স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন বাবা। মোটরবাইকে চড়ে বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। প্রয়াত বাবার অধরা স্বপ্ন পূরণ করছেন পাকিস্তানের তরুণী জেনিথ ইরফান। বাইকে চেপে সারা পাকিস্তান ঘুরে বেড়ান জেনিথ।
২০১৫ সালের অগস্টে পাকিস্তানের প্রথম মহিলা হিসাবে লাহোর থেকে চিনের সীমান্ত খুঞ্জেরাব পর্যন্ত একা বাইক চালিয়ে নজির গড়েন জেনিথ। লাহোর থেকে ৩,২০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে যান বছর কুড়ির এই পাক তরুণী।
তবে শুধুমাত্র নিজের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না ‘মোটরবাইক গার্ল’। মোটরবাইক নিয়ে চষে বেড়াতে চান পুরো পৃথিবী। প্রয়াত বাবার এমনটাই ছিল ইচ্ছা। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন জেনিথের বাবা।
কম বয়সে বাবাকে হারানোর পর মায়ের কাছে জানতে পারেন প্রয়াত বাবার মোটরবাইকে বিশ্বভ্রমণের অপূর্ণ স্বপ্নের কথা।
২০১৩ সালে জেনিথের জীবনের কাহিনি নিয়ে ‘মোটরবাইক গার্ল’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন এক পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মাতা। চলচ্চিত্রটিতে জেনিথ ইরফানের চরিত্রে রূপদান করেন সোহাই আলি আব্রো।
পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে একা একটা মেয়ে বাইকে চেপে ঘুরে বেড়াবেন, এটা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নন জেনিথ।
ইরফান পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান জেনিথ। দুবাইয়ের শারজায় জন্ম তাঁর। পরে ১২ বছর বয়সে তিনি ও তাঁর পরিবার লাহোরে ফিরে আসেন।
তবে সামাজিক বাধা পেরোতে জেনিথ পাশে পেয়েছিলেন মাকে। উত্সাহ দিয়েছিলেন জেনিথকে। তিনিও চেয়েছিলেন, বাবার স্বপ্ন পূরণ করুন তাঁর মেয়েই।
২০১৩ সালে মোটরবাইক চড়ায় হাতেখড়ি হয় একটি সাধারণ ৭০ সিসি-র বাইক দিয়ে। ভাইয়ের কাছে প্রথম মোটরবাইক চালানো শেখেন তিনি। তার পর লাহোরের রাস্তায় মাঝেমধ্যেই বাইক নিয়ে একা বেরিয়ে পড়তেন জেনিথ।
দু’বছর পর ২০১৫ সালের জুনে প্রথম বার মোটরবাইক নিয়ে একাই ৭০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পাক অধিকৃত কাশ্মীর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন জেনিথ।
শুনেছিলেন পৃথিবীতে যদি কোথাও স্বর্গ থাকে, তা কাশ্মীরে রয়েছে। তাই নিজের চোখে তা দেখতে মোটরবাইককে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়েন।
কাশ্মীর হয়ে সেখান থেকে মুজফ্ফরাবাদে যান। তার পর নীলম ঘাঁটির জঙ্গল হয়ে সমতলে নেমে আসেন। জেনিথই প্রথম পাক মহিলা, যিনি একা বাইক নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণ করেন।
ভ্রমণে বেরিয়ে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঝুলি পূর্ণ হয় জেনিথের। অনেকে তাঁর এই সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অনেকে তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হতে চেয়েছেন।
অনেক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখেও পড়তে হয়েছে জেনিথকে। সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন তরুণী।
এক বার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে পার্বত্য শহর চিলাসে ভ্রমণের সময় কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে পেরোতে হয়েছে গোটা রাস্তা। মেয়ে বলে বাধা দিতে পারেন স্থানীয় লোকজন, এমন আশঙ্কা থেকে মুখ ঢাকতে হয়েছিল তাঁকে।
ধীরে ধীরে নিজের দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন জেনিথ। অনেকের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি।
নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন সকলের সঙ্গে।