সিংহের নাম আকবর আর সিংহীর নাম সীতা। তাঁদের আবার রাখাও হয়েছে একসঙ্গে। এতে অবমাননা হয়েছে ধর্মের। এই অভিযোগে সাসপেন্ড করা হল বন সংরক্ষণবিদ আধিকারিককে।
শেক্সপিয়র যতই বলুন ‘নামে কী আসে যায়’, তাতে যে অনেক কিছুই আসে যায়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ত্রিপুরার বনকর্তা।
কারণ, এক সিংহ এবং সিংহীর নামকরণ করার দায়ে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার সাসপেন্ড করেছে তাঁকে। ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি সিংহ এবং সিংহীর নামকরণ বিতর্কের জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। কেন সিংহের নাম ‘আকবর’, আর সিংহীর নাম ‘সীতা’ রাখা হবে, আর কেনই বা তাদের একই ঘেরাটোপ (এনক্লোজ়ার)-এ রাখা হবে, এই নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)।
বর্তমানে শিলিগুড়ির সাফারি পার্কে ওই সিংহ আর সিংহীকে রাখা হলেও, তাদের দু’জনকেই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরার বিশালগড়ের সিপাহিজলা জ়ুলজিক্যাল পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়।
এ রাজ্যের বন দফতরের তরফে জানানো হয়, ত্রিপুরাতেই ওই সিংহ আর সিংহীর নামকরণ করা হয়েছিল।
এই বিতর্কের মধ্যেই গত শনিবার ত্রিপুরার মুখ্য বন সংরক্ষণবিদ (বন্যপ্রাণ এবং পর্যটন) প্রবীণলাল আগরওয়ালকে সাসপেন্ড করে সে রাজ্যের সরকার। নামকরণ বিতর্কের জেরেই এই সাসপেনশন বলে ত্রিপুরা প্রশাসন সূত্রে খবর।
ভিএইচির তরফে আদালতে দাবি করা হয়, রাজ্যের বন দফতর সিংহ এবং সিংহীটির নামকরণ করেছে এবং তাদের একসঙ্গে রেখে ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে।
হাই কোর্টে করা মামলায় যুক্ত করা হয় রাজ্যের বন দফতর এবং জলপাইগুড়ি সাফারি পার্কের ডিরেক্টরকেও।
বিতর্ক এড়াতে রাজ্যকে নাম বদলের পরামর্শ দেয় কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ।
মৌখিক ভাবে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার রাজ্যের উদ্দেশে ওই দুই পশুর নাম পরিবর্তন করে নিতে বলেন। সেই সঙ্গে মামলাকারীকে এই মামলাটি জনস্বার্থ মামলা হিসাবে দায়ের করার নির্দেশ দেন তিনি।
মামলার শুনানিতে বিচারপতি ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘কারা এই নাম রেখেছেন? এত বিতর্ক কারা তৈরি করছেন? কোনও পশুর নাম কি কোনও দেবতা, পৌরাণিক নায়ক, স্বাধীনতা সংগ্রামী অথবা নোবেলজয়ী ব্যক্তির নামে রাখা যায়?’’
সিংহ-সিংহীর নাম ‘আকবর’ আর ‘সীতা’র নামে রেখে শুধু শুধু বিতর্ক ডেকে আনা হয়েছে। এই বিতর্ক এড়ানো যেত। শুধু ‘সীতা’ নয়, ‘আকবর’ নামটিও রাখা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।
আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ত্রিপুরাতেই ওই সিংহ এবং সিংহীর নামকরণ করা হয়েছিল। রাজ্য নাম পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করছে।