অবস্থিত টিউলিপ বাগান পরিদর্শন করার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের উষ্ণ আতিথেয়তা উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পরেই কাশ্মীরে পর্যটকদের মেলা বসে। মাথা তুলে দাঁড়ায় কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা।

১৫ ২১

কাশ্মীরের মতো প্রধানমন্ত্রী লক্ষদ্বীপের পর্যটনকেও এখন চাঙ্গা করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। মোদী লক্ষদ্বীপ নিয়ে টুইট করার পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে দেশবাসীর। অন্তত তেমনটাই বলছে গুগ্‌লের রিপোর্ট।

১৬ ২১

লক্ষদ্বীপের সমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্নর্কেলিং (এক ধরনের জলক্রীড়া) করা, সাদা বালির উপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার দিনই ৫০ হাজার মানুষ লক্ষদ্বীপ নিয়ে গুগ্‌লে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে চলতি বছর থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করতে পারে লক্ষদ্বীপের সমুদ্রসৈকতে।

১৭ ২১

লক্ষদ্বীপ কী ভাবে যাওয়া যায়, অনুসন্ধান ছিল মূলত সেই বিষয়েই। ২০২২ সালে লক্ষদ্বীপ বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ছিল মাত্র এক লক্ষ। ২০২১ সালের থেকে মাত্র চার হাজার বেশি। তবে লক্ষদ্বীপে এখন দেশের পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৮ ২১

কিন্তু তাতে কী ভাবে বিপদ বাড়তে পারে মলদ্বীপের? ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির সৈকত এবং প্রচুর প্রবাল— লক্ষদ্বীপ এবং মলদ্বীপের মধ্যে মিল প্রচুর। কিন্তু তবুও বিলাসবহুল ভ্রমণের উদ্দেশে ভারতীয়দের বেশি ভিড় জমে মলদ্বীপে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ ভারতীয় মলদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন।

১৯ ২১

মলদ্বীপের অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে ভারতীয় পর্যটকদের টাকার উপর। মনে করা হচ্ছে মলদ্বীপের বিকল্প হিসাবে এ বার ভারতীয়দের কাছে লক্ষদ্বীপকে তুলে ধরতে চলেছে ভারত।

২০ ২১

মলদ্বীপের মতো সুযোগ-সুবিধা লক্ষদ্বীপেও শুরু করার পরিকল্পনা চলছে। তার মধ্যে জনপ্রিয় রয়েছে মলদ্বীপের জনপ্রিয় ‘ওয়াটার রিসর্ট’-এর আদলে রিসর্ট এবং বিলাসবহুল হোটেল তৈরির পরিকল্পনাও।

২১ ২১

মনে করা হচ্ছে, মোদীর আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রচুর মানুষ যদি লক্ষদ্বীপে ঘুরতে যান এবং সেখানে মলদ্বীপের মতো সুযোগ-সুবিধা পান, তা হলে ভাটা পড়তে পারে মলদ্বীপের পর্যটন শিল্পে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে মলদ্বীপের অর্থনীতি। অর্থাৎ, ভারতের মাথাব্যাথার কারণ হওয়ার ফলও ভোগ করতে হতে পারে মলদ্বীপকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement