ঝুলিতে রয়েছে গিনেস বুকের রেকর্ড, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুর্তা তৈরির কৃতিত্ব। একাধারে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজ়াইনার ও অভিনেতা। তিনি পড়শি দেশের অন্যতম ধনকুবের। তিনি দীপক পারওয়ানি, পাকিস্তানের খ্যাতনামী ফ্যাশন ডিজ়াইনার।
সম্প্রতি ভারত সম্পর্কে তাঁর অকপট মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সমাজমাধ্যম। একই সঙ্গে নিজের দেশ পাকিস্তান নিয়ে তাঁর মতামতকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। একটি সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান এবং ভারতে বসবাসের তুলনা টানেন দীপক।
সাক্ষাৎকারের সময় পারওয়ানি দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে পরিকাঠামো, নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং সুখী জীবনযাত্রার বিশাল বৈপরীত্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সাধারণ মানুষ সুখী জীবন যাপন করেন। সেই সুখী জীবনযাত্রার প্রতিফলন তাঁদের চেহারায় ফুটে ওঠে।’’
দীপকের মতে, ভারতে মহিলাদের অবাধে রাস্তায় চলাফেরা করতে যেমন বাধা নেই, তেমনই সাইকেল বা মোটরবাইক চড়াতেও নিষেধাজ্ঞা নেই। পাকিস্তানে রাস্তাঘাটে এই সব কাজ সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারতের অটোচালক বা ক্যাবচালকেরা এগিয়ে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন দীপক। ভারতীয় শহরগুলি পথচারীদের জন্য সুরক্ষিত বলেও মত তাঁর।
দীপকের মুখে ভারতের প্রশংসা শুনে বেজায় খেপেছেন পাকিস্তানের আমজনতা। দীপককে ভারতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। তবে এই সব কটূক্তি নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন পাকিস্তানের এই হিন্দু ব্যবসায়ী। দু’দশকের বেশি সময় ধরে নিজের ব্যবসাকে সে দেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন দীপক।
অসংখ্য প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাকিস্তানের হাতেগোনা যে ক’জন হিন্দু নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন ও সে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য হন, তাঁদের মধ্যে দীপক অন্যতম।
দীপকের জন্ম ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সিন্ধের মিরপুরখাসের এক হিন্দু পরিবারে।
মাত্র ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি ব্যবসায় মন দেন। অল্প দিনের মধ্যে তৈরি করে ফেলেন তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘ডিপি’, যা তাঁর নামের আদ্যক্ষর। ধীরে ধীরে ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজের কাজ দিয়ে সকলের নজর কেড়ে নেন দীপক।
১৯৯৪ সালে তিনি পুরুষদের জন্য পোশাক তৈরি করা শুরু করেছিলেন। পরবর্তী কালে ১৯৯৬ সালে মহিলাদের পোশাক নকশায় মন দেন দীপক।
বিবাহে বরের পোশাক ও নানা ধরনের কুর্তার নকশা করে তিনি বিখ্যাত হন পাকিস্তান জুড়ে। সেই খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়া জুড়ে। বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলির পেশাদারি বৃত্তে ঢুকে পড়েন দীপক। মার্সেডিজ় বেঞ্জ, হুগো বস, বেনসন হেজেসের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করেন তিনি।
বিশ্বের বৃহত্তম কুর্তা তৈরির গিনেস রেকর্ড রয়েছে পারওয়ানির দখলে। পোশাকটি তৈরি করতে ৫০ জন পেশাদার দর্জি ৩০ দিন সময় নিয়েছিলেন। কুর্তাটির ওজন ৮০০ কেজি। ১০১ ফুট লম্বা এবং ৫৯ ফুট ৩ ইঞ্চি চওড়া। প্রতিটি হাতা ৫৭ ফুট লম্বা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন দীপক। ভারতীয় তারকাদের জন্য পোশাকের নকশা করেছেন দীপক। দীপকের পোশাকের ভক্ত লেখক-গীতিকার জাভেদ আখতার এবং অভিনেত্রী শাবানা আজ়মিও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে দীপক জানিয়েছিলেন, বলিউডের শ্যামাঙ্গী সুন্দরীদের জন্য পোশাক তৈরি করতে চান তিনি। তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন, নন্দিতা দাসের মতো অভিনেত্রীরা। এ ছাড়াও রণবীর কপূর ও বরুণ ধওয়ানের জন্য পোশাক পরিকল্পনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন দীপক।
মডেল ও পাক অভিনেত্রী ফ্রিহা আলতাফের মতো খ্যাতনামী তারকার জন্যও পোশাক তৈরি করেছিলেন দীপক।
পাকিস্তানের প্রথম সুপার মডেল নাদিয়া হুসেন র্যাম্পে আত্মপ্রকাশ করেন দীপকের নকশা করা পোশাক গায়ে দিয়েই।
ফ্যাশন ডিজ়াইনিংয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানি বিনোদন দুনিয়াও তাঁকে একডাকে চেনে। দেশের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মেরে পাস পাস’, ‘পঞ্জাব নেহি জাউঙ্গি’, ‘কুদরতে’র মতো বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় প্রতিভাও দেখিয়েছেন পারওয়ানি।
২০২২ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী বছরে ৭১ কোটি টাকা আয় করেন করাচির বাসিন্দা দীপক। পাকিস্তানের অন্যতম ধনী হিন্দু ব্যবসায়ী বলে ধরা হয় তাঁকে।